সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা - NCTB BOOK

এ অধ্যায় পাঠশেষে আমরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারব -

■ তীর্থস্থান লুম্বিনী; 

■ ঐতিহাসিক স্থান সোমপুর মহাবিহার; 

■ ঐতিহাসিক স্থানের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা।

মিতু বড়ুয়া, রূপা চাকমা, রত্না খীসা, মিনুচিং মারমা এবং মিনা তঞ্চঙ্গ্যা খুব ভালো বান্ধবী। তারা প্রতিদিন বিকালে বিহারে প্রার্থনা করতে যায় এবং ভিক্ষুর কাছ থেকে ধর্মকথা শুনে। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত বিহারের ভিক্ষু তীর্থস্থান ও ঐতিহাসিক স্থান দর্শনে যাওয়ায় তারা ভিক্ষুর কাছ থেকে ধর্মকথা শুনতে পাচ্ছিল না। কেবল প্রার্থনা করেই বাড়ি ফিরে যেত। তাই তাদের খুব মন খারাপ। গতকাল তারা বিহারে গিয়ে দেখে ভিক্ষু ফিরে এসেছেন। ভিক্ষুকে দেখে তারা উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। এরপর তারা ভিক্ষুকে বন্দনা নিবেদন করে তীর্থস্থান ও ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে দেশনা করার জন্য অনুরোধ করেন। ভিক্ষু তাদের জানার আগ্রহ দেখে খুশি হয়ে বললেন, “আমি ভারত ও নেপাল গিয়েছিলাম। লুম্বিনী ও কুশীনগর দর্শন করেছি। আসার পথে বাংলাদেশের সোমপুর বিহারও দর্শন করেছি। আমার খুব ভালো লেগেছে। আজ আমি তোমাদের লুম্বিনী, কুশীনগর এবং সোমপুর বিহার সম্পর্কে বলব।” পাঁচ বান্ধবী খুবই খুশি হয়ে সাধুবাদ প্রদান করে। তিনি প্রথমে লুম্বিনী সম্পর্কে বললেন।

লুম্বিনী

লুম্বিনী বৌদ্ধদের চার মহাতীর্থ স্থানের অন্যতম । তোমরা জানো, রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতম খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনী কাননে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে বোধিজ্ঞান লাভ করে গৌতম বুদ্ধ নামে খ্যাত হন। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হওয়ার কারণে লুম্বিনীকে বৌদ্ধরা অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে গণ্য করে থাকেন। নেপালের দক্ষিণ সীমান্ত বুটল জেলার ভগবানপুর তহশীলে রুম্মিনদেই নামক স্থানে লুম্বিনী অবস্থিত। সেখানে শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারের ধর্মশালা ও দুটি যাত্রীনিবাস আছে। জাপানের আছে একটি গেস্ট হাউজ। নেপাল সরকারের অতিথিশালা এবং বিশ্ব শান্তি প্যাগোডাও আছে। এছাড়া, চীন, থাইল্যান্ড, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের বিহার এবং একটি বুদ্ধিস্ট সেন্টার আছে। লুম্বিনীর প্রধান দর্শনীয় জিনিস হলো অশোক স্তম্ভ ও রুম্বিনদেই মন্দির। সম্রাট অশোক সিদ্ধার্থের জন্মস্থানকে চিরস্মরণীয় ও চিহ্নিত করে রাখার জন্য এখানে একটি স্তম্ভ স্থাপন করেন। স্তম্ভটির নাম অশোকস্তম্ভ। এই স্তম্ভের কারণে সিদ্ধার্থের জন্মস্থান চিরকালের জন্য স্মরণীয় ও চিহ্নিত হয়ে যায়।

চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের ভ্রমণ কাহিনি থেকে আমরা লুম্বিনী সম্পর্কে বহু তথ্য জানতে পারি। ভ্রমণ কাহিনি হতে জানা যায়, স্তম্ভটি প্রাচীন মন্দিরের পশ্চিম পাশে ছিল। সেটি ছিল একক পাথরে নির্মিত। স্তম্ভের শীর্ষে শোভা পেত একটি অশ্বমূর্তি। এই অশ্বমূর্তি সিদ্ধার্থের সংসার ত্যাগের প্রতীক। স্তম্ভের শীর্ষভাগ এখন ভাঙা।

অশোক স্তম্ভের পাশে আছে লুম্বিনী মন্দির। এটি স্থানীয় লোকের কাছে রুম্মিনদেই নামে পরিচিত। ছোট একটি ঢিবির ওপর এই মন্দির। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে উঠতে হয়। পুরোনো মন্দিরের ভিত্তির ওপর সেটি নেপাল সরকার আবার নির্মাণ করেন। মন্দিরের উত্তর দিকে গর্ভগৃহের মেঝের সমান পুরোনো মন্দিরটি। ভিতরে সিদ্ধার্থের জন্মচিত্র আঁকা একটি অখণ্ড প্রস্তর ফলক আছে। প্রস্তর ফলকটি সেই প্রাচীনকাল থেকে এখনও টিকে আছে। তবে ফলকে আঁকা চিত্রগুলো একটু ক্ষয়ে গেছে। তাতে সিদ্ধার্থের জননী মায়াদেবী ডান হাতে শালগাছের ডাল ধরে আছেন। পাশে অন্য একজন নারী চিত্র আছে। সেটি মহপ্রজাপতি গৌতমীর প্রতিমূর্তি মনে করা হয়। আর এক পাশে কয়েকটি মূর্তি করজোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এঁদের ব্রহ্মা প্রভৃতি দেবতা মনে করা হয়। পিছনে একটি দেবশিশু আছে। সামনের দিকে নিচে একটি পদ্মের ওপর নবজাত সিদ্ধার্থ দাঁড়িয়ে আছেন।

লুম্বিনীর এই ঐতিহাসিক স্থানটি বহুদিন মাটির নিচে ঢাকা পড়ে ছিল। স্থানটি চিহ্নিত করে খনন কাজ শুরু হলে সিদ্ধার্থের জন্মচিত্র আঁকা পাথরের ফলকটি অটুট অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপর সেটি আবার আগের জায়গায় স্থাপন করা হয়। সেখানে এখন তীর্থযাত্রীরা যেতে পারেন। মন্দিরপ্রাঙ্গণ থেকে অশোকস্তম্ভের দিকে যাওয়ার সিঁড়ি আছে। তেমনি পূর্ব দিকে যাওয়ার সিঁড়িও রয়েছে। এরই পাশে আছে একটি প্রাচীন বোধিবৃক্ষ। তীর্থযাত্রীরা এই মন্দিরে পূজা-অর্ঘ্য নিবেদন করেন।

লুম্বিনীর চারপাশে প্রাচীন শাক্য জাতির সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে। কালের করাল গ্রাসে সেগুলো এখন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ধ্বংসাবশেষসমূহ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লুম্বিনী খনন ও আবিষ্কারের কাজে তিনজন পুরাতত্ত্ববিদের নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁরা হলেন কানিংহাম, কার্লাইল ও ড. ফুলার। কানিংহাম ও কার্লাইল লুম্বিনীর প্রকৃত অবস্থানের সন্ধান দিতে পারেননি।

ড. ফুলার প্রকৃত সন্ধান দেন অশোকস্থম্ভ আবিষ্কার করে। স্তম্ভের গায়ে লেখা অশোকলিপি পড়ে জানা যায় এটি সিদ্ধার্থের প্রকৃত জন্মস্থান। সে অনুযায়ী চারদিক খনন করে সত্য উদঘাটিত হয়।

লুম্বিনীর চারদিকে এখন বিশাল বাগান তৈরি করা হয়েছে। বাগানটি নানারকম গাছ এবং ফুলে-ফলে শোভিত। বাগানের ভিতরে এখন সরকারি ঘরবাড়ি ও অতিথিশালা ছাড়া আর লোকবসতি নেই। পাখির কাকলি আর গাছপালার সৌন্দর্যে লুম্বিনী আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছে।

আমি যখন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তখন আমার মনে অপার আনন্দে ভরে যাচ্ছিল। আমি পুলকিত হচ্ছিলাম। আমার সে সময়ের কথা মনে হচ্ছিল। এক কথায় বলা যায়, আমার খুব ভালো লেগেছে। তোমরা গেলে তোমাদেরও ভালো লাগবে। তোমরা গুগলে সার্চ দিয়ে লুম্বিনীর বর্তমান অবস্থা, বিশেষত সেখানে কী কী আছে তা দেখতে পাবে।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ৩৯

অভিভাবক অথবা কম্পিউটার ল্যাব এর সাহায্যে কিউ আর কোডটি (QR code) স্ক্যান করে লুম্বিনীতে বর্তমানে কী কী দর্শনীয় বিষয় আছে, তার একটি তালিকা তৈরি করো।

লুম্বিনীতে দর্শনীয় বস্তুর তালিকা

 
 
 
 
 
 
 
 

লুম্বিনীর বর্ণনা শুনে পাঁচ বান্ধবী খুবই উৎফুল্ল হলো। অন্যান্য তীর্থস্থানের বর্ণনা শুনতে তারা আরো আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের আগ্রহ দেখে ভিক্ষু বাংলাদেশের সোমপুর বিহার সম্পর্কে বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন:

সোমপুর মহাবিহার

সোমপুর মহাবিহার একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। আমাদের বাংলাদেশেই এই বিহারের অবস্থান। এটি নওগাঁাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এজন্য বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নামে ও পরিচিত।

এই মহাবিহার এখন আমাদের ইতিহাসের উপাদান। বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য। অমূল্য প্রত্ন সম্পদ। কারণ, এটি কেবল ধর্মচর্চার কেন্দ্র ছিল না, অন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছিল। এখানে ধর্মচর্চার পাশাপাশি বহু বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। তাই, এই বিহারকে ‘মহাবিহার' বলা হয়। দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য এই বিহারের দ্বার উন্মুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য এই বিহারে আসতেন। তাই বিদেশিদের কাছে এই বিহার বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত ছিল। আধুনিক যুগের বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা এই বৌদ্ধ মহাবিহারগুলো থেকেই হয়েছে।

সোমপুর মহাবিহার প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা বাংলার গৌরবকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ঐতিহাসিক বিক্রমশীলা মহাবিহারও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে খ্যাতি আছে।

সোমপুর মহাবিহার পাল বংশের ইতিহাসের অন্যতম স্মারক। দ্বাদশ শতাব্দীতে এই ঐতিহাসিক মহাবিহার ধ্বংস হয়। সময়ের বিবর্তনে ধ্বংসস্তূপ মাটির নিচে ঢাকা পড়ে যায়। জনসাধারণও ভুলে যায় এই মহাবিহারের কথা। কিন্তু, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিক্ষার ইতিহাস থেকে এটি মুছে যায়নি। ইতিহাসের সেই সূত্র ধরে এটি আবার আবিষ্কৃত হয়। তবে অতীতের গৌরবে ও সৌষ্ঠবে নয়; মাটির গভীর হতে প্রত্মতাত্ত্বিক সম্পদরূপে।

এই প্রাচীন বৌদ্ধ মহাবিহার ও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম অনুসন্ধান করেন স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম তিনি একজন বৃটিশ সামরিক প্রকৌশলী ও প্রত্নতত্ত্ববিদ। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই বৌদ্ধ মহাবিহারের ধ্বংাবশেষ আবিষ্কার করেন। এটির ভূমির আয়তন প্রায় ১১ হেক্টর বা ২৭ একর। এই মহাবিহারের ভবন তৈরি হয়েছে চতুষ্কোনাকার ভূমি পরিকল্পনার মাধ্যমে। এতে আবাসিকদের জন্য ছোট বড় ১৭৭টি কক্ষ আছে। যেখানে বসে নিরিবিলি অধ্যয়ন ও সমাধির চর্চা করা হতো। মূল ভবনের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে প্রার্থনা হল, সভা কক্ষ, অধ্যয়ন কক্ষ, শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষকদের কক্ষ ইত্যাদি। বাংলার গৌরব শ্রী অতীশ দীপঙ্কর খ্রিস্টীয় দশম শতকে এই মহাবিহার তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন। খননের ফলে এই মহাবিহারের ধ্বংসস্তূপ হতে বহু মূল্যবান বুদ্ধ, বোধিসত্ব এবং দেব-দেবীর মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাবিহারের দেয়ালগুলো পোড়া মাটির ফলক চিত্রে শোভিত ছিল। খননের সময় বহু পোড়া মাটির ফলক চিত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো আমাদের লোকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাহাড়পুর জাদুঘরে গেলে তোমরা এ মহাবিহার হতে আবিষ্কৃত বহু মূল্যবান প্রত্নসম্পদ দেখতে পাবে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউনেস্কো’র গবেষণা মতে সোমপুর বৌদ্ধ মহাবিহার দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো সোমপুর মহাবিহারকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি প্রদান করে। এর মাধ্যমে মহাবিহারটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তির মর্যাদা লাভ করে। সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে বিশ্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যের অংশ। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত প্রত্নসম্পদ। এটি সংরক্ষণ, পরিচর্যা ও পরিদর্শন করে এ সম্পর্কে জানা আমাদের সকলেই দায়িত্ব ও কর্তব্য। দেশি-বিদেশি বৌদ্ধ ধর্মানুসারী ও পর্যটক নিয়মিত বিহারটি পরিদর্শনে আসেন। এছাড়া গবেষক ও শিক্ষার্থীরাও আসেন এই ঐতিহাসিক প্রত্ন সম্পদ সম্পর্কে জানতে। ধ্বংসস্তূপ হলেও এটি জ্ঞানের অন্যতম ভাণ্ডার।

সোমপুর মহাবিহার সম্পর্কে বলার পর ভিক্ষু পাঁচ বান্ধবীকে তীর্থ ও ঐতিহাসিক স্থান দর্শনের উপদেশ দিয়ে দেশনা শেষ করেন। পাঁচ বান্ধবী ভিক্ষুকে বন্দনা নিবেদন এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সন্তুষ্ট মনে বাড়ি ফিরে যায়।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ৪০

কিউ আর কোড (QR Code) টি স্ক্যান করে লিংক সংগ্রহ কর এবং সোমপুর মহাবিহার সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ রচনা কর।

 

ঐতিহাসিক স্থান ও তীর্থস্থানের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা :

বুদ্ধ এবং তাঁর প্রধান প্রধান শিষ্যদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকালের ভারতে গড়ে উঠেছিল বিহার, চৈত্য, সংঘারাম, স্তূপ, স্তম্ভ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কালক্রমে সেগুলো বৌদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান এবং তীর্থস্থানের মর্যাদা লাভ করে। ভারতে অবস্থিত বৌদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান এবং তীর্থস্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো : কপিলাবস্তু, বুদ্ধগয়া, সারনাথ, কুশিনারা, রাজগৃহ, শ্রাবস্তী, বৈশালী, ভরহুতস্তূপ, সাঁচীস্তূপ, অজন্তা, ইলোরা, নালন্দা, বিক্রমশীলা, উদয়গিরি, রত্নগিরি ইত্যাদি। লুম্বিনীর অবস্থান বর্তমানে নেপালের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে।

বৌদ্ধধর্মের প্রচার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বাইরে, বিশেষত, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস প্রভৃতি দেশেও গড়ে উঠেছে বহু বৌদ্ধধর্ম চর্চা কেন্দ্র এবং ধর্মীয় নিদর্শন। সেগুলোও ঐতিহাসিক এবং তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ইন্টারনেটে সার্চ বা অনুসন্ধান করলে তোমরা এসব দেশের ঐতিহাসিক ও তীর্থস্থানসমূহ দেখতে পারবে।

বাংলাদেশেও বহু বৌদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : শালবন বিহার, সোমপুর বিহার, আনন্দ বিহার, ভাসুবিহার, হলুদ বিহার, বিক্রমপুর বিহার, জগদ্দল বিহার, কৌটিল্য মুড়া বিহার, রূপবান মুড়া বিহার, ত্রিরত্ন মুড়া বিহার, ওয়ারী-বটেশ্বর, মহাস্থানগড় ইত্যাদি।

ঐতিহাসিক ও তীর্থস্থান প্রত্যেক দেশের জাতীয় সম্পদ, গৌরবনীয় ঐতিহ্য। অতীত ইতিহাস এবং সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন। এগুলো বহির্বিশ্বে দেশের গৌরব তুলে ধরে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে। ঐতিহাসিক ও তীর্থস্থান দর্শনে দেশাত্মবোধ ও ধর্মীয় চেতনা জাগে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ হয়। তীর্থস্থান দর্শনে পুণ্যও অর্জিত হয়। এছাড়া, এগুলোর মাধ্যমে রাজস্ব আয় হয়। তাই ঐতিহাসিক ও তীর্থস্থানের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

নানা কারণে এসব স্থান বিনষ্ট হতে পারে। বিশেষত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চোর বা ডাকাত কৃতক লুণ্ঠন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পশু-পাখি-কীটপতঙ্গের উপদ্রব, দর্শনার্থীর উশৃঙ্খল আচরণ প্রভৃতি কারণে স্থানসমূহ নষ্ট হতে পারে। বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে আমরা স্থানসমূহ সংরক্ষণ করতে পারি। নিয়মিত যত্ন নেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, সীমানা প্রাচীর দিয়ে পশু-পাখির প্রবেশরোধ, নিয়ম-নীতি মেনে স্থানসমূহ পরিদর্শন করার মাধ্যমে আমরা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। ঐতিহাসিক স্থান ও তীর্থস্থান সংরক্ষণ করার দায়িত্ব সকলের। তাই এসব স্থান সংরক্ষণের প্রতি সকলের দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।

 

অংশগ্রহণমূলক কাজ : ৪১

ইন্টারনেট সার্চ করে নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস প্রভৃতি দেশের ঐতিহাসিক ও তীর্থস্থানের একটি ছবির সম্মিলিত তালিকা তৈরি করো।

ছবিববিরণ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

                                                          অংশগ্রহণমূলক কাজ : ৪২

        তথ্যচিত্র এবং তথ্য অনুসন্ধান অভিজ্ঞতাটি সম্পর্কে তোমার লিখিত মতামত দাও।

                        অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন কার্যক্রম : তথ্যচিত্র এবং তথ্য অনুসন্ধান

কার্যক্রমের কী কী ভালো লেগেছে (ভালো দিক)
 
 
কার্যক্রম করতে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছ, (প্রতিবন্ধকতাসমূহ)
 
 
সমস্যা নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়?
 
 
ভবিষ্যতে আর কী কী উন্নয়ন করা যায় (পরামর্শ)
 
 

 

ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না ঘরে (√) চিহ্ন দাও:

অংশগ্রহণমূলক কাজ নং                                               সম্পূর্ণ করেছি
হ্যাঁনা
৩৯  
৪০  
৪১  
৪২  

করলে দর্শন ঐতিহাসিক ও তীর্থস্থান, হয় পুণ্য, বাড়ে জ্ঞান।।

Content added By