ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ - NCTB BOOK

এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে—

জীবজগতকে সাধারণ পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্য এবং মিল-অমিলের ভিত্তিতে বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয়; যেমন: অণুজীব, উদ্ভিদ এবং প্রাণী। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সাধারণ তুলনামূলক আলোচনা (গঠন, উপকারিতা, অপকারিতা)

উদ্ভিদ

 

(Xylem) টিস্যু ব্যবহার করা হয়। জাইলেম দিয়ে গাছ পানির পাশাপাশি খনিজ লবণ নেয় মাটি থেকে। অন্যদিকে পাতায় তৈরি খাদ্য মূলসহ অন্যান্য অঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় যুক্ত পরিবহন নলের নাম ফ্লোয়েম। (Phloem)। এই জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝে থাকে ক্যাসিয়াম (Cambium) স্তর, যা এই দুই রকমের পরিবাহী টিস্যুকে পরস্পর থেকে আলাদা করে। গাছের মূল ও কাণ্ডের আবরণের ভেতরে থাকে করটেক্স (Cortex)। একটা গাছকে কাঠামো দিয়ে তার পাতা ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ঐ গাছের কোও। এই কাও আবার গাছভেদে কিংবা অঙ্গভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। ফুলের বোঁটা হিসেবে আমরা যা দেখে থাকি তা মূলত এক ধরনের নরম কাও। কাঠ হিসেবে ব্যবহার উপযোগী কাও খুব শক্ত হয় এদের বাইরের পুরু বাকলের জন্য মজাদার পানীয় আখের রস পাই আমরা আখের রসালো কাণ্ডে সঞ্চিত খাদ্য থেকে। আবার, কাঁটাযুক্ত ক্যাক্টাস তাদের কাণ্ড পানি সঞ্চয়ের কাজে ব্যবহার করে ।

 

মূল 

 

গাছের যে অংশ মাটির সাথে যুক্ত থাকে, খাদ্য জমা রাখে, মাটি থেকে পানি ও খনিজ পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে তা মূল বা শিকড় (Root) নামে পরিচিত। মূলের গায়ে থাকে মূলরোম (Root hair) নামক ছোট চুলের মতো অংশ। মূলরোমের গঠন এমন থাকে যাতে খুব সহজেই বেশি পরিমাণে মাটি থেকে পানি ও দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে নিতে পারে। প্রত্যেক মূলের আগায় থাকে মূলটুপি (Root cap)। এটি মূলত কোষের শক্ত আবরণ যা মুলকে আঘাত থেকে রক্ষা করে। মূলের যে অংশ মাটির গভীরে প্রবেশ করে তা হলো প্রধান মূল। আবার ভূপৃষ্ঠতলের কাছাকাছি শাখামূল বিস্তৃত থাকে। এরা পানি শোষণের জন্য সুবিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে। মাটি থেকে পানি মূলে প্রবেশের পর মূল কোষে সৃষ্ট তরল চাপের প্রভাবে পানি কাণ্ডের মধ্য দিয়ে পাতার দিকে যেতে থাকে। আবার প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় গাছ পাতা থেকে পানি পত্ররন্ধ্র দিয়ে পরিবেশে ছেড়ে দেয়। এভাবে পানি হ্রাসের ফলে তৈরি হওয়া পানিশূন্যতা পূরণে মূল থেকে জাইলেমের মাধ্যমে পানি উপরে উঠতে থাকে।

 

 

বীজযুক্ত উদ্ভিদ

 

বীজ হলো উদ্ভিদের জীবনচক্রে তৈরি এমন একটি গঠন যা নতুন চারা গাছের জন্ম দিতে পারে। বীজে খাদ্য জমা থাকে। উপযুক্ত পরিবেশে বীজ থেকে নতুন গাছ বেড়ে ওঠে।

কখনো কী ভেবে দেখেছ বীজ কীভাবে তৈরি হয়?

নিচের ছবিটি ভালোভাবে লক্ষ করো। এতে বীজ সৃষ্টির প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। বীজযুক্ত গাছের যৌন প্রজনন ঘটে থাকে। গাছের পুংজনন কোষ বা পরাগরেণুর (Pollen) মিলন ঘটে স্ত্রী জনন কোষের ডিম্বাণুর (Egg cell) সাথে। ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু আর গর্ভাশয়ে ডিম্বাণু সৃষ্ট হয়। গর্ভদণ্ডের নিচেই গর্ভাশয় থাকে। পরাগধানী থেকে পরাগরেণু বাতাস, মৌমাছি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে ফুলের গর্তমুণ্ডে যে প্রক্রিয়ায় যায়, তাকে পরাগায়ন (Pollination) বলে। পরাগায়নের ফলেই ডিম্বাণুর সাথে পরাগরেণুর মিলন ঘটে। যখন একই ফুলের কিংবা একই গাছের ভিন্ন ফুলের মধ্যে পরাগায়ন ঘটে তাকে স্ব-পরাগায়ন বলে। আবার, দুইটি ভিন্ন গাছের ফুলের মধ্যে পরাগায়ন ঘটলে তাকে পর-পরাগায়ন বলে। ফুলের মাঝে পরাগরেণু আদান-প্রদানে নিযুক্ত থাকা মাধ্যমকে পরাগরেণু বাহুর বলে, যেমন- পাখি, কীটপতঙ্গ, বায়ু কিংবা পানি।

পরাগরেণু এসে পরাগমুণ্ডে পতিত হলে পরাগনালিকার সৃষ্টি হয়। এই নালিকা বেয়ে পরাগরেণু নিচে গর্ভাশয়ের দিকে যেতে থাকে। একসময় সেই গর্ভাশয়ে থাকা ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়। এই মিলন প্রক্রিয়া নিষেক (Fertilization) নামে পরিচিত। নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে ফল এবং বীজ তৈরি হয়।

বীজহীন ফলের উদ্ভিদ

 

কিছু কিছু উদ্ভিদের ফলে বীজ তৈরি হয় না। এসব ক্ষেত্রে স্পোরের (Spore) মাধ্যমে গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটে। স্পোর হলো এক বিশেষ ধরনের ছোট কোষ। স্পোর ক্যাপসুলের (Spore capsule) ভেতরে স্পোর সৃষ্টি হয়। সংবাহী টিস্যুহীন উদ্ভিদ, যেমন- শ্যাওলার প্রজনন স্পোরের মাধ্যমে ঘটে। আবার কিছু কিছু সংবাহী টিস্যুযুক্ত উদ্ভিদেও প্রজননে স্পোরের ব্যবহার দেখা যায়।

ক্ষেত্রে পাতার নির্যাস। ফুলকপি এবং একলি হলো মূলত ফুল যেগুলো আমরা খাই। এমনকি বীজও আমরা খেয়ে থাকি। যেমন- শিমের বীজ, চাল, বাদাম। উদ্ভিদের বীজ অনেক পুষ্টি সম্পন্ন হয়, কারণ বীজের মধ্যে খাদ্য সঞ্চিত থাকে।

মেরুদণ্ডী প্রাণী

পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তাদের ভেতর রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। যেমন—তোমার পোষা বিড়ালটির একটা শক্ত শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ড রয়েছে। তোমারও পিঠের মাঝ বরাবর একটি মেরুদণ্ড রয়েছে, যা তোমাকে সোজা হয়ে চলতে সহযোগিতা করে। আবার অনেক প্রাণী আছে যাদের এমন গঠন নেই। যেমন- কেঁচো। নিশ্চয়ই দেখে থাকবে কেঁচো কীভাবে বুকে ভর দিয়ে চলে। মেরুদণ্ডী প্রাণীরা হচ্ছে সেসব প্রাণী যাদের শরীরে বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত একটি মেরুদণ্ড থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাতটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। স্কুল পরিবেশ ও সমুদ্রের বৃহত্তম প্রাণীরাও এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

অমেরুদণ্ডী প্রাণী

সহজ কথায় বলা যায় – যাদের মেরুদণ্ড থাকে না তারাই অমেরুদণ্ডী প্রাণী। মেরুদণ্ডী প্রাণীরা সকল পরিবেশে বিস্তৃত হলেও এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নয়। সমস্ত প্রাণীর ৯৫ শতাংশেরও বেশি অমেরুদণ্ডী বা মেরুদণ্ডহীন প্রাণী। অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা নানা পরিবেশে বাস করে। মরুভূমিতে, সমুদ্রের তলদেশে এবং এমনকি অন্যান্য জীবের ভিতরেও এদের পাওয়া যায়। আর্থ্রোপড (Arthropod) হলো অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের বৃহত্তম দল, যাদের ১০ লক্ষেরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে কীটপতঙ্গ, মাকড়সা, কাঁকড়া, চিংড়ি, প্রভৃতি। চ্যাপ্টাকৃমি ও গোলকৃমি পানিতে, স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বা অন্যান্য প্রাণীর ভিতরে বাস করে। তাদের একটি সাধারণ কাঠামো রয়েছে। কিছু কিছু কীটের দেহ বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত থাকে, যেমন: কোঁচো। চ্যাপ্টাকৃমি বা গোলকৃমির ক্ষেত্রে এরকমটি দেখা যায়না। কেঁচোর মতো বেশিরভাগ দেহখণ্ড যুক্ত কীটগুলো স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বাস করে। আবার, কিছু কীট জলজ পরিবেশে বাস করতে পারে, যেমন: জোঁক। জেলিফিশ এবং প্রবাল নিডারিয়া (Cnidaria) শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কোষ রয়েছে, যা তারা মাছ এবং অন্যান্য জীবকে ধরতে ব্যবহার করে। হাইড্রা (Hydra) এবং সামুদ্রিক অ্যানিমোনগুলিও (Anemone) নিডারিয়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। স্পা (Sponge) পরিফেরা (Porifera) পর্বের অন্তর্গত। তারা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। স্পঞ্জগুলো সমুদ্রের তলদেশে। নিজেদেরকে সংযুক্ত করে এবং পানি থেকে ছোট ছোট কণা গ্রহণ করে। ঝিনুক এবং শামুক মলাস্কা (Mallusk) পর্বের অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ মলাস্কা পর্বভুক্ত প্রাণী জলে বাস করে। কিন্তু কিছু প্রাণী হলেও বাস করে, যেমন শামুক।

 

আর্থ্রোপড

আর্থ্রোপড হলো অমেরুদণ্ডী প্রাণী, যাদের বহিঃকঙ্কাল ( Exaskeleton) শক্ত প্রকৃতির এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে রক্ষায় কাজ করে। বহিঃকঙ্কাল প্রার্থীর বৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পায় না; ফলে প্রাণীর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে এটিকে অবশ্যই দেহ থেকে মুক্ত করে দিতে হয়। আর্থ্রোপডদেরও সন্ধিযুক্ত পা থাকে যা তাদের চলাফেরা করতে সাহায্য করে। তাদের দেহ কয়েকটি বিশেষ খণ্ডে বিভক্ত থাকে। আর্থ্রোপডের তিনটি বৃহত্তম গ্রুপ হলো ক্রাস্টাসিয়ান (Crustaceans), কীটপতঙ্গ (Insects) এবং অ্যারাকনিড (Arachnids)। ক্রাস্টাসিয়ানরা মিঠা জলে বা নোনা জলে কিংবা মাটিতে বাস করে। অ্যারাকনিডরাই সম্ভবত প্রথম প্রাণী যারা মাটিতে বাস করা শুরু করেছিল।

 

অণুজীব

খালি চোখে দেখা যায়না এমন জীবন্ত বস্তু হলো অণুজীব। অণুজীবগুলো এককোষী হতে পারে অর্থাৎ যাদের শুধু একটি কোষ আছে। কিছু অণুজীব বহুকোষী, যার একাধিক কোষ থাকে। অণুজীবদের জন্য থানা, বায়ু, পানি, বর্জ্য নিষ্পত্তির উপায় এবং তারা বসবাস করতে পারে এমন পরিবেশ প্রয়োজন। কিছু অণুজীব উৎপাদক (Producer) অর্থাৎ সূর্যালোক ব্যবহার করে সরল পদার্থ থেকে নিজেদের খাদ্য তৈরি করে (উদ্ভিদের মতো)। কিছু অণুজীব পরজীবী/ভোক্তা (consumer), যারা নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারেনা এবং খাদ্যের জন্য অন্যান্য জীবের উপর নির্ভরশীল। বেশিরভাগ অণুজীব রোগ সৃষ্টি করে না বরং অনেক অণুজীব সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অণুজীব বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের মতোই অণুজীবদের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। এই শ্রেণিবিন্যাসগুলো অণুজীবের আকার, গঠন, খাদ্যের উৎস, বাসস্থান, এবং চলাচল দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই অণুজীবের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং প্রোটিস্ট।

 

ব্যাকটেরিয়া

ব্যাকটেরিয়া হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় এবং সুপ্রচুর জীবগোষ্ঠী। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জানত না। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে অ্যান্টোনি ভন লিউয়েনহুক, একজন ডাচ বণিক তার দাঁতের স্ক্র্যাপিং পর্যবেক্ষণ করতে একটি সাধারণ অণুবীক্ষণযন্ত্র (মাইক্রোস্কোপ) ব্যবহার করেছিলেন। লিউয়েনহুক জানতেন না যে, তিনি যে ক্ষুদ্র জীবগুলি দেখেছিলেন তা ব্যাকটেরিয়া। ২০০ বছর পর এটি প্রমাণিত হয়েছিল যে, ব্যাকটেরিয়ারও জীবন রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া প্রায় সকল পরিবেশে বাস করে। এদের সমুদ্র, মাটি এবং প্রাণী এমনকি মানুষের অস্ত্রে ( ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র) পাওয়া যায়। পৃথিবী পৃষ্ঠের নিচে গভীর শিলাগুলিতেও এদের পাওয়া যায়। জীবাণুমুক্ত করা হয়নি এমন কোনো পৃষ্ঠ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আবৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীতে মোট ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা আশ্চর্যজনক। এটি অনুমান করা হয়েছে পাঁচ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন (পাঁচের পর ত্রিশটি শূন্য!)। তোমার দেহে কোষের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে।

ব্যাকটেরিয়া একটি নির্দিষ্ট আকার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তারপর দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রজনন করে। এটি ঘটে যখন একটি মাতৃকোষ বিভক্ত হয়ে দুটি অভিন্ন অপত্যকোষ তৈরি করে। এর ফলে খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আদর্শ পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা প্রতি ২০ মিনিটে দ্বিগুণ হতে পারে। এই ধরনের দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি একটি অস্থিতিশীল পরিবেশে ব্যাকটেরিয়াকে অভিযোজন সহায়তা করে। করতে সহায়তা করে। 

ব্যাকটেরিয়া দুটি রাজ্যে বিভক্ত। ইউব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিব্যাকটেরিয়া। ইউব্যাকটেরিয়া বা “প্রকৃত ব্যাকটেরিয়া” প্রায় সব জায়গায় বসবাস করতে পারে, যেমন মাটি, পানি, বায়ু এমনকি তোমার শরীরেও। আর্কিব্যাকটেরিয়া, অর্থাৎ “আদি ব্যাকটেরিয়া” অনেক প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করতে পারে যেমন উষ্ণ প্রস্রবণ, সমুদ্রের তলদেশে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ এবং অতি লবণাক্ত পরিবেশ। কিছু আর্কিব্যাকটেরিয়াকে তাদের উৎপত্তিস্থলের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। ইউব্যাকটেরিয়াকে আকারের উপর ভিত্তি করে বিভক্ত করা হয়, যেমন—বড়, গোলাকার বা সর্পিল আকৃতির। বৃত্তাকার ইউব্যাকটেরিয়াগুলি গুচ্ছ বা দীর্ঘ চেইন আকারে জন্মাতে পারে।

 

ছত্রাক

ছত্রাক আসলে কী? তুমি কি কখনো রুটির উপর নীলাভ সবুজ কিছু জন্মাতে দেখেছ? এগুলো হলো ছত্রাক। ছত্রাক, ফানজাই (Fungi) (একবচন – ফাঙ্গাল) রাজ্যের অন্তর্গত জীব। তারা প্রাণী বা উদ্ভিদ নয়। ফলে তারা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না এবং শোষণের (Absorption) মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে। বেশিরভাগ ছত্রাক বহুকোষী, তবে কিছু এককোষী হিসাবে বিদ্যমান। ছত্রাক বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন ইস্ট, মোল্ড এবং মাশরুম। ছত্রাকের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন প্রজাতি থাকতে পারে। তোমরা সহজেই একটি মাইক্রোস্কোপ ছাড়া রুটির মোল্ড এবং মাশরুম, দেখতে পারবে, কিন্তু অধিকাংশ ছত্রাক খালি চোখে

দেখতে পাবে না। ছত্রাক নানা পরিবেশে বাস করে যেখানে তোমরা এদের সহজে দেখতে পারবেনা; যেমন, মাটির গভীরে, ক্ষয়প্রাপ্ত গাছের গুঁড়ির নিচে বা গাছপালা অথবা প্রাণীর ভিতরে। কিছু ছত্রাক অন্যান্য ছত্রাকের মধ্যে বা তার উপরে বসবাস করতে পারে। আমাদের পরিবেশের জন্য ছত্রাক খুব প্রয়োজন। ছত্রাক বিভিন্ন পদার্থকে পচিয়ে তা থেকে পুষ্টি উৎপাদন এবং অন্যান্য জীবের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য তৈরি করতে সাহায্য করে। ছত্রাক আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে এবং তারা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের জন্য উপকারী।

প্রোটিস্টা

এই রাজ্যের জীবগুলো ব্যাকটেরিয়ার ন্যায় এককোষী কিংবা দেখতে অনেক সময় ছত্রাকের মতো। তারা প্রাণীর মতো খাবার খোঁজে বা উদ্ভিদের মতো সালোকসংশ্লেষণ করে। এত মিল থাকার পরেও ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ কিংবা ছত্রাক কোনোটির সাথেই তাদের মিল পাওয়া যায়না। প্রোটিস্টরা সুকেন্দ্রিক জীবের একটি বৃহৎ এবং বৈচিত্র্যময় শ্রেণি। যেসব সুকেন্দ্রিক জীব এই প্রোটিস্টা রাজাটি তৈরি করে, অন্যান্য রাজ্যের প্রাণীদের সাথে তাদের খুব বেশি মিল নেই। তারা তুলনামূলকভাবে সরল প্রকৃতির। প্রোটিস্টরা গঠনগতভাবে একে অপরের থেকে খুব আলাদা। কোনোটি অ্যামিবার মতো ক্ষুদ্র ও এককোষী, আবার কোনোটি সামুদ্রিক শৈবালের মতো বড় এবং বহুকোষী। অবশ্য, উদ্ভিদের তুলনায় বহুকোষী প্রোটিস্ট গঠনগতভাবে সহজ।

 

Content added By