ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান অনুশীলন বই - NCTB BOOK

প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন


এই শিখন অভিজ্ঞতার শুরুতেই একটা গল্প পড়ে নেয়া যাক। গল্প বলা বোধ হয় ঠিক হলো না। কারণ, নিচের ঘটনাটা আগাগোড়া সত্য কাহিনি, ইতিহাসের পাতা থেকে নেওয়া।

অভিশপ্ত চাঁদ

১৫০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক সন্ধ্যা, জামাইকার আদিবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে আবিষ্কার করল, পূর্ণিমার ধবধবে চাঁদকে দিলে মানে একরাশ অন্ধকার, তাহলে কি সত্যিই ঈশ্বরের কোষ নেমে আসছে তাদের ওপর

ঘটনার শুরু বেশ কয়েক মাস আগে। ঘটনার চরিত্রদের মধ্যে একজনের নাম তোমরা অনেকেই শুনে থাকবে, তার নাম হলো ক্রিস্টোফার কলম্বাস। হ্যাঁ, স্পেনের বিখ্যাত অভিযাত্রিক কলম্বাস, যিনি প্রথম শ্বেতাঙ্গ হিসেবে আমেরিকার মাটিতে পা রেখেছিলেন বলে আমরা জানি।

কলম্বাসের জাহাজের বহর জ্যামাইকান সৈকতে নোঙর করে ১৫০৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে। জ্যামাইকার আদিবাসীরা নিতান্তই নিরাহ ও শান্তিপ্রিয়, রীতিমতো উষ্ণ অভ্যর্থনাই করেছিল তারা এই বিদেশি নাবিকদের। সামান্য কিছু জিনিসের বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে খাবার ও অন্যান্য রসদ জোগাড় করতে কলম্বাসের তাই খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।

সমস্যা শুরু হলো মাস ছয়েক পর। একে তো মাসের পর মাস নিয়মিত খাবার পাঠাতে পাঠাতে স্বাভাবিকভাবেই আদিবাসীরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠছিল, তার সঙ্গে যোগ হলো কলম্বাসের লোকজনের ঔদ্ধত্য। রীতিমতো অরাজকতা শুরু করে দিল তারা এই এলাকায়। ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে আদিবাসীরা সাফ জানিয়ে দিল, এদের কাউতে আর কোনো সাহায্য তারা করতে পারবে না। বিদেশিরা যাতে নিজেদেরটা নিজেরা ব্যবস্থা করে নেয়।

কলম্বাস পড়লেন মহা গ্যাঁড়াকলে। কারণ, স্পেন থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আসার আগে তাদের এই এলাকা ছেড়ে যাবার কোনো উপায় নেই। তার বহরে সাকুল্যে জাহাজ আছে মোটে দুটি, বাকি জাহাজ আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। তার চেয়েও বড় বিপদ হলো, জাহাজে নেই কোনোরকম রসদ। শেষ ভরসা ছিল এই আদিবাসীরা; তারাও এখন বেঁকে বসেছে। মরিয়া হয়ে ধূর্ত কলম্বাস শেষমেশ অদ্ভূত এক ফন্দি আঁটলেন।

স্থানীয় আদিবাসীদের যিনি নেতা, তাকে ডেকে পাঠালেন কলম্বাস। তিনি আসার পর কলম্বাস গম্ভীর মুখে জানালেন যে, তাঁর লোকদের রসদ দিয়ে সাহায্য না করায় সাদা মানুষদের ঈশ্বর আদিবাসীদের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এখন সেই ক্রোধের পরিণাম ভোগ করতে হবে এখানকার মানুষদের। আজ থেকে তিন দিন পর পূর্ণিমার যে চাঁদ আকাশে উঠবে, সেটিকে গিলে নেবে অন্ধকার শক্তি, আর আদিবাসীদের ওপর নেমে আসবে মহাদুর্যোগ!

স্বভাবতই তার এসব ভয় দেখানোকে স্থানীয় সেই নেতা খুব একটা আমলে নিলেন না। তিন দিন পার হলো। সেদিন সন্ধ্যায় জ্যামাইকার আদিবাসীরা আতঙ্ক ভরা বিস্ময়ে আবিষ্কার করল, সেদিনের চাঁদ আর দশটা পূর্ণিমার চাঁদের মতো নয়। সত্যি সত্যি পূর্ণিমার চাঁদকে যেন গিলে নিচ্ছে কোনো এক অশুভ শক্তি, একরাশ অন্ধকার ধীরে ধীরে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদের আলোকে। সহজ সরল আদিবাসীরা সবাই ভয়ে, আতয়ে ছুটতে ছুটতে হাজির হলো কলম্বাসের কাছে। করজোড়ে ক্ষমা চাইল, হাতে পায়ে ধরল যাতে কলম্বাস তার ঈশ্বরকে বোঝান, এই অভিশাপ তুলে নেন! বিনিময়ে এই পুরো দলকে যত দিন দরকার সমস্ত রসদ সরবরাহ করতে তাদের কোনো আপত্তি নেই! 

কলম্বাস এটার অপেক্ষাই করছিলেন। ঈশ্বরের সঙ্গে একান্তে কথা বলার জন্য নিজের কেবিনের দরজা বন্ধ করে বসলেন। ঘন্টার পর ঘণ্টা যায়, এদিকে চাঁদকে তখন প্রায় গ্রাস করে নিয়েছে কালো অন্ধকার, সবার আতঙ্ক তখন তুঙ্গে। অনেকক্ষণ পর কেবিনের দরজা খুলল, কলম্বাস বের হলেন সুখবর নিয়ে। ঈশ্বরের রাগ কমেছে, তিনি রাজি হয়েছেন তার অভিশাপ তুলে নিতে। সত্যিই তাই- কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদের ওপর চেপে বসা অন্ধকার কাটতে শুরু করল। আস্তে আস্তে আকাশে ফিরে এল পুরোনো সেই ধবধবে চাঁদ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল এলাকার লোকজন। ওই ঘটনার পর আরো কয়েক মাস কলম্বাসকে দলবল নিয়ে এই এলাকায় থাকতে হয়েছিল, তবে তাঁদের রসদের সংকট আর কখনো হয়নি!

  • তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে বুঝে ফেলেছ যে ওই রাতে আসলে কী ঘটেছিল। ঠিক ধরেছ, সেদিন রাতে ছিল চন্দ্রগ্রহণ এবং তা কলম্বাস আগেই জানতেন। এই তথ্য কাজে লাগিয়েই ওখানকার সরল আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণার এই কুবুদ্ধিটা তার মাথায় আসে। ওই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল বিখ্যাত একজন জার্মান জ্যোতির্বিদের তৈরি একটা পঞ্জিকা, যাতে বেশ কয়েক বছরের চাঁদ, সূর্যের গতিপথের হিসাব নিকাশ করা ছিল। সেযুগে সমুদ্রযাত্রায় জাহাজের গতিপথ ঠিক রাখার একমাত্র উপায় ছিল আকাশের চাঁদ, তারা, সূর্যের গতিবিধি; নাবিকদের তাই এরকম পঞ্জিকা সঙ্গে রাখার চল ছিল। আর এই পঞ্জিকা কাজে লাগিয়ে চন্দ্রগ্রহণের সঠিক তারিখটা বের করা কলম্বাসের জন্য কোনো ব্যাপারই ছিল না। চন্দ্রগ্রহণ কতক্ষণ ধরে ঘটবে সেই সময়টাও জানা ছিল, তাই সেই পুরোটা সময় তিনি কেবিনে ঢুকে দরজা আটকে বসে ছিলেন!
  •  এই পুরো গল্পটা কীভাবে জানা গেল? এই অভিযানে কলম্বাসের সঙ্গী ছিল তার নিজের ছেলে- ফার্দিনান্দ। তার লিখে যাওয়া বয়ানেই পরে জানা যায় এই অদ্ভুত কাহিনি।
  • জ্যোতির্বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কলম্বাস যদিও খুব একটা সৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন নি, কিন্তু তা তো আর বিজ্ঞানের দোষ নয়া এই পঞ্জিকা যে জ্যোতির্বিদ বানিয়েছিলেন, তাকে তো অনেক খাটাখাটনি করে, কঠিন একটা হিসাব করে বের করতে হয়েছিল চন্দ্রগ্রহণের দিনক্ষণ। সেই কঠিন হিসাব-নিকাশে আমরা না হয় না গেলাম, কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের সময় আসলে ঠিক কী ঘটে তা কি তোমরা বলতে পারো?
  • ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নিজেরা আলোচনা করো। আলোচনার ভিত্তিতে চন্দ্রগ্রহণ কীভাবে ঘটে সে ব্যাপারে তোমার ব্যাখ্যা নিচে লিখে বা এঁকে রাখো-

 

 

 

 

 

  • এবার তোমাদের ধারণা অন্য দলগুলোর সঙ্গেও শেয়ার করে দেখতে পারো। তবে তোমরা যে ব্যাখ্যা দাঁড় করালে তা কতখানি সঠিক সেটা যাচাই করে দেখা দরকার। যাচাই করার সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো নিজেরা মডেল বানিয়ে দেখা। আমরা সবাই জানি যে, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘুরছে, আবার চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে। আর চাঁদের আলো যে তার নিজের নয় বরং সূর্যের থেকে ধার করা; সেকথাও তো তোমরা সকলেই জানো। চাঁদ, সূর্য, আর পৃথিবীর গতিপথের একটা মডেল বানিয়ে সেই মডেলে তোমরা প্রমাণ করে দিতে পারো যে সূর্য, চাঁদ, আর পৃথিবী ঠিক কোন অবস্থানে। থাকলে চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে। তোমরা ইতোমধ্যেই জানো যে, সূর্যসহ মহাকাশের কোনো বস্তুই পুরোপুরি স্থির নয়। তবে এই মুহূর্তে সৌরজগতের বাইরের কোনো বস্তু নিয়ে যেহেতু আমাদের মাথা ঘামাতে হচ্ছে না, কাজেই সূর্যকে আপাতত স্থির ধরে নিলেই মডেল বানাতে সুবিধা।
  • তোমরা দলের বন্ধুরা আলাপ করে দেখো মডেলটা তোমরা কীভাবে বানাতে চাও। সূর্যের আলো কোথায় কীভাবে পড়ছে এটা যেহেতু তোমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে, কোনো একটা আলোর উৎসকে সূর্য ধরে নিলে সুবিধা। সেটা হতে পারে একটা বাল্ব বা মোমবাতি, ভেবে দেখো কী ব্যবহার করবে। আবার চাঁদ ও পৃথিবী বানানোর জন্য গোল বলের মতো কোনো বস্তু ব্যবহার করতে পারো। হালকা পিংপং বল রং করেও করতে পারো, কিংবা শোলা দিয়ে বল বানিয়েও নিতে পারো। এর বাইরেও হাজারটা আইডিয়া আসতে পারে, তোমরা ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। কোন এলাকা থেকে কখন চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে তা বোঝার জন্য পৃথিবীপৃষ্ঠে কোথায় কখন আলো পড়বে তা পর্যবেক্ষণ করা করেছে। দরকার। সেজন্য একটা গ্লোব দেখে দেখে পৃথিবীর মডেলের গায়ে মহাদেশগুলো এঁকে নিতে পারো। তবে তার আগে ভৌগোলিক রেখাগুলো এঁকে নাও।
  • শুরুতেই উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরুর অবস্থান ঠিক করে নাও। এবার বিষুবরেখার উত্তরে আর দক্ষিণে গ্লোব দেখে দেখে মহাদেশগুলো বসিয়ে নাও। আরও মজা হয় যদি পৃথিবীর মডেলে কয়েকটা দেশকে। চিহ্নিত করে নিতে পারো; যেমন- বাংলাদেশ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ব্রাজিল এ রকম কয়েকটা দেশের অবস্থান চিহ্ন দিয়ে রাখতে পারো। তাহলে কোন দেশ থেকে কখন সূর্য ও চাঁদকে কোন অবস্থানে দেখা যাবে তা সহজেই বুঝতে পারবে।
  • সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর কক্ষপথ, আর পৃথিবীকে বিস্তৃত। ঘিরে চাঁদের কক্ষপথ দেখানোর জন্য সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দেখানো যেতে পারে। আবার চাইলে অন্য বুদ্ধিও বের করতে পারো। পরের সেশনের আগেই মডেল তৈরি থাকা চাই।

 

তৃতীয় সেশন


  • আজকের সেশনে সবগুলো দল নিশ্চয়ই নিজেদের বানানো মডেলগুলো নিয়ে এসেছ। তোমাদের মডেল বানানোর শেষে পৃথিবী ও চাঁদের বিভিন্ন অবস্থান সেট করে করে দেখো সূর্যের আলো কোথায় কীভাবে পড়ছে। চন্দ্রগ্রহণের ব্যাখ্যায় যাবার আগে আজকের সেশনে পুরোনো বিদ্যাগুলো একটু ঝালাই করে নেওয়া যাক, কী বল?
  • নিচের ক্লাসে তোমরা পৃথিবীর আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি পড়েছ। দিন রাতের তফাৎ কেন হয় তাও দেখেছ। তোমাদের মডেলে কি তোমরা সূর্যের চারপাশে পৃথিবীকে ঘুরিয়ে দেখাতে পারো, কখন দিন আর কখন রাত হয়?
  • এবার একটা ছোট প্রশ্ন, তোমরা মাত্র যেভাবে দেখালে, সেভাবে থাকলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় দিন আর রাতের দৈর্ঘ্য কি সমান হবে? কোনো একটা জায়গা বেছে নিয়ে ভালো করে লক্ষ করো। এবার ভেবে দেখো, আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা কী বলে? সারা বছর কি একই সময়ে সূর্য ডোবে? তোমার অভিজ্ঞতা থেকে নিচে লিখে রাখো-

 শীতকালে দিনের দৈর্ঘ্য রাতের দৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশি নাকি কম?

গরমকালে দিনের দৈর্ঘ্যাঁ রাতের দৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশি নাকি কম?

  • এবার তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের নবম অধ্যায় থেকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির অংশটুকু পড়ে ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করে নাও। দিন রাতের দৈর্ঘ্যের তফাৎ কেন হয় নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ? তোমাদের মডেলে পৃথিবী কি ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলানো ছিল? যদি না থাকে, তবে এখন সংশোধন করে নাও।
  • এবার আসা যাক ঋতু পরিবর্তনের বিষয়ে। এটাও তোমরা আগের ক্লাসে পড়ে এসেছ, তারপরেও একটু ঝালাই করে নেওয়া যাক। মডেল বানানোর সময়ে যে দেশগুলোতে চিহ্ন দিয়ে রেখেছিলে মনে আছে? এখন আবার তোমাদের মডেলে পৃথিবীকে সূর্যের চারপাশে ঘুরিয়ে কোন দেশে সূর্যের আলো কীভাবে পড়ছে তা লক্ষ করো। তারপর নিচের তারিখগুলোতে কোন দেশে ঠান্ডা আর কোন দেশে গরম পড়বে তা নিচে নোট নাও। তবে তার আগে তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে 'ঋতু' ও ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলে আবহাওয়ার পার্থক্য। অংশটা পড়ে দলে আলোচনা করে নিতে পারো।
দেশের নামবছরের নির্দিষ্ট সময়ে তাপমাত্রার অনুভূতি (ঠান্ডা গরম / ঠাণ্ডা ও গরমের মাঝামাঝি)

২১ জুন

২৩ সেপ্টেম্বর

২২ ডিসেম্বর

২১ মার্চ

বাংলাদেশ    
অস্ট্রেলিয়া    
আমেরিকা    
ব্রাজিল    
ইংল্যান্ড    
     
     

 

চতুর্থ ও পঞ্চম সেশন


  • সূর্য আর পৃথিবী নিয়ে অনেক কথাবার্তা তো হলো। এবার একটু চাঁদের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাক। চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল, সেখানেই ফিরে যাব আমরা। তবে তার আগে চাঁদ বিষয়ক আমাদের সবচেয়ে পরিচিত অভিজ্ঞতা দুটি একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক। তোমরা সবাই নিশ্চয়ই পূর্ণিমা আর অমাবস্যা দেখেছ, কেন ঘটে তাও হয়তো অনেকেই জানো। তোমাদের বানানো মডেলে সূর্য, চাঁদ, আর পৃথিবীর অবস্থান সেট করে দেখাতে পারবে কখন পূর্ণিমা আর কখন অমাবস্যা হয়? দলের সকলে মিলে চেষ্টা করে দেখো।
  • এবার তোমাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী পূর্ণিমা আর অমাবস্যা কীভাবে ঘটে তা নিচের ফাঁকা জায়গায় এঁকে দেখাও এখন তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে চন্দ্রকলা অংশটুকু পড়ে নিয়ে তোমাদের ধারণার সঙ্গে মিলিয়ে দেখো।

 

 

 

 

পূর্ণিমা 


 

 

 

 

আমবস্যা 

এখন তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে চন্দ্রকলা অংশটুকু পড়ে নিয়ে তোমাদের ধারণার সঙ্গে মিলিয়ে দেখো।

 

বাড়ির কাজ

  • চন্দ্রকলা সম্পর্কে যেহেতু জেনেছ, আজ রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো, চাঁদকে কেমন দেখায়। আজকের চাঁদের একটা ছবি পাশের ফাঁকা জায়গায় এঁকে রেখো।
  • চাঁদের আকার দেখে কি বুঝতে পারছ, এখন শুক্লপক্ষ নাকি কৃষ্ণপক্ষ? তোমার ধারণা নিচে লিখে রাখো, পরে মিলিয়ে দেখো-
  • এবার চন্দ্রগ্রহণের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। প্রথম সেশনে তোমরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলে তা থেকে মডেলে দেখাও, পৃথিবী, সূর্য, ও চাঁদের অবস্থান কেমন হলে চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে? একইভাবে কখন সূর্যগ্রহণ ঘটবে তা-ও বের করতে পারবে? তোমাদের মডেল থেকে এই ব্যাখ্যা অন্যদের দেখাও তোমরাও ঘুরে ঘুরে বাকিদেরটা দেখো।
  • সহজ ভাষায় অনেকেই হয়তো বলেছ যে পৃথিবীর ছায়া যখন চাঁদের ওপর পড়ে, অর্থাৎ সূর্যের আলো চাঁদের গায়ে পড়বার আগে মাঝপথে পৃথিবীতে বাধা পায়, তখন চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে। পৃথিবী, চাঁদ, আর সূর্যের মধ্যে একমাত্র সূর্যেরই নিজস্ব আলো আছে, এবং সেই আলো চাঁদের পিঠে পড়ে প্রতিফলিত হয় বলেই আমরা পূর্ণিমার আলো দেখতে পাই। কাজেই যখনই পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে সূর্য আর চাঁদের মধ্যখানে চলে আসে, চাঁদের গায়ে পৃথিবীর ছায়া পড়ে, পৃথিবী থেকে আমরা দেখতে। পাই চাঁদকে যেন একটা ঘন অন্ধকার গিলে নিচ্ছে; এই ঘটনাকে আমরা বলি চন্দ্রগ্রহণ। একইভাবে চাঁদ ঘুরতে ঘুরতে যদি কখনো পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যখানে এসে পড়ে, তখন তা সূর্যের আলোকে ঢেকে দেয়। পৃথিবী থেকে সূর্যের ওপর এই ছায়াই আমরা দেখি, আর এই ঘটনাকে বলি সূর্যগ্রহণ।
  • এবার একটু ভেবে দেখো তো কোনো খটকা লাগছে কিনা? পূর্ণিমা আর চন্দ্রহণের ব্যাখ্যায় কি কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছ? এই দুটি ঘটনায় পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদের অবস্থানের তুলনা করে দেখো।

তোমার চিন্তা নিচে লিখে রাখো-

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

  • এই দুটি ঘটনায় মিল পেয়ে থাকলে এবার একটু ভেবে দেখো, প্রতি পূর্ণিমাতেই আমরা কেন চন্দ্রগ্রহণ দেখি না? আবার একইভাবে প্রতি অমাবস্যাতেই কেন সূর্যগ্রহণ ঘটে না? নিজেরা আলাপ করে দেখো সবাই কী ভাবছে। এবার দলে বসে তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে চন্দ্রগ্রহণের অংশটুকু পড়ে ক্লাসে সবার সঙ্গে আলোচনায় যোগ দাও।
  • এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছ, পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে যে বৃত্তাকারে ঘুরছে, আর চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে যেভাবে বৃত্তাকারে ঘুরছে; এই দুই বৃত্তাকার পথের তল একই নয়। তোমাদের মডেলটিকে কি সেক্ষেত্রে আবার সংশোধন প্রয়োজন? কীভাবে তা করা যায় নিজেরা আলাপ করে দেখো। প্রয়োজনে সেশনের পরেও সংশোধনের কাজ করতে পারো।
  • এবার আরেকটা নতুন প্রসঙ্গে আসা যাক। তোমরা ইতোমধ্যেই জানো যে মহাবিশ্বের সকল বস্তুই
  • একে অপরকে আকর্ষণ করে। বস্তুগুলো যত ভারী হবে এবং একে অপরের থেকে যত কাছাকাছি থাকবে এই আকর্ষণ তত বেশি হবে। চাঁদ যেহেতু পৃথিবী থেকে বেশি কাছাকাছি, পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ অনেক বেশি কাজ করে এবং সেই কারণে বেশ অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটে।
  • তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে থাকো, হয়তো দেখে থাকবে ভাটার সময় সমুদ্র সৈকতে লাল পতাকা ওড়ানো হয়, আর সতর্ক করা হয় কেউ যাতে পানিতে নেমে বেশিদূর না। যায়। ভাটার সময় সাগরে পানি কমতে থাকে, আবার জোয়ারের সময় বাড়তে থাকে। এই ঘটনার মুল কারণ হলো পৃথিবীর প্রতি চাঁদের আকর্ষণ। কিন্তু এটা কীভাবে ঘটে তোমরা কি ধারণা করতে পারো?
  • বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে অনুমান করার চেষ্টা করে দেখো। এরপর তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে জোয়ার-ভাটা, তেজ কটাল-মরা কটালের ব্যাখ্যা পড়ে নিয়ে শিক্ষকসহ ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দাও।
  • ইন্টারনেট বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে জেনে নাও পরবর্তী চন্দ্রগ্রহণের দিনক্ষণ, তাহলে নিজেরাই এই দারুণ ঘটনাটির সাক্ষী হতে পারবে।
  • চন্দ্রগ্রহণ ঘটলেই কি পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে তা দেখা যাবে? তোমার কী ধারণা? তোমাদের চাঁদ-সূর্য-পৃথিবীর মডেল দেখে বোঝার চেষ্টা করো, বন্ধুরা আলোচনাও করে দেখতে পারো। আলোচনার পর তোমার যা মনে হয় তা নিচে লেখো, তোমার মতামতের পক্ষে যুক্তিগুলো লিখতেও ভুলো না যেন!

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

 

Content added || updated By