সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - জীবন ও জীবিকা - NCTB BOOK

শহুরে জীবনে সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই শোনা যায় ‘ছাই নিবেন গো, ছাই!' কিংবা দরজায় এসে দাঁড়ালে দেখা যায়, পত্রিকা বিলি করে গেছেন হকার। আর গ্রামীণ জীবনে সাতসকালেই গোয়ালা এসে দুধ দিয়ে যান, পাখির কাকলীর সাথে যুক্ত হয় মুড়ি-মুড়কিওয়ালার হাঁকডাক। আমাদের চারপাশে কত পেশার মানুষই না বসবাস করেন! ফেরিওয়ালা, গোয়ালা, হকার, কৃষক, জেলে, তাঁতি, চিকিৎসক, দোকানদার, শিক্ষক, নার্স, কলকারখানার শ্রমিক, ইলেক্ট্রিশিয়ান ইত্যাদি আরও কত! আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন সহজ, সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দময় করতে প্রত্যেক পেশারই রয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিশাল অবদান । ষষ্ঠ শ্রেণিতে পেশা ও পেশার ধরন সম্পর্কে আমরা কিছুটা জেনেছি। এখানে আমরা আরেকটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

দলগত কাজ

ফিরে দেখা: শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক দলগত আলোচনার মাধ্যমে আমাদের চারপাশে আমরা যেসব পেশার মানুষের দেখা পাই তাদের কাজ বা পেশাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করি। কাজটির জন্য নিচের বক্সটি ব্যবহার করি, প্রয়োজনে আরো ঘর যোগ করি:

বক্স ২.১: পেশাজীবীদের তালিকা

 

 

 

 

 

 

 

 

অর্থনৈতিক খাতের ধারণায়ন

আমরা দেখেছি, আমাদের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতজন সবাই একই ধরনের কাজ করেন না । । যেমন-কৃষক ধান উৎপাদন করেন, জেলেরা মাছ চাষ করেন। আবার অনেকেই আছে যারা বিভিন্ন কলকারখানায় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের সাথে জড়িত যেমন গার্মেন্টসে শ্রমিক কর্মচারীরা পোশাক তৈরির সাথে যুক্ত রয়েছেন, ঔষধ শিল্পের সাথে জড়িত পেশাজীবিরা ওষুধ উৎপাদন করছেন, অনেকে আসবাবপত্র উৎপাদনের সাথে জড়িত রয়েছেন। আমাদের আশেপাশে আবার অনেকেই রয়েছেন যারা সরাসরি কোনো উৎপাদনের সাথে জড়িত নন, কিন্তু সমাজের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করছেন, হাসপাতালে অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা প্রদান করছেন ইত্যাদি। এভাবে সমাজে বিভিন্ন ধরনের লোকজন বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। এসকল কাজ বা পেশাকে অর্থনৈতিকভাবে শ্রেণিকরণ করা হয়ে থাকে, যার প্রতিটি শ্রেণিকে বলা হয় অর্থনৈতিক খাত। বাংলাদেশের সকল অর্থনৈতিক খাতকে তিনটি খাতে বিভক্ত করা হয়। কৃষি খাত, শিল্প খাত এবং সেবা খাত।

এবার আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির তিনটি মূল খাত এবং সময়ের সাথে খাতগুলোর পরিবর্তনের ধারা সম্পর্কে জানব।

কৃষি খাত

কৃষি খাত চাষাবাদ, বীজবপন, শস্য-উদ্ভিদ পরিচর্যা, ফসল কর্তন ইত্যাদিসহ উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ, গুদামজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিস্তৃত। ফসল উৎপাদন ছাড়াও মাছ চাষ, পশুপাখি পালন, বনায়নও কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্ত। আমরা যদি তুলার কথা ধরি, কৃষক তুলা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে দেন। তিনি কিন্তু তুলা থেকে পোশাক তৈরি করে না। সুতরাং কৃষকের তুলা উৎপাদনের বিষয়গুলো কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অন্যান্য খাতের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হলেও কৃষি খাতের অবদান কিন্তু কমে যায়নি। খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিক উন্নতি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের মূল উৎস হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান ব্যাপক। মূলতঃ শস্য উৎপাদন, প্রাণিসম্পদ, মৎস্যসম্পদ, বন সম্পদসহ চারটি উপখাত নিয়ে কৃষি খাত গঠিত।

 

শিল্প খাত

আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু ব্যবহার করি যা সরাসরি প্রকৃতি থেকে আসে না। যেমন- আমরা যে পোষাক ব্যবহার করি, তা কিন্তু সরাসরি আমরা কৃষকের নিকট থেকে পাই না। আড়তদার কৃষকের নিকট থেকে তুলা কিনে তা কারখানায় বিক্রি করে দেন। শিল্প বা কারখানায় তুলা থেকে সুতা এবং কাপড় তৈরি হয়। অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে তা কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে আমাদের ব্যবহার্য জিনিসে পরিণত করা হয়। এভাবে আরও অনেক দ্রব্যাদি আছে যেগুলোকে শিল্প-কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। প্রকৃতিপ্রদত্ত সম্পদ বা কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে কারখানাভিত্তিক প্রস্তুত প্রণালির মাধ্যমে ব্যবহার্য দ্রব্যে রূপান্তরিত করা হয়। এধরনের কর্মকাণ্ডগুলো শিল্পখাতের আওতাভূক্ত। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে আমরা আরও বেশি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি । ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

সেবা খাত

কৃষি এবং শিল্প খাত ছাড়াও আরও একটি খাত আমাদের জীবনযাপনকে সহজ ও সাবলীল করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে তা হলো সেবা খাত। যেমন- পোশাকের কথা, কৃষক তুলা উৎপাদন করে, শিল্পে তা সুতা ও কাপড়ে পরিণত হয়। কিন্তু আমরা তো সরাসরি কাপড় হাতে পাই না। বিক্রয় ব্যবস্থাপনা এবং টেইলারিং সেবা না থাকলে আমরা পছন্দের পোশাক তৈরিই করতে পারতাম না। আবার ধরি, মোবাইল ফোন সেবা। এটি যদি না থাকত তাহলে জীবনে কীরকম পরিস্থিতি হতো, তা কি ভাবতে পারি? মোবাইল ফোন সেবা এখন আর শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এর সাহায্যে তথ্য অনুসন্ধান, পড়াশুনা সবই করা যায়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমরা ব্যাংকিং সম্পর্কে জেনেছি। এ যুগে ব্যাংকিং সেবা না থাকলে আমরা কী বিপদেই না পড়তাম! শিক্ষা, ইন্টারনেট সেবা, চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি অনেক সেবা আছে যা ছাড়া আমরা বর্তমান জীবন যাপন কল্পনাই করতে পারি না। এসকল সেবা কার্যক্রম আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। অর্থনৈতিক যেসব কাজের মাধ্যমে এসকল অবস্তুগত দ্রব্য উৎপাদিত হয় অর্থাৎ যা দৃশ্যমান নয় কিন্তু মানুষের বিভিন্ন অভাব পূরণ করে এবং যার বিনিময় মূল্য রয়েছে তাই সেবা। বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিপণন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, পরিবহন, যোগাযোগ, ব্যাংক, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সেবাকর্ম উৎপন্ন হয়।

দলগত কাজ

ক. উপরের কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতসমূহের বর্ণনার আলোকে বক্স ২.১ এর তালিকার পেশা বা কাজগুলোকে কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতভুক্ত করো।

খ. তোমার এলাকার পেশা ছাড়াও কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য পেশা বা কাজের নামও ছক ২.১ এ যুক্ত করো।

ছক ২.১ : অর্থনৈতিক খাতওয়ারি পেশা বা কাজের তালিকা

কৃষি খাতের পেশা বা কাজের নামশিল্প খাতের পেশা বা কাজের নামসেবা খাতের পেশা বা কাজের নাম
   
   
   
   
   
   
   
   
   

 

প্রযুক্তি এবং চাহিদার প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক খাতসমূহের ধারাবাহিক পরিবর্তন

একটা সময় ছিল যখন একজন রিকসা চালক বা ভ্যানে করে সবজি বিক্রেতা বা ফেরিওয়ালা অথবা গ্রামে এবং শহরের এই কাতারের মানুষেরা ব্যাংকের ত্রিসীমনায় যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। মোবাইল সেবা এবং প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিগত এক দশকে এর আমুল পরিবর্তন হয়েছে। এখন তারা মোবাইল ফোনের বাটনে ক্লিকের মাধ্যমে ব্যাংকের সাথে যুক্ত হয়ে যেকোনো সময় যেখানে ইচ্ছা টাকা পাঠাতে পারছেন। শহরে রিকশা চালিয়ে সারাদিনের অর্জিত আয় দিন শেষে গ্রামে প্রিয়জনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই আবার ছোট-খাট ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করছে ঘরে বসেই। ফলে গ্রামের আগের সেই সুদের ব্যবসা আর চলে না। 

গ্রামের মানুষজন পূর্বের পেশা ছেড়ে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পেশায়। এক দশক আগেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রযুক্তি ছিল না আমাদের দেশে। কিন্তু এখন তা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে গেছে। শহরে এবং গ্রামে অনেক মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং অনেকেই এখানে আয়ের একটি পথ খুঁজে পেয়েছে।

বিশ বছর আগেও কৃষকরা জমিতে হাল বইতো, নিজ হাতে ফসল কাটতো, ঢেঁকিতে ধান থেকে চাল বানাতো। সকল কাজ নিজ হাতে করতে হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে কৃষি খাতে ব্যাপক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে কৃষকদের আর হাল বইতে হয় না, তারা ট্রাক্টরের সাহায্যে জমি চাষ করেন। মেশিন ব্যবহার করে ধান কাটেন, মেশিনে ধান থেকে চাল তৈরি করেন। ফলে একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদন বেড়েছে তেমনি যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে কৃষিতে শ্রমিকের চাহিদা অনেক কমে গেছে।

দলগত কাজ

ছক ২.১ এর মাধ্যমে তোমরা দলগতভাবে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের পেশা বা কাজের তালিকা প্রণয়ন করেছ। এবার গত ২০ বছরে এসব পেশা বা কাজের কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে এবং গত ২০ বছরে কোন কোন পেশা বা কাজের চাহিদা কমেছে বা বেড়েছে তা বের করো। গত ২০ বছরে কোন কোন পেশা বা কাজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে তারও তালিকা তৈরি করো। এর জন্যে তোমরা তোমাদের পরিবার বা এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করতে পারো অথবা ইন্টারনেট, পত্রিকা বা অন্য কোনো বইয়ের সহায়তা নিতে পারো।

 

ছক ২.২ : বিভিন্ন খাতের পেশা বা কাজের পরিবর্তন

কৃষি খাতশিল্প খাতসেবা খাত
পূর্বের পেশার নামপরিবর্তনের ধরণপেশার নামপরিবর্তনের ধরণপেশার নামপরিবর্তনের ধরণ
      
      
      
      
      

ছক থেকে এবং দলগত কাজ করে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ, সময়ের সাথে সাথে প্রতিটি পেশায় পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি পেশাতে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। সেই সাথে কিছু পেশার চাহিদা কমেছে আবার কিছু পেশার চাহিদা বেড়েছে। আবার কোনো কোনো পেশা হয়তো একদম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তোমরা কি ধারণা করতে পারো কোন খাতের পেশার চাহিদা তুলনামূলকভাবে কমেছে বা বেড়েছে?

দেশীয় শ্রম বাজার

গত ২০ বছরে তোমাদের এলাকার বিভিন্ন পেশার ধরনে ও চাহিদায় কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে তা তোমরা নিজেরাই বের করেছ। এবার আমরা দেখবো গত বিশ বছরে দেশীয় শ্রম বাজারে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। তোমার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে শ্রম বাজার কী? তোমরা তো সচরাচর সাধারণ বাজার দেখো যেমন- সবজির বাজার, মাছের বাজার, পোশাকের বাজার ইত্যাদি। এ বাজারে একদল মানুষ বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য বা পণ্য বিক্রির জন্য আনে যারা হলো বিক্রেতা। আবার একদল মানুষ আসে ঐ সকল দ্রব্য বা পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্যে, এরা হলো ক্রেতা। সুতরাং বাজার হতে হলে ক্রেতা, বিক্রেতা এবং দ্রব্য বা পণ্যের প্রয়োজন হয়। শ্রম বাজারের বিক্রেতা হলো যিনি কোনো কাজ বা চাকুরি চায়। ক্রেতা হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য বা নিজের প্রয়োজনে শ্রম ক্রয় করতে চায়, যেমন জমির মালিকের জমি চাষ করতে প্রয়োজন কৃষি শ্রমিক, পোশাক কারখানায় প্রয়োজন পোশাক শ্রমিক, বিদ্যালয়ের প্রয়োজন শিক্ষক। সাধারণ বাজারের মতো শ্রম বাজারেও একদল মানুষ বিক্রেতা হিসেবে নিজের শ্রম বিক্রি করেন এবং আর একদল মানুষ বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট প্রয়োজনে শ্রম ক্রয় করে।

দেশীয় শ্রম বাজার বা জাতীয় শ্রম বাজারে থাকে অর্থনৈতিক কাজে ইচ্ছুক ও সক্ষম মোট জনসংখ্যা যা শ্রম বাজারের যোগান এবং মোট অর্থনৈতিক কাজের সুযোগ বা চাহিদা। দেশীয় শ্রম বাজারের রূপ, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ধরনের ওপর শ্রম বাজারের চাহিদা নির্ভরশীল। অতীতে প্রযুক্তির ব্যবহার তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে কায়িক শ্রমের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কায়িকশ্রমের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে আসছে। যেমন কৃষি কাজ এখন শুধুমাত্র কায়িক শ্রমকেন্দ্রিক নয়। কৃষিকাজে প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে একজন কৃষি শ্রমিককে কৃষি মেশিন চালনায় দক্ষ হতে হয়। আগে টাইপরাইটারের ব্যবহার ছিল। এখন টাইপরাইটারের কাজ কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়, ফলে টাইরাইটারের কাজে যারা যুক্ত ছিল তারা কম্পিউটারের কাজ না জানলে আর কাজ পাবে না। পূর্বে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সাথে যুক্ত ছিল। কৃষিকাজে যেহেতু আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম ছিল তাই অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে সমান পরিমান কাজের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে কম শ্রমিক প্রয়োজন হয়। আবার দেশের উন্নয়নের ফলে কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই কল কারখানায় কাজের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের জীবনকে আরো মসৃণ করার জন্য বিভিন্ন সেবামূলক ও অর্থনৈতিক খাতের কাজের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। অতীতের তুলনায় শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, অফিস, ব্যাংকিং জাতীয় সেবা খাতের চাহিদা অনেক বেড়েছে একই সঙ্গে বেড়েছে সংশ্লিষ্ট পেশার চাহিদা। আর এসকল কাজের জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা।

দলগত কাজ

বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের শ্রমের চাহিদা সময়ের সাথে পরিবর্তনের শতকরা হার গ্রাফে তোমরা দেখেছ (লেখচিত্রে)। এবার দলগতভাবে আলোচনা করে দেশীয় শ্রম বাজারে এই খাতগুলোর পরিবর্তনের ধারা খুঁজে বের করো-

- কৃষি খাতের পরিবর্তনের ধারা 

- শিল্প খাতের পরিবর্তনের ধারা 

- সেবা খাতের পরিবর্তনের ধারা 

- পরিবর্তনের ধারায় কৃষি ও সেবা খাতের কর্মসংস্থানের তুলনামূলক অবস্থা

 

ভবিষ্যৎ পেশার দক্ষতা অন্বেষণ

তোমরা ইতোমধ্যে নিজেরাই খুঁজে বের করেছ, গত বিশ বছরে বিভিন্ন পেশার কাজে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের ধারা নিশ্চয় এখানেই শেষ নয়। বলা যায়, বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতের কাজ এখন যেভাবে আছে ভবিষ্যতে সেভাবে হয়তো থাকবে না। ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিবর্তন হতে পারে তা জানার জন্য তোমাদের শিক্ষক তোমাদের শ্রেণিতে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের তিনজন উদ্যোক্তাকে আনবেন। তোমরা তাঁদের সাথে আলোচনা করে কয়েকটি বিষয় জানার চেষ্টা করবে সেগুলো হলো-

- ভবিষ্যতে তাঁদের কাজে কী ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে? 

- এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য কী কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে? 

- পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য এখন থেকেই তোমাদের (শিক্ষার্থীদের) কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে?

শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী নিচের বক্সটি পূরণ করো।

 

বক্স ২.২ : পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রস্তুতি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে আজকে যে পেশার চাহিদা বেশি; আগামী ১০ বছর পরে তা নাও থাকতে পারে। প্রযুক্তিগত নানা আবিষ্কারের ফলে মানুষের অনেক কাজ মেশিনের দখলে চলে যাচ্ছে। তবে একদিকে যেমন মানুষ কিছু কাজ হারাচ্ছে, তেমনি নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্রও সৃষ্টি হচ্ছে। তবে মানুষের দৈহিক কাজের পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। ঘরে বসে না থেকে অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংকে বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। ছেড়ে দিয়েছেন ধরাবাঁধা অফিসের চাকরি। এর প্রভাব পড়েছে সবখানেই। ফলে চাকরিদাতাকে যেমন স্বাভাবিক কর্মীর বিকল্প ভাবতে হচ্ছে, তেমনি চাকরি প্রার্থীরাও এক চাকরিতে না থেকে একই সঙ্গে বহুমুখী পেশায় যুক্ত হচ্ছে। করোনা ভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে অফিসে না যেয়েও কীভাবে অফিসের কাজকর্ম করা যায়। করোনার সময় অফিস বন্ধ রেখে অফিস চালাতে হয়েছে। করোনার পরবর্তী সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান আর পূর্বের মতো অফিসে যেয়ে অফিসের কাজ করছে না। বাসা থেকেই অফিস করছে। এর জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির দক্ষতা। তোমরাও নিশ্চয় অনেকেই করোনার সময় বাসায় বসে টিভিতে ক্লাস করেছ। আবার অনেক শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন এবং তোমরা সেখানে অংশগ্রহণ করেছ। এই নতুন ধরনের ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য নতুন ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন হচ্ছে। আবার পূর্বের অনেক দক্ষতা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে।

আমরা প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়ে তথ্য জানার প্রচেষ্টা চালাব। প্যানেল আলোচনা পদ্ধতি সাধারণ আলোচনা পদ্ধতির একটি বিশিষ্ট রূপ। এই আলোচনায় সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ কয়েকজনকে নিয়ে আগে থেকে মনোনয়ন দিয়ে প্যানেল তৈরি করা হয়। আলোচ্য বিষয়টিই সেই প্যানেলভুক্ত সদস্যগণ ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করেন এবং প্রয়োজনীয় তত্ত্ব, তথ্য বা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে সবার সামনে এসে উঁচু প্লাটফরমে বসে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করেন। আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষেই এরকম একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠান করব।

কীভাবে এই আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করতে পারি?

এই আলোচনায় নিজ এলাকা থেকে একজন কৃষি সম্পর্কিত পেশার একজন উদ্যোক্তা, একজন শিল্প উদ্যোক্তা এবং একজন সেবা খাতের উদ্যোক্তাকে আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানাব । তারাই মূল আলোচক হিসাবে অংশগ্রহণ করবেন। মূল আলোচনা সঞ্চালন করবেন আমাদের শিক্ষক। 

সংশ্লিষ্ট বিষয়ের আলোচ্য বিষয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে উপস্থিত অন্যরাও (যদি অন্য বিষয় বা ক্লাসের শিক্ষক, বা আগ্রহী কোনো অভিভাবক) আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন। প্যানেল আলোচনায় একজন উদ্যোক্তা তার শুরুর গল্পটি বলবেন। কীভাবে তিনি বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে আজকের এ জায়গায় আসতে পেরেছেন তা সবাইকে শোনাবেন। আমরা সবাই মনোযোগ দিয়ে তাদের গল্প শুনবো। আমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে তা লিখে রাখব। প্রশ্নোত্তর পর্বে তাদের প্রশ্ন করে উত্তরগুলো জেনে নেব।

আলোচনায় নিচের বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে আসতে পারে-

- উদ্যোগ শুরুর গল্প 

- বর্তমান অবস্থা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ 

- ভবিষ্যতে এ খাতে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে তার ধারণা অর্থাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী ধরনের পেশা উদ্ভব হতে পারে তা আলোচনা 

- নতুন পরিস্থিতিতে কাজের দক্ষতা কীভাবে অর্জন করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা

 

কেস : আবিরের সাফল্য

আবির কৃষি বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করে এক বছর হলো চাকুরিতে যোগদান করেছেন। তার কোম্পানির নাম দিগন্ত কৃষি সার্ভিসেস লিমিটেড। মূলত মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি বিষয়ক নানা সমস্যায় প্ৰয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করাই এ কোম্পানির কাজ। কর্মকর্তা হিসাবে আবির ইতিমধ্যে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। একদিন এক এলাকার কয়েকজন কৃষক এসে, তাদের অফিস প্রধানের কাছে জানালেন, তাদের এলাকার বোরো ধানের গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি যথাযথ পরিমাণ ইউরিয়া সার দিয়েও কাঙ্ক্ষিত উপকার পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টির একটি সমাধান বের করার দায়িত্ব তিনি আবিরকে দিলেন। আবির আগ্রহ ভরে দায়িত্বটি নিলেন এবং সমস্যাটি বোঝার চেষ্টা করলেন। কাজটি সম্পাদনের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেন। এ জন্য প্রথমেই তিনি কৃষকদের নিকট গেলেন এবং তাদের অসুবিধার কথা মনোযোগ সহকারে শুনলেন, এমনকি মাঠে গিয়ে তিনি ফসলের ক্ষেতও দেখে এলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি গভীরভাবে ভাবতে লাগলেন এবং সমস্যার কারণ খুঁজে দেখার চেষ্টা করতে লাগলেন। এ ধরনের কোনো সমস্যার কথা ইতিপূর্বে পেয়েছিলেন কিনা এবং তখন তার সমাধান কীভাবে দিয়েছিলেন তাও মনে মনে খুঁজতে লাগলেন। তবে সমস্যাটি নিয়ে তিনি শুধু একাই ভাবলেন না। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে অফিস প্রধানের অনুমোদনক্রমে, অফিসের সংশ্লিষ্ট সহকর্মীদের নিয়ে একটি দল গঠন করলেন। সমস্যাটি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সভার আয়োজন করে সবাইকে বিষয়টি অবগত করালেন এবং বর্ণিত সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে ভাবতে বললেন। পরিকল্পনা মোতাবেক দলের সবাইকে তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়ে সম্ভাব্য সমাধান খোঁজার জন্য বললেন। দলের সদস্যগণ এধরনের সমস্যা ও সমাধানের উপায় বিষয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে বিভিন্ন প্রতিবেদন গবেষণামূলক তথ্য খুঁজতে শুরু করলেন। তবে আবিরও কিন্তু বসে ছিলেন না। তিনিও বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক জার্নাল, প্রতিবেদন এবং খবর দেখতে লাগলেন। সম্ভাব্য অনেকগুলি বিকল্প সমাধান এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সুবিধা এবং অসুবিধার বিভিন্ন দিক নিয়ে তার ডায়রিতে লিখে নেন। এরপর নির্দিষ্ট দিনে আবির তাদের টিমের সদস্যদের নিয়ে বসলেন। দলের সদস্যদের এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাবিত সমাধান উপস্থাপন করতে বললেন। তিনি সবার মতামত শুনলেন এবং সবশেষে বিদ্যমান সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে নিজের ভাবনা উপস্থাপন করলেন। তিনি সকল প্রস্তাবগুলোর সম্ভাব্য সুবিধা অসুবিধা এবং বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা শেষে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানটি বেছে নিলেন। দলের সকল সদস্য দলের সকল সদস্য কে ধন্যবাদ জানালেন । এরপর তিনি কৃষকদের কাছে গেলেন এবং সমাধানের উপায় তাদের সাথে শেয়ার করলেন। কৃষকরা একমত হলো আবিরের সম্ভাব্য সমাধান প্রক্রিয়ার সাথে। আবিরের পরামর্শ মোতাবেক কৃষকরা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। আবির নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন সমাধান প্রক্রিয়া এবং ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেন। এভাবেই তিনি কৃষকের বোরো ধানের লাল হয়ে যাওয়া রোগের সমাধান করলেন এবং কৃষকের মুখে হাসি ফোটালেন। এ কাজের সাফল্যের জন্য আবির একটি প্রমোশনও পেলেন।

আবিরের কোন কোন বৈশিষ্ট্য্য লক্ষ্য করেছ যা তার সাফল্যের জন্য ভূমিকা রেখেছে বলে তুমি মনে করো? আবিরের কোন কোন বৈশিষ্ট্য তোমার মাঝে আছে বলে তুমি করো? এসব বৈশিষ্ট্য ক্যারিয়ার গঠনে কীভাবে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করো? আবিরের মতো দক্ষ হতে তোমার পরিকল্পনা কী?

 

১। আগামী দিনে নিজেকে কোন খাতে কর্মরত দেখতে চাও? উক্ত খাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে সেখানে কী কী মৌলিক দক্ষতা প্রয়োজন হবে? প্রয়োজনীয় কোন কোন দক্ষতা তোমার মাঝে আংশিক রয়েছে বলে তুমি মনে করো? উক্ত খাতের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলতে আর কী কী যোগ্যতার অনুশীলন এখন থেকেই করা প্রয়োজন?

 

২। এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি ........ (√ টিক চিহ্ন দাও)

কাজসমূহকরতে পারিনি (১)আংশিক করেছি (৩)ভালোভাবে করেছি (৫)
পেশাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা   
তালিকার পেশাগুলিকে কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতভুক্ত করা   
দেশীয় শ্রম বাজারের চাহিদার পরিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ   
পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রস্তুতি   
ভবিষ্যৎ পেশার জন্য প্রস্তুতিমূলক পরিকল্পনা   
কেস পর্যালোচনা করে মৌলিক দক্ষতা অন্বেষণ   
মোট স্কোর: ৩০আমার প্রাপ্ত স্কোর :
আমার অভিভাবকের মন্তব্য:
শিক্ষকের মন্তব্য:

এই অধ্যায়ের যেসব বিষয় আমাকে আরও ভালোভাবে জানতে হবে তা লিখি-

 

 

 

যে কাজগুলোর নিয়মিত চর্চা আমাকে চালিয়ে যেতে হবে সেগুলো লিখি-

 

 

 

Content added By

Promotion