সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - শিল্প ও সংস্কৃতি - NCTB BOOK

আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর দেশ। এই দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন এখনও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। কেউ নিজের জমিতে চাষ করে কেউবা জমি বর্গা নেয়। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পরম মমতায় কৃষক ফসল বুনে সে জমিতে। নিয়মিত পরিচর্যায় ধীরে ধীরে সোনালি রঙে রাঙা হয়ে উঠে সবুজ ধানের খেত। ধান পাকার সময় হলো কার্তিক ও অগ্রহায়ণ। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে পাকা ধানের সে সোনালি আলোয় কিষাণ-কিষাণীর মুখে ফোটে সোনালি হাসি। পল্লীকবি তাই কৃষকের মনের কথা বলেছেন-

মোর ধানক্ষেত, এইখানে এসে দাঁড়ালে উচ্চ শিরে, 

মাথা যেন মোর ছুঁইবারে পারে সুদূর আকাশটিরে! 

এইখানে এসে বুক ফুলাইয়া জোরে ডাক দিতে পারি, 

হেথা আমি করি যা খুশী তাহাই, কারো নাহি ধার ধারি। 

হেথায় নাহিক সমাজ-শাসন, নাহি প্রজা আর সাজা, 

মোর ক্ষেত ভরি ফসলেরা নাচে, আমি তাহাদের রাজা। 

                                                           -জসীমউদ্দীন

ফসলের রাজা কৃষকের জীবন সম্পর্কে আমাদের গভীরভাবে জানা দরকার। সেজন্য নিজেদের এলাকায় যদি কৃষিকাজ হয়, তবে কৃষকদের কাছে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করতে পারি। তাদের জীবনের গল্প ও কাজ সম্পর্কে জানতে পারি। তাছাড়া বিভিন্ন বই,পত্রিকা পড়ে বা বাড়িতে মা-বাবা,দাদা-দাদির কাছ থেকেও আমরা তাদের সম্পর্কে জানতে পারি। আবার কৃষক ও কৃষিকাজ নিয়ে যেসব গান, কবিতা ও গল্প আছে তা খুঁজে বের করতে পারি। সেসবের মধ্য থেকেও কৃষক, তার জীবন ও কাজ সম্পর্কে জানতে পারি। কৃষক ও তার জীবন নিয়ে সংগ্রহ করা তথ্যগুলো বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে পারি, প্রয়োজনে ছবিও একেঁ রাখতে পারি।

কৃষক আর ফসলের কথা জানার মধ্যদিয়ে আমরা আরো জানব গ্রাম বাংলার নবান্ন উৎসবের কথা। এই উৎসব মূলত লোকউৎসব। আমরা কি জানি লোক উৎসব কাকে বলে? কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ জনপদে বিভিন্ন ঋতুতে সকল মানুষের অংশগ্রহণে উদ্‌যাপিত উৎসব হলো লোকউৎসব।

হেমন্তকাল, চারিদিকে নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রান। চলে ধান কাটা ও মাড়াইিয়ের ধুম। কৃষকের মুখে ধান কাটার গান মনে করিয়ে দেয় নবান্ন উৎসবের কথা। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ হলো নতুন অন্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে তৈরি হয় চাল। সেই চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় নবান্ন উৎসব। নবান্নে নতুন ধান থেকে চালের গুড়া তৈরি করা হয় এবং চালের গুঁড়া থেকে পিঠা-পুলি পায়েস তৈরি করে পাড়া-প্রতিবেশীদের মিলে খাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। এছাড়া মুড়ি, চিড়া, নাড়ুও তৈরি হয়।

নবান্ন উপলক্ষ্যে অনেক গ্রামে মেলার আয়োজন হয়। মেলাতে পাওয়া যায় নানা রকম মন্ডামিঠাই, পিঠাপুলি, খেলনা, পুতুল, মাটি, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা জিনিস। এছাড়া পাড়ায় পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে বসে কীর্তন, পালাগান ও জারি গানের আসর। বর্তমান সময়ে শহরেও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। পিঠাপুলির আয়োজনের সাথে সাথে নাচ, গানের মধ্যদিয়ে পালন করা হয় শহরের নবান্ন উৎসব।

এবার আমরা একটা শ্রেণি উৎসবের আয়োজন করব যার নাম হবে ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’

‘আমার দেশের মাটির গন্ধে'

এবার নির্দিষ্ট দিনে শ্রেণি কক্ষে আমরা এই উৎসবের আয়োজন করব। উৎসব আয়োজনের জন্য আমরা প্রথমে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাব। এর পর দলের সবাই বসে নিজ এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যগুলো একত্রিত করব। সাথে সাথে আমাদের সংগ্রহকরা কৃষকদের নিয়ে রচিত গান, কবিতা, আঁকা ছবিসহ সব কিছুর তালিকা তৈরি করব।

এবার দলগতভাবে খুঁজে বের করব নিজের এলাকায় নবান্ন উৎসব হয় কিনা, যদি হয় তবে কীভাবে তার আয়োজন করা হয়? আগে কী হতো আর এখন কী হয়? এই সকল তথ্য জেনে তা জেনে বন্ধুখাতায় লিখে রাখব। নবান্ন নিয়ে যদি কোন গান, কবিতা, গল্প বা নবান্ন উৎসবের সাথে যায় এমন কিছু পেলে তাও সংগ্রহ করে রাখব।

এবার প্রত্যেকটাদল কৃষকের জীবন আর নবান্ন উৎসব নিয়ে আঁকা ছবি, সংগ্রহ করা গান, তার সাথে ভঙ্গিমা ইত্যাদি পরিবেশনের প্রস্তুতি নিবে। কোনো কোনো দল চাইলে অন্য সকলদলের সহায়তা নিয়ে উৎসবের দিন নিজেদের মতো করে মুড়ি, চিড়া, নাড়ু, পিঠাপুলি ইত্যাদির আয়োজন করতে পারি। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের কৃষকদের সম্মান জানাব আর কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতিকে নিজেদের ভিতরে ধারণ করব।

দলগতভাবে ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে' উৎসবটি আয়োজনের সাথে সাথে আমরা এককভাবে নিচের স্বরগুলো অনুশীলন করতে পারি। আগের পাঠে আমরা কাহারবা তালের বোল সম্পর্কে জেনেছিলাম। এই পাঠে আমরা কাহারবা তালে নিচের সারগামটা মাত্রার সাথে অনুশীলনের চেষ্টা করতে করব।

যা করব 

■ নবান্ন উৎসব উদযাপন করার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে সবাই মিলে। পরিকল্পনাটি বন্ধুখাতায় লিখে রাখতে হবে। 

■ নিজ এলাকায় নবান্ন উৎসব কীভাবে হয় অথবা কোনো বন্ধুর এলাকায় নবান্ন কীভাবে হয় তা জেনে অনুষ্ঠান সাজাতে পারি।

■ উৎসবে নবান্নের পিঠা-পুলির আয়োজন রাখতে হবে। 

■ নবান্নের গান, নাচ, কবিতা ও নাটক পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে। 

■ সারগাম অনুশীলন করব।

এই পাঠে আমরা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মমতাজউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে জানব। তিনি সাধারণ মানুষের জীবন নিপুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর সৃষ্টকর্মে। তার নাটকগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। তিনি জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি থিয়েটার পড়াতেন এবং গবেষণা করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে আধুনিক থিয়েটারের চর্চা করেন এবং তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি দিয়ে আমাদের নাট্যমঞ্চকে সমৃদ্ধ করেন।

রাজশাহী সরকারি কলেজে পড়াশোনা করার সময় ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন।স্বাধীনতা আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়।

তিনি বেশিরভাগই তার ব্যঙ্গাত্মক নাটক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অসঙ্গতি উন্মোচনকারী লেখাগুলির জন্য পরিচিত। মমতাজউদ্দীন আহমেদ মঞ্চ, রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য প্রায় ৪০টি নাটক লিখেছেন এবং এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিচালনা করেছেন এবং কয়েকটি জনপ্রিয় টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন।

তার জনপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে - কি চাহো শঙ্খচিল, হৃদয়ঘাটিত ব্যাপার স্যাপার, সাত ঘাটের কানাকড়ি, বকুলপুরের স্বাধীনতা প্রভৃতি।

যা করব— 

■ আমরা শিল্পী মমতাজউদ্দীন আহমেদ সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা করব।

 

Content added By