অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - গণিত - NCTB BOOK

পূর্ববর্তী শ্রেণিতে ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। আমরা ত্রিভুজ অঙ্কন করতে যেয়ে দেখেছি যে, একটি সুনির্দিষ্ট ত্রিভুজ আঁকতে তিনটি পরিমাপের প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে একটি চতুর্ভুজ আঁকতে চারটি পরিমাপ যথেষ্ট কি না। বর্তমান অধ্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার চতুর্ভুজ যেমন সামান্তরিক, আয়ত, বর্গ, রম্বস এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ অধ্যায়ে বিভিন্ন প্রকার চতুর্ভুজের এ সকল বৈশিষ্ট্য ও চতুর্ভুজ অঙ্কন বিষয়ে আলোচনা থাকবে।

অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা-

➤ চতুর্ভুজের ধর্মাবলি যাচাই ও যুক্তিমূলক প্রমাণ করতে পারবে।

➤ প্রদত্ত উপাত্ত হতে চতুর্ভুজ আঁকতে পারবে।

➤ ত্রিভুজ সূত্রের সাহায্যে চতুর্ভুজ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল পরিমাপ করতে পারবে।

➤ আয়তাকার ঘনবস্তুর চিত্র আঁকতে পারবে।

➤ আয়তাকার ঘনবস্তু ও ঘনকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল পরিমাপ করতে পারবে।

Content added || updated By

চারটি রেখাংশ দ্বারা আবদ্ধ চিত্র একটি চতুর্ভুজ। চিত্র দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রটি একটি চতুর্ভুজক্ষেত্র।

চতুর্ভুজের চারটি বাহু আছে। যে চারটি রেখাংশ দ্বারা ক্ষেত্রটি আবদ্ধ হয়, এ চারটি রেখাংশই চতুর্ভুজের বাহু।

A, B, C ও D বিন্দু চারটির যেকোনো তিনটি সমরেখ নয়। AB, BC, CD ও DA রেখাংশ চারটি সংযোগে ABCD চতুর্ভুজ গঠিত হয়েছে। AB, BC, CD ও DA চতুর্ভুজটির চারটি বাহু। A, B, C ও D চারটি কৌণিক বিন্দু বা শীর্ষবিন্দু  ∠ABC, ∠BCD, ∠CDA ও ∠DAB চতুর্ভুজের চারটি কোণ। A ও B শীর্ষবিন্দু যথাক্রমে C ও D শীর্ষের বিপরীত শীর্ষবিন্দু। AB ও CD পরস্পর বিপরীত বাহু এবং AD ও BC পরস্পর বিপরীত বাহু। এক শীর্ষবিন্দুতে যে দুইটি বাহু মিলিত হয়, এরা সন্নিহিত বাহু। যেমন, AB ও BC বাহু দুইটি সন্নিহিত বাহু। AC ও BD রেখাংশদ্বয় ABCD চতুর্ভুজের দুইটি কর্ণ। চতুর্ভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্যের সমষ্টিকে এর পরিসীমা বলে। ABCD চতুর্ভুজের পরিসীমা (AB + BC + CD + DA) এর দৈর্ঘ্যের সমান। চতুর্ভুজকে অনেক সময় ‘☐’ প্রতীক দ্বারা নির্দেশ করা হয়।

Content added || updated By

মুজিবনগর সরকার সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানী। এছাড়া চিফ অব স্টাফ ছিলেন কর্নেল (অব.) আবদুর রব। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার।

মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর : মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে ১১ জন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। প্রত্যেক সেক্টর বেশ কয়েকটি সাব- সেক্টরে বিভক্ত ছিল। সেক্টরগুলোর পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো-

মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টরের মানচিত্র

এক নম্বর সেক্টর : চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনীনদী পর্যন্ত এলাকা।

দুই নম্বর সেক্টর : নোয়াখালী, আখাউড়া, ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত, কুমিল্লা জেলা, সিলেট জেলার হবিগঞ্জ (বর্তমানে জেলা), ঢাকা ও ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ ।

তিন নম্বর সেক্টর : আখাউড়া, ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলা, সিলেট, ঢাকা জেলার অংশবিশেষ ও কিশোরগঞ্জ।

চার নম্বর সেক্টর : সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন ছাড়াও পূর্ব ও উত্তর দিকে ডাউকি সড়ক পর্যন্ত অঞ্চল।

পাঁচ নম্বর সেক্টর : সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল, সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত এলাকা । বঙ্গোপসাগর

ছয় নম্বর সেক্টর : রংপুর জেলা, দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমা (বর্তমানে জেলা)।

সাত নম্বর সেক্টর : দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা ।

আট নম্বর সেক্টর : কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরের অধিকাংশ এবং খুলনা জেলার দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত এলাকা ।

নয় নম্বর সেক্টর : দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল, ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ এবং বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা ।

দশ নম্বর সেক্টর : দশ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ-কমান্ডো, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ ৷

এগার নম্বর সেক্টর : কিশোরগঞ্জ ছাড়া ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা।

ব্রিগেড ফোর্স

১১টি সেক্টর ও তার অধীন অনেক সাব-সেক্টর ছাড়াও রণাঙ্গনকে তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়। ফোর্সের নামকরণ করা হয় ব্রিগেডগুলোর অধিনায়কদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে। মেজর জিয়াউর রহমান ছিলেন 'জেড ফোর্স, মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ ছিলেন 'এস ফোর্স এবং মেজর খালেদ মোশাররফ কে ফোর্স- এর অধিনায়ক।

নিয়মিত ও অনিয়মিত বাহিনী

মুক্তিবাহিনী সরকারি পর্যায়ে দুইটি শাখায় বিভক্ত ছিল - ১. নিয়মিত বাহিনী ও ২. অনিয়মিত বাহিনী।

১. নিয়মিত বাহিনী : ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিটগুলোর বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়। সরকারিভাবে এদের নামকরণ করা হয় এম. এফ. (মুক্তিফৌজ)। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত বাহিনী হিসাবে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীও গড়ে তোলে।

২. অনিয়মিত বাহিনী : ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, কৃষক ও সকল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে অনিয়মিত বাহিনী গঠিত হয়। এই বাহিনীর সরকারি নামকরণ ছিল 'গণবাহিনী বা এক. এফ. (ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা)। তাদের নিজ নিজ এলাকায় গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হতো। এছাড়া ছাত্রলীগের বাছাইকৃত কর্মীদের নিয়ে গঠিত হয় 'মুজিববাহিনী'। কমিউনিস্ট পার্টি ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (ভাসানী) ও ছাত্র ইউনিয়নের আলাদা পেরিলা দল ছিল।

আঞ্চলিক বাহিনী : সেক্টর এলাকার বাইরে আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব বাহিনী গড়ে উঠে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কাদেরিয়া বাহিনী (টাঙ্গাইল), আসার ব্যাটালিয়ন (ভালুকা, ময়মনসিংহ), ৰাতেন বাহিনী (টাঙ্গাইল), হেমায়েত বাহিনী (গোপালগঞ্জ, বরিশাল), হালিম বাহিনী (মানিকগঞ্জ), আকবর বাহিনী (মাগুরা), লতিফ মীর্জা বাহিনী (সিরাজগঞ্জ, পাবনা) ও জিয়া বাহিনী (সুন্দরবন)। এছাড়া ছিল ঢাকার গেরিলা দল, যা 'ক্র্যাক প্লাটুন' নামে পরিচিত। ঢাকা শহরের বড় বড় স্থাপনা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ব্যাংক ও টেলিভিশন ভবনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ঢাকার গেরিলারা। এভাবে তারা পাকিস্তানি সেনা ও সরকারের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করে।

শুধু স্থলপথে নয় নৌপথে 'অপারেশন জ্যাকপট' নামে পরিচালিত অভিযান চলাকালে একদিনে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০টি এবং মংলা বন্দরে ৫০টি জাহাজ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধা নৌকমান্ডোগণ সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দেন।

নারীর অবদান

যেকোনো যুদ্ধে নারীর ওপর আঘাত আসে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। সম্মুখ যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ, সহযোগী যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সেবাদানকারী হিসেবে তাঁরা অসামান্য অবদান রাখেন। মৃত্যুর মুখোমুখী দাঁড়িয়ে নারী হাসিমুখে সন্তান-ভাই-স্বামীকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। নিজেরা হত্যা ধ্বংসযজ্ঞ এবং পাশবিকতার শিকার হয়েছেন। আবার অস্ত্র লুকিয়ে রেখে, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ করে, তথ্য দিয়ে, সংগঠক হিসেবে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অণুপ্রেরণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন। সর্বোপরি যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে পরিবার আগলে রেখে বাংলাদেশকে টিকিয়ে রেখেছিলেন নারীরা। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি এবং ডা. সিতারা বেগম বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

কাজ-১ : বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কন করে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরগুলো চিহ্নিত করো ।

কাজ-২ : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার)-এর গঠন ও কাজের বর্ণনা দাও ।

Content added By

সামান্তরিক : যে চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান্তরাল, তা সামান্তরিক। সামান্তরিকের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে সামান্তরিকক্ষেত্র বলে।

আয়ত : যে সামান্তরিকের একটি কোণ সমকোণ, তাই আয়ত। আয়তের চারটি কোণ সমকোণ। আয়তের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে আয়তক্ষেত্র বলে।

রম্বস : রম্বস এমন একটি সামান্তরিক যার সন্নিহিত বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য সমান। অর্থাৎ, রম্বসের বিপরীত বাহুগুলো সমান্তরাল এবং চারটি বাহু সমান। রম্বসের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে রম্বসক্ষেত্র বলে।

বর্গ : বর্গ এমন একটি আয়ত যার সন্নিহিত বাহুগুলো সমান। অর্থাৎ, বর্গ এমন একটি সামান্তরিক যার প্রত্যেকটি কোণ সমকোণ এবং বাহুগুলো সমান। বর্গের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে বর্গক্ষেত্র বলে।

ট্রাপিজিয়াম : যে চতুর্ভুজের এক জোড়া বিপরীত বাহু সমান্তরাল, একে ট্রাপিজিয়াম বলা হয়। ট্রাপিজিয়ামের সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে ট্রাপিজিয়ামক্ষেত্র বলে।

ঘুড়ি : যে চতুর্ভুজের দুই জোড়া সন্নিহিত বাহু সমান, একে ঘুড়ি বলা হয়।

কাজ : 

১। তোমার আশেপাশের বিভিন্ন বস্তুর ধারকে সরলরেখা ধরে সামান্তরিক, আয়ত, বর্গ ও রম্বস চিহ্নিত কর 

২। উক্তিগুলো সঠিক কিনা যাচাই কর : 

(ক) বর্গ একটি আয়ত, আবার বর্গ একটি রম্বসও। 

(খ) ট্রাপিজিয়াম একটি সামান্তরিক। 

(গ) সামান্তরিক একটি ট্রাপিজিয়াম। 

(ঘ) আয়ত বা রম্বস বর্গ নয়। 

৩। বর্গের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে বর্গ এমন একটি আয়ত যার বাহুগুলো সমান । রম্বসের মাধ্যমে বর্গের সংজ্ঞা দেওয়া যায় কি?

Content added || updated By

তখনকার হিসাবে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের প্রায় সকলেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল । তবে এদেশের মানুষের একটি ক্ষুদ্রাংশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও দেশবাসীর স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে ।

পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার নামে ও ধর্মের দোহাই দিয়ে এই স্বাধীনতা-বিরোধীরা পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মিলে হত্যা, লুট, অগ্নিকাণ্ড, নারী নির্যাতনসহ সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে । মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী বাঙালি ও প্রগতিশীল বাঙালিদের খুঁজে বের করে তাদের তালিকা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। তাদের অত্যাচার কখনো কখনো পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারকেও ছাড়িয়ে যেতো ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে উঠেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি সহযোগী সংগঠন—

শান্তি কমিটি : ৯ই এপ্রিল গঠিত হয় ১৪০ সদস্যবিশিষ্ট 'ঢাকা নাগরিক শান্তি কমিটি'। এ কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলামি, পিডিপি ও মুসলিম লীগ নেতারা। মধ্য এপ্রিলে গঠিত কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যক্রম জেলা, থানা এমনকি কোথাও কোথাও ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মূলত এরাই পাকিস্তানি বাহিনীকে পথ চিনিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যায় ।

রাজাকার : মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধরত পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে সহায়তার লক্ষ্যে জামায়াত নেতা মওলানা এ কে এম ইউসুফ পাকিস্তানপন্থী কর্মীদের নিয়ে ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় সর্বপ্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন । ১লা জুন লে. জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে একে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ধীরে ধীরে সারা দেশেই রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। তবে এর নেতৃত্ব ছিল পাকিস্তানপন্থী স্থানীয় নেতাদের হাতে। সারা দেশে ঘৃণিত ও ধিকৃত এই বাহিনী হত্যা, অগ্নি সংযোগ, লুট এবং নারী নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত।

আলবদর : আলবদররা ছিল সাক্ষাৎ যমদূত। জামায়াতে ইসলামি ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের ছাত্রদের নিয়ে এ বাহিনী গড়ে উঠে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার যে পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করে আলবদর বাহিনী।

আল-শামস : আল-শামস আলবদরের মতোই আরেকটি সংগঠন। মুসলিম লীগ ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে আল-শামস বাহিনী গঠন করে। 

 

ডা. মালিক মন্ত্রিসভা 

পাকিস্তান সরকার বহির্বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে সামরিক গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানকে সরিয়ে তার জায়গায় বেসামরিক ব্যক্তি ডা. আবদুল মোতালিব মালিককে গভর্নর নিযুক্ত করে । তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী তথাকথিত বেসামরিক সরকার ১৭ই সেপ্টেম্বর গঠিত হয়। ১০ সদস্যবিশিষ্ট মালিক মন্ত্রিসভা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতি ও নির্দেশের মাধ্যমে স্বাধীনতা-বিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে। ১৪ই ডিসেম্বর এ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় ।

কাজ : মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পরিচয় দাও।

Content added By

বিভিন্ন প্রকারের চতুর্ভুজের কিছু সাধারণ ধর্ম রয়েছে । এ ধর্মগুলো উপপাদ্য আকারে প্রমাণ করা হলো।

উপপাদ্য ১

চতুর্ভুজের চারটি কোণের সমষ্টি চার সমকোণ৷

বিশেষ নির্বচন : মনে করি, ABCD একটি চতুর্ভুজ।

প্রমাণ করতে হবে যে, ∠A+ ∠B + ∠C+ ∠D = 4 সমকোণ।

অঙ্কন : A ও C যোগ করি । AC কর্ণটি চতুর্ভুজটিকে ABC ও ADC দুইটি ত্রিভুজে বিভক্ত করেছে।

প্ৰমাণ :

ধাপযথার্থতা

(১) ∆ABC এ 

      ∠BAC + ∠ACB + ∠B = 2 সমকোণ।

(২) অনুরূপভাবে, DAC এ

      ∠DAC + LACD + 2D = 2 সমকোণ।

(৩) অতএব, ∠DAC + ∠ACD + ∠D + 

       ∠BAC + ∠ACB + ∠B = (2+2) সমকোণ৷

(8) ∠DAC + ∠BAC = ∠A এবং

       ∠ACD + ∠ACB = ∠C

সুতরাং, ∠A+ ∠B + ∠C + ∠D= 4 সমকোণ (প্রমাণিত)

[ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি 2 সমকোণ]

 

[ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি 2 সমকোণ]

 

[(১) ও (২) থেকে]

[সন্নিহিত কোণের যোগফল]

[সন্নিহিত কোণের যোগফল]

[(৩) থেকে]

 

উপপাদ্য ২

সামান্তরিকের বিপরীত বাহু ও কোণগুলো পরস্পর সমান।

বিশেষ নির্বচন : মনে করি, ABCD একটি সামান্তরিক এবং

AC ও BD তার দুইটি কর্ণ । প্রমাণ করতে হবে যে,

(ক) AB বাহু = CD বাহু, AD বাহু = BC বাহু

(খ) ∠BAD = ∠BCD, ∠ABC = ∠ADC

প্ৰমাণ :

ধাপযথার্থতা

(১) AB B DC এবং AC তাদের ছেদক, 

       সুতরাং BAC = LACD

(২) আবার, BC II AD এবং AC তাদের ছেদক, 

       সুতরাং ∠ACB = ZDAC

(৩) এখন ∠ABC ও DC এ ∠BAC = ∠ACD, ∠ACB = ∠DAC এবং AC বাহু সাধারণ। 

       ∴ ABC ≅ MDC

অতএব, AB = CD, BC = AD ও ∠ABC = ∠ADC

অনুরূপভাবে, প্রমাণ করা যায় যে, ∆BAD ≅ ∆CD 

সুতরাং, ∠BAD = ∠BCD [প্রমাণিত]

[একান্তর কোণ সমান]

 

[একান্তর কোণ সমান]

 

[ত্রিভুজের কোণ-বাহু-কোণ উপপাদ্য]

 

 

 

কাজ : 

১ । প্রমাণ কর যে, চতুর্ভুজের এক জোড়া বিপরীত বাহু পরস্পর সমান ও সমান্তরাল হলে, তা একটি সামান্তরিক

২। দেওয়া আছে, ∠BCD চতুর্ভুজে AB = CD এবং ∠ABD = ∠BDC. প্রমাণ কর যে, ∠BCD একটি সামান্তরিক।

উপপাদ্য ৩

সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।

বিশেষ নির্বচন : মনে করি, ABCD সামান্তরিকের AC ও BD কর্ণদ্বয় পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করে। প্রমাণ করতে হবে যে, AO = CO, BO = DO

প্রমাণ :

ধাপযথার্থতা

(১) AB ও DC রেখাদ্বয় সমান্তরাল এবং AC এদের ছেদক। 

      অতএব, ∠BAC = একান্তর ∠ACD  

(২) AB ও DC রেখাদ্বয় সমান্তরাল এবং BD এদের ছেদক। 

       সুতরাং, ∠BDC = একান্তর ∠ABD

(৩) এখন, AAOB ও ACOD এ A 

       ∠OAB = ∠OCD, ∠OBA = ∠ODC  এবং 

       AB = DC 

       সুতরাং, ∆AOB ≅ ∆COD 

অতএব, AO = CO এবং BO = DO (প্রমাণিত)

[একান্তর কোণ সমান]

 

[একান্তর কোণ সমান]

 

∵ ∠BAC = ∠ACD; ∠BDC = ∠ABD [ত্রিভুজের কোণ-বাহু-কোণ উপপাদ্য]

 

 

কাজ : ১। প্রমাণ কর যে, চতুর্ভুজের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করলে তা একটি সামান্তরিক।

উপপাদ্য ৪

আয়তের কর্ণদ্বয় সমান ও পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।

বিশেষ নির্বচন : মনে করি, ABCD আয়তের AC ও BD কর্ণদ্বয় পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করে। প্রমাণ করতে হবে যে,

(i) AC = BD

(ii) AO = CO, BO = DO

প্ৰমাণ :

ধাপযথার্থতা

(১) আয়ত একটি সামান্তরিক। সুতরাং, 

AO=CO, BO=DO 

(২) এখন ∆ABD ও ∆ACD এ 

       AB = DC 

      এবং AD = AD 

      অন্তর্ভূক্ত ZDAB = অন্তর্ভূক্ত ZADC 

       সুতরাং, ∆ABD = ∆ACD 

অতএব, AC = BD (প্রমাণিত)

[সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে]

 

[সামান্তরিকের বিপরীত বাহু পরস্পর সমান]

[সাধারণ বাহু]

[প্রত্যেকে সমকোণ]

[ত্রিভুজের বাহু-কোণ - বাহু - উপপাদ্য]

 

কাজ :

১। প্রমাণ কর যে, আয়তের প্রত্যেকটি কোণ সমকোণ।

উপপাদ্য ৫

রম্বসের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমকোণে সমদ্বিখণ্ডিত করে।

বিশেষ নির্বচন : মনে করি, ABCD রম্বসের

AC ও BD কর্ণদ্বয় পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করে। 

প্রমাণ করতে হবে যে,

(i) ∠AOB = ∠BOC = ∠COD = ∠DOA = 1 সমকোণ

(ii) AO = CO, BO = DO

প্রমাণ :

ধাপযথার্থতা

(১) রম্বস একটি সামান্তরিক। সুতরাং, 

       AO=CO, BO=DO 

(২) এখন AAOB ও ABOC এ 

       AB = BC 

       AO=CO 

       এবং OB = OB 

অতএব, ∆AOB = ∆BOC

[ সামান্তরিকের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে ]

 

[রম্বসের বাহুগুলো সমান]

[(১) থেকে]

[সাধারণ বাহু]

[ত্রিভুজের বাহু-বাহু-বাহু উপপাদ্য]

সুতরাং ∠AOB = ∠BOC

∠AOB + ∠BOC = 1 সরলকোণ = 2 সমকোণ।

∠AOB = ∠BOC =1 সমকোণ।

অনুরূপভাবে, প্রমাণ করা যায় যে,

∠COD = ∠DOA = 1 সমকোণ (প্রমাণিত)

কাজ :

১। দেখাও যে, বর্গের কর্ণদ্বয় পরস্পর সমান এবং পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।

২। একজন রাজমিস্ত্রী একটি আয়তাকার কংক্রিট স্ল্যাব তৈরি করেছেন। তিনি কত বিভিন্ন ভাবে নিশ্চিত হতে পারেন যে তাঁর তৈরি স্ল্যাবটি সত্যিই আয়তাকার?

Content added || updated By

ক. প্রবাসে বাঙালিদের ভূমিকা ও কুটনৈতিক তৎপরতা

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালিরা গণহত্যার প্রতিবাদে ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে একত্রিত হতে থাকে। যুক্তরাজ্যকে কেন্দ্র করে সমগ্র ইউরোপে প্রবাসীদের আন্দোলন চলে । যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সুইডেন, ফ্রান্স, কানাডা ও ইন্দোনেশিয়ার বাঙালিরাও সোচ্চার হয়ে উঠে। গণহত্যার প্রতিবাদে তারা সভা-সমাবেশ আয়োজন করে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও অর্থ সংগ্রহ করে। কেউ কেউ ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধে অংশ নেয়। বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য মুজিবনগর সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বিশেষ দূত নিয়োগ করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে সমর্থন আদায় ও জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। যারা এ সময় জীবন ও চাকরির মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে যোগ দেয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরাক, ফিলিপাইন, আর্জেন্টিনা, ভারত ও হংকং দূতাবাসের বাঙালি কর্মকর্তারা। তাদের পদত্যাগ ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় জাতিসংঘে ৪৭টি দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। এতে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এপ্রিল মাসে প্রবাসী বাঙালি মহিলাদের একটি প্রতিবাদ মিছিল লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে । জুন মাসে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে লন্ডনে মিছিলের আয়োজন করে। মিছিল শেষে এই প্রতিবাদকারীগণ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে । 

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকেই বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) দিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশের দুটি মিশন স্থাপন করে। কলকাতাতেই প্রথম বাংলাদেশ মিশন স্থাপিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক এবং লন্ডনেও বাংলাদেশ মিশন স্থাপন করে । এসব মিশন বাংলাদেশের পক্ষে মিছিল, সমাবেশ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পার্লামেন্ট সদস্যদের সমর্থন আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখে।

 

খ. বহি:বিশ্বের ভূমিকা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পৃথিবীর বড় ও ছোট অনেক দেশ বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এসব দেশের মধ্যে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।

ভারত

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণে ভারতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সরকার ২৫শে মার্চ থেকে সংগঠিত পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের অজুহাতে তখন যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী তা প্রতিহত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । তিনি এই উদ্দেশ্যে প্রায় তিন সপ্তাহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। এসব রাষ্ট্র সফরে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কূটনৈতিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। নভেম্বরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে দেখা করেন। এছাড়া ওয়াশিংটনে তিনি বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন। তাঁর সাথে ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রী, নেতা ও কর্মকর্তারাও বিদেশ সফর করে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন।

গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দেয় এবং তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। বাঙালি শরণার্থীদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ভারত সরকার এ সময় 'শরণার্থী কর' নামে নতুন একটি কর আরোপ করে। ভারতের মাটিতে এপ্রিলের শেষ দিকে বাঙালি যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয় যা নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে। পাশাপাশি কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' নামে এই সরকারের বেতার কেন্দ্র স্থাপনে ভারত সহায়তা করে ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চার হাজার অফিসার ও জোয়ান প্রাণ বিসর্জন দেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সে দেশের সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। সরকারের পাশাপাশি ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংগঠন, লেখক-শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সম্প্রদায় সকলেই এ সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। ভারতের খ্যাতিমান শিল্পী রবি শঙ্করের উদ্যোগে নিউইয়র্কে 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' এর আয়োজন করা হয়। যুক্তরাজ্যের শিল্পী জর্জ হ্যারিসন এই কনসার্টে অংশ নেন। কনসার্ট থেকে প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার)-এর হাতে তুলে দেয়া হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল। এপ্রিলের শুরুতেই সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট পদপনি বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে চিঠি দেন। শুরা ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উদ্দেশ্য ছিল যৌথবাহিনী যাতে সামরিক বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ পায়। যৌথবাহিনীকে ঢাকা দখল করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোনো প্রকারে যুদ্ধবিরতির পদক্ষেপকে ঠেকিয়ে রাখাই নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো দানের উদ্দেশ্য ছিল। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হয় ।

যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নীতি ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। প্রথমদিকে অস্ত্র এবং সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানকে সহায়তা করে। তবে নিজ দেশের বিরোধী দলের চাপে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতে অবস্থানরত বাঙালি শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ড ভারত-বিরোধী ও পাকিস্তান-ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করতে থাকে। স্বভাবতই তাদের ভূমিকা বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সমর্থনে ভারত মহাসাগরে তাদের সপ্তম নৌবহর পাঠায়। সোভিয়েত ইউনিয়নও পাল্টা নৌবহর পাঠায়। তবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করে শেষ পর্যন্ত তারা সে নৌবহরকে কাজে লাগায় নি। পাকিস্তানের পরাজয়ের মুখে যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত করতেও জাতিসংঘে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের অনেক সদস্য, বিভিন্ন সংবাদপত্র, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সর্বস্তরের জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা পালন করে ।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার সময় থেকে বিদেশি সাংবাদিকরা পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। তারাই প্রথম বহির্বিশ্বে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বরতার খবর ছড়িয়ে দেয়। সাইমন ড্রিং এরকমই একজন সাংবাদিক। ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সরকার কিছু বিদেশি সাংবাদিককে নিয়ন্ত্রিতভাবে বাংলাদেশের কোনো কোনো এলাকা সফর করিয়ে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন লেখানোর ফন্দি আঁটে। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। নিজ চোখে সব দেখে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা সম্পর্কে অবহিত হয় এবং সত্য কথা লিখে পত্রিকা ও বেতারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে তা অবহিত করে। এভাবে এন্থনি ম্যাসকারেনহাস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের চাঞ্চল্যকর তথ্য সারা বিশ্বে প্রকাশ করেন। বিবিসির সাংবাদিক মার্ক টালি পুরোটা সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে খবর প্রচার করে গেছেন। এদিকে দেশে অবরুদ্ধ থেকেও অনেক বাঙালি সাংবাদিক ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে খবর পাঠিয়েছেন। এজন্য তাদের শত্রুর হাতে চরম মূল্যও দিতে হয়। একাত্তরের শহিদ নিজামউদ্দিন ও নাজমুল হক এরকমই দুজন সাংবাদিক। এছাড়া আকাশবাণী, বিবিসি, ভোয়া প্রভৃতি বেতারকেন্দ্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল। আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রতি রাতে প্রচারিত সংবাদ পরিক্রমা' খুবই জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল। এটি পাঠ করে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘বজ্রকণ্ঠ' ও ‘চরমপত্রসহ’ বিভিন্ন অনুষ্ঠান শ্রোতাদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে।

কাজ- ১ : মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির পরিচয় ও ভূমিকা বর্ণনা করো । 

কাজ-২ : মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকার গুরুত্ব উল্লেখ করো। 

কাজ-৩ : মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা মূল্যায়ন করো। 

কাজ- ৪ : গ্রন্থাগার, জাদুঘর ও অন্যান্য সূত্র থেকে খবর ও চিত্র সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি দেয়াল পত্রিকা প্রস্তুত করো।

Content added By

একটি চতুর্ভুজের একটি কর্ণ দ্বারা চতুর্ভুজক্ষেত্রটি দুইটি ত্রিভুজক্ষেত্রে বিভক্ত হয়। অতএব, চতুর্ভুজক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ত্রিভুজদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের যোগফলের সমান। পূর্ববর্তী শ্রেণিতে আমরা বর্গক্ষেত্র ও আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে শিখেছি। আবার আয়ত ও সামান্তরিকের ভূমি ও উচ্চতা একই হলেও উল্লিখিত ক্ষেত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রফল সমান। নিচে রম্বস ও ট্রাপিজিয়ামক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে।

(ক) ট্রাপিজিয়ামক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল

ABCD একটি ট্রাপিজিয়াম যেখানে AB ॥ CD, AB=a, CD=b এবং AB ও CD এর লম্ব দূরত্ব =h 

C বিন্দু দিয়ে DAICE আঁকি।

∴ AECD একটি সামান্তরিক। চিত্র থেকে

ABCD ট্রাপিজিয়ামক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = AECD সামান্তরিকক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল + CEB ত্রিভুজক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল

      =b×h+12a-b×h

      =12a+b×h

ট্রাপিজিয়াম ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমষ্টির গড় × উচ্চতা

কাজ :

১। বিকল্প পদ্ধতিতে ট্রাপিজিয়ামক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।

 

(খ) রম্বসক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল

রম্বসের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমকোণে সমদ্বিখণ্ডিত করে। তাই রম্বসের কর্ণদ্বয়ের দৈর্ঘ্য জানা থাকলে সহজেই রম্বসক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।

মনে করি, ABCD রম্বসের AC ও BD কর্ণদ্বয় পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করে । কর্ণদ্বয়ের দৈর্ঘ্যকে যথাক্রমে a ও b দ্বারা নির্দেশ করি।

রম্বসক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = DAC ত্রিভুজক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল + BAC ত্রিভুজক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল

          =12.a×12b+12a×12b

          =12a×b

রম্বসক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = কর্ণদ্বয়ের গুণফলের অর্ধেক
Content added || updated By

মুজিবনগর সরকারের সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ পরিকল্পনার ফলে একাত্তরের মে মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা শুরু করে। জুন মাস থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাঙালি গেরিলা যোদ্ধারা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর ব্যাপক আক্রমণ চালাতে থাকে। এতে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। মূলত মধ্য নভেম্বর থেকে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে কার্যকর সহায়তা দিতে থাকে। ১৩ই নভেম্বর ট্যাংকসহ দুই ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সৈন্য যশোরে ঘাঁটি স্থাপন করে। পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আরও সুদৃঢ় আক্রমণের জন্য ২১শে নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারত সরকার একটি যৌথবাহিনী গঠন করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে এটি গঠিত হয়। যুদ্ধকালীন যুক্তিবাহিনীর সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীকে মিত্রবাহিনী বলা হতো। যৌথবাহিনী গঠনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধ দারুণ গতি লাভ করে।

৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ভারতের কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালালে শুরু হয়ে যায় পাক-ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধ। যৌথবাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ সীমান্তে এ সময় আক্রমণ শুরু হয়। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে চালানো হয় বিমান হামলা। ৬ই ডিসেম্বর ভারত সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। পরের দিন যশোর বিমান বন্দরের পতনের পর যৌথবাহিনী যশোর শহরে প্রবেশ করে। ৮ থেকে ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী শহর যৌথবাহিনীর দখলে আসে। ১০ই ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে নিরপেক্ষ এলাকা ঘোষণা করে ঢাকাস্থ কূটনৈতিকবৃন্দ ও বিদেশি নাগরিকদের সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। ঐদিন বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা থেকে ব্রিটিশ ও অন্যান্য বিদেশি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১১ থেকে ১২ই ডিসেম্বরের মধ্যে ময়মনসিংহ, হিলি, কুষ্টিয়া, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জ মুক্ত হয়।

যৌথবাহিনীর শেষ যুদ্ধ 

১২ই ডিসেম্বর ঢাকায় বিভিন্ন সামরিক অবস্থানের উপর যৌথবাহিনীর বিমান হামলা চলে। যৌথবাহিনী চারদিক থেকে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা হয়। এর মধ্যে দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ শুরু হয়ে যায়। পূর্ব-পাকিস্তানের তাবেদার সরকারের গভর্নর ডা. মালিক ভয়ে পদত্যাগ করে তার মন্ত্রীদের নিয়ে নিরপেক্ষ এলাকায় অর্থাৎ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেয়। ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যত্র অনেক বড় শহর ও সেনানিবাসে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে । ঐ দিনই পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ঢাকা শহরের চারদিক তখন যৌথবাহিনী ঘেরাও করে রাখে। যে কোনো সময় ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ঘটতে পারে অবস্থা সে রকম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আত্মসমর্পণের সুবিধার্থে মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল স্যাম মানেকশ'র আহ্বানে উভয় পক্ষ ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল তিনটা পর্যন্ত যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়।

কাজ-১: মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও যৌথবাহিনী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।
কাজ-২: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রহ করে যৌথভাবে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করো।

Content added By

বই, বাক্স, ইট, ফুটবল ইত্যাদি ঘনবস্তু। ঘনবস্তু আয়তাকার, বর্গাকার, গোলাকার ও অন্যান্য আকারের হতে পারে। ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে।

চিত্র-১ এর বস্তুটি আয়তাকার ঘনবস্তু। এর মোট ছয়টি আয়তাকার পৃষ্ঠ বা তল আছে যাদের প্রত্যেকটি একটি আয়তক্ষেত্র। পরস্পর বিপরীত পাশের পৃষ্ঠদ্বয় সমান ও সমান্তরাল। কাজেই পরস্পর বিপরীত পাশের দুইটি পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সমান। চিত্র-২ এর বস্তুটি বর্গাকার ঘনবস্তু। এর মোট ছয়টি পরস্পর সমান বর্গাকার পৃষ্ঠ বা তল আছে যাদের প্রত্যেকটি একটি বর্গক্ষেত্র। আবার, পরস্পর বিপরীত পৃষ্ঠদ্বয় সমান্তরাল। বর্গাকার ঘনবস্তুকে ঘনক (cube) বলা হয়। পরস্পর দুইটি করে পৃষ্ঠের ছেদ-রেখাংশকে ঘনকের ধার বা বাহু বলা হয়। ঘনকের সকল ধার বা বাহু পরস্পর সমান। কাজেই ঘনকের সকল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল পরস্পর সমান।

 

ঘনবস্তুর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল নির্ণয় :

(ক) আয়তাকার ঘনবস্তু : একটি আয়তাকার ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য a একক হলে, চিত্রানুসারে, ঘনবস্তুটির সমগ্র পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল = {(ab ab) + (bc + bc) + (ac + + ac)} বর্গএকক = 2(ab + bc + ac) বর্গ একক (খ) ঘনক : একটি ঘনকের ধার a একক হলে, এর ছয়টি পৃষ্ঠের প্রতিটির ক্ষেত্রফল = a x a বর্গ একক = a2 বর্গ একক । অতএব, ঘনকটির সমগ্র পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল = 6a2 বর্গ একক।

উদাহরণ। একটি আয়তাকার ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য 7.5 সে.মি., প্রস্থ 6 সে.মি ও উচ্চতা 4 সে.মি.। ঘনবস্তুটির সমগ্র পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।

সমাধান : আমরা জানি, কোনো আয়তাকার ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য a একক, প্রস্থ b একক ও উচ্চতা c একক হলে, বস্তুটির সমগ্র পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল 

=2(ab +bc +ac) বর্গ একক।

এখানে, a = 7.5 সে.মি., b = 6 সে.মি. এবং c = 4 সে.মি.

∴ প্রদত্ত আয়তাকার ঘনবস্তুটির সমগ্র পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল

= 2 (7.5 × 6 + 6 × 4 + 7.5 × 4) বর্গ সে.মি.

= 2(45 + 24 + 30) বর্গ সে.মি.

= 2 × 99 বর্গ সে.মি.

= 198 বর্গ সে.মি.

Content added || updated By

দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আমরা এর আগে জেনেছি, ২৫শে মার্চ মধ্যরাত থেকে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপরে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে । রাতেই তারা সেনানিবাস, ইপিআর দপ্তর, পুলিশলাইন্স ও আনসার ব্যারাকে হামলা চালিয়ে বাঙালি সদস্যদের হত্যা ও বন্দি করতে শুরু করে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও তাঁতিবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায় ও বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। গণহত্যার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, এ এন এম মুনিরুজ্জামান এবং ধরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজনীতিবিদ শহিদ মশিউর রহমানসহ আরো অনেককে; যাদেরকে পরে আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। 

পাকিস্তানি বাহিনী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখামাত্র হত্যার নীতি গ্রহণ করে। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ছিল তাদের নির্বিচার হত্যার প্রধান শিকার। তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট, পাড়া ও গ্রাম লুট করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী সমাজ ছিল পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিশেষ টার্গেট। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ও শেষ পর্যায়েএভাবে দেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা থেকে তারা বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপকভাবে হত্যা করে । তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক শহিদ সাবের, দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা, নূতন চন্দ্র সিংহ, রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সঙ্গীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদের মতো বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ।

দেশের অভ্যন্তরে মানুষ ছিল অবরুদ্ধ, অনেকে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার-আলবদরদের ভয়ে পুরো নয় মাস দেশের ভিতরে আত্মগোপন করে জীবন কাটিয়েছে। আর প্রায় এক কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল । শরণার্থী শিবিরে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে অপুষ্টিতে ও রোগে ভুগে বহু শিশু প্রাণ হারায়। বৃদ্ধ ও নারীদের জীবনেও নেমে আসে চরম নিপীড়ন। একইভাবে দেশের ভিতরে অবরুদ্ধ মানুষও পাকস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যার শিকার হয়। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে ২০মে ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যা ঘটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা । পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এদেশের মুসলিমলীগ ও জামায়াতে ইসলামির নেতারা রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনী গঠন করে। এই সকল বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আসান মোহাম্মদ মুজাহিদ,কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানসহ অনেকে। তারা বাংলাদেশ, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এদের সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংগঠিত হয় নিরাপরাধ লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ড । নারী নির্যাতনের মতো ঘৃণিত কাজেও রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনী সরাসরি জড়িত ছিল।

৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে যৌথবাহিনীর আক্রমণের ফলে পাকিস্তানের পরাজয় যখন নিশ্চিত তখন তারা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার নীল নকশা তৈরি করে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সঙ্গীতজ্ঞদের ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে । এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, কথাশিল্পী আনোয়ার পাশা, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক নিজামউদ্দিন, সিরাজুদ্দিন হোসেন, সেলিনা পারভীন এবং ডা. ফজলে রাব্বী ও ডা. আলিম চৌধুরী মতো বরেণ্য ব্যক্তিগণ । জাতির এ সূর্য সন্তানদের অধিকাংশই ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ১৪ই ডিসেম্বর আমরা শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে থাকি । বিজয় অর্জনের পরে এসব সূর্য সন্তানদের লাশ রায়ের বাজারসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। এই অপরাধের দায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর উপর বর্তায় ।

এই পরিকল্পিত গণহত্যা চালাতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা এদেশে অনেক বধ্যভূমি তৈরি করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি বড় বধ্যভূমি হলো ঢাকার রায়েরবাজার, চট্টগ্রামের পাহাড়তলি, খুলনার খালিশপুর, সিলেটের শমসেরনগর ইত্যাদি। সারাদেশে বিভিন্ন জেলা ও মহকুমায় নির্জন নদীতীর ও চা বাগানেও অসংখ্য বধ্যভূমি গড়ে তুলেছিল ঘাতকরা।

এই গণহত্যা চলেছে সারাদেশে পুরো নয় মাস জুড়ে। যদিও খুবই নিষ্ঠুর ও লোমহর্ষক তবুও পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের নির্যাতনের ধরন সম্পর্কে আমাদের কিছুটা হলেও জানা দরকার ।

বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করে পরে তারা আটককৃতদের হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করে নদী, জলাশয় ও গর্তে ফেলে রাখতো। এছাড়া একটি একটি করে অঙ্গচ্ছেদ করে গুলি করে হত্যা করতো। চোখ উপড়ে ফেলা, মাথায় আঘাত করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা, মুখ থেঁতলে দেওয়া, বেয়নেট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হৃদপিণ্ড উপড়ে ফেলা, আঙ্গুলে সূঁচ ফুটানো, নখ উপড়ে ফেলা, শরীরের চামড়া কেটে লবণ ও মরিচ দেওয়া ছিল অত্যাচারের নিষ্ঠুর ধরন। বন্দীশালা ও বধ্যভূমি থেকে বেঁচে আসা অনেকের কাছ থেকে পাওয়া বিবরণ আরও ভয়াবহ যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ।

কাজ-১: দলগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট শহিদদের ছবি সংগ্রহ করে তাদের পরিচিতিসহ অ্যালবাম তৈরি করো।

কাজ-২ : তোমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান ও তাঁদের অভিজ্ঞতা শোনার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করো।

Content added By
Please, contribute to add content into অনুশীলনী ৮.১.
Content

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। ঐদিন হানাদার বাহিনী তাদের শোচনীয় পরাজয় মেনে নিয়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী নিয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে। আত্মসমর্পণ করে। আমরা লাভ করি প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন যৌথবাহিনীর কমান্ডার লে.জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান সেনাপতি গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার। আত্মসমর্পণের দৃশ্য দেখার জন্য রেসকোর্স ময়দান লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। জয়বাংলা শ্লোগানে ঢাকার আকাশ বাতাস মুখরিত হতে থাকে। রেসকোর্স ময়দানের খোলা আকাশের নিচে একটি টেবিলে বসে যৌথবাহিনীর পক্ষে লে. জেনারেল অরোরা এবং পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে লে. জেনারেল এ.এ.কে নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। বন্দী করা হয় পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯৩ হাজার সদস্যকে।

এভাবে আমাদের মুক্তিবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ লড়াই, সমগ্র বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও দৃঢ় ঐক্য, মিত্রবাহিনীর সক্রিয় সহায়তা এবং বিশ্ব জনমতের সমর্থনে মাত্র নয় মাসে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তার সফল সমাপ্তিতে পৌছে । ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা লাভ করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ।

কাজ : আত্মসমর্পণের সময় রেসকোর্স ময়দানের দৃশ্য বর্ণনা করো।

Content added By

সম্পাদ্য

পূর্ববর্তী শ্রেণিতে আমরা জেনেছি, ত্রিভুজের তিনটি বাহু দেওয়া থাকলে নির্দিষ্ট ত্রিভুজ আঁকা যায়। কিন্তু চতুর্ভুজের চারটি বাহু দেওয়া থাকলে নির্দিষ্ট কোনো চতুর্ভুজ আঁকা যায় না। চতুর্ভুজ অঙ্কনের জন্য আরও উপাত্তের প্রয়োজন। চতুর্ভুজের চারটি বাহু, চারটি কোণ ও দুইটি কর্ণ, এই মোট দশটি উপাত্ত আছে। একটি চতুর্ভুজ আঁকতে পাঁচটি অনন্য নিরপেক্ষ উপাত্তের প্রয়োজন। যেমন, কোনো চতুর্ভুজের চারটি বাহু ও একটি নির্দিষ্ট কোণ দেওয়া থাকলে, চতুর্ভুজটি আঁকা যাবে।

নিম্নোক্ত পাঁচটি উপাত্ত জানা থাকলে, নির্দিষ্ট চতুর্ভুজটি আঁকা যায়।
     (ক) চারটি বাহু ও একটি কোণ
     (খ) চারটি বাহু ও একটি কর্ণ
     (গ) তিনটি বাহু ও দুইটি কর্ণ
     (ঘ) তিনটি বাহু ও এদের অন্তর্ভুক্ত দুইটি কোণ
     (ঙ) দুইটি বাহু ও তিনটি কোণ।

অনেক সময় কম উপাত্ত দেওয়া থাকলেও বিশেষ চতুর্ভুজ আঁকা যায়। এক্ষেত্রে যুক্তি দ্বারা পাঁচটি উপাত্ত পাওয়া যায়।

  • একটি বাহু দেওয়া থাকলে, বর্গ আঁকা যায়। এখানে চারটি বাহুই সমান এবং একটি কোণ সমকোণ।
  • দুইটি সন্নিহিত বাহু দেওয়া থাকলে, আয়ত আঁকা যায়। এখানে বিপরীত বাহু দুইটি পরস্পর সমান এবং একটি কোণ সমকোণ।
  • একটি বাহু এবং একটি কোণ দেওয়া থাকলে, রম্বস আঁকা যায়। এখানে চারটি বাহুই সমান।
  • দুইটি সন্নিহিত বাহু এবং এদের অন্তর্ভুক্ত কোণ দেওয়া থাকলে, সামান্তরিক আঁকা যায়। এখানে বিপরীত বাহু দুইটি পরস্পর সমান ও সমান্তরাল।

সম্পাদ্য ১

কোনো চতুর্ভুজের চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য ও একটি কোণ দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

মনে করি, একটি চতুর্ভুজের চার বাহুর দৈর্ঘ্য a, b, c, d এবং a ও b বাহুদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত কোণ ∠x দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

অঙ্কনের বিবরণ :

(১) যেকোনো রশ্মি BE থেকে BC = a নিই । B বিন্দুতে ZEBF = ∠x আঁকি।

(2) BF থেকে BA = b নিই। A ও C কে কেন্দ্র করে যথাক্রমে c ও d এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে ∠ABC এর অভ্যন্তরে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। এরা পরস্পর D বিন্দুতে ছেদ করে।

(৩) A ও D এবং C ও D যোগ করি। তাহলে, ∠BCD ই উদ্দিষ্ট চতুৰ্ভুজ।

প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে,

AB = b, BC = a, AD = c, DC = d এবং ∠ABC = ∠x

∴ ABCD ই নির্ণেয় চতুৰ্ভুজ।

কাজ :

১। একটি চতুর্ভুজ আঁকতে চারটি বাহু ও একটি কোণের পরিমাপের প্রয়োজন। এই পাঁচটি যেকোনো পরিমাপের হলে কি চতুর্ভুজটি আঁকা যাবে?

সম্পাদ্য ২

কোনো চতুর্ভুজের চারটি বাহু ও একটি কর্ণের দৈর্ঘ্য দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

মনে করি, একটি চতুর্ভুজের চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য a, b, c, d এবং একটি কর্ণের দৈর্ঘ্য e দেওয়া আছে, যেখানে a+  b > e এবং c + d > e চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

অঙ্কনের বিবরণ :

(১) যেকোনো রশ্মি BE থেকে BD = e নিই। B ও D কে কেন্দ্ৰ করে যথাক্রমে a ও b এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে BD এর একই পাশে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। বৃত্তচাপদ্বয় A বিন্দুতে ছেদ করে।

(২) আবার, B ও D কে কেন্দ্র করে যথাক্রমে d ও c এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে BD এর যেদিকে A আছে তার বিপরীত দিকে আরও দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। এই বৃত্তচাপদ্বয় পরস্পর C বিন্দুতে ছেদ করে।

(৩) A3B, A ও D, B ও C এবং C ও D যোগ করি। তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট চতুৰ্ভুজ।

প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে, AB = a, AD = b, BC = d, CD = c এবং 

কর্ণ BD = e 

সুতরাং, ABCD ই নির্ণেয় চতুৰ্ভুজ।

কাজ : 

১। একটি চতুর্ভুজ আঁকতে চারটি বাহু ও একটি কর্ণের দৈর্ঘ্য পরিমাপের প্রয়োজন। এই পাঁচটি যেকোনো পরিমাপের হলে কি চতুর্ভুজটি আঁকা যাবে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। 

২ । একজন শিক্ষার্থী একটি চতুর্ভুজ PLAY আঁকতে চেষ্টা করল, যার PL= 3 সে.মি., LA = 4 সে.মি., AY = 4.5 সে.মি., PY = 2 সে.মি., LY = 6 সে.মি.। সে চতুর্ভুজটি আঁকতে পারলো না। কেন?

সম্পাদ্য ৩

কোনো চতুর্ভুজের তিনটি বাহু ও দুইটি কর্ণের দৈর্ঘ্য দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

মনে করি, একটি চতুর্ভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য a, b, c এবং দুইটি কর্ণের দৈর্ঘ্য d, e দেওয়া আছে, যেখানে a + b > e । চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

অঙ্কনের বিবরণ :

(১) যেকোনো রশ্মি BE থেকে BD = e নিই। B ও D কে কেন্দ্ৰ করে যথাক্রমে a ও b এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে BD এর একই পাশে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। বৃত্তচাপদ্বয় A বিন্দুতে ছেদ করে।

(২) আবার, D ও A কে কেন্দ্র করে যথাক্রমে c ও d এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে BD এর যেদিকে A রয়েছে এর বিপরীত দিকে আরও দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। এই বৃত্তচাপদ্বয় পরস্পরকে C বিন্দুতে ছেদ করে।

(৩) A ও B A ও D, B ও C এবং C ও D যোগ করি।

তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট চতুৰ্ভুজ।

প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে, AB = a, AD = b, CD = c

এবং কর্ণ BD = e ও AC = d

সুতরাং, ABCD ই নির্ণেয় চতুৰ্ভুজ।

 

সম্পাদ্য ৪

কোনো চতুর্ভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য ও দুইটি অন্তর্ভুক্ত কোণ দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

মনে করি, একটি চতুর্ভুজের তিনটি বাহু a, b, c এবং a ও b বাহুর অন্তর্ভুক্ত কোণ ∠x এবং a ও c বাহুর অন্তর্ভুক্ত কোণ ∠y দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

অঙ্কনের বিবরণ : যেকোনো রশ্মি BE থেকে BC = a নিই । B ও C বিন্দুতে ∠x ও y এর সমান করে যথাক্রমে ZCBF ও ZBCG অঙ্কন করি। 

BF থেকে BA = b এবং CG থেকে CD = c নিই । A, D যোগ করি। 

তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট চতুৰ্ভুজ।

প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে, AB = b, BC = a, CD = c, 

∠ABC = ∠x ও ∠BCD = ∠y

সুতরাং ABCD ই নির্ণেয় চতুৰ্ভুজ।

 

সম্পাদ্য ৫

কোনো চতুর্ভুজের দুইটি সন্নিহিত বাহুর দৈর্ঘ্য ও তিনটি কোণ দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

তিনটি কোণ ∠x, ∠y, ∠z দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি আঁকতে হবে।

অঙ্কনের বিবরণ : যেকোনো রশ্মি BE থেকে BC = a নিই। ও C বিন্দুতে ∠x ও ∠y এর সমান করে যথাক্রমে ∠CBF ও ∠BCG অঙ্কন করি। BF থেকে BA = b নিই।

A বিন্দুতে ∠z এর সমান করে ∠BAH অঙ্কন করি। AH ও CG পরস্পরকে D বিন্দুতে ছেদ করে। তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট চতুৰ্ভুজ।

প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে, AB = b, BC = a, ∠ABC = ∠x ∠DCB = ∠y ও ∠BAD = 22 

সুতরাং, ABCD ই নির্ণেয় চতুৰ্ভুজ।

কাজ :

১। একটি চতুর্ভুজের সন্নিহিত নয় এরূপ দুই বাহুর দৈর্ঘ্য ও তিনটি কোণ দেওয়া আছে। চতুর্ভুজটি কি আঁকা যাবে? 

২। একজন শিক্ষার্থী একটি চতুর্ভুজ STOP আঁকতে চাইলো যার ST = 5 সে.মি., TO = 4 সে.মি., ∠S = 20°, ∠T = 30°, ∠O = 40° । সে চতুর্ভুজটি কেন আঁকতে পারলো না?

সম্পাদ্য ৬

কোনো সামান্তরিকের সন্নিহিত দুইটি বাহুর দৈর্ঘ্য এবং বাহুদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত কোণ দেওয়া আছে। সামান্তরিকটি আঁকতে হবে।

মনে করি, একটি সামান্তরিকের দুইটি সন্নিহিত বাহু a ও b এবং এদের অন্তর্ভুক্ত কোণ ∠x দেওয়া আছে। সামান্তরিকটি আঁকতে 

অঙ্কনের বিবরণ : যেকোনো রশ্মি BE থেকে BC = a নিই । B বিন্দুতে ZEBF = ∠x অঙ্কন করি। BF থেকে b এর সমান BA নিই। 

A ও C বিন্দুকে কেন্দ্র করে যথাক্রমে a ও b এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে ∠ABC এর অভ্যন্তরে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। এরা পরস্পরকে D বিন্দুতে ছেদ করে।

A, D ও C, D যোগ করি। তাহলে, ∠BCD ই উদ্দিষ্ট সামান্তরিক।

প্রমাণ : A, C যোগ করি। ∆ABC ও ∆ADC এ

AB = CD = b,

AD = BC = a এবং AC বাহু সাধারণ।

∴ ∆ABC = ∆ADC

অতএব, ∠BAC = ∠DCA কিন্তু, কোণ দুইটি একান্তর কোণ।

AB || CD

অনুরূপভাবে, প্রমাণ করা যায় যে, BC || AD

সুতরাং ABCD একটি সামান্তরিক।

আবার অঙ্কন অনুসারে ∠ABC = ∠X

অতএব, ABCD ই নির্ণেয় সামান্তরিক।

লক্ষ করি : শুধুমাত্র একটি বাহুর দৈর্ঘ্য দেওয়া থাকলেই বর্গ আঁকা সম্ভব। বর্গের বাহুগুলো সমান আর কোণগুলো প্রত্যেকটি সমকোণ। তাই বর্গ অঙ্কনের জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি শর্ত সহজেই পূরণ করা যায়।

সম্পাদ্য ৭

কোনো বর্গের একটি বাহুর দৈর্ঘ্য দেওয়া আছে, বর্গটি আঁকতে হবে। 

মনে করি, a কোনো বর্গের একটি বাহুর দৈর্ঘ্য। বর্গটি আঁকতে হবে।

অঙ্কনের বিবরণ : যেকোনো রশ্মি BE থেকে BC = a নিই । 

B বিন্দুতে BF ⊥ BC আঁকি। 

BF থেকে BA = a নিই। A ও C কে কেন্দ্র করে a এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে ∠ABC এর অভ্যন্তরে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। 

বৃত্তচাপদ্বয় পরস্পরকে D বিন্দুতে ছেদ করে। A ও D এবং C ও D যোগ করি।

তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট বর্গ।

প্রমাণ : ABCD চতুর্ভুজের AB = BC = CD = DA = a

এবং ∠ABC = এক সমকোণ।

সুতরাং, এটি একটি বর্গ।

অতএব, ABCD ই নির্ণেয় বর্গ।

Content added || updated By
Please, contribute to add content into অনুশীলনী ৮.২.
Content