অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান - NCTB BOOK

আমাদের চারপাশে নানা রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যাচ্ছে। এই সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়া কখনো শক্তি উৎপন্ন করে, কখনো ব্যবহার উপযোগী নতুন পদার্থ তৈরি করে আবার কখনো বা রোগ নিরাময়েও সাহায্য করে।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

   • বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের শক্তির রূপান্তর ব্যাখ্যা করতে পারব,
   • শুষ্ক কোষের শক্তির রূপান্তর ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • তড়িৎ বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • পরীক্ষণ কাজে রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারব;
   • আমাদের জীবনে রাসায়নিক বিক্রিয়ার অবদান উপলব্ধি করতে পারব।

Content added By

সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা প্রতীক ও সংকেত সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছ। রসায়নবিদগণ গঠন অনুসারে পৃথিবীর সকল পদার্থকে মৌলিক ও যৌগিক এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এ পর্যন্ত মোট ১১৮ টি মৌলিক পদার্থের কথা জানা গেছে। সাধারণত মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের একটি বা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করা হয়। মৌলের পুরো নামের এ সংক্ষিপ্তরূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন— H (হাইড্রোজেন), O (অক্সিজেন), Ca (ক্যালসিয়াম) ইত্যাদি।

আবার কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকে সংকেত বলা হয়। যেমন- হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H2, অক্সিজেন অণুর সংকেত O2, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুর সংকেত HCl ইত্যাদি।

যৌগের সংকেত লেখার সময় আমাদেরকে মৌলের যোজনী সংখ্যা সম্পর্কে ভাবতে হবে। মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। মৌলিক পদার্থের যোজনীকে আমরা এক একটি হাতের সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের একটি হাত তার যোজনী হবে ১। হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়ই একহাত বিশিষ্ট মৌল। অর্থাৎ উভয়ের যোজনী ১। তাই হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত হবে HC1। অক্সিজেনের যোজনী ২ অর্থাৎ অক্সিজেনের ১টি পরমাণুর ২টি হাত আছে। এ ২টি হাত দিয়ে অক্সিজেন একযোজী বা ১ হাত বিশিষ্ট ২টি হাইড্রোজেনের পরমাণুকে ধরতে পারে। এ কারণে পানির সংকেত H2O ।

নাইট্রোজেন ও কার্বনের যোজনী যথাক্রমে ৩ এবং ৪। ফলে অ্যামোনিয়ার সংকেত NH3 এবং মিথেনের সংকেত CH। হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, পানি, অ্যামোনিয়া ও মিথেনের অণুকে নিম্নরূপভাবে দেখানো যেতে পারে—

উল্লেখ্য কোনো কোনো মৌলের একাধিক যোজনীও থাকতে পারে। যেমন- সালফার এর যোজনী ২ ও ৪, আয়রন এর যোজনী ২ ও ৩ ইত্যাদি।

অতএব কোনো মৌলের যোজনী হলো ঐ মৌলের একটি পরমাণু কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তার সংখ্যা। কোনো যৌগ গঠনের সময় সাধারণভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন মৌলের সবগুলো হাত বা যোজনী কাজে লাগে।

 

                                                                                        কয়েকটি মৌল ও যৌগমূলকের যোজনী

 যোজনী - ১যোজনী – ২যোজনী – ৩যোজনী – ৪
অধাতু (মৌল)

হাইড্রোজেন (H)

ফ্লোরিন (F) 

ক্লোরিন (CI) 

ব্রোমিন (Br)

আয়োডিন (1)

অক্সিজেন (O)

সালফার (S) 

কার্বন (C)

 

 

নাইট্রোজেন (N)

ফসফরাস (P)

 

 

 

কার্বন (C)

সালফার (S)

 

 

 

ধাতু (মৌল)

সোডিয়াম (Na)

পটাশিয়াম (K)

কপার (Cu) (আস)

সিলভার (Ag)

গোল্ড (Au) (আস)

 

 

ম্যাগনেসিয়াম (Mg)

ক্যালসিয়াম (Ca)

আয়রন (Fe) (আস)

কপার (Cu) (ইক)

জিঙ্ক (Zn)

টিন (Sn) (আস)

লেড (Pb) (আস)

অ্যালুমিনিয়াম (Al) 

আয়রন (Fe) (ইক)

গোল্ড (Au) (ইক)

 

 

 

 

টিন (Sn) (ইক) 

লেড (Pb) (ইক)

 

 

 

 

 

যৌগমূলক

অ্যামোনিয়াম (NH4+)

হাইড্রোক্সিল (OH-)

নাইট্রাইট (NO2-)

নাইট্রেট (NO3-)

হাইড্রোজেন কার্বনেট (HCO3-)

কার্বনেট (CO32-)

সালফাইট (SO32-)

সালফেট (SO42-)

 

 

ফসফেট (PO43-)

 

 

 

 

 

 

ছকে উল্লেখিত SO42-CO32-NO3-NH4+ ইত্যাদি পরমাণুগুচ্ছ স্বাধীনভাবে থাকে না। মৌলিক পদার্থের পরমাণুর মতো যৌগ গঠনে অংশ নেয়। এ জাতীয় পরমাণুগুচ্ছকে যৌগমূলক বা র‍্যাডিকেল বলে । যৌগের আণবিক সংকেত লেখার ক্ষেত্রে যে সকল নিয়ম অনুসরণ করা হয় তা নিম্নরূপ :

(১) যৌগে উভয় মৌল বা যৌগমূলকের যোজনী একই হলে এক্ষেত্রে সংকেতে যোজনী লেখার প্রয়োজন হয় না। শুধু মৌল কিংবা মূলকগুলো পাশাপাশি লিখলেই চলে। যেমন : CaO (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), NH4Cl (অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড), NH4 NO3, (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) ইত্যাদি।

(২) উভয় মৌলের কিংবা উভয় মূলকের যোজনী কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার গুণিতক হলে ঐ সংখ্যা দিয়ে যোজনীকে ভাগ করে বিনিময় করে লিখতে হয়। যেমন- কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ক্ষেত্রে C2O4CO2 এখানে কার্বন ও অক্সিজেনের যোজনী যথাক্রমে 4 এবং 2 ।

(৩) উভয় মৌলের কিংবা উভয় মূলকের যোজনী ভিন্ন এবং গুণিতক না হলে, অর্থাৎ A মৌলের যোজনী x এবং B মৌলের যোজনী y হলে A ও B মৌল দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেতটি হবে AyBx। A মৌলের যোজনী সংখ্যা B মৌলের ডানপাশে সামান্য নিচে ছোট করে এবং B মৌলের যোজনী সংখ্যা A মৌলের ডানপাশে নিচের দিকে ছোট করে লিখতে হয়। যেমন- অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3)

Content added By

আজকাল বিশ্বের দেশগুলোকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভাগ করা হয়। এই দেশগুলোকেই আবার শিল্পোন্নত ও কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত করা হয়।

শিল্পোন্নত দেশগুলো কৃষিতেও উন্নত। এ সকল দেশ তাদের কৃষিকে উন্নত করে শিল্পে পরিণত করেছে। অপরদিকে ‘কৃষিনির্ভর’দেশের সরকার বা কৃষক সমাজ শুধু অর্থনৈতিক কারণে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি আত্মস্থ ও ব্যবহার করতে পারছে না। আসল কথা হচ্ছে আজ অনুন্নত দেশগুলো কৃষিতে অনুন্নত এবং উন্নত দেশগুলো কৃষিতেও উন্নত।

স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষির অগ্রগতি : স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রাকালে দেশে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি কৃষি কলেজ, একটি ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও কয়েকটি কৃষি সম্প্রসারণ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছিল । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষির প্রতি অসামান্য দূরদর্শিতায় স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BINA), ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC), ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (BJRI), ১৯৭২ সালে তুলা উন্নয়ন বোর্ড (CDB), ১৯৭৪ সালে ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (SRI), ১৯৭৩ সালে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (FDC) সহ কৃষি বিষয়ক অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় । পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI), ১৯৮৫ সালে কৃষি তথ্য সার্ভিস (AIS), ১৯৮৬ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী (SCA), ১৯৯৬ সালে জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম (NARS) ও ২০০৭ সালে ‘Krishi Gobeshona Foundation' স্থাপিত হয়। কৃষি ব্যবস্থাপনা ও গবেষণার উন্নয়নকল্পে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে যথাক্রমে ‘Integrated Pest Management (IPM)' ও 'National Agricultural Technology Programme (NATP) ' উল্লেখযোগ্য । কৃষিকে অধিকতর পরিবেশবান্ধব করার জন্য সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (IPM) সহ উত্তম কৃষি কার্যক্রমে কৃষকগণকে উৎসাহিত ও দক্ষ করে তোলার জন্য বিবিধ কার্যক্রম চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ধানের ১০৫টি জাত এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতালগ্নের তুলনায় প্রায় ৩০% কম আবাদী জমিতে তখনকার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশ আজ উদ্বৃত্ত প্রধান খাদ্য (ধান) উৎপাদনে সক্ষম । কৃষি শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশে বর্তমানে আটটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এর পাশাপাশি প্রায় সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ও পশুপালন অনুষদ চালু আছে। বর্তমানে সকল কৃষি ফসলের জন্য বিশেষায়িত গবেষণাগার রয়েছে । প্রতি বছর শহর ও গ্রামাঞ্চলে কৃষি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কৃত্রিম রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য সবুজ সার এবং কম্পোস্ট সার তৈরি ও ক্ষেতে প্রয়োগ, কেঁচো জাত সার বা ভার্মিকম্পোস্ট প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে পৌঁছানো হচ্ছে । গবাদি পশুর খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য উন্নত গো খাদ্য উৎপাদন, ঘাস প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য তৈরিতে এখন বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। দেশে পোল্ট্রি একটি কৃষি শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বাজারে মাছের একটা বড় অংশ এখন আসছে চাষকৃত মাছ থেকে। প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ সরকারিভাবে উৎসাহিত করায় কৃষি বনায়ন ও সামাজিক বনায়নের দিকে কৃষকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষা সম্প্রসারিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী কৃষি স্নাতক ডিগ্রীধারীদের ১ম শ্রেণির পদমর্যাদা দান করেন। বায়োটেকনোলজি বা জীবকৌশল বিজ্ঞানে অগ্রগতি বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশি বিজ্ঞানী কর্তৃক পাটের জেনেটিক ম্যাপ আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, অর্থাৎ বাংলাদেশে কৃষির আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে।

পাটের জিনোম আবিষ্কারক ড. মাকসুদুল আলম

ভারতের কৃষি : ভারত একটি বৃহৎ ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের দেশ। ভারতের কিছু মরু অঞ্চল ছাড়া সমগ্র পার্বত্য ও সমতল অঞ্চলই কৃষিপ্রধান। কৃষি পরিবেশেও দেশটি বৈচিত্র্যময়। ফলে শস্য, ফুল, ফল, সবজি, মাংস, দুধ, ডিম এমন কোনো কৃষিজ পণ্য প্রায় নেই যা ভারতে উৎপন্ন হয় না কিংবা বাজারে পাওয়া যায় না। ভারতের কৃষিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শুধু ভারতের কৃষি ব্যবস্থার কাজে লাগছে না, বিশ্বও উপকৃত হচ্ছে । ভারতীয় কৃষিজ পণ্যের অন্যতম আমদানিকারক দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।

চীনের কৃষি : পরিকল্পিত উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার সুবিধাগুলো চীনের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনসংখ্যার দেশ হলেও চীনে খাদ্য ঘাটতির কথা শোনা যায় না। প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান, গম, ভুট্টা উৎপাদনের ক্ষমতা চীনা কৃষক ও বিজ্ঞানীদের কঞ্জায় রয়েছে। হাইব্রিড ধান বীজের জনক চীন। এখন পর্যন্ত চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি হাইব্রিড ধান বীজ আমাদের দেশে আমদানি হয়। চীনা প্রযুক্তি শেখা ও আমাদের মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।

ভিয়েতনামের কৃষি : ভিয়েতনামের অগ্রগতিতে তাদের কৃষক সমাজ ও কৃষির অবদান বিরাট। বিশেষ করে বিশ্বের অন্যতম প্রধান চাল রপ্তানিকারক দেশ আজ ভিয়েতনাম। কৃষি প্রযুক্তি বিকাশে গত কয়েক বছরে এদের সাফল্য বিস্ময়কর। ওদের কাছে আমাদের শেখার রয়েছে অনেক।

কৃষির উন্নয়নের বিষয়টি দেশ বা অঞ্চলের সীমানা ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক বা বৈশ্বিক গুরুত্ব লাভ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে যে প্রতিষ্ঠান বিশ্বজুড়ে কাজ করে তার নাম “খাদ্য ও কৃষি সংগঠন” (Food and Agriculture Organization, FAO)। এ ছাড়াও রয়েছে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (International Rice Research Institute, IRRI, Phillipines) মতো বিশেষ ফসলভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ। আমাদের দেশের কৃষি উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

কাজ :

১. শিক্ষার্থীরা একক কাজ হিসাবে বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতি সম্পর্কে একটি অনুচেছদ খাতায় লিখবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

২. কৃষির আধুনিকায়ন মানুষের জীবনযাত্রায় কীভাবে প্রভাব ফেলছে তার একটি বর্ণনা লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।

Content added By

যেকোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার বিবরণ দিতে হলে আমাদের রাসায়নিক সমীকরণ সম্বন্ধে ধারণা থাকা অপরিহার্য। একটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুইটি অংশে ভাগ করা যায়। এক অংশে বিক্রিয়ক পদার্থ এবং অন্য অংশে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নতুন পদার্থ থাকে। যেমন-

বিক্রিয়ক পদার্থ হলো রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনের পূর্বাবস্থা এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ হলো রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনের শেষ বা পরবর্তী অবস্থা। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু ধ্বংস বা নতুন করে সৃষ্টি হয় না, পরমাণুর শুধু পুনর্বিন্যাস ঘটে। অতএব বিক্রিয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিক্রিয়ক পদার্থে যতগুলো পরমাণু থাকে বিক্রিয়ার পরে বিভিন্ন বিক্রিয়াজাত পদার্থেও ততগুলো পরমাণু থাকে। ফলে বিক্রিয়ক দ্রব্য এবং উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে পরমাণু সংখ্যার সমতা বিরাজ করে।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়কদ্রব্য এবং উৎপন্ন দ্রব্যকে প্রতীক, সংকেত ও কতগুলো চিহ্নের ( +, → বা =) সাহায্যে সংক্ষেপে প্রকাশ করা কে রাসায়নিক সমীকরণ বলে। যেমন :

রাসায়নিক সমীকরণ লেখার নিয়মগুলো নিম্নরূপ-

(১) রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়ক পদার্থ বা পদার্থগুলোর স্ব স্ব প্রতীক বা সংকেত সমীকরণটির তীর চিহ্নের (—) বামদিকে লিখতে হয়। বিক্রিয়াজাত পদার্থ বা পদার্থগুলোর স্ব স্ব প্রতীক বা সংকেত সমীকরণটির তীর চিহ্নের (—) ডান দিকে লিখতে হয়।

(২) বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ একাধিক হলে তাদের সংকেতের মধ্যে যোগ চিহ্ন (+) দেওয়া হয়। 

(৩) কোনো পদার্থের অণুর সংখ্যা একাধিক হলে অণুর সংকেতের আগে সেই সংখ্যা লেখা হয়।

(৪) বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলোর মধ্যে তীর চিহ্নের পরিবর্তে সমান চিহ্ন ও (=) বসানো যায়। তবে এক্ষেত্রে উভয়পক্ষের পরমাণুর সমতাকরণ প্রয়োজন।

(৫) বিক্রিয়ার আগে বিভিন্ন পদার্থের অণুর মধ্যে যত সংখ্যক বিভিন্ন মৌলের পরমাণু থাকে, বিক্রিয়ার পরে গঠিত নতুন অণুগুলোর মধ্যে ঠিক তত সংখ্যক বিভিন্ন মৌলের পরমাণু থাকতে হবে। তাই সমীকরণের উভয় পক্ষে মৌলের পরমাণু সংখ্যার সমতা আনার জন্য প্রতীক ও সংকেতগুলোকে প্রয়োজনীয় সংখ্যা দ্বারা গুণ করতে হয়।

 

রাসায়নিক সমীকরণের সমতাকরণ
হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়। সুতরাং সমতা চিহ্নের বামদিকে বসবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন অণুর সংকেত এবং ডানদিকে বসবে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন পদার্থ পানির অণুর সংকেত। সুতরাং বিক্রিয়াটিকে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়-

কিন্তু বিক্রিয়ার আগে যত সংখ্যক H পরমাণু এবং O পরমাণু থাকে বিক্রিয়ার পরেও বিক্রিয়াজাত পদার্থে তত সংখ্যক H এবং O পরমাণু থাকা উচিত। তাই বিক্রিয়ার সমতা স্থাপনের জন্য H2 অণু, O2 অণু ও H2O অণুর সংখ্যা এবং সমীকরণ হবে নিম্নরূপ-

এই সমীকরণ থেকে বিক্রিয়ার পূর্বে এবং বিক্রিয়ার পরে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মোট পরমাণুর সংখ্যা গণনা করা যায়। বোঝার সুবিধার্থে উপরের সমীকরণটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হলো-

সুতরাং উপরের সমীকরণে বিক্রিয়ার আগের পরমাণুর সংখ্যা এবং বিক্রিয়ার পরের পরমাণুর সংখ্যা সমান।

Content added || updated By

বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম এই চারটি দেশ এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। এই দেশগুলোর মধ্যে ভৌগোলিক দিক থেকে যেমন কিছু সাদৃশ্য আছে তেমনি কিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। এই চারটি দেশের প্রধান কৃষি উৎপাদন হচ্ছে ধান এবং এর জনগণ প্রধানত ভাত খেতে অভ্যস্ত। এদের মধ্যে চীন, ভারত ও বাংলাদেশ অত্যন্ত জনবহুল দেশ । অবশ্য ভিয়েতনাম ততটা নয়।

 

বাংলাদেশ ও চীন

বাংলাদেশের তুলনায় চীন কৃষিতে অনেক উন্নত। অনেক ক্ষেত্রেই কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে চীন বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আছে। ধানের বংশগতির পরিবর্তন এমনভাবে ঘটাতে সক্ষম হয়েছে যে চীনের অধিকাংশ ধানের জাত আর মৌসুম নির্ভরশীল নেই। এই জাতগুলো পূর্বের প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে হেক্টর প্রতি সাতগুণ পর্যন্ত ফলন দিচ্ছে। চীনের ধান গবেষকগণ দাবি করছেন আগামী প্রজন্মের ধান জাতগুলো এখনকার চাইতে দ্বিগুণ উৎপাদন দেবে। এই ‘সুপার হাইব্রিড' ধানের একটি বড় ধরনের অসুবিধা হলো এই সকল অত্যাধুনিক ধানের বীজ সংরক্ষণ করা যায় না। এক প্রজন্মেই বীজের গুণাগুণ শেষ হয়ে যায়। চীনের বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে এই সব ফসল হয়ত সহায়ক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে ধান বীজের জন্য বাংলাদেশের চাষিদের বীজ ব্যবসায়ীদের মুখাপেক্ষী না হলেও চলে, কেননা দেশের মোট ব্যবহৃত ধান বীজের অন্তত ৮৫% চাষিরা নিজেরাই সংরক্ষণ ও ব্যবহার করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট Bangladesh Rice Research Institute (BRRI) এ পর্যন্ত যতগুলো উচ্চ ফলনশীল ধান জাত High Yielding Variety (HYV) উদ্ভাবন করেছে সেগুলোর বীজ সঠিক মাঠ ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব ধানক্ষেতেই উৎপাদন করা যায় এবং চাষিরা পরবর্তী ফসলের জন্য বীজ সেখান থেকে সংরক্ষণ করতে পারেন। অর্থাৎ ধান বীজের জন্য বাংলাদেশের চাষিদের এক ধরনের সার্বভৌমত্ব রয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট সুপার হাইব্রিড ধান উৎপাদনের জন্য জোর গবেষণা চালাচ্ছে। শীঘ্রই হয়ত বাংলাদেশের চাষিরা এই অতি উচ্চ ফলনশীল দেশি ধান বীজ পাবে । তবে এই ধান উৎপাদনের অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশি চাষিরা রপ্ত করেছেন। কারণ কয়েকটি বীজ ব্যবসায়ী কোম্পানি এ ধরনের ধানের বীজ বাংলাদেশে চালু করতে আগ্রহী ছিল। এই প্রেক্ষিতে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত আকারে এ জাতীয় ধান উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছিল এই শর্তে যে, কোম্পানিগুলো দেশেই এই ধান বীজ উৎপাদন করবে।

Content added || updated By

কাজ : সংযোজন বিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা

প্রয়োজনীয় উপকরণ : টেস্টটিউব, মর্টার, স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার, লোহার গুঁড়া, সালফার, নিক্তি

পদ্ধতি : টেস্টটিউবটি ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নাও। ৭ গ্রাম লোহার গুঁড়া ও ৪ গ্রাম সালফার (সমানুপাতিক হারে ভিন্ন পরিমাণও নেওয়া যায়) নিক্তি দিয়ে মেপে মর্টারে নাও ও খুব ভালোভাবে পিষে নাও এবং তারপর শুকনা টেস্টটিউবে ঢেলে দাও। এবার স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার দিয়ে টেস্টটিউবের তলায় তাপ দিতে থাক। তাপ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখ যেন আগুনের শিখা ছোট হয়। তাপ দিতে দিতে টেস্টটিউবের মিশ্রণটি যখন রক্তিমাভার মতো হবে তখন তাপ দেওয়া বন্ধ করো। টেস্টটিউবটি মর্টারের উপরে ধরে রাখ যেন এটি ভেঙ্গে গেলেও টেস্টটিউবের ভিতরের বস্তু নষ্ট না হয়ে যায়। অতঃপর টেস্টটিউবটি ঠাণ্ডা করো ও ভেঙ্গে ভিতরের বস্তুটিকে আলাদা করো।

টেস্টটিউব থেকে যে বস্তুটি পেলে তা দেখতে গাঢ় ধূসর বর্ণের। তোমরা এতে হালকা হলুদ রঙের সালফার বা লোহার (আয়রন) গুঁড়া কোনোটিই দেখতে পাচ্ছ না, কারণ এখানে আয়রন ও সালফার একে অপরের সাথে মিলে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ ফেরাস সালফাইড তৈরি করেছে।

এ ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন যেখানে একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। একইভাবে জিংক ও সালফারের বিক্রিয়ায় জিংক সালফাইড তৈরির বিক্রিয়াও সংযোজন বিক্রিয়া।

এখানে উল্লিখিত দুটি বিক্রিয়াকেই মৌল থেকে যৌগ তৈরির সংযোজন বিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। তবে দুটি যৌগ যুক্ত হয়েও কিন্তু সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন আরেকটি যৌগ তৈরি হতে পারে। যেমন- অ্যামোনিয়ার সাথে হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংযোজনে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়।

Content added By

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। এ দেশের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। কৃষির ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ দুই দেশেরই ঐতিহ্যের অঙ্গ। দুইটি দেশই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির দ্বারা সমস্যাগ্রস্ত। এই বিপুল দ্রুত বর্ধনশীল জনগোষ্ঠীর ক্ষুধা নিবারণের গুরুভার দেশ দুইটির কৃষক সমাজের ওপর ন্যস্ত। ভারতের কৃষি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক অগ্রসর। ধানসহ অন্যান্য শস্য, ডাল, ফুল, ফল, শাকসবজি, ভোজ্য তেলবীজ, তুলা, আখ,পোল্ট্রি, ডেইরি, মৎস্য সহ প্রায় সকল কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভারত বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। ভারতে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডেইরি সমবায় প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ। এর প্রধান দুইটি কারণের একটি হলো ভারতের কৃষক বাংলাদেশের কৃষকদের চেয়ে অনেক সংগঠিত; অপরটি হলো কৃষিবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ভারতের অভূতপূর্ব অগ্রগতি। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা শুধু ভারতের কৃষিকেই নয় বিশ্বের কৃষিকেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অবশ্য ভারতে কাজের ক্ষেত্রও বিশাল। বাংলাদেশের প্রায় আঠারো গুণ বড় এই দেশটিতে কৃষি পরিবেশের বৈচিত্র্য একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ অপরদিকে ততোটাই সম্ভাবনাময়। মরু অঞ্চল থেকে শুরু করে বরফাবৃত অঞ্চল, নিচু জলাভূমি থেকে শুরু করে পার্বত্য অসমতল ভূমি, অনুর্বর খরাপ্রবণ এলাকা থেকে নদীবিধৌত উর্বর অঞ্চলও রয়েছে। দেশের এক অঞ্চলে যখন তুষারস্নাত শীতকাল অন্য অঞ্চলে তখন গ্রীষ্ম বা বসন্তকাল। ফলে ভারতের সর্বত্র প্রায় সব ধরনের ফসল সারা বছরই উৎপাদিত হচ্ছে।

এত কিছুর পরও উভয় দেশের প্রায় সকল ফসলের জমির ইউনিট প্রতি গড় উৎপাদন কাছাকাছি। আবার ভারতের কিছু কিছু রাজ্য রয়েছে যেমন- পাঞ্জাব, হরিয়ানা বা কেরালা যেখানে ইউনিট প্রতি উৎপাদন অনেক বেশি।

পাট, চামড়া, ইলিশ, চিংড়ি ইত্যাদি কিছু পণ্য ছাড়া প্রায় সব কৃষিপণ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি হয়।

 

বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম

বাংলাদেশের ও ভিয়েতনামের কৃষিতে বেশি মিল ধান উৎপাদনে। তবে এক্ষেত্রে দৃশ্যত ভিয়েতনামের কৃষকদের অগ্রগতি বাংলাদেশের চেয়ে দ্রুত হয়েছে। পঁচিশ বৎসর আগে যেখানে ভিয়েতনামের কৃষি উৎপাদন অনগ্রসর ও দুর্বল ছিল, তারা প্রায় সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এই গতি পাওয়ার প্রধানতম কারণ হলো ভিয়েতনামের কৃষক সমাজ অত্যন্ত সংগঠিত। ভিয়েতনামের কৃষি সমবায় সংগঠনগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী ও সৃজনশীল । সেখানকার সকল কৃষক কোনো না কোনো সমবায় সংগঠনের সাথে যুক্ত। কৃষি সমবায় সংগঠনগুলো এতো শক্তিশালী যে এরা স্থানীয় সরকারের বাৎসরিক ব্যয়ের অন্তত ৫০% যোগান দিয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষি গবেষণা ও কৃষি সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তারা আর্থিক সহায়তা দেয়। এই সকল সংগঠন কৃষিনীতি ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কৃষিতে ভিয়েতনাম থেকে বেশ কিছু মাঠ প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের কৃষির অগ্রগতির সাথে অন্য একটি এশীয় দেশের কৃষির অগ্রগতির তুলনামূলক আলোচনা পোস্টার পেপারে চার্ট আকারে লিখবে এবং উপস্থাপন করবে।
Content added By

কাজ : সালফার ও অক্সিজেনের দহন বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ 

প্রয়োজনীয় উপকরণ : একটি লম্বা হাতলযুক্ত দহন চামচ, কিছু সালফার, স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার 

পদ্ধতি : তোমরা দহন চামচে কিছু সালফার নাও। স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার দিয়ে চামচটিতে তাপ দিতে থাক। কী দেখতে পাচ্ছ?

প্রথমে সালফার গলে গেল তারপর নীল আগুনের শিখা দেখতে পাচ্ছ এবং ঝাঁঝালো গন্ধ পেয়েছ। কারণ তাপ দেওয়ার ফলে সালফার বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্যে দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস তৈরি করেছে যার জন্য তোমরা ঝাঁঝালো গন্ধ পেয়েছ।

কাজ : ম্যাগনেসিয়াম ও অক্সিজেনের দহন বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ 

প্রয়োজনীয় উপকরণ : ম্যাগনেসিয়াম রিবন, চিমটা আংটা, লাইটার, স্পিরিট ল্যাম্প/ বুনসেন বার্নার 

পদ্ধতি : ম্যাগনেসিয়াম রিবনের একটি ছোট টুকরার (৮ সেন্টিমিটার) একমাথা চিমটা দিয়ে ধরো। চোখে নিরাপত্তা চশমা পরে নাও। রিবনের অন্য মাথাটি বুনসেন বার্নারের শিখার উপর ধরো। লাইটার দিয়েও এটি করা যায়। খুব ভালোভাবে লক্ষ করো কী ঘটছে?

রিবনে আগুন ধরে গেল এবং অত্যন্ত প্রজ্বলিত শিখাসহ জ্বলতে লাগল। এর কারণ হলো ম্যাগনেসিয়াম বাতাসের অক্সিজেনে দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুড়তে থাকে আর তোমরা প্রজ্বলিত শিখা দেখতে পাও। এভাবে যখন সমস্ত ম্যাগনেসিয়াম পুড়ে শেষ হয়ে যায়, তখন আপনা আপনি শিখা নিভে যায়। শেষে তোমরা ছাই এর মতো কিছু দেখতে পাচ্ছ কি? এটি আসলে ম্যাগনেসিয়াম ও অক্সিজেন পুড়ে তৈরি হওয়া ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড।

কাজ : মোমের দহন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা 

প্রয়োজনীয় উপকরণ : মোমবাতি, দিয়াশলাই 

পদ্ধতি : দিয়াশলাই দিয়ে মোমবাতি জ্বালাও। খুব ভালোভাবে খেয়াল কর কী ঘটছে? সময়ের সাথে সাথে মোমবাতির আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে। বলতো এর কারণ কী? মোমবাতি জ্বালানোর ফলে উৎপন্ন তাপে মোম গলে যাচ্ছে। এই গলিত মোমের ছোট একটি অংশ ঠান্ডা হয়ে মোমের গা বেয়ে নিচে পড়ছে কিন্তু বেশিরভাগ অংশই সলতের মধ্য দিয়ে উপরে উঠে উৎপন্ন তাপে বাষ্পীভূত হচ্ছে। এই বাষ্পীভূত মোম দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করছে। এর ফলে তাপ ও আলোকশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে।

Content added || updated By

ফসলের ক্ষেত্রে মৌসুম নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠার প্রধান কারণ হলো দিনের দৈর্ঘ্য সংবেদনশীলতা। এই দিবাদৈর্ঘ্য সংবেদনশীলতা দূর করতে বা কমিয়ে দিতে পারলে অর্থাৎ একটি মৌসুম নির্ভর ফসলকে মৌসুম নির্ভরতামুক্ত করতে পারলে ফসলটি যে কোনো মৌসুমে উৎপাদন করা যায়।

 

উপযোগিতা :

১। বাজারে অসময়ের ফল ও সবজির চাহিদা খুবই বেশি। এসব অসময়ের ফসল উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। কৃষক ও খুচরা বিক্রেতা উভয়ে বাড়তি পয়সা উপার্জন করতে পারে।

২। বিশেষ করে আগাম ফসল বাজারজাত করতে পারলে বেশি দাম পাওয়া যায়।

৩। ঋতুচক্র সংশ্লিষ্ট কর্মহীনতা দূর করে কৃষককে সারা বছর কর্মব্যস্ত রাখতে পারে।

81 একই কারণে গ্রামীণ কর্মশক্তিকে সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

৫। মঙ্গা বা এই ধরনের সাময়িক দুর্ভিক্ষাবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

৬। বাজারে কৃষিপণ্য বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করতে পারে।

৭। পুষ্টি সমস্যার সমাধান সহজতর করতে পারে।

৮। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে এনে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হতে পারে।

৯। বিদেশি ক্রেতাদের সারা বছর কৃষিপণ্যের লভ্যতার নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। ফলে কৃষিপণ্যের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো যায়।

১০। কৃষি গবেষণাকে মৌসুম নির্ভরতামুক্ত করা যায়।

 

ফসলের মৌসুম নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠার বিভিন্ন কৌশল

১। ফসল উৎপাদনের কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি : ফসলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক গুণাগুণ পরিবর্তন না করেই এই কৌশলে যে কোনো ফসল উৎপাদন করা যায়। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত মাঠে বা উদ্যানে না করে গ্রিন হাউসে কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন করা হয়। অর্থাৎ বদ্ধ ঘরে কৃত্রিম উপায়ে পর্যাপ্ত আলো, উত্তাপ, বায়ুর 

চিত্র : গ্রিন হাউস

আর্দ্রতাসহ পরিবেশগত যাবতীয় উপাদান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় সুষম পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়। এই কৌশল বাস্তবায়নের প্রথম শর্ত হলো – ফসলের পরিবেশ ও পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা। দ্বিতীয় শর্ত হলো - প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি ও পুষ্টি সরবরাহের যান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থাপন ও পরিচালনা। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো -নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। এই পদ্ধতিতে যে কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হলেও উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ বিশেষ ফসল ছাড়া এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না। এই কৌশলে কোনো ফসল বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা যায় না । সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা হওয়ায় এই পদ্ধতিতে ফসল হয় সম্পূর্ণ রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত।

আমাদের দেশে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম (মিষ্টি মরিচ), স্ট্রবেরি ও টমেটো উৎপাদন করা হয়েছে । বর্তমানে এই ফসলগুলোর বাজারমূল্য অনেক বেশি।

২। ফসলের জেনেটিক বা বংশগতির পরিবর্তন : ফসলের মৌসুম নির্ভরতা কাটিয়ে উঠার এবং তুলনামূলক স্বল্প খরচের পদ্ধতি হলো ফসলের বংশগতিতে পরিবর্তন আনা। ফসলের জিনগত বিন্যাস বদলানো, ফসলের দিবাদৈর্ঘ্য সংবেদনশীলতার জন্য দায়ী জিন ছাঁটাই করা অথবা এমন পরিবর্তন আনা যাতে তা প্রশমিত থাকে। সংকরায়ণ ও ক্রমাগত নির্বাচনের মাধ্যম ছাড়াও অন্য বেশ কিছু আধুনিক উপায়ে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এই ধরনের ফসলকে জিএম ফসল বা জেনেটিক্যালি মডিফাইড ক্রপ বলা হয়। এই বিশেষ কৌশলসমূহকে সাধারণভাবে বলা হয় জীব-কৌশল বা বায়োটেকনোলজি।

৩। অভিজ্ঞ কৃষকের পর্যবেক্ষণ, চয়ন ও নিরীক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও মৌসুম নির্ভরতা এড়াতে সক্ষম এমন ফসল উদ্ভাবন করা যেতে পারে । এগুলো মাঠ পর্যায়ে টিকে গেলে নতুন জাত (ভ্যারাইটি/কালটিভার) হিসাবে স্বীকৃতিও পেতে পারে । কৃষক পর্যায়ের আবিষ্কৃত এই সব আগাম জাত, নাবি জাত মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে ফলে জনপ্রিয় কোনো কৃষিপণ্য বাজারে দীর্ঘসময় ধরে পাওয়া যায়। এই সকল কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় খুব বেশি না হওয়ায় কৃষকের মুনাফা বৃদ্ধিতে বেশ অবদান রাখতে পারে । ফসলের জাত উদ্ভাবনে মানবসৃষ্ট এটাই সবচেয়ে সনাতন পদ্ধতি।

কাজ : বাংলাদেশে গ্রিন হাউসে ফসল ফলানো কতটা যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা কর।
Content added By

কাজ : লোহা ও তুঁতের বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ 

প্রয়োজনীয় উপকরণ : লোহার গুঁড়া, তুঁতে, পানি, টেস্টটিউব 

পদ্ধতি : টেস্টটিউবের চার ভাগের এক ভাগ পানি নাও। কিছু তুঁতে যোগ করে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে তুঁতের দ্রবণ তৈরি করো। এবার তুঁতের নীল দ্রবণে কিছু লোহার গুঁড়া যোগ করে ভালোভাবে ঝাঁকাও। কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ কি? দ্রবণের নীল রং আস্তে আস্তে হালকা সবুজ হয়ে যাচ্ছে আর তামার ছোট ছোট কণা টেস্টটিউবের তলায় জমতে শুরু করেছে। নীল দ্রবণ কেন হালকা সবুজ হলো?

এখানে লোহার গুঁড়া (আয়রন) ও কপার সালফেটের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে। ফলে ফেরাস সালফেট ও কপার তৈরি হয়েছে। উৎপন্ন ফেরাস সালফেটের রং হালকা সবুজ বলেই দ্রবণের রং নীল থেকে হালকা সবুজ হলো।

এখানে লোহা, কপার সালফেট থেকে কপারকে সরিয়ে নিজে ঐ স্থান দখল করে ফেরাস সালফেট তৈরি করেছে। এ সকল বিক্রিয়া যেখানে একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি মৌলকে সরিয়ে নিজে ঐ স্থান দখল করে নতুন যৌগ তৈরি করে তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে।

তোমরা এখন তুঁতের দ্রবণে জিংক বা দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি যোগ করে দেখ কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে।

 

বিযোজন বিক্রিয়া (Decomposition reaction)

কাজ : চুনা পাথরের বিযোজন বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ 

প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুনা পাথর, পেচুলা বা চামচ, টেস্টটিউব, নির্গমন নল, বুনসেন বার্নার বা স্পিরিট ল্যাম্প, ক্ল্যাম্প, স্ট্যান্ড, কর্ক ও হাতমোজা

পদ্ধতি : হাতমোজা পরে স্পেচুলা বা চামচ দিয়ে প্রায় ৫ গ্রাম চুনাপাথর টেস্টটিউবে নাও। এবার স্পিরিট ল্যাম্প বা বুনসেন বার্নার দিয়ে তাপ দিতে থাক। খুব ভালোভাবে খেয়াল করো কী ঘটছে।

কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে টেস্টটিউবে নেওয়া চুনাপাথর ভাপ দেওয়ার ফলে বিযোজিত হয়ে বা ভেঙ্গে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও ক্যালসিয়াম অক্সাইড উৎপন্ন হচ্ছে।

গ্যাসটি কার্বন ডাইঅক্সাইড কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে পার। অপর একটি টেস্টটিউবে ১-২ মিলিলিটার স্বচ্ছ চুনের পানি নিয়ে একটি নির্গমন নল প্রথম টেস্টটিউবের সাথে লাগাও। দেখবে চুনের পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্বিতীয় টেস্টটিউবে (নির্গমন নলের মাধ্যমে) যাওয়ার ফলে সেখানে চুনের পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড বিক্রিয়া করে আবার ক্যালসিয়াম কার্বোনেট তৈরি হওয়ায় চুনের পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।

নিয়ে বিযোজন বিক্রিয়ার পারও কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো।

কপার কার্বোনেটকে ভাগ দিলে তা ভেঙ্গে কপার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅন্নাইড উৎপন্ন হয়।

চিত্র ৮.১ : বিযোজन

পক্ষান্তরে পটাশিয়াম ক্লোরেটকে ভাপ দিলে এটি বিযোজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।

এ সকল বিক্রিয়ার মতো যে সকল বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙ্গে একাধিক মৌল বা যৌগ উৎপন্ন হয় তাদেরকে বিযোজন বিক্রিয়া বলে।

Content added || updated By
Please, contribute to add content into অনুশীলনী.
Content

তোমরা মোম জ্বালালে কী ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় তা জেনেছ। এবার বলতো এখানে কোনো ধরনের শক্তির রূপান্তর ঘটছে কি? জ্বলন্ত মোমের কাছাকাছি হাত নিলে হাতে গরম লাগে। আবার অন্ধকারে মোম জ্বালালে আমরা এর আশেপাশে দেখতে পাই। তাহলে একথা বলা যায় যে, মোম জ্বালানোর ফলে ভাপাতি উৎপন্ন হয় বলেই হাতে গরম লাগে আর আলোক শক্তি উৎপন্ন হয় বলেই অন্ধকারে মোম জ্বালালে আমরা এর আশেপাশের জিনিস দেখতে পাই। মোম একটি রাসায়নিক কচু। একে পোড়ালে এতে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি পরিবর্তিত হয়ে তাপশক্তি ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একইভাবে গ্যাসের চুলার গ্যাস জ্বালালেও গ্যাসে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি পরিবর্তিত হয়ে প্রচুর তাপশক্তি ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে। উৎপন্ন তাপশক্তি দিয়েই আমরা রান্নাবান্নার কাজ করি।

তাহলে আমরা দেখলাম যে, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর ঘটে।

কাজ : খাবার সোডা ও লেবুর রসের বিক্রিয়া

প্রয়োজনীয় উপকরণ : খাবার সোডা বা বেকিং সোডা, টেস্টটিউব, লেবুর রস, ড্রপার 

পদ্ধতি : টেস্টটিউবে কিছু খাবার সোডা নাও। ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে লেবুর রস টেস্টটিউবে যোগ করো। কী দেখতে : পাচ্ছ? গ্যাসের বুদবুদ উঠছে? হ্যাঁ, প্রচুর গ্যাসের বুদবুদ উঠছে। টেস্টটিউবের তলায় স্পর্শ করে দেখ হাতে ঠান্ডা লাগে কি?

লেবুর রসে থাকে প্রচুর সাইট্রিক এসিড যা বেকিং সোডার সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সাইট্রেট, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও পানি তৈরি করে। আমরা যে বুদবুদ দেখি তা কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া আর কিছুই নয়।

টেস্টটিউব স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা লাগার কারণ কী ? কারণ হলো এই বিক্রিয়ায় তাপশক্তি হ্রাস পায়। তা না হলে ঠাণ্ডা লাগত না।

এখন তোমরা বেকিং সোডার সাথে লেবুর রসের বদলে ভিনেগার বা এসিটিক এসিড যোগ করে দেখ কী ঘটে?

কাজ : চুন ও ভিনেগারের রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ 

উপকরণ : চুন, ভিনেগার, বিকার, হাতমোজা, ড্রপার 

পদ্ধতি : হাতমোজা পরে কিছু চুন বিকারে নাও। এবার এতে ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে ভিনেগার যোগ করো। বিকারটি হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখ। গরম লাগছে? কারণ কী? এখানে চুনের সাথে ভিনেগারের বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম এসিটেট ও পানি তৈরি হচ্ছে আর প্রচুর তাপশক্তিও উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপন্ন তাপের কারণেই বিকার স্পর্শ করলে গরম লাগছে।

এখানে চুন হলো ক্ষারীয় পদার্থ ও এসিটিক এসিড হলো অম্লধর্মী পদার্থ আর উৎপাদিত ক্যালসিয়াম এসিটেট হলো নিরপেক্ষ পদার্থ। এ জাতীয় বিক্রিয়ায় যেখানে বিপরীতধর্মী পদার্থ একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে নিরপেক্ষ পদার্থ তৈরি করে তাকে প্রশমন বিক্রিয়া (Neutralization reaction) বলে।

এখন তোমরা চুনে ভিনেগারের বদলে লেবুর রস দিয়ে দেখ কী ধরনের বিক্রিয়া ঘটে?

কাজ : চুনের সাথে পানির বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ

প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুন, পানি, বিকার, হাতমোজা, স্পেচুলা, ড্রপার

পদ্ধতি : ৫ গ্রাম (ভিন্ন পরিমাণও নেওয়া যেতে পারে) চুন বিকারে নাও। ড্রপার দিয়ে ৪০ গ্রাম পানি আস্তে আস্তে যোগ কর। হাতমোজা পরে বিকার স্পর্শ করো। পানি যোগ করার পর কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ?

বিকার অনেক বেশি গরম হয়ে যাচ্ছে আর বিকারের মিশ্রণটি পানি ফুটানোর সময় যে রকম টগবগ করে অনেকটা সেরকম করছে। এখানে চুনে পানি যোগ করার ফলে, চুন ও পানির মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়।

উৎপন্ন Ca(OH)2স্ন্যাক লাইম নামেই বেশি পরিচিত। এই বিক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় যার ফলে পানি ফুটতে থাকে। স্ন্যাক লাইম বা Ca(OH)2 পানিতে খুব অল্প পরিমাণে দ্রবীভূত হয়। আর পানিতে Ca(OH)2 এর সম্পৃক্ত দ্রবণকেই চুনের পানি বা লাইম ওয়াটার বলা হয়৷

উপরের পরীক্ষাতে তোমরা যে সাসপেনসনটি পেলে তা কিছুক্ষণ রেখে দাও। উপরে পরিষ্কার পানির মতো যে অংশটি দেখা যাচ্ছে সেটিই কিন্তু চুনের পানি।

Content added || updated By

আমরা টর্চ লাইট, বিভিন্ন রকম রিমোট কন্ট্রোলার, নানা রকম খেলনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করি এগুলোকে ড্রাইসেল বা শুষ্ক কোষ বলে।

তোমরা কি জানো, এই শুষ্ক কোষ কীভাবে তৈরি করা হয়?

চিত্র ৮.২ : শুষ্ক কোষ

 

প্রথমে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl), কয়লার গুঁড়া এবং ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড (MnO2) ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ পানি যোগ করে একটি পেস্ট বা লেই তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণটি সিলিন্ডার আকৃতির দস্তার চোঙে নিয়ে তার মধ্যে একটি কার্বন দণ্ড এমনভাবে বসানো হয় যাতে দণ্ডটি দস্তার চোঙকে স্পর্শ না করে। কার্বন দণ্ডের মাথায় একটি ধাতব টুপি পরানো থাকে। শুষ্ক কোষের উপরের অংশ কার্বন দণ্ডটির চারপাশ পিচের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। দস্তার চোঙটিকে একটি শক্ত কাগজ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় । এখানে দস্তার চোঙ ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার বা অ্যানোড হিসেবে কাজ করে আর ধাতব টুপি দিয়ে ঢাকা কার্বন দণ্ডের উপরিভাগ ধনাত্মক তড়িৎদ্বার বা ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। এখন আমরা দেখে নিই কীভাবে শুষ্ক কোষ কাজ করে। 

 

কাজ : শুষ্ক কোষ দিয়ে তড়িৎ বর্তনী তৈরি করে শক্তির রূপান্তর দেখা

পদ্ধতি : ১টি তামার তারের এক প্রাপ্ত শুষ্ক কোষের অ্যানোড ও অপর তামার তারটি ক্যাথোডের সাথে যুক্ত করো। এবার

প্রয়োজনীয় উপকরণ : ১টি বৈদ্যুতিক বাল্ব, ১টি শুল্ক কোষ, ২টি তামার তার চিত্রের মতো করে বৈদ্যুতিক বাঘের সাথে তার দুটি সংযোগ দাও। বাল্বটি জ্বলে উঠল। কারণ হলো এখানে তামার তারের মাধ্যমে বাল্ব ও কোষের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট তৈরি হয়ে গেল।

চিত্র ৮.৩ : শুষ্ক কোষের বর্তনী

এখানে কী ধরনের শক্তির রূপান্তর ঘটল? বর্তনী তৈরি হওয়ার ফলে বাল্ব জ্বলছে এবং তা আলোক শক্তি দিচ্ছে। এই আলোক শক্তি হচ্ছে কোষের রাসায়নিক শক্তির একটি রূপ। আর কোষের শক্তির উৎস হলো এখানে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ অর্থাৎ দস্তা, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, কয়লার গুঁড়া ও ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড। তাহলে বলা যায় যে, ঐ সকল রাসায়নিক পদার্থের সঞ্চিত শক্তিই রূপান্তরিত হয়ে আলোক শক্তি উৎপন্ন করছে। অর্থাৎ এখানে রাসায়নিক শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।

 

তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis)

কাজ : তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানা

প্রয়োজনীয় উপকরণ : ব্যাটারি, তামার তার (দুটি), দুটি জিংক দণ্ড (তড়িৎদ্বার), পানি, লবণ, একটি কাচ পাত্র জিংক তড়িৎদ্বার 

পদ্ধতি : কাচ পাত্রে ৩০০ মিলিলিটার পানি নিয়ে ৩০ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ যোগ করে ভালোভাবে নাড়া দাও। এবার জিংক দণ্ড দুটি চিত্র অনুযায়ী তামার তার দিয়ে ব্যাটারির সাথে সংযুক্ত করো। জিংক দণ্ডের দিকে ভালো করে লক্ষ করো। উভয় দণ্ডের গায়ে গ্যাসের বুদবুদ দেখতে পাচ্ছ কি 

হ্যাঁ, এর কারণ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ধনাত্মক সোডিয়াম আয়ন (Nat) ও ঋণাত্মক ক্লোরাইড আয়ন (CI) উৎপন্ন হয়।

একইভাবে দ্রবণে পানি বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন ও হাইড্রোক্সিল আয়ন উৎপন্ন করে।

ব্যাটারির সাথে সংযোগ দিয়ে দ্রবীভূত লবণের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে হাইড্রোক্সিল আয়ন ও ক্লোরাইড আয়ন অ্যানোডের দিকে অগ্রসর হয়। ক্লোরাইড আয়ন (CI-) অ্যানোডে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোরিন গ্যাস (Cl2) উৎপন্ন করে। তাই আমরা অ্যানোডে গ্যাসের বুদবুদ দেখতে পাই। অন্যদিকে সোডিয়াম আয়ন ও হাইড্রোজেন আয়ন ক্যাথোডের দিকে অগ্রসর হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ক্যাথোডে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন গ্যাস (H2) উৎপন্ন করে যার ফলে ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ দেখা যায় ও দ্রবণে সোডিয়াম আয়ন (Na+) ও হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH) থেকে যায়।

সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে অ্যানোডে ক্লোরিন গ্যাস, ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং দ্রবণে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড থেকে যায়।

যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অন্য পদার্থে পরিণত হয় তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য (Electrolyte) বলে। সব পদার্থ তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না। যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়াও করে না, তাদেরকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন- চিনি, গ্লুকোজ ইত্যাদি।

নতুন শব্দ : যোজনী, যৌগমূলক, সংযোজন, দহন, প্রতিস্থাপন, প্রশমন, অ্যানোড, ক্যাথোড, তড়িৎ বিশ্লেষণ, তড়িৎ বিশ্লেষ্য, স্ন্যাক লাইম

 

এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম

- সংযোজন বিক্রিয়ায় একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে একটি নতুন পদার্থ তৈরি করে।

- দহন বিক্রিয়ায় একটি পদার্থ বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্যে পুড়ে প্রচুর তাপশক্তি ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে। 

- প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি মৌলকে প্রতিস্থাপিত করে নতুন পদার্থ তৈরি করে ।

- যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙে একের অধিক নতুন পদার্থে পরিণত হয় তাকে বিযোজন বিক্রিয়া বলে। 

- প্রশমন বিক্রিয়ায় বিপরীতধর্মী পদার্থ বিক্রিয়া করে একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে নিরপেক্ষ পদার্থ উৎপন্ন করে। দহন বিক্রিয়ায় সাধারণত রাসায়নিক শক্তি তাপ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। 

- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর ঘটে।

- শুষ্ক কোষ ব্যবহার করলে রাসায়নিক শক্তি রূপান্তরিত হয়ে আলোক শক্তি বা অন্য কোনো শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

- যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। -

- যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে না তাদেরকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। 

- মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। 

- রাসায়নিক সমীকরণে পদার্থগুলো সমীকরণটির তীর চিহ্নের বামদিকে এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলো তীর চিহ্নের ডানদিকে হবে।

Content added || updated By