নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - NCTB BOOK
Please, contribute to add content into খাদ্যের পরিপাক ও খাদ্য পরিকল্পনা.
Content

বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রকার উৎস থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। অধিকাংশ খাদ্যবস্তুই দেহে সরাসরি কাজে লাগে না। কারণ খাদ্য হিসেবে আমরা যেগুলো গ্রহণ করি, সেগুলোর অধিকাংশই বৃহৎ অণুবিশিষ্ট এবং এদের রাসায়নিক গঠন অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির। খুব সামান্য পরিমাণে কয়েকটি খাদ্যবস্তু যেমনগুকোজ কয়েকটি খনিজ লবণ সরাসরি কাজে লাগে। অধিকাংশ খাদ্যবস্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে দেহের গ্রহণ উপযোগী সরল উপাদানে পরিণত হওয়ার পর তা শরীরের কাজে আসে। যেমনভাতের প্রধান পুষ্টি উপাদান স্টার্চ। ভাত খাওয়ার সাথে সাথেই এই স্টার্চ শরীরের কোনো কাজে আসবে না। কারণ স্টার্চ অনেক গুকোজ অণুর সমন্বয়ে গঠিত। তাই খাওয়ার পর স্টার্চ ভেঙ্গে গুকোজে পরিণত হলে দেহ গুকোজ শোষণ করে তাপ শক্তি উৎপাদন করবে। তেমনি খাদ্যে অবস্থিত বড় বড় প্রোটিন অণুগুলো ভেঙে অ্যামাইনো এসিডে এবং খাদ্যের ফ্যাট ভেঙে ফ্যাটি এসিড গ্লিসারলে পরিণত হওয়ার পর এই সকল সরল উপাদান শোষিত হয়ে সরাসরি দেহের কাজে লাগবে।

বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ (পুষ্টি উপাদানগুলো বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে জটিল অবস্থায় থাকে)

খাদ্য পরিপাক

খাদ্য সরল অবস্থায় পরিণত হয় (পুষ্টি উপাদানগুলো সরল শোষণযোগ্য উপাদানে পরিণত হয়)

খাদ্য পরিপাকের পরিণতি

যে কোনো খাদ্য বস্তুকে শরীরে কাজে লাগানোর জন্য খাদ্যের বড় বড় অণুগুলো ভেঙে ছোট ছোট সরল অণুতে পরিণত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। খাদ্যের এরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে দেহের গ্রহণোপযোগী অবস্থায় পরিণত হয় পাচন ক্রিয়া বা পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে।

পরিপাক

খাদ্য উপাদানের বৃহৎ জটিল অণুগুলো ক্ষুদ্র সরল অণুতে রূপান্তরিত হয়ে শরীরে শোষিত হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। বৃহৎ উপাদান থেকে ক্ষুদ্র সরল উপাদানে পরিণত হওয়ার কাজ বিভিন্ন ধরনের এসিড এনজাইমের সাহায্যে ধাপে ধাপে বিক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। খাদ্যের এই জটিল উপাদান থেকে সরল উপাদানে পরিণত হওয়া ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে পরিপাক ক্রিয়া বলে।

যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তুর বৃহত্তর জটিল অণুগুলো বিভাজিত হয়ে বা ভেঙে দেহের উপযোগী বিশোষণযোগ্য সরল ক্ষুদ্রতর অণুতে পরিণত হয় তাকে পরিপাক (Digestion) বলে

এসিড এনজাইম

 

খাদ্যের বৃহৎ জটিল অণু

পানি

সরল শোষণযোগ্য অণু

পরিপাক ক্রিয়া

 

পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে গ্লুকোজে, প্রোটিন ভেঙে অ্যামাইনো এসিড এবং ফ্যাট ভেঙে ফ্যাটি এসিড গ্লিসারলে রূপান্তরিত হয়। এভাবে পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে সকল খাদ্যবস্তুই ভেঙে সহজ উপাদানে পরিণত হয় এবং শরীরের পুষ্টি সাধন করে। সকল খাদ্যের পরিপাক ক্রিয়া দেহের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়

পরিপাকতন্ত্র

মানবদেহে পরিপাক ক্রিয়া শরীরের একটি মাত্র অংগে সংঘটিত হয় না। শরীরের বেশ কয়েকটি অংগ এই কাজের সাথে জড়িত। যেমন দাঁত দিয়ে চর্বনের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু ছোট নরম করা হয়। অন্ত্রনালির মাধ্যমে চর্বিত নরম খাদ্যবস্তুগুলো পাকস্থলিতে আসে এবং পরিপাক ক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে। পাকস্থলিতে খাদ্যবস্তুর সম্পূর্ণ পরিপাক হয় না, তাই অপরিপাককৃত খাদ্যবস্তুগুলো ক্ষুদ্রান্তে আসে। এখানেই প্রধান পরিপাক কাজ চলে। এরপর বৃহদন্ত্রে খাদ্যবস্তুগুলো প্রবেশ করে এবং পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন সরল উপাদানগুলো শরীরের মধ্যে শোষিত হয় এবং যে বস্তুগুলো পরিপাক শোষিত হয় না অর্থাৎ অপাচ্য দ্রব্যগুলো দেহ নিষ্কাশন করে। খাদ্যকে দেহের গ্রহণ উপযোগী করার জন্য দেহের বিভিন্ন অংশে এই পরিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয়।দেহের যে অংশের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবস্তু গ্রহণ, খাদ্যবস্তুর পরিপাক শোষণ এবং অপাচ্য অংশের নিষ্কাশণ ঘটে, তাকে পরিপাকতন্ত্র (Digestive System) বলে।মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রটি পৌষ্টিকনালি পৌষ্টিকগ্রন্থি নিয়ে গঠিত।

(পৌষ্টিকনালি + পৌষ্টিকগ্রন্থি)

পরিপাকতন্ত্র

পৌষ্টিকনালির অন্তর্গত অঙ্গগুলো হচ্ছে মুখবিবর, গলবিল, অন্ননালি, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র বৃহদন্ত্র আর পৌষ্টিক গ্রন্থিগুলো হচ্ছে লালাগ্রন্থি, যকৃৎ অগ্ন্যাশয়

পৌষ্টিকনালি মুখবিবর হতে মলদ্বার পর্যন্ত খাদ্যবাহী নালিটিকেই পৌষ্টিকনালি বলে। নিম্নে পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দেওয়া হলো

পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশ

) মুখবিবর (Buccal cavity)

) গলবিল (Pharynx)

) অন্ননালি (Oesophagus)

) পাকস্থলি (Stomach)

) ক্ষুদ্রাস্ত্র (Small Intestine)

) বৃহদন্ত্র (Large Intestine)

 

 

 

পৌষ্টিকগ্ৰন্থি

লালাগ্রন্থি, যকৃৎ অগ্ন্যাশয়

প্যারোটিড লালাগ্রন্থি

অন্ননালি

সাবলিঙ্গুয়াল লালাগ্রন্থি

' সাবম্যান্ডিবুলার লালাগ্রন্থি

যকৃৎ

পিত্তথলি

পিত্তনালি ডিওডেনাম

অগ্ন্যাশয় নালি

ঊর্ধ্বগামী কোলন

জেজুনাম ইলিয়াম সিকাম

অ্যাপেন্ডিক্স

ডায়াফ্রাম

কার্ডিয়াক পাকস্থলী

প্লীহা

পাইলোরিক স্ফিংটার পেশি অঞ্চল

অগ্ন্যাশয়

পাইলোরিক পাকস্থলী

অনুপ্রস্থ কোলন

নিম্নগামী কোলন

রেকটাম

পরিপাকতন্ত্র

 

পায়ু

 

 কাজআমাদের দেহে খাদ্য পরিপাকের সাথে জড়িত অংগগুলো বোর্ডে চিত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত কর।

 

Content added By

বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে সরল উপাদানে পরিণত হয়, অবশেষে রক্তের মধ্যে শোষিত হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশে পরিচালিত হয়। পরিপাকের জন্য অপরিহার্য এনজাইমসমূহ লালারস, পাচক রস, অগ্ন্যাশয় রস আন্ত্রিক রসে অবস্থিত। ছাড়া পিত্তরস পরিপাক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। বিভিন্ন খাদ্য উপাদান বিভিন্ন এনজাইমের উপস্থিতিতে বিভিন্নভাবে ভিন্ন গতিতে পরিপাক হয়ে থাকে। খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট পরিপাকের জন্য সবচেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। খাদ্য মুখগহ্বর হতে মলদ্বার পর্যন্ত আসার জন্য প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। নিম্নে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের পরিপাক পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।

কার্বোহাইড্রেটের পরিপাক (Digestion of Carbohydrates ) - শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে - কার্বোহাইড্রেট। আমাদের দৈনিক শক্তি চাহিদার ৬০%-৮০% কার্বোহাইড্রেট থেকে গ্রহণ করি। কার্বোহাইড্রেট দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাপ শক্তি সরবরাহ করে। ভাত, রুটি, আলু, চিনি, গুড়, মধু, ফল ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেটের প্রধান উৎস। সকল খাদ্যদ্রব্য পরিপাকের মাধ্যমে সরল উপাদানে পরিণত হয় এবং পরে শক্তি উৎপন্ন করে। মনোস্যাকারাইডের কোনো পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। এরা সরাসরি রক্তে বিশ্লেষিত হতে পারে। ডাইস্যাকারাইড ভেঙ্গে দুটি মনোস্যাকারাইড উৎপন্ন হয় এবং পলিস্যাকারাইড ভেঙে প্রথমে ডাইস্যাকারাইড এবং পরে মনোস্যাকারাইড উৎপন্ন হয়।

পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে কার্বোহাইড্রেট পরিপাকের পর শোষণযোগ্য উপাদানে পরিণত হয় শোষিত হয়

ফ্যাটের পরিপাক (Digestion of Fat ) –ফ্যাটকে ঘনীভূত শক্তির উৎস বলা হয়। কারণ খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে ফ্যাটই সবচেয়ে বেশি তাপ শক্তি সরবরাহ করে থাকে। ফ্যাটের প্রধান উৎস হচ্ছে তেল, ঘি, মাখন, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, দুধের সর ইত্যাদি। ফ্যাট-জাতীয় খাদ্য ভেঙে গ্লিসারল ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়। পাকস্থলিতে পিত্তলবর্ণের অভাব থাকায় এখানে ফ্যাটের সম্পূর্ণ পরিপাক হয় না।

প্রোটিনের পরিপাক (Digestion of Protein) – খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে প্রোটিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রাণি উদ্ভিজ কোষে প্রোটিন আছে। প্রোটিন এর প্রধান কাজ হচ্ছে দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন রক্ষণাবেক্ষণ করা। প্রোটিন সর্বাপেক্ষা জটিল জৈব পদার্থ বড় বড় প্রোটিন অণু পরিপাক হয়ে এর গাঠনিক একক অ্যামাইনো এসিডে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত শরীরে কোনো কাজে লাগে না

পাকস্থলী ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রোটিন পরিপাকের পর শোষণযোগ্য উপাদান অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয় শোষিত হয়।

কাজকার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ফ্যাট পরিপাকের পর কী কী উপাদান উৎপাদিত হয়?

Content added By

শৈশব থেকে পূর্ণ বয়সে পরিনত হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালকে কৈশোর কাল বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০-১৯ বছর বয়স এই সময়টা হলো কৈশোর কাল। এই বয়সে শারীরিক বর্ধন দ্রুত হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে ১২-১৫ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১০-১৩ বছর বয়সে বর্ধনের গতি সর্বোচ্চ হয়।

এই বয়সে বর্ধনের গতি বৃদ্ধির কারণে শক্তির চাহিদা বাড়ে, ছাড়া প্রোটিন, ভিটামিন ধাতব লবণের চাহিদাও বাড়ে। এই বয়সের কিশোর-কিশোরী খেলাধুলা করে তাই তাদের শরীরের বিভিন্ন অংগের সঞ্চালন ঘটে বলে শক্তির খরচ হয়। কিশোর-কিশোরীদের পেশির গঠন, দাঁত, হাড়, রক্ত গঠন ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেশি হয়

 

 

কিশোর-কিশোরীর পুষ্টির গুরুত্ব-

  • কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক বর্ধন দ্রুত হয় এবং এই বর্ধনের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্তকিলো ক্যালরি বা শক্তিসমৃদ্ধ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ।
  •  এই বয়সে শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা, পড়ালেখা, বহিরাঙ্গনে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণেরজন্য জীবনের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি শক্তির অর্থাৎ কিলো ক্যালরির প্রয়োজন হয়।
  • এই বর্ধিত শক্তিরচাহিদা মেটানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হয়
  • কিশোর-কিশোরীদের ভিটামিন ধাতবলবণ সমৃদ্ধ খাদ্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • দাঁত হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ভিটামিন-ডি কিশোর-কিশোরীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • এই বয়সে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের লৌহ ফলিক এসিড বেশি প্রয়োজন হয়। কারণ, মেয়েদের মাসিকের জন্য প্রতিমাসে যে রক্তের অপচয় ঘটে তার পরিপূরণের জন্য অর্থাৎ রক্ত গঠনের জন্য প্রয়োজন হয়
  • কিশোর-কিশোরীদের দেহ ত্বকের চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন- , বি সি সমৃদ্ধ খাদ্য গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিশোর-কিশোরীর পুষ্টির চাহিদা -

  • শক্তির চাহিদা বর্ধনের গতি বৃদ্ধির কারণে শক্তি বা কিলো ক্যালরির চাহিদা বাড়ে। মেয়েদের চেয়ে -
  • ছেলেদের কিছুটা বেশি শক্তি বা কিলো ক্যালরির প্রয়োজন হয়।
  • প্রোটিন কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক বর্ধন দ্রুত হয় এবং এই বর্ধনের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের শক্তি চাহিদার ১২-১৫% প্রোটিন- জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। ১০-১২ বছর বয়সের মেয়েদের প্রোটিনের চাহিদা ছেলেদের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়
  • ধাতবলবণ- কিশোর-কিশোরীদের হাড়ের বর্ধনের জন্য ক্যালসিয়ামের চাহিদা প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে বেশি হয়। হাড়ের যথাযথ বর্ধন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন অবশ্যই ১৫০ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম শরীরে জমা হতে হবে। এই বয়সে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে পরবর্তী জীবনে ওস্টিওপোরোসিস দেখা দেওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি বেড়ে যায়। রক্তের হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণের জন্য কিশোরীদের লৌহের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। মাসিকের কারণে লৌহের অপচয় ঘটে বলে কিশোরদের চেয়ে কিশোরীদের লৌহের চাহিদা বেশি হয়। এই বয়সে জিংকের চাহিদাও বাড়ে। এর অভাবে এই বয়সে শারীরিক স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলোও পরিণতিতে বিলম্ব হতে পারে।
  • ভিটামিন শক্তির চাহিদা বেশি হওয়ায় থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং নায়াসিন-এর চাহিদা বাড়ে। এই বয়সে দ্রুত টিসু সংশ্লেষিত হওয়ার কারণে ফলিক এসিড ভিটামিন বি১২ বি৬-এর চাহিদাও বাড়ে। মাসিকের কারণে কিশোরীদের ভিটামিন বি১২ চাহিদা বেশি হয়। হাড়ের বৃদ্ধির জন্য কিশোর- কিশোরীদের ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। ছাড়া এই বয়সে প্রজননতন্ত্রের সুস্থ স্বাভাবিক গঠনের জন্য ভিটামিন , সি এর প্রয়োজন হয়

 

 

 

অতএব আমরা দেখতে পাই যে, কিশোর-কিশোরীদের স্বাভাবিক ওজন, উচ্চতা, সুস্থতা এবং পড়ালেখা খেলাধুলার ক্ষমতা দক্ষতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন খাদ্যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানেরই পর্যাপ্ত ক্যালরি উপস্থিতি অত্যাবশ্যক। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে কিলো ক্যালরিসহ প্রয়োজনীয় ছয়টি পুষ্টি উপাদান পেতে হলে খাদ্যের মৌলিক খাদ্য গোষ্ঠীর প্রতিটি গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রতিদিনই কিশোর- কিশোরীদের নির্ধারিত কিলো ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।

কিশোর-কিশোরীদের খাদ্য তালিকা তৈরির সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন-

  • কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বেলা প্রধান খাবার দুইবার হালকা নাশতা দিতে হবে। এই বয়সে শিশুরা বেশ দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকে, স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি তারা খেলাধুলাও করে থাকে, ফলে প্রচুর শক্তির খরচ হয়। তাই স্কুলে থাকাকালীন একবার পুষ্টিকর নাশতা দিতে হবে এবং বাসায় আরও একবার নাশতা খাবে। তাহলে অপুষ্টি জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
  • প্রতি বেলার প্রধান খাবারে অর্থাৎ সকাল, দুপুর রাতের বেলায় মৌলিক গোষ্ঠীর বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
  •  কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন প্রয়োজনীয় কিলো ক্যালরির চাহিদা যাতে পুরণ হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শস্য শস্য-জাতীয় খাদ্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে।
  • প্রতিদিনই উদ্ভিজ্জ প্রাণিজ উভয় উৎস থেকেই প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। দিনে অন্তত একবার প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি রঙিন যেমন- হলুদ, সবুজ, লাল, বেগুনি, সাদা ইত্যাদি বর্ণের শাকসবজি তাজা টক-জাতীয় ফল অবশ্যই থাকতে হবে।
  • সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে হবে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য দিনে - গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সফট্ ড্রিংকস, জুস, মিষ্টি-জাতীয় খাবার তেলে ভাজা খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে এই খাবারগুলোতে বেশি ক্যালরি থাকে যারা পরিশ্রমের কাজ কম করে বা একেবারেই করে না বা খেলাধুলা করে না তারা এই খাদ্যগুলো প্রতিদিন গ্রহণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। তা না হলে শরীরের ওজন বেশি বেড়ে যাবে অর্থাৎ ওজনাধিক্যে আক্রান্ত হবে এবং নানা ধরনের জটিল রোগের সূচনা হবে।
  • এই বয়সে ফাস্টফুড এর প্রতি প্রায় বেশির ভাগ কিশোর-কিশোরীরই ঝোঁক থাকে। এই খাবারগুলো কোনো বিশেষ দিন বা উপলক্ষে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে প্রতিদিনই যদি ফাস্টফুড গ্রহণ করে তাহলে খুব সহজেই তাদের শরীরের ওজন বেড়ে যাবে এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা দেবে।
  • সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক খাদ্যাভাসের ব্যাপারে কিশোর-কিশোরীদের সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ায় এমন সব মজাদার পছন্দের খাবারের পরিবর্তে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে।

 

 

 

 

কিশোর-কিশোরীদের উপযোগী এক দিনের জন্য একটি খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো

বিভিন্ন শ্রেণির খাদ্য

এক পরিবেশন পরিমাণ

কিশোর (পরিবেশন সংখ্যা)

কিশোরী (পরিবেশন সংখ্যা)

-

0-8

| শস্য শস্যজাতীয় খাদ্য আধা কাপ ভাত, একটি রুটি, এক টুকরো পাউরুটি।

প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য

-

-

একটি ডিম, মাঝারি এক টুকরা মাছ বা মাংস, এক কাপ মাঝারি ঘন রান্না ডাল, আধা কাপ রান্না করা ঘন ডাল, আধা কাপ রান্না মটরশুঁটি, / কাপ বাদাম।

শাক-সবজি

এক কাপ কাঁচা সবজি সালাদ, আধা কাপ বিভিন্ন রান্না সবজি, আধা কাপ রান্না শাক, একটা আলু একটি মাঝারি কলা, পেয়ারা, আম, কমলা,

8-0

-

ফল

আধা কাপ টুকরা ফল।

-

-8

| দুধ দুধজাতীয় খাদ্য

এক কাপ দুধ বা দই, আধা কাপ ছানা।

-

3-8

কম ক্যালরি

| তেল ঘি

উদ্ভিজ্জ তেল, ঘি, চিনি, গুড় বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার।

কম ক্যালরি

 

চিনি, গুড় বিভিন্ন মিষ্টি-জাতীয় লবণ-জাতীয় খাবার এই বয়স থেকেই কম গ্রহণের অভ্যাস করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। মনে রাখতে হবে বাইরের কেনা খাবারের চেয়ে ঘরে তৈরি খাবার এবং মৌসুমি শাকসবজি ফল বেশি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই কিশোর-কিশোরীদের এই খাবারগুলো গ্রহণে সচেতন হতে হবে।

 

কাজ তোমার জন্য একদিনের একটি খাদ্য তালিকা তৈরি কর।

 

Content added By