Please, contribute to add content into নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা.
Content

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে সুস্বাস্থ্যই হচ্ছে সকল সফলতা ও সুখের চাবিকাঠি। আর সুস্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের গুরুত্ব -

বিজ্ঞানের প্রসারের সাথে সাথে নগরায়ণের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে সেই সাথে ঘটেছে আমাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন। আমরা যন্ত্র নির্ভর প্রতিযোগিতামূলক জীবনে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে স্বাভাবিক সুস্থ জীবন গঠনের পথকে নিজেরাই জটিল করছি। ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছি। জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনের পরিবর্তে এসেছে অনিয়ম ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবন প্রণালি ৷

যখন তখন ফাস্টফুড গ্রহণ, পানির পরিবর্তে সফট্ ড্রিংকস্ পান করা, ধূমপান করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা, অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, একেক দিন একেক নিয়মে জীবন পরিচালনা করা ও নির্ধারিত কোনো রুটিন মেনে না চলা, খুব বেশি টিভি দেখা বা কম্পিউটার গেমে নিজেকে অভ্যস্ত করা, সব সময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকা, শারীরিক ব্যায়াম না করা বা পরিশ্রমের কাজ না করা, সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে না চলা ইত্যাদি বিষয় নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের অন্তরায় । যার প্রভাবে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও ওজনাধিক্য এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগ যেমন – ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ আমাদের দেশে ক্রমে বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা ছোটবেলা থেকেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত না হয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে অভ্যস্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ ইত্যাদি রোগগুলো প্রকাশ পায়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, বার্ধক্য দ্রুত হয়, এ ছাড়া এ সকল রোগের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় আক্রান্ত হওয়াসহ জীবনের দীর্ঘতা বা আয়ু কমে যায়। তাই এক কথায় বলা যায় যে, সুস্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নাই ।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের উপায়-

১) স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন করা – নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন প্রতিষ্ঠায় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য গ্রহণ, খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা, পরিমিত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা, ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস পরিহার করা, সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত বিধিনিষেধ মেনে চলা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য গ্রহণে সচেতন থাকা, খাদ্য সম্পর্কিত কুসংস্কারগুলো পরিহার করা ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন সম্ভব। আর এর দ্বারা নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন প্রতিষ্ঠিত করা যায়। শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান

২) নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম করা - নিয়মতান্ত্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য এবং দীর্ঘজীবন লাভের জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। ছোটবেলা থেকেই যদি প্রত্যেকে নিজের প্রাত্যহিক কাজগুলো যেমন- নিয়মিত নিজের কাপড় কাচা, নিজের ঘর পরিষ্কার করা, আসবাব পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজগুলো নিজে করার অভ্যাস করা হয় এবং নিয়মিত খেলাধুলা করা হয় তাহলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম হয় ফলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আর যারা নিজেদের কাজ করতে পারেন না বা খেলাধুলা করার সুযোগ নেই তাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম শরীরের ওজন স্বাভাবিক রেখে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩) ঘুমের সময় ও জেগে উঠার সময় মেনে চলা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও নির্দিষ্ট সময়ে - ঘুম থেকে উঠা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য জরুরি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা অনেক রাত করে ঘুমাতে যায় ও ঘুমের অনিয়ম করেন তাদের শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতা দেখা দেয়। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা নির্দিষ্ট নিয়মে ঘুমাতে হবে। অনেক রাত করে ঘুমানো পরিহার করতে হবে। প্রতিদিন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হবে এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার নিয়মিত অভ্যাস প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

৪) মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা - অনিয়ন্ত্রিত ও জটিল জীবনযাপন প্রণালির কারণে বর্তমানে মানসিক চাপ বেড়ে গেছে, যা সুস্বাস্থ্যের অন্তরায় এবং উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল মানসিক রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়ন্ত্রিত সহজ সরল জীবন প্রণালি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। জীবন চলার পথে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যায় অস্থির না হয়ে বিচক্ষণতার সাথে তা মোকাবিলার উপায় বিবেচনা করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে কাজ সম্পাদন করা, অতিরিক্ত অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে পারলে মানসিক চাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং এ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৫) যথাযথ সময় পরিকল্পনা করা এবং নিজেকে অভ্যস্ত করা- নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের জন্য যথাযথ সময় পরিকল্পনা করা এবং নিজেকে তার সাথে অভ্যস্ত করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, ছোটবেলা থেকেই সময়ের সদ্বব্যবহার করতে না পারলে পরবর্তী জীবনেও এর নেতিবাচক ফলাফল ভোগ করতে হবে। সুষ্ঠু সময় পরিকল্পনা ও এর অনুশীলনের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন সহজ হয় ৷

৬) ধূমপান বর্জন করা – নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের জন্য সুস্থতা প্রয়োজন। আমরা সবাই জানি, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপায়ী ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায় এবং কোনো কোনো পুষ্টি উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এদের বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। এ ছাড়া ধূমপায়ী ব্যক্তি যখন ধূমপান করেন তখন তিনি শুধু নিজেরই ক্ষতি করেন না, তার আশপাশে অবস্থানকারী ব্যক্তিদেরও ক্ষতি করেন। এক কথায় বলা যায় যে ধূমপায়ী ব্যক্তির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই অবশ্যই ধূমপান বর্জন করতে হবে।

৭) ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি নিষেধ মেনে চলা – ছোটবেলা থেকেই পানাহারে, চলাফেরায়, মেলামেশার ক্ষেত্রে - যদি ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধ মেনে চলায় অভ্যস্ত হওয়া যায় যেমন- পরিমিত আহার করা, অতি ভোজন পরিহার করা, মদপান থেকে বিরত থাকা, পারস্পরিক মেলামেশায় নিরাপদ ও সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলা যায় তাহলে খুব সহজেই নিয়মতান্ত্রিক সুস্থ জীবনযাপন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

 

৮) নিজস্ব নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠিত করা ও মেনে চলা- সহজ করে জীবন পরিচালনার জন্য ছোটবেলা থেকেই নিজস্ব নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠিত করা ও তা মেনে চলা। নিয়মতান্ত্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন প্রতিষ্ঠায় উপরের আটটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছোটবেলা থেকে নিজের মধ্যে বিষয়গুলো সম্পর্কে অনুধাবন করে চর্চা করতে পারলে খুব সহজেই নিয়মতান্ত্রিক সুস্থ জীবন লাভ করা যায়। মনে রাখতে হবে সুস্থ ও নিরোগ জীবনযাপনের জন্য এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই ।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন না করার পরিণতি - নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন না করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যেমন-

  • ওজন বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগ দেখা দেয় ৷
  • জীবনের দীর্ঘতা বা আয়ু কমে যায়।
  • কর্মক্ষমতা কমে যায় ৷
  • বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

বর্তমানে আমাদের দেশে উপরের সমস্যাগুলো সৃষ্টির প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আমরা এখন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ সম্পর্কে জানব।

কাজ – তুমি কীভাবে তোমার জীবনকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত করতে পারবে তা বর্ণনা কর ।

Content added By

ডায়াবেটিস একটি বিপাক জনিত রোগ। শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবে বিপাকজনিত ত্রুটি ঘটে, ফলে রক্তে গুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস কোনো সংক্রামক রোগ নয়। একবার ডায়াবেটিস হলে তা একেবারে সেরে যায় না, তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চললে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ছাড়া কোনোভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। যে কেউ যে কোনো বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে তবে নিম্নলিখিত কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় –

  • বংশগত কারণ- যাদের মা-বাবা ও খুব নিকটজনের ডায়াবেটিস আছে, তাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি
  • অতিরিক্ত শারীরিক ওজন
  • শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করা
  • অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় – ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে এই রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা - যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য চারটি নিয়ম মানতে হয়

  • খাদ্য ব্যবস্থা
  • ঔষধ
  • শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম
  • রোগ সম্পর্কে শিক্ষা

 

উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। তাহলে সহজেই ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

(ক) ডায়াবেটিসে খাদ্য ব্যবস্থাপনা – ডায়াবেটিস হলে রক্তে গুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই গুকোজ - প্রধানত খাবার থেকে আসে। আর তাই ডায়াবেটিস হলে খাদ্য গ্রহণে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। ডায়াবেটিস হওয়ার আগে ও পরে পুষ্টি চাহিদার কোনো তারতম্য ঘটে না। কিন্তু খাদ্য গ্রহণে নিয়ম মেনে চলার উদ্দেশ্য হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও স্বাস্থ্য ভালো রাখা ।

খাদ্য গ্রহণের নিয়ম-

  • বেশি খাওয়া যাবে বা ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে -যে খাবারগুলোতে প্রচুর আঁশ আছে সেই খাবারগুলো বেশি - খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ে না, তাই সেইগুলো বেশি করে খাওয়া যাবে। সব রকমের শাকসবজি যেমন- চিচিংগা, ধন্দুল, পেঁপে, পটোল, শিম, লাউ, শসা, খিরা, করল্লা, উচ্ছে, কাঁকরোল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ইত্যাদি। ফলের মধ্যে জাম, জামরুল, আমলকী, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি।
  • হিসাব করে খেতে হবে – কিছু খাবার আছে খাওয়ার পর খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ না বাড়লেও সেই খাবারগুলো পরিমাণে বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই সেই খাবারগুলো হিসাব করে খেতে হবে। যেমন- ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, খৈ, বিস্কুট, আলু, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, দুধ, ছানা, পনির, মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, বাদাম, মিষ্টি ফল যেমন- কলা, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি । ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও সাদা চাল ও সাদা আটার চেয়ে লাল চালের ভাত ও ভুসিসহ আটার রুটি বেশি উপকারী। এগুলো রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বাড়ায় না ।
  • পরিহার করতে হবে – কিছু কিছু খাবার আছে যা খাওয়ার পর খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, সেই খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। যেমন- চিনি, গুড়, মিসরি, রস, সরবত, সফট্ ড্রিংকস, জুস, সব রকমের মিষ্টি, পায়েস, ক্ষীর, পেস্ট্রি, কেক ইত্যাদি।
  • শরীরের ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক ওজনে আনতে হবে। আবার শরীরের ওজন কম থাকলে তা বাড়িয়ে স্বাভাবিক ওজনে আনতে হবে। সব সময় শরীরের ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে।
  • নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খেতে হবে। নিজের ইচ্ছামতো কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। এক বেলায় বেশি খাওয়া বা অন্য বেলায় কম খাবার খাওয়া অথবা এক দিন কম এক দিন বেশি খাবার খাওয়া যাবে না ।

এক কথায় বলা যায় যে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে খাদ্য গ্রহণে সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ৷

(খ) শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম অত্যন্ত - গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ফলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

(গ) ওষুধ - সকল ডায়াবেটিস রোগীকেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। তবে কোনো কোনো ডায়াবেটিস রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম ও শৃঙ্খলা মেনে চলার পাশাপাশি খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। যে রোগীকে চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ অর্থাৎ খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন যাই দেওয়া হোক না কেন তাকে তার জন্য নির্ধারিত ডোজ ও এর সাথে খাদ্য গ্রহণ, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের সঠিক নিয়ম খুবই সচেতনভাবে মেনে চলতে হবে। তা না হলে ঔষধ রোগ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে জীবনের ঝুঁকির কারণও হতে পারে ।

(ঘ) রোগ সম্পর্কে শিক্ষা -ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ তাই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে - রোগীকে ও রোগীর নিকট আত্মীয়দেরও অবশ্যই রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

শৃংখলা মেনে চলা- ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন অর্থাৎ জীবনযাপনে শৃঙ্খলা মেনে চলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাপনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে-

নিয়মিত ও পরিমাণমতো সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং এ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলা

নিয়মিত ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা

চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী খাবার বড়ি অথবা ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ করা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

পায়ের নিয়মিত বিশেষ যত্ন নেওয়া

ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা বন্ধ না করা

নিয়মিত রক্তের গুকোজ পরীক্ষা করা ও রিপোর্ট সংরক্ষণ করা

ধূমপান ও মদপান পরিহার করা

প্রতিদিন জীবনযাত্রায় যথাসম্ভব নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা

শরীরিক যে কোনো জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা

 

কাজ – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের পদ্ধতি বর্ণনা কর।

 

Content added By

আমাদের দেশে দিন দিনই হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হৃদরোগের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে – অনিয়ন্ত্রিত জীবন - সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্যশক্তি গ্রহণ, ব্যায়াম বা শারীরিক যাপন, অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা, বংশগত কারণ, বিপাকীয় ত্রুটি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । হৃদরোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে

 

নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং এ সংক্রান্ত বিধি নিষেধগুলো মেনে চলতে হবে

নিয়মিত ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা

নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা

নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা

নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা।

৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো

মানসিক চাপ, উত্তেজনা ও রাগ নিয়ন্ত্রণ করা

ধূমপান ও মদপান পরিহার করা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা

প্রতিদিন জীবনযাত্রায় যথাসম্ভব নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা

শারীরিক যে কোনো জরুরি অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা

 

হৃদরোগে খাদ্য ব্যবস্থাপনা -

হৃদরোগীর খাদ্য এমন হতে হবে যাতে করে রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য শক্তির চেয়ে বেশি খাদ্য শক্তি গৃহীত

না হয় ও খাদ্য সুষম হয়। খাদ্যের মাধ্যমে চিনি, লবণ ও ফ্যাটের গ্রহণ যেন কম থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে আঁশ-জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে।

  • লাল চালের ভাত ও ভুষিসহ আটার রুটি খাওয়ায় অভ্যস্ত হতে হবে এবং চাল ও আটার তৈরি খাবার
  • প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে বেশি খাওয়া যাবে না।
  • বেশি আঁশযুক্ত খাদ্য যেমন- শাকসবজি ও ফল বিশেষ করে টক জাতীয় ফল যেমন- লেবু, জাম্বুরা,
  • কমলা, আনারস ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
  • বিভিন্ন রঙিন সবজি যেমন- সবুজ (শাক পাতা), কমলা (মিষ্টি কুমড়া / গাজর), বেগুনি (বিট), লাল (টমেটো), হালকা হলুদ-সাদা (মুলা, শসা) প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে। মৌসুমি তাজা শাকসবজি প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • ডাল, বাদাম পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
  • মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস, চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, ডিম প্রয়োজনীয় পরিমাণে খেতে হবে।
  • ননী তোলা দুধ ও এই দুধের তৈরি টক দই খাওয়া ভালো।
  • রান্নায় লবণ কম দিতে হবে এবং খাওয়ার সময় বাড়তি লবণ খাওয়া যাবে না ।

 

যে খাবারগুলো বাদ দেওয়া উচিত

 

  • মাখন, ঘি, ডালডা, ক্রিম সস, নারকেল, বেশি তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাদ্য।
  • আইসক্রিম, মিষ্টি-জাতীয় খাদ্য ইত্যাদি।
  • বেশি চর্বিযুক্ত মাংস, কলিজা, হাঁস-মুরগির চামড়া ও এদের তৈরি খাদ্য ।
  • বেশি লবণযুক্ত বা লবণে সংরক্ষিত যে কোনো খাবার, যেমন- পনির, আচার-চাটনি, , সয়া সস ,চিপস্, চানাচুর, লবণযুক্ত বাদাম, নোনা ইলিশ, টিনজাত মাছ ইত্যাদি।
  •  ফাস্টফুড যেমন- চিকেন ফ্রাই, পিজ্জা, মাংসের তৈরি নাগেট ইত্যাদি।
  • বেকারির খাবার যেমন- বিস্কুট, পেস্ট্রি, কেক ইত্যাদি ।
  • সফট্ ড্রিংকস ও এনার্জি ড্রিংকস, ডার্ক কফি ইত্যাদি।
  • সালাদে লবণ ও সালাদ ড্রেসিং বাদ দিতে হবে।
  • চাইনিজ লবণ বা টেস্টিং সল্ট বাদ দিতে হবে।

কাজ — হৃদরোগীর জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করার সময় খাদ্য সংক্রান্ত কোন কোন বিষয়গুলোর - দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে?— একটি চার্টের মাধ্যমে দেখাও ৷

Content added By

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বংশগত কারণ, ওজনাধিক্য, বিপাকীয় ত্রুটি ইত্যাদি কারণে উচ্চরক্তচাপ হতে পারে। ঔষধের পাশাপাশি যথাযথ নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও

সবাভাবিক রাখা এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করাই উচ্চরক্তচাপ চিকিৎসার অর্থাৎ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সবচেয়ে উত্তম উপায় ।

উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-

নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং এ সংক্রান্ত বিধি

নিষেধগুলো মেনে চলা

নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠা।

৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো

ধূমপান ও মদপান পরিহার করা

নিয়মিত ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা

নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করা প্রতিদিন জীবনযাত্রায় যথাসম্ভব নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা

নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা

মানসিক চাপ, উত্তেজনা ও রাগ নিয়ন্ত্রণ করা

শরীরিক যে কোনো জরুরি অবস্থায় বা রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হলে বা রক্তচাপ উঠানামা করলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা ।

 

উচ্চরক্তচাপে খাদ্য ব্যবস্থাপনা

  • বেশি আঁশযুক্ত খাদ্য যেমন- শাকসবজি ও ফল বিশেষ করে টকজাতীয় ফল যেমন- লেবু, জাম্বুরা, কমলা, আনারস ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • কচি ডাবের পানি উপকারী।
  • ভাত ও রুটি এবং চাল ও আটার তৈরি খাবার প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে বেশি খাওয়া যাবে না । সাদা চাল ও সাদা আটার চেয়ে লাল চালের ভাত ও গমের ভুসিসহ আটার রুটি বেশি উপকারী ।
  • , চর্বি ছাড়া মাংস, ডিম প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাওয়া যাবে। মাছ,
  • ডাল, বাদাম খাওয়া যাবে।
  • ননী তোলা দুধ ও এই দুধের তৈরি টকদই খাওয়া
  • রান্নায় লবণ কম দিতে হবে এবং খাওয়ার সময় বাড়তি লবণ খাওয়া যাবে না ।
  • প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্য শক্তি গ্রহণ করা যাবে না ।

যে খাবার বাদ দেওয়া উচিত

  • বেশি লবণযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। যেমন- পনির, আচার-চাটনি, সস, চিপস্, চানাচুর ইত্যাদি।
  • সংরক্ষিত যে কোনো খাবার, যেমন- নোনা ইলিশ, টিনজাত মাছ ইত্যাদি।
  • মাখন, ঘি, ডালডা, নারকেল ও বেশি তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাদ্য।
  • চর্বিযুক্ত মাংস ও এর তৈরি খাদ্য।
  • ফাস্টফুড যেমন- চিকেন ফ্রাই, পিজ্জা, মাংসের তৈরি নাগেট ইত্যাদি।

 

  • বেকারির খাবার যেমন- বিস্কুট, পেস্ট্রি, ক্রিম কেক ইত্যাদি।
  • সফট্ ড্রিংকস ও এনার্জি ড্রিংকস, ডার্ক কফি ইত্যাদি।
  • সালাদে লবণ ও সালাদ ড্রেসিং বাদ দিতে হবে এবং সয়াসস, চাইনিজ লবণ বা টেস্টিং সল্ট বাদ দিতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্বাভাবিক সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হয়, আর নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনি নষ্ট হওয়া, স্ট্রোক হওয়া ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে |

 

কাজ – উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনে কোন কোন বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে

নজর দিতে হবে?

Content added By