বাংলাদেশ বর্তমানে নিম্নমধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল একটি দেশ। এ দেশের উন্নয়নের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধির হার, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সুষম বণ্টন, মানবসম্পদের উন্নয়ন এবং সুশাসনের মাধ্যমে এই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব।

Content added By
প্রবৃদ্ধির একটি অংশ
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি
জাতীয় আয় বৃদ্ধি
প্রবৃদ্ধির সাথে অন্যান্য বিষয়ের সুফল

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারণা দুটি এক মনে হলেও আসলে এক নয় । এই শব্দ দুটির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।


অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economic Growth)


একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন দেশে উৎপাদিত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবার বাজারমূল্যের সমষ্টির বৃদ্ধির হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলা হয়। সাধারণত জিডিপি বৃদ্ধির বার্ষিক হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলে । মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার দ্বারাও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিমাপ করা হয় ।


অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development)


অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে শুধু প্রবৃদ্ধি বোঝায় না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় ক্রমাগত বৃদ্ধি তো পায়ই, উপরন্তু অর্থনীতির গুণগত পরিবর্তন হয় যেমন নাগরিকদের ভোগ বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে সামগ্রিক ভাবে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি ।
অতএব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধিই যথেষ্ট । আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে বুঝতে
হবে প্রবৃদ্ধির সাথে অর্থনৈতিক অবস্থার গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। এ জন্য লেখা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি + অর্থনীতির গুণগত পরিবর্তন ।

Content added By

উন্নত দেশ: উচ্চ আয়ের যেসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে এবং এই উন্নয়ন দীর্ঘমেয়াদে অব্যাহত আছে, এমন দেশকে উন্নত দেশ বলে । এসব দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত ।
অনুন্নত দেশ: অধ্যাপক র‍্যাগনার নার্কস বলেন, অনুন্নত দেশ হচ্ছে সে সব দেশ, যেগুলোতে জনসংখ্যার
তুলনায় মূলধন বা পুঁজি কম । নিম্ন আয়ভুক্ত এসব দেশে জনসাধারণ নিম্নমানের জীবন যাপন করে ।
উন্নয়নশীল দেশ: যেসব দেশের মাথাপিছু প্রকৃত আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম কিন্তু উন্নয়নের সূচকগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে তাকে উন্নয়নশীল দেশ বলে । এসব দেশের মাথাপিছু আয় বর্ধনশীল এবং জীবনযাত্রার মান ক্রমেই বাড়ছে । এরা নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয় এবং মধ্যম আয় থেকে উচ্চ আয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
উন্নত, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।

৯.২.১ উন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Developed Countries)


উন্নত দেশের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ;


১. ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ : উন্নত দেশ সাধারণত পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ । কখনো কখনো এসব দেশে ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা থাকলেও সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণ হয়। উন্নত দেশ যেমন, আমেরিকা, জাপান, ইউরোপের দেশগুলো ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সুষ্ঠু সংরক্ষণ করে আজ উন্নত বিশ্বের নেতৃত্ব দান করছে ।
২. মূলধন : উন্নত দেশে মূলধনের যোগান পর্যাপ্ত । অর্থনীতিতে সঞ্চয় বৃদ্ধির দ্বারা মূলধন গঠন করা হয় ।
৩. দক্ষ জনশক্তি : যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি একান্ত প্রয়োজন । কোনো দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ, মূলধন ইত্যাদি পর্যাপ্ত থাকলেও যদি দক্ষ জনশক্তি না থাকে তাহলে সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না। উন্নত দেশ দক্ষ জনশক্তি গঠনে বিশেষ নজর রাখে। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয় ।
৪. উচ্চগড় আয়ুস্কাল : উন্নত দেশের জনগণের গড় আয়ুস্কাল সাধারণত বেশি হয় । উন্নত স্বাস্থ্য সুবিধার কারণে তাদের গড় আয়ুস্কাল বেশি হয়ে থাকে ।
৫. কারিগরি জ্ঞান : বর্তমানে উন্নত দেশে শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ বৃদ্ধির মূলে রয়েছে কারিগরি জ্ঞানের উন্নতি । যে দেশ কারিগরি জ্ঞানে যত বেশি উন্নত, সে দেশের অর্থনীতি তত বেশি সমৃদ্ধ । উন্নত দেশে মানুষ উন্নত কারিগরি জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃতিকে বশে এনেছে এবং এই প্রকৃতির কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করছে ।
৬. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত । যে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই, সে রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নত দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয় । অর্থাৎ সে সব দেশে সরকারের পরিবর্তন হলেও অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা ও সুশাসন অব্যাহত থাকে ।
৭. ভৌত অবকাঠামো তথা উন্নত পরিবহনব্যবস্থা : যেখানে ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহনব্যবস্থা যত বেশি উন্নত সেখানে তত বেশি উৎপাদন ও উন্নয়ন হয়। ভৌত অবকাঠামো তথা পরিবহনব্যবস্থা উন্নত হলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগ বাড়ে । ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ।

অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Least Developed Countries) এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশ অনুন্নত। পৃথিবীর বেশির ভাগ লোক এসব অনুন্নত দেশে বসবাস করে।

অনুন্নত দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ;

১. কম উৎপাদনশীল কৃষি খাত : অনুন্নত দেশের বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। বেশির ভাগ লোক
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ও প্রযুক্তি সনাতনী । ২. কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি : এসব দেশের জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ কৃষি খাত থেকে আসে ।
৩. বেকারত্ব : অনুন্নত দেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক হওয়ায় ছদ্মবেশী ও মৌসুমী বেকারত্ব প্রকটভাবে
পরিলক্ষিত হয় ।
৪. কম মাথাপিছু আয় : অনুন্নত দেশে মাথাপিছু আয় ও সঞ্চয় কম । ফলে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কম হয় ।
৫. দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র : অনুন্নত দেশে কম উৎপাদনের ফলে আয় কম হয় । আয় কম হলে সঞ্চয় কম হয় । সঞ্চয় কম হওয়ায় বিনিয়োগও কম হয় । মূলধনও কম হয় । ফলে উৎপাদনও কম হয় । এ অবস্থাকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র বলে । অনুন্নত দেশে এই চক্র বিরাজমান থাকায় উন্নয়নের গতি মন্থর থাকে ।
৬. জনসংখ্যাধিক্য : বেশির ভাগ অনুন্নত দেশে জনসংখ্যা বেশি এবং মাথাপিছু আয় কম । জনসংখ্যার আধিক্যের ফলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, যানবাহন, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সন্তোষজনকভাবে করা যায় না ।
৭. ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার : অনুন্নত দেশ প্রযুক্তি ও কৌশল পরিবর্তন করে ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে পারে না । ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও বেগবান হয় না ।
৮. অনুন্নত যোগাযোগ ও পরিবহনব্যবস্থা : অনুন্নত দেশের পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত থাকে । ফলে মালামাল স্থানান্তরে বিঘ্ন ঘটে। উৎপাদন ব্যয় বেশি হয় । উদ্যোক্তা বিনিয়োগে উৎসাহিত হয় না ।
৯. প্রতিকূল বাণিজ্যশর্ত : অনুন্নত দেশগুলো শিল্পে উন্নত না থাকায় এসব দেশ কৃষিজাত পণ্য, কাঁচামাল, প্রাথমিক পণ্য রপ্তানি করে এবং শিল্পজাত পণ্য আমদানি করে। যেসব কৃষিপণ্য উপকরণ হিসাবে কম মূল্যে বিদেশে রপ্তানি করে, সেই কৃষিপণ্য শিল্পপণ্যে রূপান্তরিত হয়ে অধিক মূল্যে এসব দেশে আমদানি করা হয় । ফলে বাণিজ্যের ভারসাম্যে প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করে ।
১০. অনুন্নত শিল্প কাঠামো : অনুন্নত দেশে শিল্প কাঠামো সেকেলে এবং বৃহদায়তন মূলধনী শিল্প খুব কম । অনুন্নত দেশের শিল্প খাতে অন্যান্য খাতের তুলনায় শ্রমিক নিয়োগ কম এবং শ্রমিকদের দক্ষতাও কম ।

উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Developing Countries) উন্নয়নশীল দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য;


১. কৃষিনির্ভর অর্থনীতি : দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল । শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কৃষিতে নিয়োজিত । কৃষিক্ষেত্রে পুরনো আমলের জীবন নির্বাহী ক্ষুদ্র খামারে চাষাবাদ হয়, তবে এখানেও কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কৃষিতে বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব থাকে ।
২. মাথাপিছ আয় : উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশের মাথাপিছু আয় কম কিন্তু অনুন্নত দেশের তুলনায় বেশি। ফলে জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত নয় ।
৩. প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার : অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তার
পরিপূর্ণ ব্যবহার হয় না ।
৪. মূলধনের স্বল্পতা : উন্নয়নশীল দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার কম । কাজেই সঞ্চয়ের পরিমাণ কম হয় । কম সঞ্চয় মূলধন গঠনের পথে অন্তরায় ।
৫. প্রাথমিক পণ্য উৎপাদনকারী দেশ : উন্নয়নশীল দেশ প্রধানত প্রাথমিক পণ্য উৎপাদন করে এবং
উৎপাদন-ব্যবস্থায় শ্রমনিবিড় উৎপাদন কৌশল ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক পণ্য বলতে শিল্পের
কাঁচামাল যেমন, পাট, চামড়া ইত্যাদি বোঝায় ।
৬. শিল্পের বিকাশ : উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিল্প প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। তবে কোথাও কোথাও রপ্তানীমুখী শ্রমঘন শিল্পের দ্রুত বিকাশ পরিলক্ষিত হয়।
৭. বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি : উন্নয়নশীল দেশে প্রতিবছর রপ্তানির মাধ্যমে যে পরিমাণ আয় আসে, তার চেয়ে অনেক বেশি আমদানির মাধ্যমে ব্যয় হয়। ফলে এ দেশগুলোকে প্রতি বছর বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির সম্মুখীন হতে হয় ।
৮. উদ্যোক্তার অভাব : উন্নয়নশীল দেশে পণ্যসামগ্রী বেশির ভাগই কৃষি থেকে প্রাপ্ত । এসব পণ্যের মূল্যের উত্থান-পতন হয় বেশি । পণ্যের মূল্য উত্থান-পতন হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ । ফলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তার অভাবে উন্নয়ন ব্যাহত হয় ।
৯. অর্থনৈতিক অবকাঠামো দুর্বল : উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো যেমন, যোগাযোগ ও পরিবহন, বিদ্যুৎ, ব্যাংক, বিমা প্রভৃতি প্রয়োজনের তুলনায় কম ।
১০. বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা : উন্নয়নশীল দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেকাংশে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল।

Content added By

বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করতে পারে না ।


১. কৃষির উপর নির্ভরশীলতা : বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও কৃষি উৎপাদিকা শক্তি কম । কৃষির উন্নয়ন জরুরি হওয়া সত্ত্বেও এর অগ্রগতি মন্থর ।
২. অনুন্নত কৃষিব্যবস্থা : বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা অনুন্নত। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত । কৃষিপণ্যের মূল্য অস্থিতিশীল ।
মূলধনের অভাব : বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় কম থাকায় সঞ্চয় ও মূলধন গঠনের হার তুলনামূলকভাবে কম । ফলে দ্রুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় না ।
৪. উদ্যোক্তার অভাব : উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু । বাংলাদেশে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও ঝুঁকি বহনে আগ্রহী ও সক্ষম উদ্যোক্তার অভাব রয়েছে। উদ্যোক্তার অভাবের কারণে প্রাপ্ত সঞ্চয় ও মূলধন উৎপাদনী খাতে কম ব্যবহার হচ্ছে। আবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিতে চায় না এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকার কারণে উদ্যোক্তা এগিয়ে আসে না। বিদেশমুখীনতার কারণেও অনেক পুঁজি বাইরে চলে যায়।
৫. অধিক জনসংখ্যা : বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। উৎপাদন ও কর্মক্ষেত্রে এই জনসংখ্যা সম্পূর্ন ভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না । ফলে জাতীয় উৎপাদনের বড় অংশ এই জনগোষ্ঠীর ভোগের জন্য ব্যয় হয় ফলে সঞ্চয় কম হয়। আর সঞ্চয় ও পুঁজির স্বল্পতা উন্নয়নে বাধা হিসেবে কাজ করে।
৬. দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র : বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র । অধ্যাপক নার্কসের মতে, একটি দেশ দরিদ্র কারণ সে দেশ দরিদ্র। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হলো উৎপাদন কম, আয় কম চাহিদা ও সঞ্চয় কম, বিনিয়োগ কম উৎপাদন কম ।
৭. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অস্থিতিশীলতা রয়েছে। এ অবস্থা অধিকতর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয় । শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনাও এতে ব্যাহত হয় ।
৮. বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরশীলতা : বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈদেশিক বাণিজ্য ও সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। উন্নত দেশের অসম প্রতিযোগিতা ও নানা শর্তের কারণে বাংলাদেশ প্রায়শ প্রতিকূল বাণিজ্য- শর্তের সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর বিদেশিদের প্রভাব আত্মনির্ভরশীল উন্নয়নের পথে বাধা হিসেবে কাজ করে। তবে সম্প্রতি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি এবং প্রচুর রেমিট্যান্সের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরশীলতা ক্রমহ্রাসমান ।

৯. অনুন্নত বাজারব্যবস্থা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সর্বত্র বাজারব্যবস্থা এখনো যথেষ্ট উন্নত হয় নি। সচেতনতার অভাব, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতা, অর্থায়নের অভাব এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি কারণে বাজার দাম সকল ক্ষেত্রে উৎপাদকের জন্য লাভজনক হয় না ।
১০. প্রযুক্তি প্রয়োগে বাধা : উন্নত প্রযুক্তির অভাব, দক্ষ জনশক্তির অভাব, আমদানিকৃত প্রযুক্তি ব্যয়বহুল
এবং ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উৎপাদন-ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যায় না ।

Content added By

বেসরকারি সংস্থাসমূহ মূলত বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কাজ করে থাকে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় এদের কার্যক্রম আরও ব্যাপ্তি ও গতি লাভ করে । বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান (এনজিও) ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে। দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট এনজিও কাজ করছে । বাংলাদেশের কয়েকটি প্রধান এনজিও হচ্ছে ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, শক্তি ফাউন্ডেশন, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, টিএমএসএস, কারিতাস, সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস ও ব্যুরো বাংলাদেশ ।
১. ব্র্যাক (বাংলাদেশ রুরাল এডভান্সমেন্ট কমিটি) : ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণদানকারী সংস্থা হলো ব্র্যাক। দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষত নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সংস্থাটি দেশের ৭০ হাজার গ্রাম এবং ২০০০ বস্তিতে কাজ করে থাকে ।
২. স্বনির্ভর বাংলাদেশ : স্বনির্ভর বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ১৯৭৫ সালে । শুরুতে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি সংযুক্ত সেল হিসেবে কাজ করে। বেসরকারি সমাজ উন্নয়নমূলক সংস্থা হিসেবে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ শুরু করে ১৯৮৫ সালে ।
৩. প্রশিকা : ১৯৭৫ সালে ঢাকা ও কুমিল্লা জেলার কয়েকটি গ্রামে কাজ শুরু করে। প্রশিকা সমিতির সদস্যদের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির আওতায় পরিবেশসম্মত কৃষি, সেচ, পশুসম্পদ বৃদ্ধি, মৌমাছি পালন, মৎস্য চাষ, সামাজিক বনায়ন, বসতবাড়িতে বাগান, বীজ উৎপাদন, ক্ষুদ্র ব্যবসা ইত্যাদি কার্যক্রম চালাচ্ছে।
৪. আশা (এসোসিয়েশন্স ফর সোশ্যাল এডভান্সমেন্ট) : আশা ১৯৯২ সাল হতে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে । আশা বর্তমানে আত্মনির্ভর ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
৫. শক্তি ফাউন্ডেশন : ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত শক্তি ফাউন্ডেশন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া, রাজশাহীসহ অন্যান্য বড় বড় শহরের বস্তির দুস্থ নারীদের এ সংস্থা ঋণ প্রদান করে । এছাড়া, এসব নারীদের স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও সামাজিক উন্নয়নেও সংস্থাটি কাজ করে থাকে ।

৬. টিএমএসএস (ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ) : বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে বড় সংগঠন। এই সংগঠন নারীদের দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও নারীদের ক্ষমতায়নে ১৯৮০ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
৭. এসএসএস (সোসাইটি ফর সোশাল সার্ভিসেস) : সমাজের দরিদ্র, অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত নারী-পুরুষ ও শিশুদের দারিদ্র্য বিমোচন, অধিকার আদায় ও তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিসহ সমন্বিত সেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে টেকসই সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে ১৯৮৬ সালে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে । সমাজের দরিদ্র, অবহেলিত ও অধিকারবঞ্চিত নারী-পুরুষ ও শিশুদের দারিদ্র্য বিমোচন, অধিকার আদায় ও তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন করাই এই সংস্থার লক্ষ্য ।
৮. ব্যুরো বাংলাদেশ : এই সংস্থাটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে টেকসই গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিচর্যা, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা, নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন, পানি/পয়োনিষ্কাশন, পরিবার পরিকল্পনা, সামাজিক বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে ।

দারিদ্র্য (Poverty )


দারিদ্র্য দেশ ও দেশের মানুষকে পরনির্ভরশীল করে তোলে। উন্নয়নের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় । সুতরাং দারিদ্র্যের ধারণা, পরিমাপ, প্রবণতা এবং কীভাবে দারিদ্র্য নিরসন করা যায়, সে বিষয়ে জানা দরকার ।


দারিদ্র্য ধারণা (Concept of Poverty)
দারিদ্র্য একটি বহুমুখী আপেক্ষিক বিষয় ( Multidimensional and Relative). সমাজে যারা অন্যদের তুলনায় আপেক্ষিক ভাবে কম আয় করেন, কম ভোগ করেন, কম সম্পদের মালিক, কম শান্তিতে আছেন এবং সর্বদাই নিজেদেরকে অ-ক্ষমতাবান ও বিপন্ন বোধ করেন, তাদেরকেই সাধারণত দরিদ্র বলে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে আমরা তাদেরকেই দরিদ্র বলে থাকি, যারা বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি ও ন্যূনতম প্রয়োজনীয় উপকরনটুকু যোগাড় করতে পারেন না। সেরকম ন্যূনতম আয়সীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে দরিদ্র পরিবার হিসেবে ধরা হয়। দরিদ্রদের মধ্যে যারা আরো হত দরিদ্র, তাদেরকে চরম দরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। নিচের তালিকায় বাংলাদেশে দারিদ্র্যের পরিমাপ, হার ও গতিপ্রবণতা তুলে ধরা হলো ।

বাংলাদেশে দারিদ্র্য গতিধারা (Poverty Trends of Bangladesh)


বাংলাদেশে বর্তমানে মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যয় পদ্ধতি দ্বারা দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয় । এ পদ্ধতিতে
দারিদ্র্যসীমা পরিমাপে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত (non-food) ভোগ্যপণ্য উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এ
অধ্যায়ে মূলত বিবিএস পরিচালিত আয় ও ব্যয় জরিপ ১৯৯৫/৯৬, ২০০৫ এবং ২০১০-এর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪৭.৫ শতাংশ থেকে ৩১.৫ শতাংশে নেমে আসে অর্থাৎ দারিদ্র্য গড় বার্ষিক ১.০৬ পয়েন্ট শতাংশ হারে (Point Percentage Rate) হ্রাস পায় ।
দারিদ্র্য নিরসনে গৃহীত কার্যক্রম (Programmes Adopted for Poverty Alleviation) বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি (এনজিও) পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে । বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র্য নিরসনের আওতায় নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্ৰহণ করেছে।


সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচি


নারী, শিশু, প্রতিবন্ধীসহ সকল সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের একটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ । সামাজিক সুরক্ষা ও সামাজিক ক্ষমতায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতায় মোট ৬৪টি কর্মসূচি/কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ সমস্ত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে নগদ প্রদান (বিশেষ ও বিভিন্ন ভাতা) কার্যক্রম, খাদ্যনিরাপত্তা কার্যক্রম, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি ও বিভিন্ন তহবিল ।
সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিসমূহের শ্রেণিবিন্যাস
(ক) নগদ অর্থসহায়তা প্রদান কার্যক্রম (বিভিন্ন ভাতা);
(খ) নগদ অর্থসহায়তা প্রদান কার্যক্রম (বিশেষ);
(গ) খাদ্যনিরাপত্তা কার্যক্রম;
(ঘ) আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম

 

Content added || updated By

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদের গুরুত্ব খুব বেশি। উন্নয়ন ও প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন মানবসম্পদের। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। কাজেই উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশের জন্য উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে ।


মানবসম্পদের সংজ্ঞা (Definition of Human Resource

)
জনসংখ্যার যে অংশ যখন শিক্ষা ও দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রমশক্তিতে পরিণত হয় তখন তাদেরকে মানবসম্পদ বলে। তবে কোনো দেশের ভূমি ও মূলধনকে বস্তুগত সম্পদ বলে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে দক্ষ মানবশক্তির যোগান থাকা প্রয়োজন । অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বস্তুগত সম্পদ ও মানবসম্পদ এ দুটি-ই জরুরি । উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে মানবসম্পদ উন্নয়ন বলে । দক্ষ মানবসম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
মানবসম্পদ উন্নয়নের পদ্ধতি (Methods of Human Resource Development) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদের গুণগত মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন হয় । এ উদ্দেশ্যে নিচের পদ্ধতিসমূহের উল্লেখ করা যেতে পারে ।
১. শিক্ষা : জনসংখ্যাকে কর্মক্ষম ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষার সম্প্রসারণ প্রয়োজন । শিক্ষা ব্যক্তিজীবন এবং জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সুতরাং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করে সকলের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে । একজন মানুষ নিরক্ষর থাকতে পারে কিন্তু তাকে কর্মমুখী শিক্ষাদান করলে তার মানব শক্তির উন্নয়ন হয়। একজন নিরক্ষর মানুষ ভালো ও দক্ষ চাষি হয়ে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে পারে । বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে পেশাগত শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় কম । সুতরাং দেশের সর্বত্র কর্মসংস্থানের উপযোগী কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার। এ উদ্দেশ্যে দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি করা দরকার। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোক তাদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে ।
২. প্রশিক্ষণ : দেশের শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত জনবল অধিক উৎপাদনে সক্ষম । প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষিত মানুষের গুণগত মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানবসম্পদের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তিকে অধিক উন্নত প্রযুক্তিগত কর্মে প্রয়োগ করলে তা থেকে প্রাপ্তি অনেক বেশি হয় । তাছাড়া প্রশিক্ষিত লোক কোনো কাজের ক্ষেত্রে দ্রুত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো ফলাফল দিতে পারে ।

৩. জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন : সুষম খাদ্য গ্রহণ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রভৃতি স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মৌলিক উপাদান দেশের সব নাগরিককে এ অপরিহার্য উপাদানগুলোর সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো দরকার । দেশের যেসব মানুষ ভগ্নস্বাস্থ্য, দুর্বল ও কর্মবিমুখ, তাদের যেকোনো মূল্যে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায় ।
৪. খাদ্য ও পুষ্টি : দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হলে সুষম খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতন করে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে । এ উদ্দেশ্যে দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, কৃষক, শ্রমিকসহ প্রত্যেকেরই দেশের জনগণকে সচেতন করার জন্য এগিয়ে আসা দরকার ।
৫. উপযুক্ত বাসস্থান : স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ বাসস্থান মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে । সুতরাং পরিকল্পিত উপায়ে দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাষ্ট্র থেকে করতে হবে।
৬. নারীর ক্ষমতায়ণ : শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারী সমাজকে কর্মে নিয়োজিত করার উপযোগী করে গড়ে তোলার মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটানো যায়। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী । তাদেরকে ঘরে রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় । নারী সমাজকে কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মে নিয়োজিত করে মানবসম্পদের উন্নয়ন করা সম্ভব ।
৭. মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা : বাংলাদেশের জনগণের কর্মদক্ষতা ও গুণগত মান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করা দরকার। এ উদ্দেশ্যে প্রণীত পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় । অর্থাৎ মানবসম্পদের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব ।

[এই অধ্যায়ের যাবতীয় তথ্যের উৎস: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০১৭ ]

Content added By