নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - NCTB BOOK

ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে বেঁচে থাকার বিজ্ঞানসম্মত উপায়সমূহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা, বিশ্লেষণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাকে সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলা হয়। এখন স্বাস্থ্য বলতে আমরা কী বুঝি তা প্রথমে আলোচনা করা যেতে পারে। আমরা একটা বিখ্যাত উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করতে পারি। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'প্লেটোস রিপাবলিক'-এর ৪র্থ অধ্যায়ে স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন— “Now to produce health is to part the various parts of the body in their natural relations of authority or subservience to one another, whilst to produce disease is to disturb this natural relation.” এই সংজ্ঞার সরল অর্থ করলে দাঁড়ায় “এখন স্বাস্থ্য অর্জন করার অর্থ হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের একে অপরের উপর কর্তৃত্ব অথবা অধীনতার স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনকে নির্দিষ্ট করা। পক্ষান্তরে, শরীরে রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক আন্তঃসম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হওয়াকে বোঝায় উপরোক্ত সংজ্ঞাকে সহজ করলে আমরা স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক সুস্থতা অর্থাৎ শরীরের সুস্থ অবস্থাকে বুঝি। কিন্তু ব্যাপক অর্থে কেবলমাত্র শারীরিক সুস্থতাই স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়, শরীরের সাথে মনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে মানসিক সুস্থতাও প্রয়োজন। স্বাস্থ্যের ন্যায় মূল্যবান সম্পদ লাভ করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান আমাদের সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে যেমন ধারণা দেয় তেমনি রোগগ্রস্ত হলে তা থেকে পরিত্রাণ লাভের পন্থাও জানিয়ে দেয় অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তাই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সচেতন হওয়া, মাদ্রাসায় ও গৃহে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলা, পুষ্টির অভাব পূরণে মাদ্রাসায় টিফিন প্রোগ্রাম চালু করা, মাদ্রাসায় নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবামূলক কর্মসূচি পালন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের গুরুত্ব বর্ণনা করতে পারব।
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষার ধারণা ও কৌশল ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব ।
  • স্বাস্থ্যসেবার আওতা/পরিধি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • টিফিন প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে পারব।
  •  স্বাস্থ্যকার্ড সম্বন্ধে ধারণা পাব এবং এর উপকারিতা ব্যাখ্যা করে রোগ প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করতে পারব।



 

Content added || updated By
ক. বেশি বেশি ঘুমানো
খ. নীরোগ থাকা
গ. আনন্দদায়ক ভ্রমণ
ঘ. চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ

স্বাস্থ্যবিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যনীতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা। আবার স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলার উদ্দেশ্য হলো রোগ প্রতিরোধ করা। মানুষ যতই রোগের কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে, ততই সে রোগ প্রতিরোধের উপায় জানতে ও প্রয়োগ করতে পারবে। এর কারণ, অসুস্থতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া এবং সুস্থ শরীরে দীর্ঘজীবন লাভ করা। তাই সুস্থ শরীর ও দীর্ঘজীবন লাভের জন্য যা করা প্রয়োজন তা আমরা স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠে জানতে পারি। ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল'-এই প্রবাদ বাক্যটির মর্ম অনুধাবন করতে হলে অর্থাৎ স্বাস্থ্যের ন্যায় মূল্যবান সম্পদ লাভ করতে হলে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যের উপর পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থার প্রভাব রয়েছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, সংক্রামক ব্যাধির রোগজীবাণু একের দেহ থেকে অন্যের দেহে সংক্রমণ ঘটায়; কীভাবে সংক্রামক রোগ, ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ হয় এবং এর প্রতিরোধে কী করণীয় তা জানা প্রয়োজন। বিশুদ্ধ পানি পান, দূষিত বায়ু থেকে রক্ষা, পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহণ, আলো বাতাসময় গৃহে বাস, স্বাস্থ্যকর মাদ্রাসা, নিরাপদ পথ চলা, হিংস্রপশু বা পাগলা কুকুর ও শিয়ালের কামড় থেকে আত্মরক্ষা, মলমূত্র আবর্জনা দূরীকরণ প্রভৃতি স্বাস্থ্যকর সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান পাঠে আমরা বিশদভাবে অবহিত হই। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান পাঠে আমরা স্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কে জানতে পারি। স্বাস্থ্যনীতির অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ করা। রোগ প্রতিরোধ ও রোগের প্রতিকার স্বাস্থ্যনীতির অন্তর্ভুক্ত। তবে রোগভেদে রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিরোধের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হবে। কেবল কলেরা, যক্ষ্মা, বসন্ত, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগের একই রকম প্রতিরোধ বা প্রতিকারের ব্যবস্থা হবে না। দূষিত বায়ু, পানি, পচা, বাসি ও খোলা খাবার, গৃহবর্জ্য ও মলমূত্র নিষ্কাশনের অব্যবস্থা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এসব রোগ বিস্তারে সহায়তা করে। এমনিভাবে উন্নত ব্যবস্থাপনার ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, দুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবিধান নিশ্চিত করা স্বাস্থ্যনীতির অন্যতম লক্ষ্য। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অজ্ঞতা, উদাসীনতা সুস্বাস্থ্য গঠনের প্রধান অন্তরায়। উপযুক্ত শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার, প্রভৃতি ব্যবস্থা এই অন্তরায় দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেক ব্যক্তিই সমাজের একজন সদস্য। তাই শুধু ব্যক্তির কল্যাণ নয় সমাজের সর্বস্তরের জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্বন্ধে সকলকে অবহিত করতে এবং স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলতে উপদেশ দিতে হবে।

কাজ-১ : স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য বলতে কী বোঝ তা পৃথকভাবে লেখ এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

কাজ-২ : বিশুদ্ধ পানি ও বায়ু আমাদের প্রাণ রক্ষা করে আবার সেই পানি ও বায়ু দুষিত হলে রোগের সংক্রমণও ঘটায়। এ বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে বিশদভাবে আলোচনা কর এবং যথাযথ উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও ৷


 

Content added || updated By

শারীরিক সুস্থতা আনন্দময় জীবনের পূর্বশর্ত। শরীর সুস্থ না থাকলে পড়ালেখায় মন বসে না, কোনো কাজে আনন্দ পাওয়া যায় না অর্থাৎ সুষ্ঠুভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করা যায় না। কোনো কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করা এবং সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন নিজেকে সুস্থ রাখা। স্বাস্থ্যহীন দেহকে সুস্থ ও সবল করে তোলা কঠিন। সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য শরীরের যত্ন নিতে এবং স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম মেনে চলতে হয়।

স্বাস্থ্যরক্ষা কী? শরীরের গঠন ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখা এবং নীরোগ থাকাই হচ্ছে স্বাস্থ্যরক্ষা। নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ ও এ বিষয়ের সকল নিয়মকানুন মেনে চলাকেই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষা বলে। স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টি দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত। শিশুকাল থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত একজন মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নতি ঘটে। এ সময়ে তাকে বয়স উপযোগী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। তাই দৈহিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে। কারণ শরীরের সাথে মনের সম্পর্ক খুবই নিবিড়

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষার কৌশল : সুস্থভাবে জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তোলার ভিত্তি হচ্ছে স্বাস্থ্যবিষয়ক নিয়মকানুন বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতা যেমন বাড়ি, মাদ্রাসা, আশপাশের রাস্তাঘাট প্রভৃতির পরিচ্ছন্নতা, প্রয়োজনীয় ও পরিমিত ব্যায়াম, বিশ্রাম ও ঘুম, প্রয়োজনীয় পরিমাণে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত খেলাধুলা করা ইত্যাদি। এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেহ ও মনকে সুস্থ ও সবল রাখা যায়। শরীরের যত্ন বিষয়ক সকল কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করাও স্বাস্থ্যরক্ষার একটি প্রধান বিষয়।

হাসি-খুশি ও প্রফুল্ল থাকা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার একটি মৌলিক বিষয়। এজন্য বিনোদনমূলক কাজকর্ম যেমন— খেলাধুলা, ভ্রমণ, আনন্দদায়ক ও শিক্ষামূলক বইপত্র পড়া, বাগান করা, সংস্কৃতি চর্চা, ধর্মীয় আচার ইত্যাদি পালন করা প্রয়োজন। সময়ানুবর্তিতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল কাজ সময় মেনে সম্পন্ন করতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য পরিমাণমতো খাওয়া, নিয়মিত ও স্বাভাবিকভাবে মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস, মাদক দ্রব্য থেকে দূরে থাকা প্রভৃতি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশল। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষার কৌশল সম্পর্কে জানা ও তা মেনে চলা একান্ত আবশ্যক ।

কাজ-১ : শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক কাজ, নিয়ম, বিধি ইত্যাদির সাহায্যে নিচের ছকটি পূরণ কর।

 

শারীরিক স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক কাজ/বিধি মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক কাজ/বিধি

 

কাজ-২ : প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষায় তুমি কী কী কর— অভিনয় করে দেখাও ।

 

 


 

Content added || updated By

রোগ বা অসুখ জীবনের অংশ। সারা জীবনে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত থাকা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে রোগ এড়ানো এবং রোগকে প্রতিরোধ করা যায়। সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা বলতে শরীর রোগাক্রান্ত হওয়াকে বোঝায়। তাই রোগের আক্রমণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য রোগের ধরন, রোগের জীবাণু এবং কীভাবে রোগ ছড়ায় তা জানা প্রয়োজন ।

রোগের কারণ : নানা রকমের জীবাণুর সংক্রমণে শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। আমাদের চারপাশে নানারকম জীবাণু প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই রোগজীবাণু নানা উপায়ে দেহে প্রবেশ করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে রোগ জীবাণু দ্বারা শরীর আক্রান্ত হয় এবং শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যার শরীর সবল ও মজবুত তাকে রোগজীবাণু সহজে কাবু করতে পারে না, সে সুস্থ থাকে।

রোগের ধরন : কোনো কোনো রোগ, আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে আশেপাশে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের রোগকে সংক্রামক রোগ বলে। মানুষের শরীর ছাড়াও কোনো বাহকের মাধ্যমেও সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে। যেমন- পানি, খাদ্য, বাতাস ইত্যাদি। স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে সর্দি-কাশি, চোখ উঠা, উদরাময়, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, টাইফয়েড, জন্ডিস রোগগুলি প্রধান। যে সব রোগ এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমিত হয় না, রোগগ্রস্ত ব্যক্তি একাই সে রোগ বহন করে, সেসব রোগকে অসংক্রামক রোগ বলে। যেমন- ক্যান্সার, , উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা : আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসমস্যা বহুমুখী। দেশে বসন্ত, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমলেও কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়সহ নানাবিধ পেটের পীড়ার বিস্তার অনেক বেশি। পুষ্টিহীনতা, বিশুদ্ধ পানির অভাব, স্বাস্থ্যসমস্যা ও বাসগৃহ না থাকা, যোগ্য চিকিৎসক ও ঔষধপত্রের অভাব, মা ও শিশু মৃত্যুর উচ্চহার, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কে অসচেতনতা প্রভৃতি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে।

স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকার : রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে আত্মসচেতনতা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। রোগের সংক্রমণ যাতে না ঘটে সেজন্য সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে। রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষার সকল উপায় অবলম্বন করতে হবে যাতে শরীর সুস্থ থাকে। শরীর সুস্থ ও সবল থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও দৃঢ় থাকে। রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হলে প্রতিটি রোগের প্রতিরোধের উপায়গুলো জানা প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা আছে। তবে সাধারণভাবে কতকগুলো ব্যবস্থা নিলে অধিকাংশ সংক্রামক রোগই প্রতিরোধ করা যায়। যেমন-

১। টিকা গ্রহণ : যে সব রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যথাসময়ে শিশু ও বয়স্কদের সেই টিকা নিতে হবে। আমাদের দেশে যে সব রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে সেগুলো হলো— বসন্ত, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস ইত্যাদি।

২। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : নিজ শরীর, পোশাক, আসবাবপত্র, রান্নার তৈজসপত্র, থালা-বাসন, বসবাসের স্থান, বাথরুম, বাড়ির চারপাশ সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

৩। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস : প্রতিবার শৌচকাজ শেষে, খাবার তৈরি ও পরিবেশনের আগে, খাদ্য গ্রহণের আগে, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পরে, শিশুদের মলমূত্র পরিষ্কার করার পরে, প্রতিবার বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

৪। খাদ্য প্রস্তুত, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবেশন : স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে খাদ্য প্রস্তুত করা, খাদ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবেশনে যত্নবান হওয়া এবং খাবার সব সময় ঢেকে রাখা খুবই জরুরি। এজন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৫। কীট-পতঙ্গ : কীট-পতঙ্গের আক্রমণ থেকে সাবধান থাকা, জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানি পান ও ব্যবহার করা প্রভৃতি ব্যবস্থা সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। স্বাস্থ্য সম্বন্ধে মানুষের অজ্ঞতা ও অবহেলার জন্যই প্রধানত সংক্রামক ব্যাধি বিস্তার লাভ করে। এ কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর বহু লোকের মৃত্যু হয় ।

৬। রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি : রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, পোস্টার, চলচ্চিত্র, বক্তৃতা ইত্যাদির মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে।

 

কাজ-১ : তোমার বাড়িতে বসবাসকারী এবং পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে গত বছর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ৫ জনের একটি তালিকা তৈরি করে নিচের ছকটি পূরণ কর:

 

 

 

পরিবারের সদস্য গত বছরে তিনি যে সকল রোগে ভুগেছেন এগুলোর কোনটি
    সংক্রামক অসংক্রামক

     

 

কাজ-২ : প্রতিদিন তোমাদের বাড়িতে যতরকম গৃহস্থালির কাজ করা হয় (যেমন- ফলমূল কাটা, খাদ্য প্রস্তুত, পানি ফুটানো, ঘর ঝাড়ু দেওয়া ও মোছা) তেমনি তিনটি কাজ মনে কর। এই কাজগুলো করার সময় রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক করণীয়গুলো উল্লেখ করে ছকটি পূরণ কর ।

 

গৃহস্থালির কাজ সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক করণীয়

১. ফলমূল কাটা

১. ফল নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত পানি দ্বারা ধোয়া, ছুরি বা
 বঁটি ধুয়ে নেওয়া। ফল কেটে পরিষ্কার পাত্রে রাখা, ঢেকে
রাখা।




 

Content added By

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষা তথা জ্ঞান লাভের জন্য যায় তারা শিক্ষার্থী নামে পরিচিত। শিক্ষার্থীরা ছয় থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। বছরে ৭/৮ মাস, সপ্তাহের ছয়দিন এবং প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদেরকে মাদ্রাসায় অবস্থান করতে হয়। দেশ বা জাতির জন্য ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার জন্য তাদের মাদ্রাসায় অবস্থানকালীন সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। মাদ্রাসার পরিবেশ, আসবাবপত্র, শিক্ষার উপকরণ ইত্যাদি যদি তাদের স্বাস্থ্যের অনুকূল না হয় তাহলে তাদের শরীর ও মন সুস্থ ও সবল হয়ে গড়ে উঠবে না। মানসিক উন্নতি তথা নৈতিক চরিত্র গঠনের উপযুক্ত ক্ষেত্র হচ্ছে মাদ্রাসা। আদর্শ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে সৎ গুণাবলি অর্জন করতে সমর্থ হয়। তেমনি শারীরিক সুষম বিকাশের জন্য মাদ্রাসায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেমন- বিশুদ্ধ পানি, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মধ্যাহ্নকালীন টিফিন, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা-প্রস্রাবখানা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন শ্রেণিকক্ষ, উন্মুক্ত খেলার মাঠ, ফুল ও ফলের বাগান এমন ধরনের মাদ্রাসা হলো স্বাস্থ্যসম্মত মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিচের বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে-

ক. মাদ্রাসা : খোলামেলা জায়গা যেখানে চারদিক থেকে অবাধে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে, শব্দ দুষণ থাকে না এবং সহজে যাতায়াত করা যায় এমন উঁচু স্থানে মাদ্রাসার অবস্থান হতে হবে।

খ. খেলার মাঠ : খেলাবিহীন শিক্ষার্থীর জীবন কল্পনা করা যায় না। মাদ্রাসা সংলগ্ন খেলার মাঠ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা সারাবছর বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা এই মাঠে চর্চা করতে পারবে।

গ. স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি পায়খানা ও প্রস্রাবখানা : শ্রেণিকক্ষ থেকে কিছুটা দূরে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও প্রস্রাবখানা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ঘ. বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ : বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম অনুষঙ্গ। শহরে সরবরাহকৃত পানি ফুটিয়ে পান করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্রামাঞ্চলে গভীর নলকূপের পানি বিশুদ্ধ, তাই তা পানযোগ্য । পুকুরের পানি হলে তা ব্যবহারের পূর্বে ফুটিয়ে নিতে হবে।

ঙ. শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র : অস্বাস্থ্যকর না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাদ্রাসার স্বাস্থ্য কার্যক্রম : মাদ্রাসা স্বাস্থ্য কার্যক্রম (Madrasah Health Programme) শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত ঋতুতে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়। পূর্ব থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এসব রোগ থেকে সহজে আরোগ্য লাভ করা যায়। যদি মাদ্রাসায় স্বাস্থ্য কার্যক্রম থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা এই কার্যক্রমের আওতায় সাধারণ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। মাদ্রাসার স্বাস্থ্য কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-


শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা : শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও মাদ্রাসার স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রত্যেক মাদ্রাসায় উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য একজন উপযুক্ত চিকিৎসক পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জেলার সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে এসব পরিদর্শক নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট মাদ্রাসায় হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করবেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসায় স্বাস্থ্য পরিদর্শককে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করবেন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্ৰত্যেক শিক্ষার্থীর বয়স, ওজন, রক্তের গ্রুপ, রক্তের চাপ, নাড়ির গতি, দৈহিক গঠন, চোখ, কান, দাঁত, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি বিষয় পরীক্ষা করবেন এবং একটি কার্ডে তা লিখবেন। এই কার্ডকে শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য কার্ড বলে।

স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র : স্বাস্থ্য কর্মসূচি যে সব মাদ্রাসায় নেই সেখানে একজন শিক্ষককে কিছু সাধারণ প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীর অসুস্থতা জটিল হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রের সহায়তা গ্রহণ করা যায় অথবা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য কার্ড : মোটা কাগজের স্বাস্থ্য কার্ডটিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি মুদ্রিত অবস্থায় থাকবে। কার্ডে যা থাকবে তা হলো-


                                                  মাদ্রাসার নাম ও ঠিকানা
                                                      নমুনা স্বাস্থ্য কার্ড


১। শিক্ষার্থীর নাম..................................................................
২। পিতা/মাতার না...................................................
৩। ঠিকানা.............................................................
৪। জন্ম তারিখ..........................................................................................বয়স.............
৫। শ্রেণি ...................................................................রোল নং.....................
৬। উচ্চতা................................................................ওজন.....................
৭। শরীরের গঠন কাঠামো............................................................
৮। রক্তচাপ............................................................................
৯। চোখ/নাক/কান/গলা/ফুসফুস/হৃৎপিণ্ড..............................................................
১০। অতীত অসুস্থতা................................................................
১১। বর্তমান অসুস্থতা................................................................................
১২। পরবর্তী স্বাস্থ্য পরীক্ষার তারিখ ও সময়.......................................................


স্বাস্থ্য পরিদর্শকের স্বাক্ষর

কাজ-১ : একটি স্বাস্থ্যসম্মত মাদ্রাসার বর্ণনা বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর।
কাজ-২ : মাদ্রাসায় স্বাস্থ্য পরিদর্শকের কাজ এবং একটি নমুনা স্বাস্থ্যকার্ড তৈরি কর। এরপর শ্রেণিতে দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা কর।


 

Content added || updated By

'সর্বজনীন সাক্ষরতা' অর্জনের জন্য ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে থাইল্যান্ডের জমতিয়েন নামক স্থানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এক আন্তর্জাতিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবা “সবার জন্য শিক্ষা” নামে এক কর্মসূচি গৃহীত হয়। এই কর্মসূচি অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী দেশসমূহে প্ৰাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার নীতি ঘোষিত হয়। লক্ষ্য ছিল ২০০৫ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করতে হবে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ না করলে অধিকাংশ শিশু কীভাবে পড়তে বা লিখতে হয় তা শিখতে পারবে না। ফলে নিরক্ষরতার দুষ্টচক্র থেকে কোনো দেশ বেরিয়ে আসতে পারবে না। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রের অনগ্রসরতা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের এক বিপুল জনগোষ্ঠী দরিদ্র এবং তাদের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলের মাদ্রাসাসমূহ সরকার ঘোষিত ‘সবার জন্য শিক্ষা' কর্মসূচির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হচ্ছে না। মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর তারা ঝরে পড়ে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট শ্রেণির শিক্ষা কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারে না। এর অনেকগুলো কারণ আছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদ্রাসায় অবস্থানকালীন সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্ষুধার্ত থাকে। পেটে ক্ষুধা থাকলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের পড়ায় মন বসে না। এজন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসায় মধ্যাহ্নকালীন খাবার কর্মসূচি চালু করে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের প্রান্তীয় জনগোষ্ঠী দরিদ্র বিধায় তাদের সন্তানদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই অল্প খেয়ে অথবা অভুক্ত অবস্থায় মাদ্রাসায় আসে। তারা অপুষ্টিতে ভোগে, পড়াশুনায় মন বসে না এবং অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এসব অসুবিধা দূর করার জন্য মাদ্রাসায় মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রাম চালু করা হয় ।
মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্য :  এই প্রোগ্রামের প্রধান প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো-

১। শ্রেণিকক্ষে অবস্থানকালীন সময়ে ক্ষুধা নিবারণ ।

২। মাদ্রাসায় ভর্তির পর ঝরে পড়া রোধ এবং ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি।

৩। শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সদ্ভাব ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি, সহাবস্থান, সহমর্মিতা বৃদ্ধি

৪। অপুষ্টি রোধ এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ।

৫। খেলাধুলা ও স্কাউট কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ।

৬। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের উপর থেকে খাদ্য সংস্থানের চাপ দূরীভূতকরণ এবং তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ।

পুষ্টিকর টিফিন : মাদ্রাসায় একজন শিক্ষার্থীকে ৭-৮ ঘণ্টা অবস্থান করতে হয়। এই দীর্ঘ সময়ে তারা স্বাভাবিকভাবে ক্ষুধার্ত হয়। এই সময়ের মাঝে তাদেরকে টিফিন সরবরাহ করলে টিফিন খেয়ে তারা ক্ষুধা নিবৃত্ত করে মাদ্রাসার পরবর্তী পাঠসমূহে মনোনিবেশ করতে পারে। এতে তাদের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর হয় । তাদের লেখাপড়ার মান উন্নত হয়। দুপুরের এই খাবারের মান যত উন্নত হবে ততই তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো বোধ করবে। কাজেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদ্রাসার এই মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রামের সফল বাস্তবায়ন করে সার্বিকভাবে “সবার জন্য শিক্ষা” কর্মসূচিকে এগিয়ে নেবে, শিক্ষার হার বাড়বে এবং সর্বোপরি একটি সুস্থ জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

কাজ-১ : “সবার জন্য শিক্ষা” কর্মসূচির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে তোমার দৃষ্টিতে প্রধান অন্তরায়সমূহ কী কী তা বোর্ডে লেখ। এরপর দু'টি দলে বিভক্ত হয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর

 কাজ-২ : মধ্যাহ্নকালীন টিফিন প্রোগ্রামের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ যুক্তিসহ লিখে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর।


 

Content added || updated By