নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - চারু ও কারুকলা - NCTB BOOK

পাঠ : ১,২৩

বর্ণমালা ও হাতের লেখা (Typography & Calligraphy)

বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় কিছু সাধারণ বর্ণমালার চেহারার সাথে আমাদের সবারই পরিচয় আাছে। অনেক দিন আগে যখন সিসার টাইপ ব্যবস্থা হতো হরফের চেহারা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে সেগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল। যেমন বাংলা হরফে বিদ্যাসাগর, রোমান, সুরূপা, প্রগতি, সুশ্রী, আধুনিক ইত্যাদি। ইংরেজিতেও ছিল টাইমস, রোমান, ইউনিভার্স প্রভৃতি। বাংলা হরকে নিসার আগে ব্যবহূত হতো কাঠের টাইপ। পঞ্চানন কর্মকার ছিলেন এই কাঠের টাইপের আবিষ্কারক।

বিজ্ঞানের কল্যাণে প্রযুক্তির ধাপে ধাপে উন্নতির কারণে বর্তমানে সিসার টাইপের ব্যবহার ও লেটার প্রেসের মুদ্রণ ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। যুক্ত জায়গা দখল করে নিচ্ছে- অফসেট মুদ্রণ, ফটোটাইপ ও কম্পিউটার। ফলে টাইপের চোর পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত। প্রযুক্তি ও কম্পিউটারের কারণে হরফের চেহারা, আকার-আকৃতি যত দ্রুতই পরিবর্তন হোকনা কেন মূল চেহারাটা তৈরি করে দিচ্ছে শিল্পীরাই। সেই আদিকাল- কাঠের বরফের আমল থেকে বর্তমান কম্পিউটার যুগ পর্যন্ত হরফের মূল চেহারাটা শিল্পীদের যারাই সম্পন্ন হচ্ছে। হরফের শিল্পরূপ রপ্ত করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন কিছুদিন নিয়মিত অনুশীলন করা। কিছু ভালো ও দেখতে সুন্দর হ্যাকের যা অনুকরণ করে যেতে হবে। তারপর নিজের ভাবনা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে হরফকে আরও কতরকম নতুনচেহারা দেয়া যায় তা নিজেই আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে হয়। আগেই বলেছি হরফের যত রকম চেহারা ও শিল্পরূপ তা শিল্পীরাই করেছেন। হরফের কিছু নমুনা, ছবি ও নিয়ম সঞ্চগ্রহ করে তা দেখে কিছুদিন নিয়মিত অনুশীলন করে পেলে - সুন্দর করে বাংলা, ইংরেজি লেখার ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লেখার বা হ্যাফের শিল্পরূপ নিতে পারদর্শী হতে পারবে।প্রচারের জন্য পোস্টার তৈরিতে, হোল্ডিং এ সুন্দর লেখার প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞাপনের জন্য টেলিভিশনের প্রচারে, সিনেমার জন্য নানারকম নকশার লেখার প্রয়োজন। বই পুস্তকের প্রচ্ছদে, খবরের কাগজে, সাইনবোর্ডে, নাম ফলকে এমনকি রাজনৈতিক প্রচারের জন্য দেয়ালে লেখার প্রয়োজনে হরফের নানারকম শিল্পরূপ দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্যিক শিল্পদ্রব্য যেমন ঔষধের লেবেল, মোড়ক বা প্যাকেট, দুধ, বিস্কুট ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট, প্রসাধন দ্রব্য সাবান, তেল, লোশন ইত্যাদির প্যাকেট এমনি হাজারো কাজে সুন্দর টাইপোগ্রাফি বা লেখাকন অতি আবশ্যকীয় একটি শিল্পকর্ম।

হস্তলিপি বা হাতের লেখাও একটি শিল্পকর্ম। মুদ্রণশিল্পের আবিষ্কারের আগে যাবতীয় লেখালেখির কাজ হাতের লেখা দিয়েই হতো। রাজা বাদশার ফরমান জারি দলিল দস্তাবেজ, পুথি লেখা, বই লেখা, ধর্মগ্রন্থ লেখা সবই হস্তলেখা বিশারদদের দ্বারা হতো।

বাংলা হস্তলিপির পুরোনো পাণ্ডুলিপি। তাল পাতার পুঁথি, দলিল দস্তাবেজের নিদর্শন আমাদের জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে। সুন্দর আরবিলিপিতে আছে কুরআন শরীফ। সারা পৃথিবীতেই সুন্দর আরবি হস্তলিপিতে অনেক কুরআন শরীফ রয়েছে। আরবি হস্তলিপিতে ইসলামের অনেক মর্মবাণী বিশেষ চিত্রকলা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। যাকে বলা হয় ক্যালিগ্রাফিচিত্র এবং যা ইসলামিক শিল্পকলার বৈশিষ্ট্যময় দিক। যারা হাতের লেখায় পারদর্শী তাদের বলা হয়। ক্যালিগ্রাফার। আরবি, ফারসি, উর্দু এসব ভাষায় অনেক শিল্পী ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে সুন্দর ছবি করেছেন মুঘল ও পারশিক চিত্রকলায়।

ক্যালিগ্রাফি করতে যেয়ে অনেক শিল্পী লেখাকে বিভিন্ন জীবজন্তু, পাখি, গাছ এসবের অবয়বে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাথরের গায়ে খোদাই করা বেশ কিছু আরবি ক্যালিগ্রাফির নিদর্শন জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে। বাংলাদেশের পুরোনো কিছু মসজিদের গায়েও ইসলামি শিল্পকলার সুন্দর নিদর্শন হিসেবে এই ক্যালিগ্রাফি রয়েছে।

হাতের লেখার বা ক্যালিগ্রাফির গুরুত্ব এখনো রয়েছে। যেমন অনেক দলিল দস্তাবেজ হাতে লেখা হয়। কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে মানপত্রটি সুন্দর হাতের লেখায় তৈরি করার রেওয়াজ এখনো আছে। বিয়ে, জন্মদিন ও আনন্দ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণলিপি হাতে লিখে দেওয়ার নিয়ম সামাজিকভাবে একটা নান্দনিক সংস্কৃতি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতের লেখা খুব সুন্দর। কবিতা লিখতে গিয়ে কবিতার লাইনে কাটাকুটি করে হাতের লেখা ও কাটাকুটির রেখা মিশিয়ে তিনি ছবির রূপ দিয়েছেন। কবি নজরুলের হাতের লেখাও সুন্দর। অনেকেই তাঁদের হাতেরলেখা অনুকরণ করে নিজের হাতের লেখাকে সুন্দর করার চেষ্টা করেন। আমাদের দেশের কয়েকজন বিখ্যাত শিল্পীর হাতের লেখা অনুকরণযোগ্য। শিল্পী কামরুল হাসান ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর হাতের লেখা সবার কাছেই পরিচিত। বাংলাদেশের সংবিধান গ্রন্থে প্রেসের টাইপ ব্যবহার না করে পুরো গ্রন্থটি হাতে লেখা হয়েছে। লিপিকার হলেন শিল্পী আবদুর রউফ। সংবিধান গ্রন্থটি ক্যালিগ্রাফি, অন্যান্য নকশা ও চিত্রের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য শৈল্পিক গ্রন্থ। হাতের লেখা সুন্দর করার কিছু নিয়ম এবং ক্যালিগ্রাফির কিছু নিদর্শন এখানে ছাপা হলো। ভালো করে লক্ষ করলে এবং নিয়মিত অভ্যাস করলে তোমরাও ভালো হস্তলিপি বিশারদ বা ক্যালিগ্রাফার হতে পারবে।

পাঠ : ৪, ৫ ও ৬

নকশা (Design)

নকশা বা ডিজাইনের প্রয়োজন ও ব্যবহার মানব জীবনের সর্বত্র। অবশ্য 'নকশা' শব্দটির অর্থ ব্যাপক এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তৃত। আমরা এখানে কিছু সাধারণ আকার-আকৃতি, ফুল, পাতা, পাখি, মাছ ও রেখা মিলিয়ে কাগজে নকশা তৈরির কথা আলোচনা করব যা আমাদের দৈনন্দিন কাজে জীবনযাপনের প্রয়োজনে সব সময় ব্যবহার হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের লোকশিল্পে নকশার ছড়াছড়ি। নকশিকাঁথা, পাখা, জায়নামাজ, তাঁতে তৈরি শাড়ি-বিশেষ করে জামদানি, টাঙ্গাইল শাড়ি, ঢাকাই বিটি শাড়ি, কাতান, বেনারসি ইত্যাদিতে হাজার হাজার নকশার ব্যবহার হয়েছে নানা রঙে। এসব নকশা আঁকার পদ্ধতি ও ব্যবহার ভালোভাবে লক্ষ কর। কাঠের কাজে দরজায়, খাট-পালং তৈরিতে বাক্সে সিন্দুকে, বিভিন্ন আসবাবপত্রে, পাল্কিতে, নৌকায়, কাঠ খোদাই করে উঁচু উঁচু করে নানারকম নকশার কাজ আছে বাংলাদেশে। যেগুলোকে রিলিফ শিল্পকর্ম বলে। পোড়ামাটির ফলকেও এ ধরনের রিলিফ শিল্পকর্ম করা হয়। যার কথা মাটির শিল্পকর্ম অধ্যায়ে বলা হয়েছে। এসব শিল্পকর্ম গভীর মনোযোগ সহকারে দেখ অনেক নকশার সাথে তোমাদের পরিচয় হবে।

কাঠের পুতুল, হাতি, ঘোড়া, মাটির পুতুল, হাঁড়ি-কলসি, শখের হাঁড়ি, কাঁসা পিতলের তৈজসপত্র, সিলমসি, ফুলদানি, গোলাপজলদানি, সুরমাদানি, সিঁদুর পাত্র, অলঙ্কার রাখার পাত্র, সোনা-রূপার অলঙ্কার এমনি সব ব্যবহারিক দ্রব্যে ডিজাইন ও নকশার ছড়াছড়ি দেখতে পাবে।

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে রাস্তায় 'আলপনা' আঁকা ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা আপনের একটি বিষয়। আজকাল যে কোনো বিয়েতে, জন্মদিনে, ঈদে, পুজায় ও প্রায় সব আনন্দ অনুষ্ঠানে আলপনা আঁকা হয় যা বাংলাদেশের লোকশিল্পের সুন্দর নিদর্শন এবং ফুল, পাতা, গাছ, পাখি ও রেখার মিলিত নকশার রূপ ।

বৃত্ত, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও রেখা এই চারটি উপাদান নকশা তৈরির প্রধান অবলম্বন। এই চারটি উপাদানকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে তুমি অনেক রকম নকশা তৈরি করতে পার। ছবির নকশাগুলো ভালোভাবে লক্ষ কর একই উপাদান ও রেখা পুনঃ পুনঃ ব্যবহার, নানা ভঙ্গিতে বসিয়ে নকশায় ছন্দ ও সুর সৃষ্টি করা হয়েছে। কথাটা আরেকটু পরিষ্কার করে বলি। শব্দের সঙ্গে শব্দের মিল ঘটিয়ে কবিতা ও গানে আমরা যেমন ছন্দ ও সুরের সৃষ্টি করে মনকে আন্দোলিত করি তেমনি নকশা বা ডিজাইনে বিভিন্ন উপাদান পুনঃ পুনঃ ব্যবহার করে চোখের দেখায় শুধু সুন্দর রূপ নয় একটা ছন্দ ও সুর সৃষ্টি হয়ে যায় হৃদয়ে।বৃত্ত, নি, চতুর্ভুজ ও লেখা এই চারটি উপাদান ইসলামিক শিকলল্পত প্রবান উপাদান। ইসলামিক শিল্পকলার জীবাজার ব্যবহার সাধারণত করা হয় না। জ্যামিতিক প্যাটার্নগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে।

বাংলাদেশে ইসলামি স্থাপত্যের নিদর্শন বিভিন্ন মসজিদ ও ইমারতগুলো তৈরিতে উপরোক্ত জ্যামিতিক প্যাটার্নগুলোকে নানাভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন নকশার কাজ করা হয়েছে।এখানে জ্যামিতিক প্যাটার্নগুলোর নানারকম ব্যবহার দেখানো হয়েছে। তোমরা এখানে চেষ্টা কর দেখ কম সফলা তৈরি করতে পার। উপরের ফুল, পাতা, মাছ, পাখি দিয়ে না করার নিয়মগুলো দেখে অতাস কর। মम ও সুন্দর নকশা তোমরাও তৈরি করে নিজেদের কাজে ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পার। যেমন- কাপড় ছাপায়, আলপনা আঁকার, বই পুস্তকের প্রচ্ছদে, পোস্টার, সেরাল পত্রিকায়, আমরণলিপিতে, ইনফার্ড ও বিভিন্ন কারুশিল্পে।

পাঠ : ৭,৮৩১

গ্রাফিক ডিজাইন (Graphic Design)

ছাপা বা প্রকাশনার জন্য যে ডিজাইন বা নকশা করা হয় ডাকেই আমরা ফিক ডিজাইন বলতে পারি। সারা বিশ্বের প্রকাশনার জগৎ এই গ্রাফিক ডিজাইনের পাওডার। বই-পুস্তক ও ম্যাগাজিনের অঙ্গসজ্জা, ছল, ক্যালেডা, বিভিন্ন পণ্যের প্যাকেট ডিজাইন থেকে শুরু করে ছাপাখানা থেকে মুদ্রিক বিভিন্ন প্রচারণামূলক পোস্টার, অন্যান্য বিষয়ের জন্য নকশা, ছবি ও সামগ্রিকভাবে মুদ্রিত বিষয়ের জালিক ও সৌন্দর্য নির্ভর করে মূলত এই গ্রাফিক ডিজাইনের উপর। সুতরাং গ্রাফিক ডিজাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

কম্পিউটার আবিষ্কার বা এর ব্যাপক প্রচলন এর পূর্বে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হাপার জন্য প্রস্তুতকৃত উপাদানের প্রায় সবটুকুই হাতে তৈরি করতেন। ছবি, নকশা ও লেখার শৈলী বা স্টাইল সবই রং, কালি, খুশি, বিভিন্ন প্রকার কলম ইত্যাদি নিয়ে অজন করা হতো। এছভূতি এয়ার ব্রাণ, স্কেল, কম্পান ইত্যাদির নকশার জন্য ব্যবহার করা হয়।

টাইপোগ্রাফির ব্যবহার গ্রাফিক ডিজাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টাইপোগ্রাফি হচ্ছে প্রচ্ছন, ক্যালেন্ডার, পণ্যের মোড়ক বা অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ছাপার অক্ষর বা হরফ এর স্টাইল। বিভিন্ন স্টাইলের লেখা গ্রাফিক ডিজাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য প্রয়োজন পোস্টার রং, চাইনিজ ইঞ্চ, বিভিন্ন মাপের তুলি, কম্পাস, কাগজ, পেনসিল ইত্যাদি। এখন কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রের মতো গ্রাফিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে এসেছে চমকপ্রদ পরিবর্তন। কম্পিউটার গ্রাফিকস এখন একটি বহুল পরিচিত শব্দ।

পাঠ : ১০, ১১ ও ১২

ফ্যাশন ডিজাইন (Fashion design)

চলতি প্রথা, রীতি বা স্টাইলকে ফ্যাশন বলা হয়। এটি হতে পারে পোশাক, আসবাব অথবা গয়নাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এমনকি হেয়ার স্টাইলও এর বাইরে নয়। তবে Fashion (ক্যাশন) শব্দটি বল ব্যবহৃত হয় পোশাকের ক্ষেত্রেই। আর ফ্যাশন ডিজাইন বলতেও আমরা বুঝি কোনো বিশেষ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত পোশাকের জনপ্রিয় আকার-আকৃতি ও প্রস্তুতপ্রণালি।ফ্যাশন শব্দটির আভিধানিক অর্থ লিত রীতি। সময়ের সাথে সাথে এ রীতির পরিবর্তন হয়। তাই একে আমরা সময়োপযোগী রীতিও বলতে পারি। সভ্যতার সাথে ক্রমবর্ধমান সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটেছে যুগে যুগে। পরিবর্তন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, কখনো বা সযোজন-বিয়োজন নিয়ে ফ্যাশন চলে এসেছে সময়ের সাথে।

যেমন— কখনো হয়তো ঢিলেঢালা পোশাক পরতে মানুষ প র ন ই ঐ রকম পোশাক পরে এবং এটাই ভাসফার ক্যাশন। আবার কখনো আঁটসাঁট পোশাক অনতির হয়। সুতরাং এটাই সে সমরের ফ্যাশন। এ জন্য ফ্যাশন পরী ।

বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে এই ফ্যাশন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বা মর্যাদা প্রকাশ করে। উনিশ ও বিশ শতকে ফ্যাশনকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে ফ্যাশন হাউস ও ফ্যাশন ম্যাগাজিনের রমরমা ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর কারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। তার তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের ফ্যাশন সচেতনতা।

পাশ্চাত্যে ও আমেরিকাতে ফ্যাশনেবল পোশাক রপ্তানী করে বাংলাদেশও আজ তার অর্থনৈতিক ভিতকে মজবুত করো পড়ে তুলছে। আমাদের দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলে পোশাক ও পোশাকের ফ্যাশনকে অত্যন্ত গুরুত্ব নিয়েছে। তাই পোশাক প্রস্তুতকারী গর্মেন্টসগুলোর সংগঠন BGMEA নিজেরাই একটি ক্যাশন ডিজাইন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর রীতিমতো ডিগ্রি নেয়া হচ্ছে। পোশাক যে একটা শিল্প একা আর মার বলার অপেক্ষা রাখে না। শ্রেণি, পেশা, বয়স, সামাজিক অবস্থান সবার কাছেই ফ্যাশনেবল পোশাক এখন গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কাজেই একে এখন আর কেবা শখ বলা যাবে না। বরং পোশাকের সাথে মিলিয়ে জুতা, স্যান্ডেল, হ্যাট, চুপি, পরনা, ছাতা সবই এখন হওয়া চাই ফ্যাশনেবল। তবে ফ্যাশন অবশ্যই হতে হবে নিজ নিজ সমাজ, সংস্কৃতি, আবারা ও আরামের সাথে সামজস্যপূর্ণ।

এখন প্রচুর ফ্যাশন হাউস হয়েছে। আর নিত্যসঙ্কুন ডিজাইনের পোশাকের সমাহারও বাজারে লক্ষ করা যাচ্ছে। ভাইফ্যাশন ডিজাইনারের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। শিল্পরুচি সঠিকভাবে রঙের সমন্বয়বোধ ও স্টাইলিশ পোশাক সম্পর্কে ধারণা এই পেশাকে সমৃদ্ধ করতে পারে।

এর সাথে সম্পৃক্ত আছে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আবহমান বাংলার লোকায়ত ধারা, আমাদের রুচি, মূল্যবোধ স্বকীয়তা ইত্যাদি। প্রতিটি জাতির একটা নিজস্ব ধারা বা ঐতিহ্য আছে। আর এই ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটে তাদের আচার-আচরণ, খাদ্যাভাস, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদিতে।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর গ্লোবাল ভিলেজে এখন আমরা বিশ্ব সংস্কৃতির প্রবাহে আপন সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছি। নিজ সংস্কৃতির ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখে কখনো বা পাশ্চাত্যের ধারার সংমিশ্রণে আমরাও সময়কে ধারণ করেছি বিশ্বায়নের সাথে। এর প্রভাবে আমাদের পোশাকশিল্পেও ঘটেছে ভিন্নমাত্রা। বৈচিত্র্যতা এসেছে তার ডিজাইনে। আমাদের দেশের অনেক ডিজাইনারদের পোশাক বিশ্ববাজারে সমাদৃত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত তারকা মডেল বিবি রাসেলের নাম আমরা উল্লেখ করতে পারি।

দেশীয় তাঁতশিল্পকে উজ্জীবিত করে তাঁতের বোনা কাপড়ে আধুনিক ফ্যাশনে তিনি পোশাক তৈরি করে একদিকে যেমন দেশীয় তাঁতের পুনর্জীবন দিয়েছেন, তেমনি দেশের নতুন প্রজনকে উদ্বুদ্ধ করেছেন এই শিল্পে তাদের মেধা মনন প্রয়োগ করে একটা নতুন ধারার উদোষ ঘটাতে। বাঙালির ঐতিহ্য ও গৌরবময় উৎসব পহেলা বৈশাখ। ফ্যাশন হাউসগুলো ক্রেতাদের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিবছর বৈশাখ বরণের জন্য তৈরি করে আবহাওয়া উপযোগী আরামদায়ক সুতি পোশাক। পোশাকে বর্ণীল হয়ে উঠতে চায় সব বাঙালি।

আবার ২৬শে মার্চ উপলক্ষে লাল-সবুজের বিশেষ আয়োজনে মেয়েদের জন্য টপস, সালোয়ার-কামিজ, ছেলে-মেয়েদের ফতুয়া ও ছেলেদের নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি তৈরি করে। মহান ভাষার মাসে আমানের ভাষার প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ করে আমাদের প্রিয় বর্ণমালা দিয়ে ছোট-বড় সবার জন্য নানারকমের রুচিশীল পোশাক তৈরি করে। আবার প্রকৃতিতে যখন ফাগুনের আগমন ঘটে তখন তাকে বরণ করতে ফ্যাশন হাউসগুলো বাহারি পোশাকে আমাদের মনও রাঙিয়ে তোলে। আমাদের জাতীয় দিনসমূহ, ধর্মীয় উৎসবে অথবা বাঙালির ঐতিহ্যময় দিনগুলোতে নিত্যনতুন রং-বেরং এর নতুন নতুন ডিজাইনে পোশাকশিল্পে একটা আধুনিক ধারা তৈরি হয়েছে। এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে একজন চারু ও কারুশিল্পীরও বিশাল ভূমিকা থাকে। কারণ তোমরা ইতিমধ্যে যে সকল নকশা বা ডিজাইন শিখেছ তার বহুমাতৃক প্রয়োগ ও পোশাকের ডিজাইন এর সমন্বয় করে তুমিও হয়ে উঠতে পার একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনার।

পাঠ : ১৩, ১৪ ও ১৫

অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা (Interior Decoration )

আধুনিককালে আবাসগৃহ বা অফিস কক্ষের ভিতরে প্রয়োজন ও রুচি অনুযায়ী যে সাজসজ্জা করা হয় তাকে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন বা অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা বলা হয়। সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ যেমন প্রকৃতির বাহ্যিক রূপ দেখে দেখে বিমোহিত হয়েছে, তেমনি ঐ সৌন্দর্যের ছোঁয়া তার অভ্যন্তরীণ জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছে অনেক পূর্ব থেকে। এটি যেমন তার সুরুচির পরিচয় বহন করে তেমনি পরিচ্ছন্ন পরিপাটি পরিবেশে সে জীবনযাপনে একধরনের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। চারু ও কারুকলা বিষয়টি এ বিষয়ে অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। আজকাল আবাসিক বাসা, অফিস, অডিটরিয়াম,অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা সাধারণত বাড়ি বা অফিস কক্ষের ব্যবহারকারীর বিবিধ প্রয়োজন, তার রুচি, সংস্কৃতি ও আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়। অলংকরণ বা সাজসজ্জা শুধু কক্ষসমূহের দেয়াল, মেঝে বা ছাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ভবন বা কক্ষে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক আলো আসবাবপত্র ইত্যাদিও সাজসজ্জার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। ঘরে কোন কোন আসবাবপত্রকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং কোন কোন আসবাবপত্রকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় এ বিষয়টির উপরও সাজসজ্জার স্বার্থকতা অনেকটাই নির্ভর করে। অতিরিক্ত জিনিসপত্র থাকলে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। সুতরাং আগে থেকে চিন্তা ভাবনা করে প্রয়োজনের গুরুত্বকে মাথায় রেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এছাড়াও দেয়ালের রং এবং মেঝের টাইলস বা কার্পেটের রঙে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত গৃহের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার জন্য রেখা, ফর্ম, আলো এবং রঙের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। রঙের ব্যবহারের ভারতম্যের কারণে ছোট কক্ষকেও অপেক্ষাকৃত বড় মনে হয়। ছাদের উচ্চতা কখনো বেশি আবার কখনো কম মনে হয়।

তাই রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। শয়ন কক্ষের রং হওয়া উচিত হালকা ও সৃষ্টিকে পীড়া দেয় না এমন। যাতে দেয়ালে চোখ রাখলে আরামবোধ হয়, সহজে ঘুম আসে। গাঢ় উজ্জ্বল রং মনকে উত্তেজিত করে। ফলে তা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অন্যদিকে বসার ঘরের জন্য কিছুটা উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা ভালো। তাছাড়া নানারকম ওয়াল পেপার দিয়েও ঘরের দেয়ালকে আকর্ষণীয় করা যায়। দরজা, জানালার পর্দার রং ও গুরুত্বপূর্ণ, যা ঘরের দেয়ালের রঙের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। ঘরের কক্ষগুলো যতই সুন্দর করে সাজানো হোক না কেন তাতে যদি যথাযথভাবে আলোর প্রয়োগ করা না যায় তবে পুরোটাই বৃথা হবে। সুতরাং এটা মনে রাখতে হবে যে, সুন্দর রং নির্বাচন, আকর্ষণীয় পর্দা আর আসবাবপত্রের সঠিক ব্যবহার সত্ত্বেও শুধু আলোর যথাযথ ব্যবহার না করার কারণে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে সাজসজ্জার কাজটি। বিভিন্নভাবে ঘরে আলোর প্রয়োগ করা যায়। বাল্ব, স্পটলাইট ল্যাম্পশেড, স্ট্যান্ড ল্যাম্প প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ কিছু জিনিসের উপর দৃষ্টি আকর্ষিত করার জন্য সেখানে স্পট লাইটের আলো ফেলা যেতে পারে। যেমন শো-পিস, পেইন্টিং ইত্যাদি। আবার বসার ঘরে পুরো কক্ষকে আলোকিত না করে আলো-আঁধারির পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে। তাছাড়া সুন্দর সুন্দর ল্যাম্পশেডের ব্যবহার ঘরের শোভা বাড়িয়ে তোলে। কেবল যথাস্থানে তা স্থাপন করতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা অনেকটাই নির্ভর করে অধিবাসীর রুচি ও চাহিদার উপর। এ বিষয়ে প্রথাগত শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজকে দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয় করে করা সম্ভব।

Content added By