On This Page
চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

সপ্তম অধ্যায়

পাপ

আমরা জানি যে, সজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন করাই পাপ। ঈশ্বর আমাদের যা করতে বলেছেন তা যখন না করার সিদ্ধান্ত নিই তখন আমরা ঈশ্বরকে ও মানুষকে ভালোবাসি না। এই কারণে বলা যায়, যখন আমরা ঈশ্বর ও মানুষকে ভালোবাসি না, তখনই পাপ করি। একদিকে আমরা ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা লঙ্ঘন করে পাপ করি, অন্যদিকে আবার দীনদুঃখী ও অবহেলিতদের প্রতি আমাদের কর্তব্য না করেও পাপ করে থাকি।

অবহেলিতদের প্রতি খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সব মানুষকে এক সৃষ্টিকর্তাই সৃষ্টি করেছেন। তবুও আমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করি। ধনী ও গরিবের মধ্যে আমরা পার্থক্য রচনা করি। এক ধর্ম অন্য ধর্মের লোকদেরকে হেয় করে দেখি। এক দেশের লোক অন্য দেশের লোকের চেয়ে নিজেদের বড় মনে করে। যীশু খ্রিষ্ট কিন্তু আমাদের এ রকম মনোভাব একদম পছন্দ করেন না। তিনি নিজেকে অবহেলিত বা তুচ্ছতমদের সঙ্গে তুলনা করেন। প্রভু যীশু বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা বড় হতে চায় তারা সেবা করুক সবচেয়ে ছোটদের।

 

অবহেলিতদের প্রতি

খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের দায়িত্ব-কর্তব্য বিষয়ে প্রভু যীশুর শিক্ষা মৃত্যুর পর আমাদের সবারই প্রভু যীশুর সামনে শেষ বিচারের জন্যে দাঁড়াতে হবে। আমাদের বিচার হবে অবহেলিতদের প্রতি আমরা নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য ঠিকমতো পালন করেছি কি না তার ভিত্তিতে।

আহতদের সেবাদান

আমরা কত বড় বড় ডিগ্রি নিয়েছি, কত বেশি সুনাম অর্জন করেছি, কত দেশ ভ্রমণ করেছি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে আমাদের বিচার হবে না। যীশু নিজেই আমাদের কাছে বিচারের মানদণ্ড সম্পর্কে বলেছেন। আমরা এখন তা পাঠ করি।

মানবপুত্র যখন আপন মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে আসবেন আর তাঁর সাথে আসবেন স্বর্গদূত-তিনি তখন নিজের গৌরবের সিংহাসনে এসেই বসবেন। তাঁর সামনে তখন সকল জাতির মানুষকে সমবেত করা হবে। মেষপালক যেমন ছাগ থেকে মেষদের পৃথক করে নেয়, তেমনি তিনিও মানুষ থেকে মানুষকে পৃথক করে নেবেন। মেষগুলোকে তিনি রাখবেন তাঁর ডান পাশে আর ছাগগুলোকে বাঁ পাশে। তারপর ডান পাশে যারা আছে, এই রাজা তাদের বলবেন: এসো তোমরা, আমার পিতার আশীর্বাদের পাত্র যারা! জগতের সৃষ্টির সময় থেকে যে রাজ্য তোমাদের দেওয়া হবে বলে রাখা আছে,তা এবার তোমরা নিজেদেরই বলে গ্রহণ কর। কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম আর তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, তোমরা জল দিয়েছিলে; বিদেশি ছিলাম, দিয়েছিলে আশ্রয় ছিলাম বত্রহীন, তোমরা আমাকে পোশাক পরিয়েছিলে; আমি পীড়িত ছিলাম, তোমরা আমার যত্ন নিয়েছিলে; ছিলাম কারারুদ্ধ আর তোমরা আমাকে দেখতে এসেছিলে। তখন ধার্মিকেরা উত্তরে তাঁকে বলবে: ‘প্রভু, কখন আমরা আপনাকে ক্ষুধার্ত দেখে খেতে দিয়েছিলাম, কিংবা তৃষ্ণার্ত দেখে জল দিয়েছিলাম? কখন আপনাকে বিদেশি দেখে দিয়েছিলাম আশ্রয়, কিংবা বস্ত্রহীন দেখে পরিয়েছিলাম পোশাক? কখনোই বা আপনাকে পীড়িত বা কারারুদ্ধ দেখে দেখতে গিয়েছিলাম?' রাজা তখন তাদের এই উত্তর দেবেন: ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই তুচ্ছতম ভাইবোনদের একজনের জন্যেও তোমরা যাকিছু করেছ, তা আমারই জন্যে করেছ। ’

তারপর যারা তাঁর বাম পাশে আছে, তিনি তাদের বলবেন: ‘আমার সামনে থেকে দূর হও তোমরা, অভিশাপের পাত্র যারা! শয়তান ও তার দলের যত অপদূতের জন্যে যে শাশ্বত আগুন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে, তোমরা সেই আগুনেই যাও। কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম আর তোমরা আমাকে খেতে দাও নি; আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম, আমাকে জল দাও নি; বিদেশি ছিলাম, তোমরা আশ্রয় দাও নি; ছিলাম বস্ত্রহীন, তোমরা আমাকে পোশাক পরাও নি। পীড়িত ও কারারুদ্ধ ছিলাম, আর তোমরা আমার যত্ন নাও নি। তখন উত্তরে তারাও বলবে : ‘প্রভু, কখন আমরা আপনাকে ক্ষুধার্ত বা তৃষ্ণার্ত, বিদেশি বা বস্ত্রহীন, পীড়িত বা কারারুদ্ধ দেখেও আপনার সেবা করি নি?' তখন তিনি তাদের এই উত্তর দেবেন: ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই তুচ্ছতম মানুষদের একজনের জন্যেও তোমরা যাকিছু কর নি, তা আমারই জন্যে কর নি। তখন এরা যাবে শাশ্বত দণ্ডলোকে এবং ধার্মিকেরা যাবে শাশ্বত জীবনলোকে।

যীশুর শিক্ষার অন্তর্নিহিত অর্থ

১। আমাদের চারিপাশে অনেক অবহেলিত ও তুচ্ছতম মানুষকে আমরা দেখতে পাই। তাদের জন্য আমরা যখন চাই, তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। টাকা পয়সা বা কোনো জিনিস দিয়ে সাহায্য করতে না পারলেও আমরা অন্তত হাসি মুখ দেখিয়ে বা একটা উৎসাহজনক কথা বলেও সাহায্য করতে পারি।

২। অবহেলিতদের সাহায্য করতে গিয়ে তার হিসাবও রাখা যাবে না। কেউ যেন খাতার মধ্যে লিখে না রাখে যে সে কতোজন মানুষকে সাহায্য করেছে। বরং এ ধরনের সাহায্য করে যেতে হবে অনবরত, মৃত্যু পর্যন্ত।

৩। এ ধরনের সাহায্য করে আবার কোনো রকম প্রশংসা পাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না ৷ যীশু বলেছেন, এই সাহায্য হতে হবে এমন গোপনে, যেন ডান হাত যে কী করছে তা যেন বাম হাতও জানতে না পারে। জানবেন শুধু আমাদের স্বর্গীয় পিতা। তিনিই আমাদের পুরস্কৃত করবেন।

৪। অবহেলিতদের প্রতি সাহায্য করা আমাদের একটা দায়িত্ব বা কর্তব্য। এটি আমাদের অবশ্যই করতে হবে। এখানে কোনো অবহেলা করা যাবে না ।

৫। পার্থিব জগতে আমরা যখন কোনো পিতামাতার সন্তানকে কোনোভাবে সাহায্য করি তখন তাঁরা খুশি হন। তেমনিভাবে আমরা যখন অন্য মানুষকে সাহায্য করি তখন স্বর্গীয় পিতাও খুশি হন। কারণ সব মানুষ তাঁরই সৃষ্ট এবং আমরা সবাই পরস্পরের ভাইবোন ।

গান করি

সেবা কর দুঃখীজনে, সেবা কর আর্তজনে, সে তো তোর খ্রিষ্টসেবা।। চোখের জলে হাহাকারে, যে বসে রয় পথের ধারে তারে বুকে তুলে নে ভাই, সে তো তোর খ্রিষ্টসেবা।।

দায়িত্ব পালন করা ও না করার ফল

যীশুর শিক্ষানুসারে অবহেলিত ও তুচ্ছদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করলে আমরা পুরস্কৃত হবো। যীশু শেষ বিচারের দিন বলবেন: “এসো তোমরা, আমার পিতার আশীর্বাদের পাত্র যারা! জগতের সৃষ্টির সময় থেকে যে-রাজ্য তোমাদের দেওয়া হবে বলে রাখা আছে, তা এবার তোমরা নিজেদেরই বলে গ্রহণ কর।” অর্থাৎ এই ধরনের লোকেরা হলেন ধার্মিক। তাঁরা যাবেন শাশ্বত জীবনলোকে তথা স্বর্গীয় পিতার কাছে।

আর যারা দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা করবে তাদের তিনি বলবেন: “আমার সামনে থেকে দূর হও তোমরা, অভিশাপের পাত্র যারা! শয়তান ও তার দলের যত অপদূতের জন্যে যে শাশ্বত আগুন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে, তোমরা সেই আগুনেই যাও।” এরা যাবে শাশ্বত দণ্ডলোকে তথা নরকে।

গান করি

যা কিছু তুমি করেছ অবহেলিত ভাইয়ের প্রতি, করেছ তা আমার প্রতি। খাদ্য দিয়েছ আমায় তুমি, ক্ষুধিত যখন ছিলাম আমি তৃষিত যখন ছিলেম আমি, তৃষ্ণা মিটালে আমার তুমি । দুয়ার খুলেছ আমায় তুমি, গৃহহীন যখন ছিলেম আমি মলিন বেশে ছিলেম যখন, বস্ত্র দিয়েছ তুমি তখন । ক্লান্ত যখন ছিলেম আমি, শক্তি এনেছ আমায় তুমি । ভীত যখন ছিলেম আমি, অভয় দিয়েছ শুধুই তুমি ।

কী শিখলাম

ঈশ্বরের আজ্ঞা অমান্য করে আমরা পাপ করি আবার দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা করেও আমরা পাপ করি। দায়িত্ব পালনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের শেষ বিচার হবে। ছোট ছোট সেবাকাজের মধ্য দিয়ে প্রতিদিনই আমরা এই দায়িত্বগুলো পালন করতে পারি।

 

 

পরিকল্পিত কাজ

১। কীভাবে অবহেলিতদের সেবা করা যায় দলগতভাবে তার একটি তালিকা

তৈরি কর।

২। তুমি কোনো সেবাকাজ করে থাকলে তা লেখ ।

অনুশীলনী

১। শূন্যস্থান পূরণ কর

ক) আমরা যখন ঈশ্বর ও মানুষকে ভালোবাসি না তখন আমরা…………করি ।

খ) যীশু নিজেকে………………সঙ্গে তুলনা করেন।

গ) শেষ………..দিনে আমাদের যীশুর সামনে দাঁড়াতে হবে। 

ঘ) বাম পাশের লোকদের বলবেন, আমার সামনে থেকে দূর হও…….. পাত্র যারা।

ঙ) ডান পাশের লোকদের বলবেন, এসো তোমরা, আমার পিতার .......পাত্র যারা। 

৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (✓) চিহ্ন দাও

৩.১ আমরা যখন তৃষ্ণার্তকে জল দিই তখন কাকে জল দেই?

(ক) যীশুকে (খ) যোহনকে (গ) স্বর্গদূতকে (ঘ) ঈশ্বরকে 

৩.২ বড় হতে চাইলে কী করতে হবে?

(ক) বড়দের সেবা করতে হবে (খ) নিজের যত্ন করতে হবে

(গ) ছোটদের সেবা করতে হবে (ঘ) অন্যদের যত্ন করতে হবে।

৩.৩ মানুষকে সেবা করলে কে খুশি হন?

(ক) স্বর্গদূত (খ) স্বর্গস্থ পিতা (গ)সাধুসাধ্বীগণ (ঘ) মানুষ

৩.৪ যারা অবহেলিতদের প্রতি দায়িত্ব পালন করে না তাদের প্রভু বলবেন: 

(ক) উত্তম সন্তান (খ) দুষ্টলোক (গ) আশীর্বাদের পাত্র (ঘ) অভিশাপের পাত্র ।

৩.৫ যারা অবহেলিত ভাইবোনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করেন, তাদের বলা হয় -

(ক) ধার্মিক  (খ) ভালোমানুষ (গ) সৎলোক (ঘ) প্রবক্তা

৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) শেষ বিচারের দিনে ধার্মিকের উদ্দেশ্যে যীশু কী বলবেন? 

(খ) ধার্মিক লোকদের জন্য কী পুরস্কার নির্ধারিত আছে? 

(গ) অবহেলিত মানুষদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কী ? 

(ঘ) অবহেলিতদের প্রতি দায়িত্ব পালন না করার ফল কী হবে?

৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) অবহেলিতদের প্রতি দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত যীশুর শিক্ষার গভীর অর্থ ব্যাখ্যা কর।

(খ) শেষ বিচারের মানদণ্ড কী?

(গ) অবহেলিতদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা ও না করার ফলগুলো লেখ ।

Content added By

Promotion