পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

পৃথিবীতে আমরা এসেছি ঈশ্বরের ইচ্ছায়। যেদিন তিনি চাইবেন সেদিন আমাদের এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদের নিয়ে ঈশ্বরের একটা পরিকল্পনা আছে। ঈশ্বর চান আমরা যেন তাঁর পরিকল্পনা জানি ও তাঁর দেখানো পথে চলি। পবিত্র বাইবেলের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের সামনে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাঁর পুত্র যীশু খ্রিষ্ট হলেন আমাদের সামনে তাঁর দেখানো পথ। প্রভু যীশুর পথ অনুসরণ করে চললে আমরা শেষ বিচারে অনন্ত পুরস্কার লাভ করব।

শেষ বিচারের অর্থ

যুগের শেষ দিনে ঈশ্বর সারা পৃথিবীর সকল জাতির সকল মানুষ ও দেবদূতদের বিচার করবেন। তিনি ভালো ও মন্দ কাজের ভিত্তিতে বিচার করে যে-রায় দেবেন সেটাকেই শেষ বিচার বলা হয়। সেই বিচারেই প্রত্যেক ব্যক্তির ভাগ্য নির্ধারিত হবে। সেদিন ঠিক হবে কে যাবে স্বর্গে ও কে যাবে নরকে। চারটি মঙ্গলসমাচারে, বিশেষত মথি রচিত মঙ্গলসমাচারে এই কথাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, শেষ দিনে সকল মানুষ পুনরুত্থান করবে। তখন খ্রিষ্ট সকল স্বর্গদূতকে সাথে নিয়ে আবার এই পৃথিবীতে আসবেন। তিনিই সকল মানুষের বিচার করবেন। তাঁর বিচারে যাঁরা পুরস্কার পাবার যোগ্য তিনি তাঁদের পুরস্কার দেবেন। কিন্তু যারা শাস্তি পাবার যোগ্য তাদেরকে শাস্তি দেবেন।

শেষ বিচারের মানদণ্ড

ঈশ্বর সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ও দেবদূতদের বিচার করবেন। তিনি এই বিচারের ভার দিবেন তাঁর পুত্র যীশু খ্রিষ্টের হাতে। যীশু খ্রিষ্ট মানুষের বিচার করবেন মানুষেরই নিজ নিজ জীবন অর্থাৎ কে কীরকম কাজ করেছে সেই অনুসারে। প্রত্যাদেশ গ্রন্থে বলা হয়েছে: “আরও দেখলাম, বেশ বড় একটা সাদা সিংহাসন, আর সেই সিংহাসনে যিনি বসে আছেন, তাঁকেও। পৃথিবী ও আকাশ তাঁর সামনে থেকে ছুটে পালিয়ে গেল, কোনো চিহ্নই রইল না তাদের। তারপর আমি দেখতে পেলাম, সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে যত মৃত মানুষ, ছোট বড় সকলেই। সেই সময়ে কয়েকটি গ্রন্থ খোলা হলো, শেষে খোলা হলো আর একটি গ্রন্থ, সেটি হলো জীবনগ্রন্থ। মৃতেরা জীবনে যা-যা করেছে, এই সম্বন্ধে ওই গ্রন্থগুলোতে যা-কিছু লেখা ছিল, সেই অনুসারেই তখন তাদের বিচার করা হলো।” (প্রত্যাদেশ ২০:১১-১২)

মৃত্যুর পরে ছোট, বড় সকল মানুষকেই বিচারের জন্য যীশুর সামনে হাজির হতে হবে।

ভ্রাতৃপ্রেমের মানদণ্ডে যীশু খ্রিষ্ট আমাদের বিচার করবেন। জীবনকালে মানুষ যেসব ভালো বা মন্দ কাজ করেছে তা সবই জীবনগ্রন্থে লেখা হচ্ছে। সেই অনুসারে মানুষের পুরস্কার বা শাস্তি হবে। মথি রচিত মঙ্গলসমাচারে বলা হয়েছে যে, শেষ বিচারের দিনে মানব পুত্র অর্থাৎ যীশু খ্রিষ্ট সকল মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করবেন । মেষ ও ছাগ যেভাবে আলাদা করা হয় সেভাবে সব মানুষকে ভাগ করা হবে। যারা দীনদুঃখী ও অবহেলিত মানুষদের সেবা করেছে তাদেরকে তুলনা করা হবে মেষের সাথে। তাদের বসানো হবে ডান দিকে অর্থাৎ সম্মানজনক স্থানে। যারা দীনদুঃখী ও অবহেলিত মানুষদেরকে সেবা করে নি তাদেরকে তুলনা করা হয়েছে ছাগদের সাথে। তাদেরকে বসানো হবে বাম দিকে। পরে ডানদিকের মানুষদেরকে খ্রিষ্ট প্রশংসা করবেন ও তাদেরকে স্বর্গে পাঠাবেন। সেখানে তারা ঈশ্বরের সাথে চিরসুখের স্থানে বাস করবে। কিন্তু বামদিকের মানুষদেরকে তিনি তিরস্কার করবেন ও পাঠাবেন নরকে। সেখানে তারা শয়তানের সঙ্গে চিরদিন কষ্টভোগ করতে থাকবে। যেসব দেবদূত পাপ করেছেন, শেষ বিচারের দিনে তাঁদেরও বিচার করা হবে। এই ব্যাপারে সাধু পিতরের ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে,“যে-সমস্ত স্বর্গদূত পাপ করেছিলেন, পরমেশ্বর তো তাঁদের রেহাই দেন নি। তিনি তো তাঁদের নরকের গভীরে ঠেলে দিয়ে সেখানে তমসাময় যত গর্তের মধ্যেই তাঁদের ফেলে রেখেছেন। তাঁদের একদিন বিচার করা হবে বলে তাঁদের সেখানে বন্দী রাখাই হবে।”(২ পিতর ২:৪)

শেষ বিচারের জন্য প্রস্তুতি

আমরা চাই বা না-চাই শেষ বিচারে আমাদের হাজির হতেই হবে। এটি কেউ এড়িয়ে যেতে পারবে না। সেজন্যে আমাদের সকলকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এই প্রস্তুতির সময় শুরু হয় আমাদের দীক্ষাগ্রহণের সময় থেকে এবং চলতে থাকবে মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত। নিম্নলিখিত উপায়গুলো অবলম্বন করে আমরা শেষ বিচারের জন্য প্রস্তুত হতে পারব।

১। সকালে ঘুম থেকে জেগে প্রাতঃকালীন প্রার্থনা করা। সারাদিন ভালো থাকার জন্য প্রতিজ্ঞা করা। ঈশ্বরের কাছে শক্তি চাওয়া যেন সারাদিন ভালোপথে চলতে পারি।

২। নিজের কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে করা। 

৩। দিনে যতদূর সম্ভব কিছু ভালো কাজ, যেমন- ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান, তৃষ্ণার্তকে জল দান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, রোগীদের সেবা ইত্যাদি কাজ করা। 

৪। দিনে অন্তত একবার পবিত্র বাইবেল থেকে কিছু অংশ পাঠ করা। 

৫। পরিবারের সকলকে নিয়ে সান্ধ্য প্রার্থনা করা। সকলকে যে দিন পাওয়া না যায় সেদিন একাই প্রার্থনা করা। 

৬। রাতে ঘুমাবার আগে বিবেক পরীক্ষা করা। দিনে কোনো ব্যর্থতা বা কোনো পাপ করে থাকলে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া ও ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাওয়া। আগামী দিন যেন আর পাপ না হয় সেজন্য প্রতিজ্ঞা করা ও ঈশ্বরের কাছে শক্তি চাওয়া। যীশু আমাদের বন্ধু। তিনি আমাদের সকলকে স্বর্গে যাওয়ার পথ দেখানোর জন্য পৃথিবীতে এসেছেন। আমরা তাঁর পথে চললে অর্থাৎ তাঁর পরামর্শ অনুসারে জীবন যাপন করলে শেষ বিচারে পুরস্কার পাব।

গান গাই

যা-কিছু তুমি করেছ অবহেলিত ভাইয়ের প্রতি 

করেছ তা আমার প্রতি (৪)। 

খাদ্য দিয়েছ আমায় তুমি ক্ষুধিত যখন ছিলেম আমি 

তৃষিত যখন ছিলেম আমি তৃষ্ণা মিটালে আমায় তুমি।

কী শিখলাম

শেষ বিচারের সময় ভালো কাজের জন্য পুরস্কার হিসেবে স্বর্গে পাঠানো হবে। মন্দ কাজের জন্য শাস্তি হিসেবে নরকে পাঠানো হবে। শেষ বিচারের জন্য প্রস্তুতিস্বরূপ ভালো পথে চলার উপায়ও জানতে পারলাম ।

পরিকল্পিত কাজ

শেষ বিচারের পাঁচটি মানদণ্ড লেখ।

Content added By

শূন্যস্থান পূরণ কর

ক) আমাদের নিয়ে ঈশ্বরের একটা ___ আছে।

খ) তাঁর পুত্র যীশু খ্রিষ্ট হলেন আমাদের সামনে তাঁর ___ পথ।

গ) ঈশ্বর সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ও ___ বিচার করেন।

ঘ) শেষ বিচারের দিনে মানবপুত্র অর্থাৎ ___ সকল মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করেন।

ঙ) দিনে অন্তত একবার পবিত্র ___ থেকে একটু অংশ পাঠ করা।

 

বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশের মিল কর

ক) যারা শাস্তি পাবার যোগ্যক) পাঠাবেন নরকে।
খ) যারা দীনদুঃখী অবহেলিত মানুষদেরকে সেবা করে নিখ) আমাদের হাজির হতেই হবে।
গ) বামদিকের মানুষদেরকে তিনি তিরস্কার করেন ওগ) সূর্যের মতোই দীপ্তিমান হয়েই উঠবে।
ঘ) আমরা চাই বা না চাই শেষ বিচারেঘ) প্রস্তুত হতে পারবে।
ঙ) সেদিন ধার্মিকেরা তাদের পিতার সেই রাজ্যেঙ) তাদেরকে শাস্তি দেবেন।
 চ) তাদেরকে তুলনা করা হয়েছে ছাগদের সাথে।

 

সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

ক) পরিবারের সবাইকে নিয়ে কী করতে পারি 

খ) সবসময় ভালো থাকার জন্য কী করবে? ? 

গ) মথি লিখিত মঙ্গলসমাচারে মানুষকে কিসের সাথে তুলনা করা হয়েছে? 

ঘ) শেষ বিচার সম্পর্কে সাধু পিতরের ধর্মগ্রন্থে কী বলা হয়েছে?

 

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

ক) শেষ বিচারের জন্য কী কী উপায়ে প্রস্তুতি নেওয়া যায় তা উল্লেখ কর । 

খ) কীভাবে শেষ বিচারের মানদণ্ড নিরূপণ করা হবে।

Content added || updated By
পুরস্কার পাবার জন্য
বিচারের জন্য
ক্ষমা পাবার জন্য
অনুতপ্ত হবার জন্য
প্রার্থনা করতে পারি
ঘুমাতে পারি
আমোদপ্রমোদ করতে পারি
খেলাধুলা করতে পারি