পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - জ্যামিতিক আলোকবিজ্ঞান
Please, contribute to add content into জ্যামিতিক আলোকবিজ্ঞান.
Content

 আলোক পথ

   কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মি কোনো নির্দিষ্ট সময়ে যে পথ অতিক্রম করে তার সমতুল্য আলোক পথ বলতে বোঝায় ঐ নির্দিষ্ট সময়ে আলোক রশ্মি শূন্য মাধ্যমে যে পথ অতিক্রম করে তা। ধরা যাক, প্রতিসরণাঙ্কের কোনো মাধ্যমে আলো সময়ে । দৈর্ঘ্যের পথ অতিক্রম করল। ঐ মাধ্যমে আলোর বেগ c হলে, t=lc

এখন, শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ co হলে t সময়ে আলো শূন্য মাধ্যমে যে পথ অতিক্রম করবে তার দৈর্ঘ্য

lo=cot=colc =μl... (6.1)

সুতরাং আলোক পথ = মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক X মাধ্যমে আলো কর্তৃক অতিক্রান্ত পথের দৈর্ঘ্য।

ফার্মাটের নীতি

     1650 খ্রিস্টাব্দে পিয়ারে ফার্মাট আলোক-পথ সংক্রান্ত একটি নীতি আবিষ্কার করেন যা ফার্মাটের নীতি নামে পরিচিত। এই নীতির সাহায্যে আলোর সরল রৈখিক গতি, আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের সূত্র প্রতিপাদন করা যায়। ফার্মাটের নীতি হচ্ছে, কোনো আলোক রশ্মি যখন প্রতিফলন বা প্রতিসরণের সূত্র মেনে কোনো সমতল পৃষ্ঠে প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয় তখন তা সর্বদা ক্ষুদ্রতম পথ অনুসরণ করে ।

     ফার্মাটের নীতি থেকে দেখা যায় যে, আলোক রশ্মির কোনো বিন্দু থেকে এসে সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা প্রতিফলন বা প্রতিসরণের পর অন্য কোনো বিন্দুতে যেতে যে সময় লাগে তাও সর্বাপেক্ষা কম। সুতরাং আলোক রশ্মির ক্ষুদ্রতম পথ অনুসরণ করার অর্থই হচ্ছে ন্যূনতম সময় লাগা। ক্ষুদ্রতম পথ বা ন্যূনতম সময় সংক্রান্ত এই নীতি কেবলমাত্র সমতল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনো গোলীয় তলে যদি আলোর প্রতিফলন বা প্রতিসরণ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আলোক রশ্মি ক্ষুদ্রতম বা দীর্ঘতম পথ অনুসরণ করবে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে পথ হবে স্থির। সমতল বা গোলীয় তল উভয়ের জন্যই ফার্মাটের নীতিকে সার্বিকভাবে বিবৃত করা যায়, 

     আলোক রশ্মি এক বিন্দু থেকে প্রতিফলন বা প্রতিসরণের পর আর এক বিন্দুতে যেতে যে পথ অনুসরণ করবে তা হবে চরম বা অবম বা স্থির দৈর্ঘ্যের পথ এবং এই পথ অতিক্রম করতে সর্বাপেক্ষা অধিক অথবা কম সময় লাগবে।

Content added By

    ৬.১ চিত্রে M1M2 একটি সমতল দর্পণ। একটি আলোক রশ্মি P বিন্দু থেকে PO পথে এসে দর্পণের O বিন্দু হতে OQ পথে প্রতিফলিত হয়ে Q বিন্দুতে পৌঁছাল। P ও Q বিন্দু থেকে দর্পণের উপর PM1 ও QM2 লম্ব টানা হলো। আপতন বিন্দু O তে NO লম্ব টানা হয়। ধরা যাক, PM1 = h1 এবং QM2 = h2, OM1 = x, M1M2 = d.

.. OM2 = (d - x )

সুতরাং

   এখন ধরা যাক, P বিন্দু থেকে POQ পথে Q বিন্দুতে আসতে আলোক রশ্মির প্রয়োজনীয় সময় t এবং আলোর বেগ c। আলোক রশ্মিটির অতিক্রান্ত পথ l = PO + OQ = l1+ l2

 এখন, l1=h12+x2l1=h22+(dx)2l1=h12+x2+l1=h22+(dx)2

  

চিত্র :৬.১

   ফার্মাটের নীতি অনুসারে, দর্পণ তলে O বিন্দুটির অবস্থান এমন হবে যেন P বিন্দু থেকে Q বিন্দুতে পৌঁছাতে আলোর ভ্রমণকাল সর্বাপেক্ষা কম বা বেশি অথবা স্থির থাকবে। অন্য কথায়, আলোক রশ্মির মোট পথ l সর্বাপেক্ষা কম বা সর্বাপেক্ষা বেশি অথবা স্থির থাকবে। সকল ক্ষেত্রেই ক্যালকুলাস থেকে এই শর্তের গাণিতিক রূপ আমরা পাই,

 dldx=0

অতএব,

    অর্থাৎ আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান। এটাই প্রতিফলনের দ্বিতীয় সূত্র। আবার আলোকপথ POQ-এর মান সর্বাপেক্ষা কম হবে যখন PO এবং OQ সমেত তলটি M1M2 তলের উপর লম্ব হবে। পুনরায় যেহেতু অঙ্কন অনুসারে ON রেখাটি M1 M2 তলের উপর অভিলম্ব, সুতরাং আপতিত রশ্মি PO, প্রতিফলিত রশ্মি oQ এবং আপতন বিন্দু O-তে M1M2 তলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব NO একই সমতলে থাকবে। এটাই প্রতিফলনের প্রথম সূত্র। সুতরাং ফার্মাটের ন্যূনতম পথ বা ন্যূনতম সময়ের নীতি থেকে আলোর প্রতিফলনের সূত্রগুলো প্রতিপাদিত হলো।

 

ফার্মাটের নীতি ও আলোর প্রতিসরণ Fermat's Principle and Refraction of Light

    ৬.২ চিত্রে XY হচ্ছে দুটি প্রতিসারক মাধ্যমের বিভেদ তল। একটি আলোক রশ্মি প্রথম মাধ্যমের P বিন্দু থেকে PO পথে এসে বিভেদতলের O বিন্দুতে আপতিত হলো এবং সেখান থেকে O2 পথে দ্বিতীয় মাধ্যমের Q বিন্দুতে পৌঁছাল NON' হলো O বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব। সুতরাং আপতন কোণ PON = i এবং প্রতিসরণ কোণ N' OQ = r। P ও Q বিন্দু হতে বিভেদতলের উপর যথাক্রমে PR ও QS লম্ব টানা হলো।

চিত্র :৬.২

 ধরা যাক, PR = h1, QS =h2, OR =x, RS = d এবং OS = ( d- x ) । 

  প্রথম মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক  μ1এবং দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক μ2 | প্রথম মাধ্যমে আলোর বেগ C1 দ্বিতীয় মাধ্যমে আলোর বেগ C2 এবং শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ C0। প্রথম মাধ্যমে আলোক রশ্মির জ্যামিতিক পথ, PO = l1 এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে জ্যামিতিক পথ, OQ = l2

  সুতরাং মোট জ্যামিতিক পথ POQ = l1 + l2 এবং মোট আলোক পথ,  =μ1l1μ2 |2

 অতএব, আলোকরশ্মি P বিন্দু থেকে O বিন্দুতে পৌঁছতে প্রয়োজনীয়

অতএব,

sin i=ROPO=xh12+x2sin r=SOQO=xh22+(dx)2. (6.2) 

সুতরাং (6.2) সমীকরণ দাঁড়ায়,

μ1 sin i=μ2 sin r ..(6.3)

এটাই প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্র বা স্নেলের সূত্র ।

ফার্মাটের নীতি অনুসারে আলোক পথ তখনই সর্বনিম্ন হবে যখন PO এবং OQ রশ্মিম্বর একই সমতলে থাকবে এবং যা XY তলের উপর লম্ব হবে। যেহেতু XY তলের আপতন বিন্দু O-তে অঙ্কিত NON' রেখা XY তলের উপর অভিলম্ব। সুতরাং আপতিত PO রশ্মি, প্রতিসৃত o রশ্মি ও আপতন বিন্দু O-তে অঙ্কিত NON' অভিলম্ব একই সমতলে থাকে আর এটাই প্রতিসরণের প্রথম সূত্র । 

   অতএব ফার্মাটের ন্যূনতম সময় বা ন্যূনতম পথ থেকে প্রতিসরণের সূত্রগুলো প্রতিপাদিত হলো।

Content added || updated By

     দুটি গোলীয় অথবা একটি গোলীর ও একটি সমতল অথবা দুটি বেলনাকৃতি অথবা একটি বেলনাকৃতি ও একটি সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ কোনো স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে লেন্স বলে।

   ৬.৪ চিত্রে ক ও খ দুটি গোলীয় লেন্স। এই অধ্যায়ে আমরা গোলীয় লেন্স নিয়ে আলোচনা করব। লেন্স সাধারণত কাচ, কোয়ার্টজ, প্লাস্টিক ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হয়। লেন্সের পৃষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে একটি সমতল ও একটি গোলক পৃষ্ঠের অংশ হতে পারে অথবা দুটিই গোলকের অংশ হতে পারে ।

লেন্স প্রধানত দু'রকমের হতে পারে; যথা-

 ক. স্কুলমধ্য বা উত্তল বা অভিসারী লেন্স (Convex lens) এবং 

 খ. ক্ষীণমধ্য বা অবতল বা অপসারী লেন্স (Concave lens)।

  স্থূলমধ্য বা উত্তল বা অভিসারী লেন্স : যে লেন্সের মধ্যভাগ মোটা ও প্রাপ্ত সরু তাকে স্কুলমধ্য লেন্স বলে। স্কুল মধ্য লেন্সে আলোক রশ্মি উত্তল পৃষ্ঠে আপতিত হয় বলে তাকে উত্তল লেন্স বলে। এই লেন্স সাধারণত এক গুচ্ছ আলোক রশ্মিকে অভিসারী করে থাকে বলে তাকে অভিসারী লেন্সও বলা হয় [চিত্র ৬.৪ (ক)]।

   ক্ষীণমধ্য বা অবতল বা অপসারী লেন্স: যে লেন্সের মধ্যভাগ সরু ও প্রাপ্তের দিক মোটা তাকে ক্ষীণমধ্য লেন্স বলে। ক্ষীণমধ্য লেন্সে আলোক রশ্মি অবতল পৃষ্ঠে আপতিত হয় বলে তাকে অবতল লেন্স বলে। এই লেন্স সাধারণত এক গুচ্ছ আলোক রশ্মিকে অপসারী করে থাকে বলে তাকে অপসারী লেন্সও বলা হয়। চিত্র ৬.৪ (খ) ]। তলের আকৃতির উপর নির্ভর করে প্রত্যেক প্রকার লেন্স আবার তিন ধরনের হতে পারে।

চিত্র :৬.৪ ও ৬.৫

 ক. উত্তল লেন্স :

১. উভোত্তল বা দ্বি-উত্তল লেন্স (Double convex lens or bi-convex lens) : 

   যে লেন্সের দুটি তলই উত্তল তাকে উভোত্তল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৫ (ক)]। 

২. সমতলোত্তল লেন্স (Plano convex lens) : 

   যে লেন্সের একটি তল সমতল ও অপরটি উত্তল তাকে সমতলোত্তল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৫ (খ)]। 

৩. অবতলোত্তল লেন্স (Concavo-convex lens) :

    যে উত্তল লেন্সের একটি তল উত্তল ও অপরটি অবতল তাকে অবতলোত্তল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৫ (গ)]।

খ. অবতল লেন্স :

১. উভাৰতল বা দ্বি-অবতল লেন্স (Double concave or bi-concave lens ) :

  যে লেন্সের দুই তলই অবতল তাকে উভাবতল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৬ (ক)]।

চিত্র :৬.৬

    ২. সমতলাতল লেন্স (Plano concave lens) : যে লেন্সের একটি তল সমতল ও অপরটি অবতল তাকে সমতলাবতল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৬ (খ)]।

   ৩. উত্তলাতল লেন্স (Convexo-concave lens) : যে অবতল লেন্সের একটি তল অবতল ও অপরটি উত্তল তাকে উত্তলাবতল লেন্স বলে [চিত্র ৬.৬ (গ)]।

লেন্স সম্পর্কিত কতিপয় প্রয়োজনীয় রাশি

১. লেন্সের প্রথম ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠ : 

  যে পৃষ্ঠ দিয়ে আলোক রশ্মি লেন্সের মধ্যে প্রবেশ করে অর্থাৎ লেন্সের যে পৃষ্ঠে আলোক রশ্মি আপতিত হয় তাকে লেন্সের প্রথম পৃষ্ঠ বলে। আর যে পৃষ্ঠ থেকে আলোক রশ্মি বেরিয়ে যায় তাকে লেন্সের দ্বিতীয় পৃষ্ঠ বলে। যে লেন্সে দুই পৃষ্ঠের মধ্যবর্তী দূরত্ব খুব কম তাকে সরু লেন্স বলে। ৬.৭ চিত্রে 1 ও 2 যথাক্রমে লেন্সের প্রথম ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠ।

২. বক্রতার কেন্দ্র (Centre of curvature):

    লেন্সের সংজ্ঞা থেকে দেখা যায় যে, এর প্রত্যেকটি পৃষ্ঠ এক একটি গোলকের অংশ। সুতরাং লেন্সের বক্রতার কেন্দ্র দুটি। লেন্সের কোনো পৃষ্ঠ যে গোলকের অংশ সেই গোলকের কেন্দ্রকে লেন্সের ঐ পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্র বলে। ৬.৭ চিত্রে C1 ও C2 লেন্সের বক্রতার কেন্দ্র।

চিত্র :৬.৭

     ৩. বক্রতার ব্যাসার্ধ (Radius of curvature) : লেন্সের বক্রতার ব্যাসার্ধ দুটি। লেন্সের কোনো পৃষ্ঠ যে গোলকের অংশ সেই গোলকের ব্যাসার্ধকে লেন্সের ঐ পৃষ্ঠের বক্রতার ব্যাসার্ধ বলে। ৬.৭ চিত্রে r1 ও r2 যথাক্রমে লেন্সের প্রথম ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠের বক্রতার ব্যাসার্ধ।

  ৪. প্রধান অক্ষ (Principal axis) : লেন্সের উভয় পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে গমনকারী সরলরেখাকে প্রধান অক্ষ বলে। লেন্সের একটি পৃষ্ঠ সমতল ও অপর পৃষ্ঠ গোলীয় হলে গোলীয় পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্র থেকে সমতল পৃষ্ঠের উপর অভিলম্বই হবে লেন্সের প্রধান অক্ষ । ৬.৭ চিত্র C1 ও C2 সরলরেখা লেন্সের প্রধান অক্ষ ।

 ৫. প্রধান ফোকাস (Principal focus) : লেন্সের দুটি প্রধান ফোকাস থাকে; যথা-

ক. প্রথম প্রধান ফোকাস (First principal focus) ও

খ. দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস (Second principal focus)।

চিত্র :৬.৮

ক. প্রথম প্রধান ফোকাস, F1

   উত্তল লেন্সের ক্ষেত্রে প্রধান অক্ষের উপরস্থ যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে নিঃসৃত অপসারী রশ্মিগুচ্ছ লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল হয়ে চলে যায় সেই বিন্দুকেই উত্তল লেন্সের প্রথম-প্রধান ফোকাস বলে [চিত্র ৬.৮ (ক)] । অবতল লেন্সের ক্ষেত্রে প্রধান অক্ষের উপরস্থ যে নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমুখী অভিসারী রশ্মিগুচ্ছ লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল হয়ে চলে যায় তাকে অবতল লেন্সের প্রথম প্রধান ফোকাস বলে [চিত্র ৬.৮ (খ)]।

   লেন্সের প্রধান অক্ষের উপর যে বিন্দু থেকে আলোক রশ্মি নির্গত হলে (উত্তল লেন্সে) বা যে বিন্দু অভিমুখে আলোক রশ্মি আপতিত হলে (অবতল লেলে) প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরালে নির্গত হয় তাকে প্রথম প্রধান ফোকাস বলে।

খ. দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস, F2 : 

   প্রধান অক্ষের সমান্তরাল একগুচ্ছ আলোক রশ্মি উত্তল লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের উপর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয় [চিত্র ৬.৯ (ক)]। অপরপক্ষে অবতল লেন্সে দেখা যায় প্রতিসরণের উপর রশ্মিগুলো এমনভাবে নির্গত হয় যে এগুলোকে পেছন দিকে বাড়ালে প্রধান অক্ষকে একটি বিন্দুতে ছেদ করে, অর্থাৎ প্রতিসরিত রশ্মিগুচ্ছ একটি বিন্দু থেকে নিঃসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়। এই বিন্দুই হচ্ছে দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস [চিত্র ৬.৯ (খ)]।

চিত্র :৬.৯

  লেন্সের প্রধান অক্ষের সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের উপর যে বিন্দুতে মিলিত হয় (উত্তল লেলে) বা যে বিন্দু থেকে নিঃসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় (অবতল লেন্সে) সেই বিন্দুকে লেলের দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস বলে । ৬.৯ চিত্রে F2 দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস ।

   লেন্সে বিম্ব গঠনের জন্য দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বলে লেদের প্রধান ফোকাস বলতে দ্বিতীয় প্রধান ফোকাসকেই বোঝায়।

৬. আলোক কেন্দ্র (Optical centre) : 

    কোনো আলোক রশ্মি যদি কোনো লেন্সের এক পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে নির্গত হওয়ার সময় আপতিত রশ্মির সমান্তরালভাবে নির্গত হয় তাহলে সেই রশ্মি লেলের প্রধান অক্ষের উপর যে বিন্দু দিয়ে যায় সেই বিন্দুকে লেলের আলোক কেন্দ্র বলে। অর্থাৎ লেন্সের প্রধান অক্ষের উপরস্থ যে বিন্দুর মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মি গেলে প্রতিসরণের ফলে এর দিকের কোনো পরিবর্তন হয় না সেই বিন্দুকে লেন্সের আলোক কেন্দ্র বলে।

চিত্র :৬.১০

    ৬.১০ চিত্রে S'Q রশ্মি লেন্সে আপতিত হয়ে RS পথে বেরিয়ে গেলে QR রশ্মি প্রধান অক্ষকে O বিন্দুতে ছেদ করে। O লেন্সের আলোক কেন্দ্র। সরু লেন্সের ক্ষেত্রে S'Q, QR ও RS একই সরলরেখায় থাকে। লেন্সের আকৃতির উপর নির্ভর করে আলোক কেন্দ্র লেন্সের ভেতরে বা বাইরে হতে পারে।

     ৭. ফোকাস দূরত্ব (Focal length) : আলোক কেন্দ্র থেকে প্রধান ফোকাস বা দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস পর্যন্ত দূরত্বকে লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বলে। ফোকাস দূরত্বকে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আলোক কেন্দ্র থেকে প্রথম প্রধান ফোকাসের দূরত্বকে প্রথম ফোকাস দূরত্ব f1 আর দ্বিতীয় প্রধান ফোকাসের দূরত্বকে দ্বিতীয় ফোকাস দূরত্ব f2 বলে। লেন্সের চারদিকে একই সমসত্ত্ব মাধ্যম থাকলে এই দুই ফোকাস দূরত্বের মান সমান হয়।

Content added || updated By

     কোনো প্রতিসারক মাধ্যম দুটি গোলীয় পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ হলে লেন্স গঠিত হয়। সুতরাং লেন্সের মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মি গমনের সময় দুবার প্রতিসরিত হয়। একবার লেঙ্গে প্রবেশের সময় ও দ্বিতীয়বার লেন্স থেকে বের হবার সময়।

চিত্র :৬.১১

     ধরা যাক, LOL' একটি সরু লেন্স [চিত্র ৬.১১]। লেন্সটি বায়ু মাধ্যমে অবস্থিত। লেন্সের উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক μ। ধরা যাক, লেন্সের প্রধান অক্ষের উপর P একটি বিন্দু লক্ষ্যবস্তু। P বস্তু থেকে নিঃসৃত একটি আলোক রশ্মি প্রধান অক্ষ PO বরাবর A1 বিন্দুতে আপতিত হয়ে সোজাসুজি প্রতিসরিত হয়। অপর আলোকরশ্মি লেন্সের প্রথম পৃষ্ঠে প্রতিসরিত হয়ে প্রধান অক্ষের উপরস্থ Q' বিন্দুতে বিশ্ব গঠন করে। সুতরাং লেন্সের দ্বিতীয় পৃষ্ঠের বেলায় আলো Q' বিন্দু থেকে আসছে বলে মনে হয়। সুতরাং Q' হবে দ্বিতীয় পৃষ্ঠের ক্ষেত্রে অবাস্তব লক্ষ্যবস্তু। রশ্মি দুটি দ্বিতীয় পৃষ্ঠে প্রতিসরণের পর Q বিন্দুতে প্রকৃতপক্ষে মিলিত হয় । সুতরাং Q হচ্ছে P বিন্দুর চূড়ান্ত বাস্তব বিশ্ব [চিত্র 6.11] ।

     এখন লেন্সের প্রথম পৃষ্ঠে প্রতিসরণ বিবেচনা করলে এবং সরু লেন্স বলে এর পুরুত্ব উপেক্ষা করলে প্রথম পৃষ্ঠের মেরু A1, এবং লেন্সের আলোক কেন্দ্র O কে একই বিন্দু O বিবেচনা করা যায় । অতএব,

লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব, OP = u.. (6.8)

বিম্বের দূরত্ব, OQ' = v'.. (6.9)

(6.8) সমীকরণ থেকে আমরা পাই,

μv`+1u=μ1r1.. (6.10)

 এখানে r1 লেন্সের প্রথম পৃষ্ঠের বক্রতার ব্যাসার্ধ।

 আবার, লেন্সের দ্বিতীয় পৃষ্ঠে প্রতিসরণের সময় আলো লেন্স থেকে বায়ুতে প্রবেশ করেছে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় পৃষ্ঠের মেরু A2 এবং লেন্সের আলোক কেন্দ্র O কে একই বিন্দু O বিবেচনা করে

   লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব, OQ' = -v' [ :-অবাস্তব লক্ষ্যবস্তু ]

  বিম্বের দূরত্ব, OQ = v

(6.9) সমীকরণ থেকে আমরা পাই,

1v+μv`+=1μr2.. (6.11)

 এখানে, r2 লেন্সের দ্বিতীয় পৃষ্ঠের বক্রতার ব্যাসার্ধ। 

সমীকরণ (6.10) ও (6.11) যোগ করে আমরা পাই,

1v+1u+=μ1r1+1μr21v+1u+=μ1(1r1+1r2).. (6.12)

    কোনো লেন্সের সামনে লক্ষ্যবস্তু অসীম দূরত্বে থাকলে যেখানে বিম্ব গঠিত হয় সেটি লেন্সের প্রধান ফোকাস এবং আলোক কেন্দ্র থেকে এর দূরত্বকে ফোকাস দূরত্ব বলে।

   অতএব u =  হলে v = f হয়। সুতরাং (6.12) সমীকরণ ব্যবহার করে আমরা পাই,

1f+1=μ1(1r11r2)1f=μ1(1r11r2).. (6.13)

    এই সমীকরণকে লেন্সের ফোকাস দূরত্বের সাধারণ সমীকরণ বলে। লেন্স তৈরির কাজে এই সমীকরণ ব্যবহার করা হয় বলে একে লেন্স তৈরির সমীকরণ বা প্রস্তুতকারকের সমীকরণও বলা হয় ।

Content added || updated By
বাস্বত, উল্ট ও বড়
অবাস্তব, সিধা ও ছোট
বাস্তব, উল্ট এং অত্যন্ত ক্ষুদ্র
অবাস্তব , সিধা ও বড়
পুরাতন চিহ্নরীতি অনুযায়ী ইহার ফোকাস দূরত্ব ধনাত্মক
ইহার ক্ষমতা ধনাত্মক বিবেচিত হয়
লেন্সে লক্ষ্যবস্তুর প্রতিবিম্ব সর্বদা বস্তুর চেয়ে ছোট হয়
লেন্সে লক্ষ্যবস্তুর প্রতিবিম্ব অলীক ও সিধা হয়
লেন্সে লক্ষ্যবস্তুর প্রতিবিম্ব বাস্তব ও সিধা হয়
লক্ষ্যবস্তুর প্রতিবিম্ব অবাস্তব ও ছোট হয়
লেন্সে লক্ষ্যবস্তুর অবাস্তব ও ছোট হয়
লক্ষ্যবস্তুর প্রতিবিম্ব অবাস্তব, সিধা ও ছোট হয়
বস্তুর চাইতে বড়
লেন্সের পিছনে অবস্থান নেয়
বস্তুর চাইতে ছোট এবং উল্টো হয়
লেন্সের সামনে অবস্থান করে এবং বস্তুর চেয়ে ছোট হয়
Please, contribute to add content into লেন্সের ফোকাস দূরত্ব ও ক্ষমতা নির্ণয়.
Content

     যে সকল যন্ত্র কোনো বস্তু দেখার ব্যাপারে আমাদের চোখকে সাহায্য করে তাদেরকে বীক্ষণ যন্ত্র বা দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র বলে। অণুবীক্ষণ যন্ত্র, দূরবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র। 

    অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ : যে যন্ত্রের সাহায্যে চোখের নিকটবর্তী অতিক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখা যায় তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ বলে।

অণুবীক্ষণ যন্ত্র দু ধরনের হয়। যথা—

   ১. সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা বিবর্ধক কাচ (Simple Microscope or Magnifying glass) ও 

  ২. যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ (Compound microscope)

 

সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ বা বিবর্ধক কাচ

    করে দেখো : তোমার জীববিজ্ঞানের বাক্সে সাধারণত একটি উত্তল লেন্স থাকে। না থাকলে স্টেশনারি দোকান থেকে একটি ম্যাগনেফাইং গ্লাস জেজাগাড় করে নাও। লেন্সটি তোমার বইয়ের লেখার উপর ধর। এখন এটি উপর নিচে উঠানামা করে দেখো। লেখাগুলো বড় দেখা যাচ্ছে কি?

    কোনো উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে কোনো বস্তুকে স্থাপন করে লেন্সের অপর পাশ থেকে বস্তুটিকে দেখলে বস্তুটির একটি সোজা, বিবর্ধিত ও অবাস্তব বিশ্ব দেখা যায়। এখন এই বিশ্ব চোখের যত কাছে গঠিত হবে চোখের বীক্ষণ কোণও তত বড় হবে এবং বিশ্বটিকেও বড় দেখাবে। 

চিত্র :৬.১২

কিন্তু বিশ্ব চোখের নিকট বিন্দুর চেয়ে কাছে গঠিত হলে সেই বিম্ব আর স্পষ্ট দেখা যায় না। সুতরাং বিশ্ব যখন চোখের নিকট বিন্দু অর্থাৎ স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্বে গঠিত হয় তখনই তা খালি চোখে সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়। ফলে যে সমস্ত লেখা বা বস্তু চোখে পরিষ্কার দেখা যায় না তা স্পষ্ট ও বড় করে দেখার জন্য স্বল্প ফোকাস দূরত্বের একটি উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত ফ্রেমে আবদ্ধ এই উত্তল লেন্সকে বিবর্ধক কাচ বা পঠন কাচ বা সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে [চিত্র :৬.১২]। এই যন্ত্রে খুব বেশি বিবর্ধন পাওয়া যায় না।

    এর বিবর্ধনের রাশিমালা,

M=1+Df

  এখানে, D = চোখের স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব। সুস্থ ও স্বাভাবিক চোখের জন্য, D = 25 cm

    f= লেন্সের ফোকাস দূরত্ব। 

যৌগিক বা জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ

     লক্ষ্যবস্তু খুব ছোট হলে সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র তাকে যথেষ্ট শিবর্ধিত করতে পারে না। সেক্ষেত্রে জটিল বা যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। একটি যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের গঠন ও কার্যনীতি নিচে বর্ণনা করা হলো।

গঠন : 

    এই যন্ত্রে দুখানি উত্তল লেন্স একটি বাস্তব নলের দুই প্রান্তে একই অক্ষ বরাবর বসানো থাকে। লক্ষ্যবস্তুর কাছে যে লেন্সখানি থাকে তাকে অভিলক্ষ্য (O) বলে [চিত্র : ৬.১৩]। এর ফোকাস দূরত্ব ও উন্মেষ অপেক্ষাকৃত ছোট। অপর লেন্সটিকে অভিনেত্র (E) বলে। অভিনেত্রের ফোকাস দূরত্ব ও উন্মেষ অপেক্ষাকৃত বড়। লক্ষ্যবস্তু দেখার জন্য অভিনেত্রের পিছনে চোখ রাখতে হয়। অভিনেত্রটি মূল নলের ভিতর একটি টানা নলের মধ্যে বসানো থাকে। টানা নলটি ওঠা-নামা করে অভিনেত্র ও অভিলক্ষ্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিবর্তন করা যায়। মূল নলটি একটি খাড়া দণ্ডের (B) সাথে লাগানো থাকে। একটি স্কুর (R) সাহায্যে মূল নলটিকে লক্ষ্যবস্তু থেকে দূরে যা কাছে সরানো যায়। লক্ষ্যবস্তুকে একটি পাটাতনের (S) উপর রাখা হয় এবং একটি অবতল দর্পণের (M) সাহায্যে একে প্রয়োজনানুসারে আলোকিত করা হয়।

ক্রিয়া: 

   যন্ত্রটির নল নিচে নামিয়ে অভিলক্ষ্যকে বস্তুর খুব কাছাকাছি আনা হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্ট ও বিবর্ধিত বিম্ব দেখা না যায় ততক্ষণ নলটিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠানো হয়।

     প্রকৃতপক্ষে অভিলক্ষ্য অভিনেত্র দুটি একাধিক লেন্সের সমন্বয়ে গঠিত হলেও আমাদের আলোচনার সুবিধার জন্য এদের প্রত্যেককে অল্প ফোকাস দূরত্বের উত্তল লেন্স হিসেবে কল্পনা করা হয়।

চিত্র :৬.১৩

     ৬.১৪ চিত্রে যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আলোক ক্রিয়া বোঝানো হয়েছে। O ও E যথাক্রমে অভিলক্ষ্য ও অভিনেত্র। অতি ক্ষুদ্র বস্তু PQ-কে অভিলক্ষ্যের প্রধান ফোকাস Fo-এর ঠিক বাইরে স্থাপন করা হয়। এই অবস্থায় বস্তু থেকে নিঃসৃত আলোক রশ্মি অভিলক্ষ্য দ্বারা প্রতিসৃত হওয়ার পর বাস্তব, উল্টো ও বিবর্ধিত বিশ্ব P1Q1 । গঠন করে। এখন P1Q1 থেকে আলোক রশ্মি অভিনেত্র প্রতিসৃত হয় অর্থাৎ P1Q1  অভিনেত্র লেন্সের জন্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে কাজ করে। এবার অভিনেত্রকে সরিয়ে এমন স্থানে রাখা হয় যেন P1Q1  অভিনেত্রের প্রধান

চিত্র : ৬.১৪

   ফোকাস Fe-এর ভিতরে পড়ে। এই অবস্থায় আলোক রশ্মি প্রতিসৃত হওয়ার পর একটি অবাস্তব, P1Q1-এর সাপেক্ষে সোজা ও বিবর্ধিত বিশ্ব P2Q2 গঠিত হয়। অভিলক্ষ্য ও অভিনেত্রের মধ্যে দূরত্বও এমন রাখা হয় যেন P2Q2  বিশ্ব চোখের নিকট বিন্দুতে গঠিত হয়। ফলে দর্শক বিনাক্লেশে PQ লক্ষ্যবস্তুর উল্টো ও বিবর্ধিত বিশ্ব P2Q2  স্পষ্ট দেখতে পান।

 বিবর্ধন : বিবর্ধন বলতে বিশ্বের আকার এবং বস্তুর আকারের অনুপাতকে বোঝায়। এই যন্ত্রে বিশ্ব দুবার বিবর্ধিত হয়। একবার অভিলক্ষ্য ও আর একবার অভিনেত্র দ্বারা। যন্ত্রের মোট বিবর্ধন M হলে,

 M= বিম্বের আকার/লক্ষ্যবস্তুর আকার

 M=P2Q2PQ=P1Q1PQ×P2Q2P1Q1

:- . M=m1 x m2…(6.15)

এখানে m1 ও m2 যথাক্রমে অভিলক্ষ্য ও অভিনেত্র লেন্সের বিবর্ধনের পরিমাণ

ধরা যাক,

 u1 = অভিলক্ষ্য থেকে PQ লক্ষ্যবস্তুর দূরত্ব

 V1 = অভিলক্ষ্য থেকে Pili বিশ্বের দূরত্ব

fo = অভিলক্ষ্য লেন্সের ফোকাস দূরত্ব

u2 = অভিনেত্র থেকে P11-এর দূরত্ব

V2 = অভিনেত্র থেকে P2Q2 এর দূরত্ব

fo = অভিনেত্র লেন্সের ফোকাস দূরত্ব

 এখন, লেন্সের সাধারণ সমীকরণ থেকে অভিলক্ষ্যের জন্য,

1v1+1u1=1fo

:-m1=1-v1fo...  (6.16)

একইভাবে অভিনেত্রের জন্য

m2=-v2u2=1-v2fe.. (6.17)

সুতরাং (6.15) সমীকরণ থেকে আমরা পাই,

M=1-v1fo1-v2fe

কিন্তু অভিনেত্রে (উত্তল লেন্সে) অবাস্তব বিশ্বের ক্ষেত্রে v2 ঋণাত্মক ও fe ধনাত্মক

সুতরাং M=-v1u11+Dfe

কিন্তু চূড়ান্ত বিশ্ব চোখের নিকট বিন্দুতে গঠিত হলে v2 = D  এখানে, D = স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব

M=-v1u11+Dfe... (6.19) 

Content added || updated By

   যে যন্ত্রের সাহায্যে বহু দূরের বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখা যায় তাকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা টেলিস্কোপ বা দূরবীণ বলে। মূলনীতি : বহুদূরে অবস্থিত বস্তু থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছকে একাধিক লেন্স বা দর্পণে প্রতিসরিত বা প্রতিফলিত করে বস্তুর একটি অবাস্তব ও সোজা বিশ্ব গঠন করা হয়। সাধারণত লেন্স বা দর্পণগুলোকে এমনভাবে সমন্বয় করা হয় যাতে বিশ্বটি চোখের নিকট বিন্দুতে গঠিত হয়।


দর্পণ ও লেন্সের সাধারণ সমীকরণ

1v+1u=1g

এখানে u = দর্পণ বা লেন্স থেকে বস্তুর দূরত্ব

 v = দর্পণ বা লেন্স থেকে বিশ্বের দূরত্ব

f = দর্পণ বা লেন্সের ফোকাস দূরত্ব 

   দর্পণ অবতল হোক বা উত্তল হোক, নেল উত্তল হোক বা অবতল হোক, বিশ্ব বাস্তব হোক বা অবাস্তব হোক, বিবর্ধিত হোক বা না হোক, ফোকাস দূরত্ব ও লক্ষ্যবস্তুর দূরত্বের সাথে বিশ্বের দূরত্বের সম্পর্ক হচ্ছে এটি এবং বিবর্ধনের রাশিমালা হচ্ছে m=-vu

দূরবীক্ষণ যন্ত্র সাধারণত দু'ধরনের হয়। যথা—

ক. প্রতিসারক দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রিফ্রাক্টিং টেলিস্কোপ (Refracting Telescope) ও 

খ. প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রিফ্লেক্টিং টেলিস্কোপ (Reflecting Telescope)

     যে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অভিলক্ষ্যে বড় উন্মেষ ও ফোকাস দূরত্বের লেন্স ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতিসারক দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলে। প্রতিসারক দূরবীক্ষণ যন্ত্রকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা— 

১. নভো বা জ্যোতিষ দূরবীক্ষণ যন্ত্র (Astronomical telescope)

২. ভূ-দূরবীক্ষণ যন্ত্র (Terrestrial telescope) ।

৩. গ্যালিলীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র ( Galilean telescope)। 

  যে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অভিলক্ষ্যে অবতল দর্পণ ব্যবহার করা হয় তাকে প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলে।

প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবার তিন ধরনের হয়। যথা—

 ১. নিউটনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র (Newton's telescope), 

 ২. হার্সেলের দূরবীক্ষণ যন্ত্র (Harchel's telescope) ও

 ৩. গ্রেগরীর দূরবীক্ষণ যন্ত্র (Gregory's telescope)।

নিচে আমরা একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের গঠন ও কার্যপ্রণালি আলোচনা করছি।

Content added || updated By

   প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা রিফ্লেক্টিং টেলিস্কোপ (Reflecting Telescope)

প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্রে অভিলক্ষ্য হিসেবে দর্পণ ব্যবহার করা হয়। ১৬৬৩ সালে বিজ্ঞানী গ্রেগরী সর্বপ্রথম এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। তবে সবচেয়ে প্রচলিত প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৬৮ সালে। নিচে এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের বর্ণনা দেওয়া হলো।

গঠন : 

  একটি ধাতব নলের এক প্রান্তে একটি বড় উন্মেষবিশিষ্ট অবতল দর্পণ লাগিয়ে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়। অবতল দর্পণটি যন্ত্রের অভিলক্ষ্যের কাজ করে। নলের খোলা মুখ লক্ষ্যবস্তুর দিকে রাখা হয় [চিত্র ৬.১৫] অবতল দর্পণের প্রধান অক্ষের উপর প্রধান অক্ষের সাথে 45° কোণে একটি সমতল দর্পণ M, অবতল দর্পণের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে স্থাপন করা হয়। সমতল দর্পণের সামনে নলের গায়ে বসানো উত্তল লেন্স যন্ত্রের অভিনেত্র হিসেবে কাজ করে ।

চিত্র :৬.১৫

   মূলনীতি : 

বহু দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মিসমূহ অবতল প্রতিফলকে প্রতিফলিত হলে প্রতিফলকের o ফোকাস তলে একটি বাস্তব, উল্টো ও খর্বিত বিম্ব গঠন করতো যদি সমতল দর্পণটি এর অবস্থানে থেকে প্রতিফলিত রশ্মিকে বাধা না দিত। কিন্তু সমতল দর্পণ প্রতিফলিত রশ্মিকে বাধা দেওয়ায় এখন বিশ্ব সমতল দর্পণের সম্মুখে গঠিত হয়। অভিনেত্র লেন্সটিকে এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন দর্পণে গঠিত বিম্বটি এর প্রধান ফোকাসে থাকে ফলে এর একটি অবাস্তব, সোজা ও বিবর্ধিত বিশ্ব অসীম দূরত্বে গঠিত হয়। দেখার সুবিধের জন্য অভিনেত্র লেন্সটিকে একটু সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে চোখের নিকট বিন্দুতে বিশ্ব গঠন করা হয়। বিবর্ধন : দূরবীক্ষণ যন্ত্রের বিবর্ধন বলতে বিশ্ব ও লক্ষ্যবস্তুর দ্বারা চোখে সৃষ্ট কোণের অনুপাতকে বোঝায়। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের বিবর্ধন M হলে, অসীমে গঠিত বিশ্বের ক্ষেত্রে

M =অবতল দর্পণের ফোকাস দূরত্ব/অভিনেত্র লেন্সের ফোকাস দূরত্ব

বা, M=fofe

বিম্ব চোখের স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্বে গঠিত হলে বিবর্ধন,

M=fo1fe+1D

এখানে, fo = অবতল দর্পনের ফোকাস দূরত্ব, fe = উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব এবং D = স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব।

   বাস্তব ক্ষেত্রে অভিনেত্রে একটি উত্তল লেন্সের পরিবর্তে একাধিক লেন্সের সমন্বয় ব্যবহার করা হয়। 

  সুবিধা : প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রধান সুবিধা হচ্ছে দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু থেকে আগত আলো দর্পণে প্রতিফলিত হয় বলে সেখানে আলোর শোষণ তুলনামূলকভাবে কম হয়। ফলে এই যন্ত্রে সৃষ্ট বিশ্ব অধিকতর উজ্জ্বল হয়।

Content added || updated By

   দুটি হেলানো সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে প্রিজম বলে। প্রিজমে ছয়টি আয়তক্ষেত্রিক তল [চিত্র ৬.১৬] অথবা তিনটি আয়তক্ষেত্রিক ও দুটি ত্রিভুজাকৃতি তল থাকে

চিত্র :৬.১৬

 

চিত্র :৬.১৭

    যে সমতল পৃষ্ঠদ্বয় পরস্পর আনত থাকে তাদেরকে প্রিজমের প্রতিসারক পৃষ্ঠ বলে। ৬.১৭ চিত্রে ABB' A ‘ ও ACC’ A' প্রতিসারক পৃষ্ঠ। প্রতিসারক পৃষ্ঠদ্বয়ের মধ্যবর্তী কোণকে প্রিজমের কোণ বা প্রতিসারক কোণ বলে। চিত্রে

Content added || updated By

   

চিত্র :৬.১৮

   ধরা যাক, ABC একটি প্রিজমের প্রধান ছেদ [চিত্র ৬.১৮]। PQ আলোক রশ্মি বায়ু মাধ্যমে AB তলে Q বিন্দুতে আপতিত হয়। ) বিন্দুতে মাধ্যমের পরিবর্তন হওয়ায় PQ রশ্মিটি প্রতিসরিত হয়ে AB তলে আঁকা NQO অভিলম্বের দিকে সরে QR পথে চলে যায়। QR রশ্মিটি R বিন্দুতে আপতিত হয়ে পুনরায় প্রতিসরিত হয় এবং AC তলে আঁকা N' RO অভিলম্ব থেকে দূরে সরে RS পরে বায়ু মাধ্যমে নির্গত হয়। সুতরাং PORS হচ্ছে আলোক রশ্মির সমগ্র পথ। এখানে PQ আপতিত রশ্মি, QR প্রতিসরিত রশ্মি এবং RS নিষ্ক্রান্ত বা নির্গত রশ্মি। চিত্র থেকে দেখা যায় যে, প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে রশ্মিটি প্রিজমের ভূমি BC-এর দিকে বেঁকে গেছে বা রশ্মিটির বিচ্যুতি ঘটেছে। যদি প্রিজমটি না থাকতো তাহলে PQ রশ্মি PQTU পথে চলে যেত। প্রিজমের উপস্থিতির জন্য আলোক রশ্মির বিচ্যুতি হয়। 

    আলোক রশ্মি প্রিজমে আপতিত হয়ে প্রতিসরণের পর যখন নির্গত হয় তখন আপতিত রশ্মি ও নির্গত রশ্মি পরস্পর সমান্তরাল হয় না। নির্গত রশ্মি আপতিত রশ্মি থেকে যে কোণে বিচ্যুত হয় অর্থাৎ আপতিত রশ্মি ও নির্গত রশ্মির অন্তর্ভুক্ত কোণকে বিচ্যুতি কোণ বা বিচ্যুতি বলে।

   বিচ্যুতি কোণকে δ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ৬.১৮ চিত্রে আপতিত রশ্মি PQ ও নির্গত রশ্মি RS এর মধ্যবর্তী কোণই প্রিজমে প্রতিসরণ হেতু PQ রশ্মির বিচ্যুতির পরিমাপ। এখন PQ এবং RS-কে বাড়ালে T বিন্দুতে ছেদ করে। সুতরাং বিচ্যুতি কোণ  δ =

ন্যূনতম বিচ্যুতি কোণ

চিত্র :৬.১৯

      আমরা জানি যে, প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মির প্রতিসরণের ফলে আপতিত রশ্মির বিচ্যুতি হয়। একটি প্রিজমে এই বিচ্যুতির পরিমাণ আপতন কোণের উপর নির্ভর করে। প্রিজমের উপর আপতিত রশ্মির আপতন কোণ খুব নিম্নমান থেকে ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকলে প্রথমত বিচ্যুতি কোণ কমতে থাকে। কিন্তু আপতন কোণ একটি নির্দিষ্ট মান অতিক্রম করলে বিচ্যুতি কোণ কমার পরিবর্তে আপতন কোণের বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে শুরু করে [চিত্র ৬.১৯]। এই বিশেষ মানের আপত্তন কোণের বেলাতে বিচ্যুতি কোণের মান সবচেয়ে ছোট হয়। আপতন কোণের মান এর চেয়ে কম হলে বা বেশি হলে বিচ্যুতি কোণ সব সময়ই বড় হবে। নিম্নতম মানের এই বিচ্যুতি কোণকে ন্যূনতম বিচ্যুতি কোণ বলে। ন্যূনতম বিচ্যুতি কোণকে সাধারণত δm বা Dm দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

            প্রিজমে আপতিত আলোক রশ্মির বিচ্যুতি কোণের মান আপতন কোণের উপর নির্ভর করে। আপন কোণের মান খুব কম হলে বিচ্যুতি কোণের মান বেশি হয়। আপতন কোণের মান ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে বিচ্যুতি কোণের মান কমতে থাকে। বিচ্যুতি কোণের মান কমতে কমতে একটি সর্বনিম্ন মানে পৌছার পর আর না কমে আপতন কোণের বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে। বিচ্যুতি কোণের এই সর্বনিম্ন মানকে ন্যূনতম বিচ্যূতি কোণ বলে ।

     বিচ্যুতি কোশ ন্যূনতম হওয়ার শর্ত : i1 = i2 এবং r1 = r2 হলে অর্থাৎ আপতন কোণ ও নির্গমন কোণ সমান হলে বিচ্যুতি কোণ ন্যূনতম হয় ।

প্রিজমের উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক ও ন্যূনতম বিচ্যুতি কোণের সম্পর্ক 

আমরা জানি, প্রিজমে বিচ্যুতি কোণ, δ =i1 + i2 -A

এখানে প্রিজম কোণ, A = r1 + r2

ন্যূনতম বিচ্যুতি অবস্থানে i1 = i2 ও r1 = r2 এবং δ = δm, অর্থাৎ বিচ্যুতি কোণের মান ন্যূনতম হয় ।

সুতরাং r1=A2

δm =i1 + i2 -A

= 2i1 -A

এখন প্রিজমের উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক μ হলে,

μ=sin i1sin r1=sin A+δm2sin A2 ... (6.24)

সরু প্রিজমে আলোক রশ্মির বিচ্যুতি (Deviation of Light through thin Prism) 

    যে সকল প্রিজমের প্রতিসারক কোণ 4° থেকে 6°-এর চেয়ে বড় নয় তাদেরকে সরু প্রিজম বলে। কোনো সরু প্রিজমের উপর একটি রশ্মি খুব ছোট কোণে আপতিত হলে অর্থাৎ প্রায় লম্বভাবে আপতিত হলে বিচ্যুতি কোণ,

δ = i1 + i2 -A

μ=sin i1sin r1=sin i2sin r2

এখন i1, ও r1 Then ছোট হওয়ায় i2 ও r2-ও খুব ছোট হয়। কাজেই,

μ= i1 r1= i2 r2 δ=μr1+μr2Aδ=Aμ1

অর্থাৎ সরু প্রিজমের ক্ষেত্রে বিচ্যুতি কোণের মান আপতন কোণের উপর নির্ভর করে না কেবল প্রিজমের প্রতিসারক কোণ ও প্রিজম পদার্থের প্রতিসরাঙ্কের উপর নির্ভর করে।

Content added || updated By

    আমরা দেখেছি যে, সূর্যের সাদা আলো যদি কোনো কাচের প্রিজমের মধ্য দিয়ে যায় তাহলে তা সাতটি রঙে বিশ্লিষ্ট হয় । প্রিজম থেকে নির্গত রশ্মিগুলোকে যদি কোনো পর্দার উপর ফেলা যায় তাহলে পর্দায় সাতটি রঙের পট্টি (Band) দেখা যায়। আলোর এই রঙিন পট্টিকে বর্ণালি (Spectrum) বলে। প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা রঙের আলো সাতটি মূল রঙের আলোকে বিশ্লিষ্ট হওয়ার প্রণালিকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে। 

    কোনো মাধ্যমে প্রতিসরণের ফলে যৌগিক আলো থেকে মূল বর্ণের আলো পাওয়ার পদ্ধতিকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে।

পরীক্ষা : 

 ৷ ১৬৬৬ সালে স্যার | আইজ্যাক নিউটন একটি সহজ পরীক্ষার সাহায্যে সর্বপ্রথম আলোর বিচ্ছুরণ আবিষ্কার করেন। তিনি তাঁর ঘরের জানালায় একটি ছোট ছিদ্র করে এই পরীক্ষা করেন। অন্ধকার ঘরে জানালার এই ছোট ছিদ্র দিয়ে সূর্যালোক বিপরীত দিকে দেওয়ালের উপর পড়ে। এখন  আলোর গতিপথে একটি প্রিজম স্থাপনকরে তিনি দেওয়ালে সাদা আলোর পরিবর্তে সাতটি রং দেখতে পান [চিত্র ৬.২০)। সাতটি রঙের এই পট্টিকে নিউটন  বর্ণালি আখ্যা দেন। 

চিত্র : ৬.২০

বর্ণালিতে তিনি বেগুনি (Violet), নীল (Indigo), আসমানী (Blue), সবুজ (Green), | হলুদ (Yellow), কমলা (Orange) ও লাল (Red)-এ সাতটি রং পর পর দেখতে পান। রংগুলোর নাম ও ক্রম | সহজে মনে রাখার জন্য এদের নামের আদ্যাক্ষরগুলো নিয়ে ইংরেজিতে VIBGYOR ও বাংলায় বেনীআসহকলা শব্দ গঠন করা হয়।

      বর্ণালি থেকে দেখা যায় যে, লাল রঙের আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে কম এবং বেগুনি আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি। হলুদ রঙের আলোর বিচ্যুতি লাল ও বেগুনি আলোর মাঝামাঝি বলে এর বিচ্যুতিকে গড় বিচ্যুতি বলে এবং হলুদ রশ্মিকে মধ্যরশ্মি বলে।

   এ পরীক্ষা থেকে নিউটন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, সূর্যের সাদা আলোর প্রকৃতি যৌগিক (Composite) এবং এই আলো সাতটি মূল রঙের আলোর সমষ্টি।

নিজে কর : কোনো সরু ছিন্ন পথে আসা সাদা আলোকে একটি প্রিজমের সাহায্যে সাতটি রঙে বিশ্লিষ্ট করে বর্ণালি গঠন কর।

 

  বর্ণালি উৎপত্তির কারণ

      কোন মাধ্যমে প্রতিসরণের ফলে যৌগিক আলোর বিচ্ছুরণের জন্য মূল রংগুলোর যে পট্টি পাওয়া যায় তাকে বর্ণালি বলে।

        আমরা জানি, আলোক রশ্মি যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অপর স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন আলোক রশ্মি বিভেদতলে বেঁকে যায় । এই বাঁকার পরিমাণ মাধ্যমম্বরের প্রকৃতি ও আলোর রঙের উপর নির্ভর করে। সূর্যের সাদা আলো সাতটি রঙের সমন্বয়ে সৃষ্টি তাই যখন সূর্যের সাদা আলো কোনো প্রিজমের মধ্যে প্রবেশ করে তখন প্রতিসরণের ফলে রশ্মির গতিপথ বেঁকে যায়। এখন ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের আলোর বাঁকার পরিমাণ ভিন্ন হওয়ার জন্য প্রিজমের মধ্যে সাদা আলো সাতটি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয় এবং এই বিশ্লিষ্ট অবস্থায়ই প্রিজম থেকে নির্গত হয়। ফলে পর্দার উপর আমরা বর্ণালি দেখতে পাই । এখন প্রশ্ন হচ্ছে বর্ণভেদে আলোক রশ্মির বাকার পরিমাপ বিভিন্ন কেন? শূন্য মাধ্যমে সবক'টি বর্ণের আলোক রশ্মি একই বেগে চলে। কিন্তু অন্য যে কোনো মাধ্যমে এক এক বর্ণের আলোর বেগ এক এক রকমের হয়। যেমন কাচের মধ্যে লাল রঙের আলোর বেগ, বেগুনি রঙের আলোর বেগের প্রায় 1.8 গুণ বেশি। তাই বেগুনি আলো সবচেয়ে বেশি এবং লাল আলো সবচেয়ে কম বাঁকে। ফলে বর্ণালি উৎপন্ন হয়। এ কারণে একই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ভিন্ন ভিন্ন রঙের জন্য বিভিন্ন হয়। সুতরাং বলা যায়, বিভিন্ন বর্ণের আলোর জন্য মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্কের বিভিন্নতার জন্য বর্ণালি উৎপন্ন হয়।

কৌণিক বিচ্ছুরণ ও বিচ্ছুরণ ক্ষমতা

সরু প্রিজমের মধ্য দিয়ে একবর্ণের রশ্মি নির্গত হলে ঐ রশ্মির বিচ্যুতি,

δ = (μ - 1 ) A..(6.26)

এখানে, A= প্রিজমের প্রতিসরক কোণ 

μ= ঐ বর্ণের আলোর সাপেক্ষে প্রিজমের প্রতিসরাঙ্ক

এখন একটি পাতলা প্রিজমের ওপর সাদা আলো আপতিত হয়ে নির্গত হলে আলোক রশ্মি লাল থেকে বেগুনি পর্যন্ত সাতটি বর্ণের রশ্মিতে বিচ্ছুরিত হয় এবং প্রত্যেক রশ্মির বিচ্যুতিও ভিন্ন হয়। লাল ও বেগুনি আলোর জন্য বিচ্যুতি যথাক্রমে δ1, ও δ2, হলে,

δ =(μr- 1 ) A.. (6.27)

এখানে, μ1ও μ2যথাক্রমে লাল ও বেগুনি আলোর সাপেক্ষে প্রিজমের উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক। লাল ও বেগুনি

আলোর মধ্যবর্তী বিচ্যুতিকে কৌশিক কিছুরণ বলে।

বিচ্ছুরণের মান প্রিজম উপাদানের প্রতিসরাঙ্কের উপর নির্ভর করে।

প্রতিসরাঙ্ক যত বেশি হবে বিচ্ছুরণের পরিমাণও তত বেশি হবে। বিভিন্ন পদার্থের তৈরি প্রিজমের বিচ্ছুরণ ঘটানোর ক্ষমতাও বিভিন্ন।

Content added || updated By