মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি হলোঃ

Created: 2 years ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

যকৃত (Liver)

অবস্থান : যকৃত উদর-গহ্বরের উপরভাগে ডানদিকে ডায়াফ্রামের ঠিক নিচে ডিওডেনাম ও ডান বৃক্কের উপরদিকে পাকস্থলির ডান পাশে অবস্থিত।

গঠন : এটি মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষে এর ওজন প্রায় ১.৫-২.০০ কেজি। ডান, বাম, কোয়াড্রেট ও কডেট নামে ৪টি অসম্পূর্ণ খণ্ড নিয়ে যকৃত গঠিত। খণ্ডগুলো স্থিতিস্থাপক তত্ত্বসমৃদ্ধ ক্যাপসুলে আবৃত । ডান খণ্ডটি সবচেয়ে বড়। যকৃতের নিচের পিঠে পিত্তথলি (gall bladder) সংলগ্ন থাকে। প্রত্যেকটি খণ্ড বহুভুজাকার কোষে গঠিত। কোষগুলো একেকটি ক্ষুদ্র অণুখণ্ড নির্মাণ করে। প্রত্যেক অণুখণ্ডের কেন্দ্রে থাকে কেন্দ্রীয় শিরা (central vein)। যকৃত কোষগুলো ঢাকার স্পোকের মতো বিন্যস্ত। এদের গা বেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাইনুসয়েড (sinusoid) ও পিত্তনালিকা প্রসারিত হয়। পিত্তনালিকাগুলো পিত্তনালিতে গিয়ে শেষ হয়। যকৃত থেকে আসা ডান ও বাম নালি মিলে একটি সাধারণ  যকৃত নালি  পিত্তনালি গঠন করে। এটি পিত্তনালির সাথে মিলিত হয়ে অভিন্ন পিত্তনালি গঠন করে যা অ্যাম্পুলা অব ভ্যাটার (ampulla of vater) নামে নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়।

যকৃতের সঞ্চয়ী ও বিপাকীয় ভূমিকাঃ 

সঞ্চয়ী ভূমিকাঃ

যকৃত প্রায় পাঁচ শতাধিক জৈবনিক কাজে সহায়তা করে

১. শর্করা সঞ্চয় । (গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়া) যকৃতে ১০০ গ্রাম গ্লাইকোজেন জমা থাকতে পারে। আর পেশিতে এর চেয়েও বেশি পরিমাণ জমা থাকে।

২. পিত সক্ষয় : যকৃত থেকে তৈরিকৃত শিত, পিতলিতে জমা হয়। 

৩. ভিটামিন সঞ্চয় : যকৃতে প্রধানত লিপিতে দুগীয় ভিটামিন A, D, E ও K জমা রাখে। তবে পানিতে প্রবণীয় ভিটামিনও (B ও C) অল্প পরিমান সঞ্চয় করে। ১/১০০০ হচ্ছে আয়রন জমা থাকে।

৪. খনিজ লবণ সঞ্চয় : যকৃতে কপার, জিংক, কোরাস্ত, মলিবডেনাম, আয়রন, পটাশিয়াম সঞ্চয় করে। যকৃতের অন্ধ তরের 

৫. রক্ত সঞ্চয় : রক্তের আয়জন বেড়ে গেলে হেপাটিক পোর্টাল শিরাগুলো ১.৫ লিটার পর্যন্ত রক্ত সঞ্চয় করতে পারে।

 

বিপাকীয় ভূমিকাঃ

১. শর্করা বিপাক

i. গ্লাইকোজেন→গ্লুকোজ (গ্লুকোজেনোলাইসিস)

ii. গ্লুকোজ→ গ্লাইকোজেন (গ্লাইকোজেনেসিস)

iii. লিপিড / প্রোটিন→ গ্লুকোজ (গ্লুকোনিওজেনেসিস)

২. প্রোটিন বিপাক

i. ডিঅ্যামিনেশন : অতিরিক্ত প্রোটিন ইউরিয়াতে রূপান্তরকে ডিঅ্যামিনেশন বলে। 

ii. ট্রান্সঅ্যামিনেশন : একটি অ্যামিনো এসিড থেকে অ্যামিনো গ্রুপ বহন করে অন্য এক অর্গানিক এসিডে স্থানান্তরের মাধ্যমে অ্যামিনো এসিড সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ট্রান্সঅ্যামিনেশন বলা হয়।

iii. প্লাজমা প্রোটিন উৎপাদন : প্রোটিন প্লাজমায় অবস্থিত বিভিন্ন প্রোটিন অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন, প্রোথ্রম্বিন, ইত্যাদি। সংশ্লেষণ করতে পারে। 

৩. ফ্যাট বিপাকঃ অতিরিক্ত ফ্যাট দেহের বিভিন্ন টিলাস্থানে সঞ্চিত হয়। আর শর্করার অভাব হলে গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ উৎপাদন করে।

৪. রক্তসংক্রান্ত কার্যাবলি : ভ্রূণ অবস্থায় যকৃৎ লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি করে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় লোহিত কণিকা ধ্বংস করে। যকৃৎ প্রোগ্রাম্বিন ও ফাইব্রিনোজেন সৃষ্টি করে রক্ত তঞ্চনে সহায়তা করে। যকৃতে অবস্থিত মাস্ট কোষ হেপারিন নিঃসরণ করে রক্তপ্রবাহের মধ্যে রক্ত তঞ্চনে বাধা দেয়। যকৃৎ RBC-এর হিমোগ্লোবিন ভেঙে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন সৃষ্টি করে। যকৃত লৌহ সঞ্চয় করে হিমোগ্লোবিন গঠন করে।

৫. রেচন সংক্রান্ত কার্যাবলি : যকৃৎ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ, টক্সিন, ব্যাকটেরিয়া, অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত ওষুধ (drugs) পিত্তের মাধ্যম দেহ থেকে দূরীভূত করে। এছাড়া যকৃৎ বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবডি গঠন করে। 

৬. তাপ নিয়ন্ত্রণ : যকৃৎ রাসায়নিক বিক্রিয়াজাত অধিক উত্তাপ শোষণ করে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৭. কোলেস্টেরল উৎপাদন : কোলেস্টেরল বা ফ্যাটসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ কালে নানান প্রক্রিয়া শেষে যকৃতে কোলেস্টরল উৎপন্ন হয়। হাট অ্যাটাক (Coronary thrombosis) ও স্ট্রোক (cerebral thrombosis) সংক্রান্ত জটিলতায় কোলেস্টেরল বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

৮. পিত্ত উৎপাদন : যকৃৎ কোষ (হেপাটোসাইট) অনবরত পিত্তরস ক্ষরণ করে এবং পিত্তথলিতে জমা রাখে। যকৃৎ হেপাটোসাইট কোয় স্টেরয়েড থেকে পিত্ত লবণ যেমন- সোডিয়াম গ্লাইকোকোলেট (Sodium glycocholate), সোডিয়াম টরোকোলেট(Sodium taurocholate) সংশ্লেষ করে। পরিপাক অঙ্গ হিসেবে যকৃতের পিত্ত উৎপাদন ও ক্ষরণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 

৯. হরমোনের ভাঙন : যকৃৎ প্রায় সব হরমোনই কম বেশি ধ্বংস করে। তবে টেস্টোস্টেরণ ও অ্যালডোস্টেরণ যত দ্রুত ধ্বংস তন্ত্র ধ্বংস হয় না। এভাবে যকৃৎ বিভিন্ন হরমোনের কর্মকাণ্ডে স্থায়ী অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (হোমিওস্ট্যাসিস) সৃষ্টি করে। 

১০. টক্সিন বা বিষ অপসারণ : শরীরের ভেতর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ফলে উৎপন্ন যেসব পদার্থ মাত্রাতিরিক্ত জমা হলে দেহে হয় অন্য হরমোনগুলো (ইনসুলিন, গ্লুকাগন, আন্ত্রিক হরমোন, স্ত্রী যৌন হরমোন, অ্যাড্রেনাল হরমোন, থাইরক্সিন ইত্যাদি) বিষয়মতার সৃষ্টি করে এমন সব পদার্থকে টক্সিন বা বিষ বলে। যকৃৎ কোষের অভ্যন্তরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এই বিষ প্রশমিত হয়ে যায়।

Content added || updated By
Promotion