গ্রীষ্মনিদ্রায় যায় কোন প্রানী?

Created: 2 years ago | Updated: 2 months ago

ট্যাক্সেস (Taxes)

(দিকমুখি উদ্দীপনা বা উদ্দীপনা মাত্রার তীব্রতার প্রতি একটি জীবের সহজাত আচরণগত সাড়া দেওয়াকে ট্যাক্সিস (taxis, গ্রিক tackst = arrangement বা বিন্যাস; বহুবচনে ট্যাক্সেস, taxes) বলে। এটি অন্যতম সহজাত আচরণ এবং অভিযোজনযোগ্য । 

ট্যাক্সিসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ জীব অপরিবর্তনীয় সাড়া দান করে ।স্থানিক দিকমুখিতা প্রদর্শন করে দিকমুখিতায় সম্পূর্ণ দেহ জড়িত থাকে চলনের দিক অবিরাম বহিঃউদ্দীপনায় পরিচালিত হয় এবং দিকমুখি চলন সরাসরি উদ্দীপনা শক্তির সমানুপাতিক ।

ট্যাক্সিসের প্রকারভেদ

বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সাড়াদানের ভিত্তিতে ট্যাক্সিসের প্রকারভেদ করা হয়ে থাকে, যেমন- উদ্দীপনার উৎস, উদ্দীপনার বিষয়, সংবেদী অঙ্গের উপস্থিতি ইত্যাদি। প্রাণীর অবস্থান পরিবর্তন সব সময় উদ্দীপকের উৎসের সাথে নির্দিষ্ট কোণে সম্পাদিত হয় বা সরাসরি উৎসের দিকে কিংবা উৎস থেকে দূরে সরে যায়।

দেহের দিকমুখিতার ভিত্তিতে ট্যাক্সিস নিম্নোক্ত দুরকম :

পজিটিভ বা ধনাত্মক ট্যাক্সিস (Positive taxis) : এক্ষেত্রে প্রাণী উদ্দীপকের উৎসের দিকে ঘুরে যায় বা গমন করে। 

নেগেটিভ বা ঋণাত্মক ট্যাক্সিস (Negctive taxis) : এক্ষেত্রে প্রাণী উদ্দীপকের উৎস থেকে দূরে সরে যায়

উদ্দীপনার উৎসের ভিত্তিতে জীবে নিম্নোক্ত বিভিন্ন ধরনের আচরণ দেখা যায়। 

১.অ্যারোট্যাক্সিস (Acrotaxis) : জীব যখন অক্সিজেন ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে সাড়া দেয়।

২. কেমোট্যাক্সিস (Chemotaxis) : জীব এক্ষেত্রে পরিবেশে রাসায়নিক ঘনত্বের তারতম্যের কারণে সাড়া দেয়।

৩. এনার্জি ট্যাক্সিস (Energy taxis) : এ ধরনের দিকমুখিতায় জীবকোষের অন্তঃস্থ শক্তির অবস্থা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ বিপাকীয় কাজের দিকে সাড়া দেয়। 

৪. এ্যাডিট্যাক্সিস (Gravitaxis) বা জিওট্যাক্সিস (Geotaxis) : এটি হচ্ছে জীবের অভিকর্ষজনিত সাড়াদান। বিভিন্ন প্রাণীর লার্ভা দশায় পজিটিভ ও নেগেটিভ দুধরনের গ্র্যাভিটাক্সিসই দেখা যায়। 

৫. গ্যালভানো ট্যাক্সিস (Galvanotaxis) বা ইলেক্ট্রোট্যাক্সিস (Electrotaxis) : এ ক্ষেত্রে সাড়াদানের উৎস হচ্ছে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র (electrical field)।

৬. ম্যাগনেটোট্যাক্সিস (Magnetotaxis) : এটি চুম্বক ক্ষেত্রসংশ্লিষ্ট সাড়াদান ।

৭. ফোনোট্যাক্সিস (Phonotaxis) : এটি হচ্ছে শব্দের প্রতি সাড়া দিয়ে জীবের চলন । 

৮. ফটোট্যাক্সিস (Phototaxis) : এটি আলোর তীব্রতা ও দিকের প্রতি সাড়া দিয়ে জীবের চলন।

৯. রিওট্যাক্সিস (Rhcotaxis) : এটি হচ্ছে তরল পদার্থে প্রাণীর স্রোতজনিত ট্যাক্সিস। 

১০. থার্মোট্যাক্সিস (Thermotaxis) : এটি জীবের তাপের ক্রমমাত্রা বরাবর প্রাণীর চলন।

 ১১. থিগমোট্যাক্সিস (Thigmotaxis) : এটি হচ্ছে দৈহিক স্পর্শজনিত ট্যাক্সিস।

ট্যাক্সিসের দিকমুখিতার ভিত্তিতে আচরণ নিম্নোক্ত ৫ রকম।

১. ক্লাইনোট্যাক্সিস (Klinotaxis) : যে সব প্রাণীতে এ ট্যাক্সিস ঘটে সে সব প্রাণীতে কোনো জোড় সংবেদ অঙ্গ থাকে না, বরং সংবেদগ্রাহী কোষগুলো সমগ্র দেহ জুড়ে, বিশেষ করে সম্মুখ অংশে অবস্থান করে। সম্মুখ অংশটি এদিক-ওদিক ঘুড়িয়ে উদ্দীপনার ব্যাপকতা যাচাই করে। সবদিক থেকে ব্যপকতার সমতা এলে প্রাণী সোজা চলতে শুরু করে। রোয়াই (blowfly) ও বাটারফ্লাই (butterfly)-এর লার্ভায় এ ধরনের ট্যাক্সিস দেখা যায়।

২. মনোট্যাক্সিসঃ ধরনের ট্যাক্সিসে প্রাণীর দিকমুখিতা থাকে কৌণিক (angular) ধরনের।  যেমন-সূর্যের প্রতি সাড়া দিয়ে পিঁপড়ার চলন ।

৩. নেমোট্যাক্সিস (Mnemotaxis; Gk, meme = স্মৃতি) : এটি কোনো প্রাণীর স্মৃতিমূলক সাড়াদান। এসব প্রাণী কোথাও গেলে চলার পথের আশ-পাশের কোনো বস্তুকে চিহ্ন হিসেবে মনে রাখে, ফেরার সময় ওই চিহ্নগুলো মনে করে ফিরে আসে। দুএকটা স্মৃতিচিহ্ন উঠিয়ে নিলে প্রাণীর বাসায় ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

৪. টেলেট্যাক্সিস (Telotaxis) : এটি হচ্ছে শক্তিশালী উদ্দীপকের প্রতি সাড়াদান। এ ক্ষেত্রে প্রাণিদেহে জোড় সংবেদ অঙ্গ থাকে। একটি মৌমাছি যখন খাদ্যের খোঁজে চাক থেকে বের হয় তখন একদিকে সূর্য, অন্যদিকে ফুল-এ দুটি উদ্দীপক থাকে। এ দুই উদ্দীপকের মধ্যে ফুল-এর উদ্দীপনা বেশি হওয়ায় মৌমাছি ফুলে গিয়ে বসে, ভারসাম্য বজায় রেখে মধ্যপথে অগ্রসর হয় না।

৫. ট্রোপোট্যাক্সিস (Tropotaxis) : এটি হচ্ছে দুই বা ততোধিক সংবেদগ্রাহী অঙ্গে একটি উদ্দীপকের উদ্দীপনা একসঙ্গে গৃহীত হলে ভারসাম্যমুলক ট্যাক্সিস। এক্ষেত্রে প্রাণিদেহে জোড় সংবেদাঙ্গ উপস্থিত থাকে। মাছের উকুনে (fish louse) এ ধরনের ট্যাক্সিস দেখা যায়।

ট্যাক্সেসের অভিযোজনিক গুরুত্ব

ট্যাক্সেসের অভিযোজনিক গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন-প্রজাপতির দিকমুখিতা ও চলন শত্রুর হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে; পিঁপড়া ও পাখির বাসায় ফেরার বিষয়টি ট্যাক্সিসের নিয়মে পরিচালিত হয়; এবং ঋণাত্মক ফটোট্যাক্সিসের ফলে মাছির লার্ভা অন্ধকার কোণে পিউপায় রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ পায়। এক কথায় বলতে গেলে, উদ্দীপনায় যথাসময়ে সঠিক সাড়া দিয়ে প্রাণী বংশবৃদ্ধি থেকে শুরু করে নীড় নির্মাণ, অপত্য যত্ন, আহার সংগ্রহ, শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে নির্বংশ হওয়া থেকে টিকে থাকে।

Content added By

Related Question

View More