প্রতিটি উদ্ভিদকোষে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এ কারণে সমন্বয় উদ্ভিদের একটি অপরিহার্য কার্যক্রম। এ সমন্বয় না থাকলে উদ্ভিদের জীবনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। একটি উদ্ভিদের জীবন চক্রের পর্যায়গুলো যেমন- অকুরোদগম, পুষ্পায়ন, ফল সৃষ্টি, বার্ধক্য প্রান্তি, সুস্তাকথা ইত্যাদি একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম মেনে চলে। এ কাজে আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত প্রভাবকগুলোর পুরুত্বও লক্ষ করার মতো। উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও চলনসহ বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজগুলো অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে বিশেষ নিয়ম মেনেই সম্পন্ন হয়। একটি কাজ জন্য কাজকে বাধা প্রদান করে না। বিভিন্ন কাজের সমন্বয়সাধন কীভাবে হয় তা জানতে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করতে থাকেন এবং মত প্রকাশ করেন যে, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ, বিভিন্ন অঙ্গ সৃষ্টি ইত্যাদি উদ্ভিদ দেহে উৎপাদিত বিশেষ কোনো জৈব রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে হয়ে থাকে। উদ্ভিদের সকল কাজ নিয়ন্ত্রণকারী এই জৈব রাসায়নিক পদার্থটিকে ফাইটোহরমোন বা বৃদ্ধিকারক বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ফাইটোহরমোন কোষে উৎপন্ন হয় এবং উৎপত্তিস্থল থেকে বাহিত হয়ে দূরবর্তী স্থানের কোষের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্ভিদে যেসব হরমোন পাওয়া যায় তার মধ্যে অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন বৃদ্ধি সহায়ক এবং অ্যাবসাইসিক এসিড ও ইথিলিন বৃদ্ধি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। পাতায় ফ্লোরিজেন নামক হরমোন উৎপন্ন হয় এবং তা পত্রমূলে স্থানান্তরিত হয়ে পত্র মুকুলকে পুষ্পমুকুলে পরিণত করে। তাই দেখা যায় ফ্লোরিজেন উদ্ভিদে ফুল উৎপন্ন করে।
অক্সিন : চার্লস ডারউইন এ হরমোন প্রথম আবিষ্কার করেন। তিনি উদ্ভিদের ভ্রূণমুকুলাবরণীর উপর আলোর প্রভাব লক্ষ করেন। যখন আলো তীর্যকভাবে একদিকে লাগে তখন ভ্রূণমুকুলাবরণী আলোর উৎসের দিকে বাঁকা হয়ে বৃদ্ধি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে ভ্রূণমুকুলাবরণীর অগ্রভাগে অবস্থিত রাসায়নিক পদার্থটি ছিল বৃদ্ধি সহায়ক হরমোন অক্সিন। অক্সিন প্রয়োগে শাখা কলমে মূল গজায়, ফলের অকালে ঝরে পড়া রোধ করে।
জিব্বেরেলিন : চারাগাছ, বীজপত্র ও পত্রের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে এদের দেখা যায়। এর প্রভাবে উদ্ভিদের পর্বমধ্যগুলো দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। এ জন্য খাটো উদ্ভিদে এ হরমোন প্রয়োগ করলে উদ্ভিদটি অন্যান্য সাধারণ উদ্ভিদ থেকেও অধিক লম্বা হয়। বীজের সুপ্তাবস্থা কাটাতে এর কার্যকারিতা রয়েছে।
ইথিলিন : এ হরমোনটি একটি গ্যাসীয় পদার্থ। এটি ফল পাকাতে সাহায্য করে। এ হরমোন ফল, ফুল, বীজ, পাতা ও মূলেও দেখা যায়। ইথিলিন বীজ এবং মুকুলের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে, চারা গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধি ঘটিয়ে চারা গাছকে লম্বা হতে সাহায্য করে, ফুল এবং ফল সৃষ্টির সূচনা করে। ইথিলিন পাতা, ফুল এবং ফলের ঝরে পড়া ত্বরান্বিত করে।
চলন : উদ্ভিদও অন্যান্য জীবের মতো অনুভূতি ক্ষমতাসম্পন্ন। এজন্য অভ্যন্তরীণ বা বহিঃউদ্দীপক উদ্ভিদদেহে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তার ফলে উদ্ভিদে চলন ও বৃদ্ধি সংঘটিত হয়। এসব চলনকে ট্রফিক চলন বলা হয়।
আলোর প্রতি উদ্ভিদের সাড়া দেওয়ার পরীক্ষণ
পর্যবেক্ষণ : ৪/৫ দিন পর দেখা যাবে যে উদ্ভিদটির কাণ্ডের অংশ জানালার বাইরের দিকে বেঁকে গেছে। মূলগুলো আলোক উৎসের বিপরীত দিকে বেঁকে রয়েছে। সিদ্ধান্ত : এ পরীক্ষণে প্রমাণিত হয় যে কাণ্ডে আলোকমুখী ও মূলে আলোকবিমুখী বৃদ্ধি ও চলন ঘটে।
|
কাজ : শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে অভিকর্ষ উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে তা একটি পরীক্ষার : মাধ্যমে দেখাও। |
হরমোনের ব্যবহার : অক্সিন ও অন্যান্য কৃত্রিম হরমোন শাখাকলমের মূল উৎপাদনে সাহায্য করে। ইন্ডোল অ্যাসেটিক এসিড ক্ষতস্থান পূরণে সাহায্য করে। অক্সিন প্রয়োগে ফলের মোচন বিলম্বিত হয়। বিভিন্ন উদ্দীপক, যেমন আলো, পানি, অভিকর্ষ ইত্যাদি উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
আরও দেখুন...