সৃষ্টির শুরুর দিকেই মানুষের মনে হিংসা দেখা দিয়েছিল। হিংসার বশবর্তী হয়েও স্বাধীন ইচ্ছার বলে মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে জঘন্য পাপ করল। কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, যিনি একই সময়ে সর্বত্রই উপস্থিত আছেন, তাঁর চোখ এই ঘৃণ্য অপরাধ এড়াতে পারে নি। মানুষ স্বাধীন ইচ্ছার দ্বারা এই পাপ করেছে বলে তার যোগ্য শাস্তিও তাকে মাথা পেতে নিতে হলো। এই বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে আমরা হিংসা পরিহার করে চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। তাতে আমরা নিজেরা সুখী হতে পারব এবং সমাজকেও সুখী করতে পারব।
পৃথিবীতে আদম ও হবার কঠোর পরিশ্রমের দিন কাটতে লাগল। তাঁদের ঘরে এলো দুইটি সন্তান। বড়টির নাম কায়িন (কয়িন) এবং ছোটটির নাম আবেল (হেবল)। কায়িন ও আবেল ধীরে ধীরে বড় হলো। এরপর তারা তাদের বাবার মতো কঠোর পরিশ্রমের কাজে অভ্যস্ত হলো। তবে তাদের দুই ভাই দুই পেশা গ্রহণ করল। কায়িন গ্রহণ করল জমি চাষের পেশা। আর আবেল বেছে নিল মেষপালনের কাজ। দুইজনের মনোভাব দুইরকম ছিল। কায়িনের মন ছিল কঠিন প্রকৃতির। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের মন ছিল কোমল ও উদার।
কায়িন ও আবেল দুইজন দুইরকম হলেও তারা দুইজনেই ঈশ্বরের প্রতি নৈবেদ্য উৎসর্গ করত। কায়িন নৈবেদ্য হিসাবে ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করল জমি থেকে তার উৎপাদিত খানিকটা ফসল। আবেলও নৈবেদ্য উৎসর্গ করল। সে উৎসর্গ করল তার পালের কয়েকটি মেষশাবক, সেগুলোর দেহের সেরা অংশ। ঈশ্বর আবেল ও তার নৈবেদ্যের দিকে প্রসন্ন চোখে তাকালেন। কিন্তু কায়িন ও তার দানের প্রতি প্রসন্ন হলেন না। এতে কায়িন খুব রেগে গেল। রাগে, দুঃখে ও হিংসায় কায়িনের মুখ ভারি হয়ে গেল। তখন ঈশ্বর কায়িনকে বললেন “অমন রাগ করছ কেন? কেন মুখটা অমন নিচু করে রয়েছ? তুমি ভালো কাজ করো,তাহলে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। ভালো কাজ যদি না করো তাহলে জেনে রাখ পাপ কিন্তু দরজায় ওত পেতে বসেই আছে। তোমাকে গ্রাস করার জন্য লোলুপ হয়ে আছে। তাকে তুমি বরং বশেই আন।”(আদি ৪:৬-৭) ঈশ্বরের কথা থেকেই আমরা বুঝতে পারি কেন তিনি আবেলের নৈবেদ্য গ্রহণ করলেন এবং কেন কায়িনেরটা গ্রহণ করলেন না। ঈশ্বর মানুষের মনোভাব দেখতে চান, বস্তু নয়। কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের মনোভাব প্রকাশ পায়। আবেলের কাজ ভালো ছিল। তাই তার দানগুলোও ভালো ছিল। ঈশ্বরের সামনে সে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছিল। অন্যদিকে কায়িনের কাজ ভালো ছিল না। তাই ঈশ্বরের সামনে সে মাথা নিচু করে ছিল।
কায়িন ঈশ্বরের কথা না শুনে নিজের হিংসার বশে চলতে লাগল এবং সে-অনুসারেই সে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিল। মনে-মনে সে সিদ্ধান্ত নিল সে তার আপন ভাই আবেলকে মেরে ফেলবে। তাই একদিন কায়িন তার ভাই আবেলকে বলল,“চল, মাঠে একটু বেড়িয়ে আসি।” আবেল তার ভাইয়ের সাথে মাঠে গেল। সেখানে কায়িন তার ভাই আবেলকে আক্রমণ করে তাকে মেরেই ফেলল। ঈশ্বর তখন কায়িনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কায়িন, তোমার ভাই আবেল কোথায়?” কায়িন উত্তরে জানাল যে, সে তার ভাই এর খবর জানে না। সে আরও ঈশ্বরকে উল্টা প্রশ্ন করল, “আমি কি আমার ভাইয়ের রক্ষী নাকি?” আমরা জানি, ঈশ্বর সবকিছু জানেন ও দেখেন । তিনি মানুষের অন্তরের কথাও জানেন। কায়িনের মনে যা ছিল তা তিনি জানতেন। কায়িন মনে মনে ভেবেছিল যে, সে গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইকে হত্যা করবে। কেউ সেকথা জানতেও পারবে না। তাই সে তাকে বাড়িতে হত্যা না করে মাঠে নিয়ে গিয়ে হত্যা করল। কিন্তু কায়িন কিছুতেই তার অপরাধ লুকাতে পারল না।
ঈশ্বর কায়িনের এ মন্দ কাজটিও দেখে ফেললেন। তাই তিনি কায়িনকে বললেন, “তুমি এ কী করলে ! ওই তো, এই মাটির বুক থেকে তোমার ভাইয়ের রক্ত আমাকে চীৎকার করে ডেকে চলেছে। তাই এই যে-মাটি হা করে তোমার ভাইয়ের রক্ত তোমারই হাত থেকে গ্রহণ করেছে, তুমি এখন অভিশপ্ত হয়ে এই মাটি থেকেই নির্বাসিত হলে। এবার থেকে তুমি যখন কোনো জমি চাষ করবে সেই জমি আর ফসলই দেবে না। তুমি ভবঘুরের মতো পৃথিবীর এখানে ওখানে ঘুরেই বেড়াবে।”(আদি ৪:১২)
কায়িন তখন ঈশ্বরকে বলল, তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তার বোঝা বইবার মতো ক্ষমতা তার নেই। তিনি তো তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তাকে এখন ভবঘুরের মতো এদিকে ওদিকে পালিয়েই বেড়াতে হবে। যে কেউ তাকে দেখবে সে-ই তাকে মেরে ফেলবে। ঈশ্বর তাকে বললেন,“কেউ তাকে মারবে না। যদি কেউ তাকে মারে তার শাস্তি হবে তার চেয়েও সাতগুণ বেশি।”ঈশ্বর তখন কায়িনের গায়ে একটি চিহ্ন এঁকে দিলেন যাতে কেউ তাকে মেরে না ফেলে। কায়িন তখন ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে নোদ নামক দেশে বাস করতে লাগল।
একই পিতামাতা আদম ও হবার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও কায়িন ও আবেলের মনোভাব ও আচরণের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য ছিল। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ :
কায়িনের মনোভাব ও আচরণ | আবেলের মনোভাব ও আচরণ |
---|---|
স্বার্থপর | পরার্থপর |
ঈশ্বরের প্রতি অকৃতজ্ঞ | ঈশ্বরের প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ |
রাগী ও অহংকারী | বিনয়ী ও ভদ্র |
হিংসাত্মক মনোভাব | সহজ-সরল |
ভালো ফসল উৎসর্গ না করা | ভালো ও উত্তম মেষ উৎসর্গ করা |
সবকিছুতে নিজেকে বড় মনে করা | অন্যকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া |
ঈশ্বরের প্রতি অশ্রদ্ধা ও বিরূপ মনোভাব | ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা |
কৃপণ ও অসৎ প্রকৃতির | উদার ও সৎ প্রকৃতির |
নিম্নলিখিতভাবে আমরা হিংসা পরিহার করে চলতে পারি :
১। হিংসার কথা চিন্তা না করে বরং হিংসার বিপরীতটা অর্থাৎ ভালোবাসার কথা চিন্তা করা ও সর্বদা অন্যদের ভালোবাসা। কারণ আমরা যা চিন্তা করি তার দিকেই ঝুঁকে পড়ি।
২। যীশুর মতো করে অন্যদের ক্ষমা করা।
৩। শত্রুমিত্র সকলকেই ভালোবাসা।
৪। অন্যের জন্য সবসময় মঙ্গল করার চেষ্টা করা।
৫। ঈশ্বরের সকল দয়া ও দানের জন্য কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট থাকা।
৬। অন্যের সাফল্যে অভিনন্দন জানানো ও আনন্দ করা।
৭। নম্রতা অনুশীলন করা ৷
আমাদের হৃদয় প্রেম দিয়ে তুমি গড়ো ওহে প্রেমের কবি।
১। যেথায় রয়েছে ঘৃণা দেখাব তোমার প্রেম
যেথায় রয়েছে আঘাত, দেখাব তোমার ক্ষমা ।
২। যেথায় রয়েছে বিবাদ, আনিব সেথায় শান্তি,
যেথায় রয়েছে ভ্রান্তি ছড়াব সেথায় সত্য।
১। তোমার ভাইবোন ও সহপাঠীদের জন্য তুমি কী কী ভালো কাজ করতে পার তার একটা তালিকা তৈরি কর।
২। হিংসা থেকে বিরত থাকার তিনটি উপায় লেখ।
ক) পৃথিবীতে আদম ও হবার ___ পরিশ্রমের দিন কাটতে লাগল ।
খ) আবেলের মন ছিল ___ ও উদার।
গ) ঈশ্বর মানুষের ___ দেখতে চান, বস্তু নয় ৷
ঘ) কায়িন ঈশ্বরের কথা না শুনে নিজের ___ বশে চলতে লাগল ।
ঙ) ঈশ্বর কায়িনের ___ কাজটিও দেখে ফেললেন ।
ক) আবেল তার ভাইয়ের সাথে | ক) একটি চিহ্ন এঁকে দিলেন। |
খ) ঈশ্বর তখন কায়িনের গায়ে | খ) মঙ্গল বয়ে আনে না। |
গ) আপন ভাইকে হত্যা করার পর | গ) মাঠে গেল । |
ঘ) হিংসা | ঘ) অভিনন্দন জানানো ও আনন্দ করা দরকার। |
ঙ) অন্যের সাফল্যে | ঙ) কায়িনের বিবেক বারবার তাকে দংশন করছিল। |
চ) চিন্তায় রাখা। |
ক) কায়িন ও আবেল কে ছিলেন?
খ) আবেলের বলিদান কী ছিল?
গ) কায়িন ও আবেলের বলিদানের মধ্যে কার বলিদান ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল?
ঘ) কায়িন আবেলকে হত্যা করল কেন ?
ক) কায়িন ও আবেলের মনোভাব ও আচরণের পাঁচটি পার্থক্য লেখ।
খ) কায়িনের বলিদান ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না কেন?
গ) কায়িন তার ভাই আবেলকে কীভাবে হত্যা করল?
আরও দেখুন...