দ্বিতীয় অধ্যায়
কৃষি প্রযুক্তি
প্রযুক্তি উদ্ভাবন একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন হওয়ার পর এর ব্যবহার কিছুদিন চলে। পরে এর চেয়েও আরও উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়। মানুষ প্রয়োজন মোতাবেক এই উন্নত নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করে। যেমন: সার একটি রাসায়নিক প্রযুক্তি। দীর্ঘদিন মানুষ গাছকে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের জন্য উন্নত সার ব্যবহার করে আসছে। এরূপ সব সময়ই নতুন প্রযুক্তি পুরাতন প্রযুক্তির স্থান দখল করে।
চিত্র আগের সাথে আলু
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• কৃষিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাখ্যা করতে পারব ।
• মাঠ ফসলের বহুমুখীকরণ ব্যাখ্যা করতে পারব।
• শস্য পর্যায় ব্যাখ্যা করতে পারব।
কৃষিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার
পাঠ-১: ধান চাষে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার
গুটি ইউরিয়ার পরিচয় : ধান চাষে অনেক সার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে নাইট্রোজেন সম্বলিত ইউরিয়া প্রধান। দানাদার ইউরিয়া সারের সাশ্রয়ী ব্যবহারের জন্য মেশিনের সাহায্যে এটাকে গুটি ইউরিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে।
গুটি ইউরিয়ার প্রয়োজনীয়তা
প্রচলিত দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের অসুবিধা থেকেই গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তাই এখানে প্রথমে প্রচলিত দানাদার ইউরিয়ার সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করা হলো । পরে গুটি ইউরিয়া সারের সুবিধা ও অসুবিধা তুলে ধরা হবে।
দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের সুবিধা
এটি প্রয়োগ করা খুব সহজ।
• প্রয়োগে সময় ও শ্রম কম লাগে।
গাছের মূল বা শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হয় না ।
বাজারে সহজলভ্য।
দানাদার ইউরিয়া ব্যবহারের অসুবিধা
• দানাদার ইউরিয়া কিস্তিতে কয়েক বার প্রয়োগ করতে হয়।
• এই সার পানিতে মিশে দ্রুত গলে এবং চুইয়ে মাটির নিচে গাছের শিকড় অঞ্চলের বাইরে চলে যায়।
• বৃষ্টি বা সেচের পানির সাথে এই সার সহজেই ক্ষেত হতে বের হয়ে যায়।
• এই সার ব্যবহারে অপচয় এবং খরচ বেশি হয়।
গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের সুবিধা
গুটি ইউরিয়া ফসলের এক মৌসুমে একবার ব্যবহার করা হয়।
গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারের ২০-৩০ ভাগ নাইট্রোজেনের সাশ্রয় হয়।
গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে গাছকে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে।
• গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে ফলন ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়
গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের অসুবিধা
• গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
• চাহিদা অনুযায়ী ৩টির আকার পাওয়া দুষ্কর।
ও শুকনো মাটিতে প্রয়োগ করা যায় না।
• সার প্রয়োগ করতে সময় ও শ্রম বেশি লাগে ।
ধান চাষে গুটি ইউরিয়ার প্রয়োগ পদ্ধতি
গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের পাঁচ থেকে সাত দিন পূর্বে ২০×২০ সে.মি. লাইন থেকে লাইন এবং চারা থেকে চারার দূরত্বে ধানের চারা রোপণ করতে হবে। ধানের চারা রোপণের ৫-৭ দিনের মধ্যে ঘাটি শক্ত হওয়ার আগে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা জরুরি। জমিতে যখন ২-৩ সে.মি. পরিমাণ পানি থাকে সে সময় ৩টি ইউরিয়া ব্যবহার সহজ হয়।
গুটি ইউরিয়ার ওজন বিভিন্ন রকমের হয়। যথা: ০.৯ গ্রাম, ১.৮ গ্রাম এবং ২.৭ গ্রাম। ওজন অনুযায়ী ধান ক্ষেতে ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ওজন যদি ০.১ গ্রাম হয় তবে চারটি গোছার মাঝখানে বোরো ধানে ৩টি এবং আমন ও আউশে ২টি করে ব্যবহার করতে হবে। ওজন যদি ১.৮ গ্রাম হয় তবে বোরোতে ২টি এবং আমন-আউশে ১টি করে ব্যবহার করতে হবে। আবার ওজন বদি ২.৭ গ্রাম হয় তবে বোরোতে ১টি গুটি প্রয়োগই যথেষ্ট।
গুটি ইউরিয়া লাইনে চাষ করা ক্ষেতে প্রয়োগ করা সুবিধাজনক। প্রথম লাইনের প্রথম চার গোছার মাঝে ১০ সেমি. গভীরে গুটি ইউরিয়া পুঁতে দিতে হয়। এরপর চার গোছা বাদ দিয়ে পরবর্তী চার পোহার মাঝে একই গভীরতায় পুঁতে দিতে হবে। প্রথম লাইন শেষ করে দ্বিতীয় লাইনে, তৃতীয় লাইনে, চতুর্থ লাইনে গুটি ইউরিয়া পুঁতে দিতে হবে। এভাবে সমগ্ৰ ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে ভাগ হয়ে ধান চাষে কোন ধরনের সার প্রয়োগ করা লাভজনক তা ব্যাখ্যা
করবে।
নতুন শব্দ দানাদার ইউরিয়া, গুটি ইউরিয়া
পাঠ-২ : গরু মোটাতাজাকরণ
আমাদের দেশে ধান ও শাকসবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও পশু সম্পদের উন্নতি তেমন হয়নি । একটা কথা মনে রাখা দরকার যে প্রানি সম্পদের উন্নতি না হলে জনগণকে প্রয়োজনীয় আমিষ সরবরাহ করা যাবে না। কারণ একজন মানুষের দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক মাথাপিছু ২৪ গ্রাম মাংস খেয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে আমাদের দেশে প্রাণিজ আমিষ সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে গো-মাংসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যেই গরু-বাছুর মোটাতাজাকরণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে গরুকে মোটাতাজা করে অধিক মূল্যে বাজারজাত করা হয় এবং অধিক লাভ পাওয়া যায়।
গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি
মোটাতাজাকরণ পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো :
১) গরু নির্বাচন ও ক্রয় করা ষাড় গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ভালো। এ জন্যে দেড়-দুই বছর বয়সের এঁড়ে বাছুর ক্রয় করা উত্তম।
২) বাসস্থান নির্মাণ : প্রতিটি গরুর জন্য ১.৫ মি. x ২ মি. জায়গায় ঘর নির্মাণ করতে হবে।
৩) রোগ ব্যাধির চিকিৎসা এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রামক রোগের টিকা দেওয়া জরুরি। ৪) খাদ্য সরবরাহ পশুকে এমন খাদ্য দিতে হবে যাতে আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ পদার্থ ও
ভিটামিনের পরিমাণ খাদ্যে বেশি থাকে।
মোটাতাজাকরণে খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া পশু মোটাতাজাকরণ অর্থ হচ্ছে পরিমিত খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে গরুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং মানুষের জন্য আমিষ সরবরাহের ব্যবস্থা করা। খাদ্য থেকে পশু পুষ্টি পায় এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে। পশুকে এমন খাদ্য দিতে হবে যাতে আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন সাধারণ খাদ্যের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ থাকে। খড়, কুড়া, ভুট্টা বা গম ভাঙা, ঝোলাগুড়, খৈল ইত্যাদিতে আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্য থাকে। আর সবুজ কাঁচা ঘাস, হাড়ের গুঁড়া ইত্যাদিতে খনিজ লবণ ও ভিটামিন থাকে ।
ইউরিয়া ও ঝোলাগুড় মেশানো খাদ্য পশু মোটাতাজাকরণের সহায়ক। এগুলো দুইভাবে মিশিয়ে খাওয়ানো যায় (১) খড়ের সাথে মিশিয়ে এবং (২) দানাদার খাদ্যের সাথে মিশিয়ে
কৃষি প্রযুক্তি
খড়ের সাথে ইউরিয়া মিশিয়ে গো-খাদ্য তৈরি
• প্রথমে একটি ভোল নিয়ে এর চারপাশ কাদা মিশিয়ে লেগে শুকিয়ে নিতে হবে।
• এরপর একটি বালতিতে ২০ লিটার পানি নিতে হবে।
• এই পানিতে ১ কেজি ইউরিয়ার দ্রবণ তৈরি করতে হবে।
• ২০ কেজি খড় ডোলের মধ্যে ছোট ছোট করে কেটে অল্প অল্প করে দিয়ে ইউরিয়া প্রবণ খড়ের উপর ছিটিয়ে চেপে চেপে ভরতে হবে।
• এভাবে সম্পূর্ণ ডোল খড় দিয়ে ভরতে হবে।
• ডোলে খড় ভরা সম্পূর্ণ হলে এর মুখ ছালা বা পলিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
• ১০-১২ দিন পর খড় বের করে রোদে শুকাতে হবে ।
• এরপরই খড় গরুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হবে ।
• সাধারণ একটি গরুকে প্রতিদিন ৩ কেজি ইউরিয়া মেশানো খড় খাওয়াতে হবে। • খড়ের সাথে দৈনিক ৩০০-৪০০ গ্রাম ঝোলাগুড় মিশিয়ে দিতে হবে।
চিত্র । মোটাতাজা গ
কাজ : দশটি গরু মোটাতাজা করার জন্য কী পরিমাণ ইউরিয়া, খড় ও ঝোলাগুড় লাগবে তা হিসাব করে বের কর ।
নতুন শব্দ : প্রাণি সম্পদ, গরু মোটাতাজাকরণ, ডোল, ঝোলাগুড়।
কৃষিশিক্ষা
পাঠ-৩: ফসলের রোগ ও তার প্রতিকার
ফসলের রোগের ধারণা
আমরা কি জানি ফসলের রোগ হয়? আমরা হয়তো ভাবতে পারি মানুষের রোগ হয়, পশু-পাখির রোগ হয়, ফসলের আবার রোগ হয় নাকি? হ্যাঁ, ফসলেরও রোগ হয়। প্রত্যেক জীবেরই জীবন আছে, রোগ আছে আবার মরণও আছে। জীবের চারপাশে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ আরও অনেক অণুজীব আছে যারা রোগ-বালাই ছড়ায়। মানুষ, জীবজন্তু, পাছপালা অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। রোগাক্রান্ত মানুষ ও জীবজন্তুকে যেমন চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয় তেমনি ফসলেরও চিকিৎসা করা হয় এবং নিরোপ করা হয়। অনেক সময় সুচিকিৎসা না হলে ফসল মরে যায়।
আমরা যদি ফসলের মাঠে যাই তবে অনেক রোগের লক্ষণ দেখতে পার-
• কোনো কোনো ফসলের পাতায় বা কাণ্ডে নানা প্রকার দাগ,
• কোনো কোনো ফসলের পাতার ঘরের মেঝের মোজাইকের মতো হলুদ-সবুজ মেশানো ছোপ ছোপ
রং।
• কোনো ফসলের শিকড় পচা
চিত্র ফসলের রোগ (ধান)
• আবার বীজতলায়ও দেখতে পাব অনেক ঢলে পড়া বা পচা চারা গাছ।
এগুলো হচ্ছে গাছের রোগের লক্ষণ। এই লক্ষণ দেখেই কৃষকেরা সতর্ক হন এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন।
এখন আমরা নিশ্চয় জানতে চাইব ফসলের রোগ বলতে কী বোঝায়? যদি ফসলের শারীরিক কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা দেয়। যেমন-ফসলের বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে না, দেখতে দুর্বল ও লিকলিকে ফুল অথবা ফল ঝরে যাচ্ছে, তখন বুঝতে হবে ফসলের কোনো না কোনো রোগ হয়েছে। নানা লক্ষণে ফসলের রোগ প্রকাশ পায়। ভিন্ন ভিন্ন ফসলের ভিন্ন ভিন্ন রোগ হয়, ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণও দেখা দেয়। নিচে কতকগুলো রোগাক্রান্ত ফসলের লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
১। দাগ ফসলের পাতায়, কাণ্ডে বা ফলের গায়ে নানা ধরনের দাগ বা স্পট দেখা দেয়। দাগের রং কালো, হালকা বাদামি, গাঢ় বাদামি কিংবা দেখতে পানিতে ভেজার মতো হয়। ফসলের এসব দাগ বিভিন্ন রোগের কারণে হয়। যেমন- ধান গাছের বাদামি দাগ একটি ছত্রাকজনিত রোগের লক্ষণ।
২। ধ্বসা রোগ পাতা ঝলসে যায়। যেমন- ধান ও আলুর ধ্বসা রোগ ।
কৃষি প্রযুক্তি
৩। মোজাইক ফসলের পাতায় যখন পাঢ় ও হালকা হলদে-সবুজ এর ছোপ ছোপ রং দেখা যায় তখন এই লক্ষণকে মোজাইক বলা হয়। ঢেড়শ ও মুগে মোজাইক রোগ দেখা যায়। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ।
চিত্র: ঢেড়শের মোজাইক রোগ
৪। ঢলে পড়া : অনেক সময় ফসলের কাণ্ড ও শিকড় রোগে আক্রান্ত হলে ফসলের শাখাগুলো মাটির দিকে ঝুলে পড়ে। এই অবস্থাকে চলে পড়া রোগ বলে। যেমন- বেগুনের ঢলে পড়া রোগ
চিত্র: বেগুনের ঢলে পড়া রোগ
৫। পাতা কুঁকড়িয়ে যাওয়া ভাইরাসজনিত কারণে ফসলের পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। পেঁপে, টমেটো এসব ফসলে পাতা কুঁকড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
প্রতিকার : রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে ফসলের রোগের প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হয়। কারণ, ফসল একবার রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে প্রতিকার করা কঠিন। তাই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার আগে নিচে উল্লিখিত প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করা জরুরি :
১। জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার করা বীজের মাধ্যমে অনেক রোগ ছড়ায়। তাই কৃষককে নীরোগ বীজ সংগ্রহ করতে হবে বা বীজ শোধন করে বুনতে হবে।
২। বীজ শোধন : অনেক বীজ আছে নিজেরাই রোগ বহন করে। বীজবাহিত রোগ জীবাণু নীরোগ করার জন্য বীজ শোধন একটি উত্তম প্রযুক্তি। এজন্য ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা হয়।
কৃষিশিক্ষা
৩। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ফসল আবাদ করা কসনের ক্ষেতে আগাছা থাকলে ফসল রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কারণ আগাছা অনেক রোগের উৎস। তাই আগাছা পরিষ্কার করে চাষাবাদ করতে হবে।
৪। রোগাক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলা বা মাটিতে পুঁতে ফেলা এক গাছ রোগাক্রান্ত হলে অন্য গাছেও ছড়িয়ে পড়ে । যাতে রোগ পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য নির্দিষ্ট রোগাক্রান্ত গাছটি তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নতুবা মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলতে হবে।
কাজ : শিক্ষার্থীরা পাঠে উল্লেখিত রোগাক্রান্ত উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে শ্রেণিতে আলোচনা ও উপস্থাপন করবে।
নতুন শব্দ : পাতার দাগ, ধ্বসা রোগ, মোজাইক, বীজ শোধন, ছত্রাক, ভাইরাস
পাঠ-৪: মৃত পশু পাখি ও মাছের ব্যবস্থাপনা
ক. মৃত পশুর সৎকার খ. মৃত পাখির সৎকার
গ. মৃত মাছের সৎকার
ক. মৃত পশুর সৎকার : মৃত পশুকে যেখানে সেখানে ফেলে রাখা যাবে না। মৃত পশু পরিবেশ দূষিত করে। পশুর রোগ জীবাণু বাতাসে ছড়ায় এবং সুস্থ পশুকে আক্রান্ত করে। তাই মৃত্যুর পর অতি দ্রুত পশুর সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে। খামার ও বসতবাড়ি হতে দূরে মৃত পশুকে সৎকার করতে হবে মৃত পশুকে উঁচু স্থানে মাটির ১:২২ মিটার (৪ ফুট) গভীরে গর্ত করে মাটি চাপা দিতে হবে। মাটি চাপা দেওয়ার সময় গর্তের উপরের স্তরে চুন বা ডিডিটি ছড়িয়ে দিতে হবে এবং এর উপর মাটি ছিটিয়ে দিতে হবে
চিত্র মুক্ত পণ্ড গর্তে ফেলা হচ্ছে
কৃষি প্রযুক্তি
খ. মৃত পাখির সৎকার : খামার ও বসত বাড়ি থেকে দূরে সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাঁস মুরগির মৃত্যুর পর যেখানে সেখানে না ফেলে একটি গর্ত করে মাটি চাপা দিতে হবে। অন্যথায় মৃত পাখি থেকে রোগজীবাণু চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং এলাকার সুস্থ ও জীবিত পাখিকে আক্রান্ত করবে। খামারে মহামারী আকারে একসাথে অনেক পাখির মৃত্যু হলে বড় গর্তে মাটি চাপা দিয়ে মাটির উপর DDT (Dichloro Diphenyl Trichloroethane) ছিটিয়ে দিতে হবে ।
গ. মৃত মাছের সৎকার : অনেক সময় চিকিৎসা করেও রোগাক্রান্ত মাছকে নীরোগ করা যায় না। বিপুল হারে মাছ মরতে শুরু করে। অতঃপর পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং পরিবেশ দূষিত হয়। এমতাবস্থায় নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে-
• জাল দিয়ে মৃত মাছগুলোকে সংগ্রহ করতে হবে।
• পুকুর থেকে অনেক দূরে যেখান থেকে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পুকুরে প্রবেশ করতে না পারে সেখানে তিন ফুট গভীর গর্ত করতে হবে।
• মাছের সংখ্যানুযায়ী প্রশস্ত গর্ত করতে হবে।
• গর্তে। মৃত মাছ নিক্ষেপ করে এর উপর ব্লিচিং পাউডার Ca (OCICI ছিটাতে হবে । অতঃপর মাটি চাপা দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।
মাঠ ফসলের বহুমুখীকরণ
পাঠ- ৫: মাঠ ফসলের বহুমুখীকরণ
কৃষক তার ফসলের মাঠে কী কী ফসল ফলান তা আমরা দেখেছি কি? ফসলের মাঠ পরিদর্শন কালে আমরা দেখতে পাবো কোন মাঠ ধানভিত্তিক, কোনটা ইক্ষুভিত্তিক, কোনটা তুলাভিত্তিক আর কোনটা পাটভিত্তিক।
মাঠ ফসলের বহুমুখীকরণ বলতে কোনো একক ফসল বা একক প্রযুক্তির উপর নির্ভর না করে ফসল বিন্যাস, মিশ্র ও সাথি ফসলের চাষ ও খামার যান্ত্রিকীকরণকে বোঝায়। শস্য বহুমুখীকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে-
১। কাঙ্ক্ষিত ফসল বিন্যাস, শস্যের আবাদ বাড়ানো এবং কৃষকের আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা
২। খামারের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করা এবং কৃষি পরিবেশের উপর প্রতিকূল প্রভাব কমিয়ে আনা ।
৩। প্রচলিত শস্যবিন্যাসে উন্নত ফসলের জাত ও কলাকৌশলের সংযোগ ঘটানো।
৪। বীজের সাশ্রয় করা এবং উৎপাদন খরচ কমানো।
৫। প্রযুক্তি গ্রহণে কৃষকদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও সমাধান করা
কৃষিশিক্ষা
১। ফসলবিন্যাস বাংলাদেশের ভূমি নানা জাতের ফসল চাষের উপযোগী। তবে প্রতিটি কৃষকই ফসলের বিন্যাস করে আবাদ করেন। ফসলবিন্যাস অর্থ হচ্ছে কৃষক সারা বছর বা ১২ মাস তার জমিতে কী কী ফসল ফলাবেন তার একটা পরিকল্পনা করা। ফসলবিন্যাস করা হয় মাটির গুণাগুণ, পানির প্রাপ্যতা, চাষ পদ্ধতি, শস্যের জাত, ঝুঁকি, আয় এসব বিষয় বিবেচনা করে। ফসলবিন্যাসে একটি শিম জাতীয় ফসল অর্ন্তভুক্ত করে সারের চাহিদা হ্রাস করা সম্ভব এবং তাতে মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পাবে।
২। মিশ্র ও সাথি ফসলের চাষ মিশ্র ও সাথি ফসলের চাষ বলতে একাধিক ফসল যা ভিন্ন সময়ে পাকে, ফলবৃদ্ধির ধরন ভিন্ন এবং মাটির বিভিন্ন স্তর থেকে খাদ্য আহরণ করে এরূপ ফসলের একত্রে চাষকে বোঝায়। মিশ্র ও সাথি ফসলে পোকামাকড়, রোগবালাই এবং আবহাওয়াজনিত ঝুঁকি হ্রাস পায়। মিশ্র ফসলে একাধিক ফসলের বীজ একসাথে মিশিয়ে জমিতে বপন করা হয়। কিন্তু সাথি ফসলের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফসলের বীজ আলাদা সারিতে বপন করা হয় বা আলাদা সারিতে ফসলের চারা রোপণ করা হয়।
৩। শূন্য চাষ পদ্ধতি শূন্য চাষ অর্থ হচ্ছে বিনা চাষে ফসল ফলানো। বন্যাকবলিত এলাকায় ধানভিত্তিক ফসল বিন্যাসে শূন্য চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন, বন্যার পানি নেমে গেলে মাটিতে রস থাকা অবস্থায় মসুর, ভুট্টা, রসুন ইত্যাদি রোপণ বা লাগানো যায় এবং ভালো ফলনও পাওয়া যায়। এতে কৃষকের ৩-৪ সপ্তাহ সময় বাঁচে।
৪। রিলে চাষ কৃষকেরা একটি শস্যে ফুল আসার পর, কিন্তু অন্য শস্য কর্তনের প্রায় এক সপ্তাহ আগে কতিপয় সুবিধা পাওয়ার জন্য শিম জাতীয় বীজ বপন করেন। একেই রিলে চাষ বলা হয়। রিলে চাষের উদ্দেশ্য হলো সেচের সীমাবদ্ধতা, শ্রম ঘাটতি এবং সময়ের অভাব দূর করা। আমাদের কৃষকেরা সাধারণত খানের ক্ষেতে রিলে চাষ করে থাকেন। রিলে চার দ্বারা মাটির গঠন উন্নত হয় এবং উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
৫। সম্পদের সুষ্ঠু সভাবহার মাঠ ফসল বহুমুখীকরণের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে- (১) অধিক উৎপাদন এবং (২) অধিক আয়। জমি, সময়, বীজ, সার, সেচের পানি, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি প্রযুক্তি এগুলো হচ্ছে কৃষকের কৃষি সম্পদ। কৃষকের আয় নির্ভর করে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর। যেমন- মিশ্র বা সাথি ফসলের চাষ হতে কৃষক অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারেন। আবার বিনা চাষে ফসল ফলালে সময় ও অর্থ উভয়ের সাশ্রয় হয়। আবার ফসল বিন্যাসে শিম জাতীয় শস্য আবাদের ব্যবস্থা থাকলে সারের চাহিদা হ্রাস পাবে।
চিত্র আখের সাথে আপু
চিত্র। শস্য বহুমুখীকরণ
চিত্র : গম, মুগ, ভুটা
কাজ তোমার এলাকায় শস্য বহুমুখীকরণে কীভাবে সাথি ফসল চাষ করা হয় বর্ণনা কর। নতুন শব্দ : শস্য বহুমুখীকরণ, ফসলবিন্যাস, মিশ্র চাষ, সাথি ফসল, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ।
কৃষি প্রযুক্তি
২৫
পাঠ-৬: মাঠ ফসলের বহুমুখীকরণের ব্যবহার
বাংলাদেশের জলবায়ু আর্দ্র ও উষ্ণভাবাপন্ন। এখানে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের প্রাধান্য আছে। ফলে সারা বছরই এখানে তিনটি মৌসুমে নানাবিধ ফসল উৎপাদন করা যায়। এগুলো হলো রবি, খরিপ-১, খরিপ-২। প্রতি মৌসুমে কৃষক তার ফসলবিন্যাসে সেসব ফসল অন্তর্ভুক্ত করেন। ফসলের উৎপাদন সময়, মাটির উর্বরতা, সেচের সুবিধা এসব বিষয় বিবেচনায় এনে ফসল নির্বাচন করেন নিচে মাঠ ফসলের বহুমুখীকরণের ব্যবহার হিসেবে কয়েকটি নমুনা উল্লেখ করা হলো:
১। আলুর সাথে রিলে ফসল হিসেবে পটলের চাষ : এটি শস্য বহুমুখীকরণের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। কৃষক নিজেদের আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে চাষাবাদে অনেক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। এই চেষ্টার মধ্যে আলুর সাথে রিলে ফসল হিসাবে পটলের চাষ বেশ জনপ্রিয়। রিলে ফসল অর্থ হচ্ছে একটি ফসলের শেষ পর্যায়ে আরেকটি ফসলের চাষ শুরু করা। এক্ষেত্রে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে কৃষকেরা আগাম আলু চাষ করেন। ৫৫ সেমি দূরত্বে সারি করে আলু লাগানো হয়। প্রতি তৃতীয় সারি ফাঁকা রেখে সে সারিতে ডিসেম্বরে পটলের ডগা রোপণ করা হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আলু উত্তোলন শেষ হয় পটল গাছ বড় হতে থাকে এবং মার্চ মাস থেকে পটল ধরতে থাকে এবং নভেম্বর মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়।
এ প্রযুক্তিতে পটলের জন্য আর সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। আর একই জমি হতে এভাবেই বাড়তি আয় সম্ভব।
অনুরূপভাবে আলুর সাথে রিলে ফসল হিসেবে করলার চাষ করা যায়।
২। মিশ্র ফসল হিসাবে আলু ও লালশাকের চাষ লালশাক স্বল্পমেয়াদি কিন্তু দ্রুত বর্ধনশীল। আলুর সাথে লাল শাকের চাষ একটি ভালো মিশ্র চাষ আগেই বলা হয়েছে যে, সারিতে আলুর চাষ করা হয় । যখন আলু গাছের উচ্চতা ৫-৬ সে.মি. হয় তখন সারি বরাবর প্রথম মাটি তোলা হয়। এই তোলা মাটিতে লাল শাকের বীজ বপন করা হয়। আলু ও লাল শাক দুইটাই সমান সমান বাড়তে থাকে। লাল শাক দ্রুত বর্ধনশীল তাই কয়েক দফা শাক উঠানো হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত লাল শাক উঠানো যায়। লাল শাক তোলার পরও আলু বড় হতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আলু তোলা হয়
কর্মা-ও, কৃষিশিক্ষা- ৮ম শ্রেণি
উল্লিখিত শস্যবহুমুখীকরণ পদ্ধতি ছাড়াও সাথি ফসল হিসাবে-
ক. আখের সাথে টমেটোর চাষ হয়;
খ. আখের সাথে সরিষার চাষ হয়:
গ. আখের সাথে মসুরের চাষ হয়।
মিশ্র ফসল হিসাবে-
ক. মসুরের সাথে সরিষার চাষ হয়
গ. আউশের সাথে তিলের চাষ হয়।
গ. কলা বাগানে আউশের চাষ হয়।
চিত্র। কলার সাথি ফ
কাজ : একটি সাথি ফসলের জমি পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দাও ।
নতুন শব্দ মিশ্র ফসল, রিলে ফসল
পাঠ-৭ : শস্য পর্যায়ের ধারণা
শস্য পর্যায় একটি উন্নত কৃষি প্রযুক্তি। এর দ্বারা মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ফসল ভালো হয়, অধিক ফলন হয় রোগ-পোকা কম হয় এবং সারের কার্যকারিতা ভালো হয়। প্রযুক্তি হিসেবে শস্য পর্যায়ের ব্যবহার সব দেশেই প্রচলিত।
মাটির উর্বরতা বজায় রেখে এক খণ্ড জমিতে শস্য ঋর বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ফসল উৎপাদন করার নাম শস্য পর্যায়। অর্থাৎ একই ধরনের ফসল একই জমিতে বার বার উৎপাদন না করে অন্য জাতের ফসল উৎপাদন করাই হচ্ছে শস্য পর্যায়। যেমন- গভীরমূলী কমল উৎপাদনের পর অগভীরমূলী জাতীয় ফসলের আবাদ করা উচিত। ফলে পোকা-মাকড় ও রোগ-পোকার উপদ্রব কম হয় এবং মাটির বিভিন্ন গভীরতা থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ সম্ভব হয়।
কৃষি প্রযুক্তি
কৃষক শস্য পর্যায় প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য তার সমগ্র জমিকে তিন বা চার খণ্ডে তাপ করেন। প্রথম বছর খণ্ডগুলোতে রবি, খরিপ-১, খরিপ-২ মৌসুম অনুযায়ী বিভিন্ন ফসল ফলানো হয়। প্রথম বছর শেষ হলে দ্বিতীয় বছরে প্রথম খণ্ডের ফসল দ্বিতীয় খণ্ডে, দ্বিতীয় খণ্ডের ফসল তৃতীয় খণ্ডে- এভাবে শেষ খণ্ডের ফলল প্রথম খণ্ডে চাষ করা হয়। দ্বিতীয় বছরের পরে তৃতীয় বছরে একইভাবে বিভিন্ন ফসলের খণ্ড পরিবর্তন হয়। তৃতীয় বছরে শস্যের আবর্তন শেষ হয় এবং প্রত্যেক ফসলই প্ৰতি খণ্ডে একবার করে চাষ করা হয়।
শস্য পর্যায়ের জন্য এমন ফসল নির্বাচন করতে হবে যাতে নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়-
• পর পর একই ফসলের চাষ না করা;
• একই শিকড় বিশিষ্ট ফসলের চাষ না করা:
• ফসলের পুষ্টি চাহিদার কম-বেশি অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করা
• ফসলের তালিকায় ডাল ফসল অর্ন্তভুক্ত করা;
• সবুজ সার যেমন- ধৈঞ্চা চাষ করা
• গবাদি পশুর খাবারের জন্য ঘাসের চাষ করা
• খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসলের চাষ করা।
শস্য পর্যায় প্রযুক্তির সুবিধা
শস্য পর্যায়ের অনেক সুবিধা লক্ষ করা যায়। সুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হলো-
• শস্য পর্যায়ের প্রযুক্তি ব্যবহারে মাটির উর্বরতা সংরক্ষিত হয়;
• মাটির পুষ্টির সমতা বজায় থাকে;
• আগাছার উপদ্রব কম হয়:
• রোগ ও পোকার উপদ্রব কম হয়;
• পানির অপচয় কম হয়
• ফসলের ফলন বাড়ে:
• গবাদি পশুর খাবারের ব্যবস্থা হয় ।
• উচ্চ মাত্রায় শস্য বহুমুখীকরণ প্রযুক্তি গ্রহণ করা যায়।
চিত্র : বিভিন্ন ফসলের শস্য পর্যায়
• বালাই নাশক (আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক, ব্যাকটেরিয়ানাশক, কীটনাশক ) ব্যবহার কমায়।
• গাছ পরিমিত পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে।
• মাটিতে নাইট্রোজেন যুক্ত হয়
কৃষিশিক্ষা
কাজ : তোমার গ্রামের কৃষকেরা শস্য পর্যায় ব্যবহার করেন তুমি তাদের সাথে আলোচনা করে কেন এবং কীভাবে তারা শস্য পর্যায় অনুসরণ করেছেন সে সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লিখে জমা দিবে।
নতুন শব্দ : শস্য পর্যায়, গভীরমূলী অগভীরমূলী ফসল
পাঠ- ৮: শস্য পর্যায়ের ব্যবহার
পূর্ববর্তী পাঠে আমরা শস্য পর্যায়ের ধারণা পেয়েছি। আমাদের কৃষক জেনে অথবা না জেনে শস্য পর্যায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছেন। বৈজ্ঞানিক যুক্তি হয়ত তারা দিতে পারবেন না। কিন্তু এতটুকু জ্ঞান তাদের আছে যে, একই ফসল একই জমিতে বছরের পর বছর চাষ করলে ফলন কম হয়। মাটির উর্বরতা কমে যায়। পোকা-মাকড় ও রোগসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। কৃষকেরা তাদের জমিতে যত ফসল ফলান সেগুলোকে রবি, খরিপ-১, খরিপ-২ এই তিন ভাগে ভাগ করেছেন কাজেই কৃষক প্রথমত: মৌসুম অনুযায়ী কী ফসল চাষ করবেন তা নির্ধারণ করেন। দ্বিতীয়ত: কোন জমিতে কী ফসল ফলাবেন তাও নির্ধারণ করেন। শস্য পর্যায়ের বিধি অনুযায়ী কৃষকের জমিকে খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করার প্রয়োজন পড়ে। আর গুগুলোর আকার সমান রাখার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের কৃষকদের জমি বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ হয়ে আছে যা আকারে সমান নাও হতে পারে। কৃষকদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই তারা জমি ও ফসল নির্বাচন করেন ।
পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার প্রায় সব এলাকা এবং দিনাজপুরের উত্তর-পশ্চিম অংশ কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-১ এর অন্তর্ভুক্ত। এখানে উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু জমি আছে। এখানকার কৃষক গম, পাট অথবা বোনা আউশ, কাউন, রোপা আমন, আলু, শাকসবজি, মুগডাল, আখ, মরিচ, বোরো, ভুট্টা ইত্যাদি ফসল চাষ করেন। কৃষকেরা বৃষ্টিপাত নির্ভর ফসল ফলান আবার সেচ নির্ভর ফসলও ফলান । এখানকার কৃষক কী কী শস্য পর্যায় ব্যবহার করেন তা দেখলে আমরা কৃষকের শস্য পর্যায় ব্যবহারের একটা বাস্তব চিত্র পাব ।
মনে করি, ঠাকুরগাঁওয়ের কোনো কৃষকের চার খণ্ড জমি আছে। তিনি চার বছরের শস্য পর্যায়ের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তিনি রবি, খরিপ-১ এবং খরিপ-২ মৌসুমভিত্তিক গম, পাট/আউশ, রোপা আমন, আলু, শাকসবজি, ধৈঞ্চা, আখ, মরিচ, তিল ইত্যাদি ফসল ফলাবেন।
আরও দেখুন...