খরা (Drought)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ | | NCTB BOOK
1

দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যে অবস্থা তাকে খরা বলে। অনেকদিন বৃষ্টিহীন অবস্থা থাকলে অথবা অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে মাটির আর্দ্রতা কমে যায়। সেই সঙ্গে মাটি তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বা কোমলতা হারিয়ে রুক্ষরূপ গ্রহণ করে খরায় পরিণত হয়।

অনাবৃষ্টি বা খরার প্রভাব (Rainless or Impact of drought)

  • আমাদের দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খরার প্রভাবে কৃষিজ ফসলের উৎপাদন কমে যায় ।
  • খাদ্যদ্রব্যের অভাব হওয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
  • উপদ্রুত অঞ্চলে পানির অভাব দেখা দেয়।
  • প্রবল উত্তাপে বিভিন্ন ধরনের অসুখের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
  • পরিবেশ রুক্ষ হয়ে ওঠে।
  • অগ্নিকাণ্ডের উপদ্রব বেড়ে যায়।

বৃষ্টিহীন ও খরাযুক্ত পরিবেশ মানুষ ও জীবজগতের স্বাভাবিক কাজকর্মের বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বনজ সম্পদ বৃদ্ধি তথা অধিক বৃক্ষরোপণ করে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ঘূর্ণিঝড় (Cyclone)
প্রচন্ড শক্তিশালী এবং মারাত্মক ধ্বংসকারী বাংলাদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় উল্লেখযোগ্য। স্থান অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন নামকরণ হয় তা তোমরা পূর্বেই জেনেছ। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বমুখী বায়ুরূপে পরিচিত। এর কেন্দ্রস্থলে নিম্নচাপ এবং চারপাশে উচ্চচাপ বিরাজ করে। বাংলাদেশে আশ্বিন-কার্তিক এবং চৈত্র-বৈশাখ মাসে এ ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয় (চিত্র ১৪.১)। বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে ঘূর্ণিঝড় হয় এবং একই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণে ফানেল আকৃতির কারণে এ দেশে অধিকসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।

কাজ : বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে মানুষের মৃত্যু ব্যতীত আর কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার একটি তালিকা তৈরি কর ।

ঘূর্ণিঝড় একটি সাময়িক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গত তিন দশকে বাংলাদেশের পূর্বাংশে বেশি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, উরিরচর, চর জব্বার, চর আলেকজান্ডার প্রভৃতি স্থানে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সংঘটিত কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের সময়কাল, নাম ও মৃত মানুষের সংখ্যা নিম্নের সারণিতে দেখানো হলো।

সারণি ১: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সংঘটিত কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়

 সংঘটিত হওয়ার সাল  ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম মৃত   মৃত মানুষের সংখ্যা
 ১২ই নভেম্বর, ১৯৭০  ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়  প্রায় ৫,০০,০০০ জন
 ২৯শে নভেম্বর, ১৯৮৮  ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়  প্রায় ১,০৮,০০০ জন
 ২৯শে এপ্রিল, ১৯৯১  ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়  প্রায় ৫,৭০৮ জন
 ১৫ই নভেম্বর, ২০০৭  সিডর  প্রায় ৩,৪৪৭ জন
 ২৫শে মে, ২০০৯  আইলা  প্রায় ৩৩০ জন

নদীভাঙন (River Bank Erosion)

নদীখাতে পানিপ্রবাহের কারণে পার্শ্ব ক্ষয়কে নদীভাঙন বলে। পলিমাটি গঠিত সমভূমি অধ্যুষিত বাংলাদেশে নদীভাঙনে প্রতি বছর প্রচুর ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়। অনেক মানুষের জীবনহানি ঘটে।

 কাজ : নদীর গতিপথ অবস্থার নাম উল্লেখ কর।
 ১  ২  ৩
     

নদীভাঙনের কারণ (Causes of river bank erosion)

  •  জলবায়ু পরিবর্তন।
  • নদীর প্রবাহপথ ও তীব্র গতিবেগ ।
  •  নদীর গতিপথ পরিবর্তন।
  •  নদীগর্ভে শিলার উপাদান।
  • রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি। বাহিত শিলার কঠিনতা।
  •  নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি।

বৃক্ষ নিধন

 কাজ : নদীভাঙনের কারণগুলো কীভাবে নদীভাঙনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে? দলে বিভক্ত হয়ে দু'টি কারণ ব্যাখ্যা কর।
                  কারণ        কার্যকরী ভূমিকা
  ১।  
  ২।  

স্বল্প আয়তনবিশিষ্ট বাংলাদেশে নদীভাঙনকে একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। বর্ষাকালেই নদীভাঙন বেশি হয়। বিশেষত প্রায় প্রতি বছর বন্যা মৌসুম ও সন্নিহিত সময়ে প্রায় ৪০টি ছোট-বড় নদীতে নদীভাঙন দেখা যায়। অনেক সময় নদী-তীরে খরাজনিত ব্যাপক ফাটলের সৃষ্টি হলে তার প্রভাবেও নদীতে ভাঙন ধরে এবং ভূমির অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয় (চিত্র ১৪.২)। নদীভাঙনে ভূমির যে ক্ষয় হয় তা অপূরণীয়। এছাড়া আর্থ-সামাজিক প্রতিক্রিয়াও মারাত্মক আকার ধারণ করে।

নদীভাঙনজনিত ক্ষয়ক্ষতি (Loss from river bank erosion)

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় নদীভাঙন এ দেশের জন্য নিয়মিত সমস্যা বলা যায়। নদীভাঙনের ক্ষতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ দেশে প্রতি বছর পদ্মা, যমুনা, মেঘনা ও তিস্তাসহ প্রায় ৪১০টি নদী-উপনদীতে বন্যা এবং সন্নিহিত নদীতে ভাঙনের ঘটনা ঘটে। এ দেশের মানুষ নদীভাঙন নামক দুর্যোগের সঙ্গে কমবেশি জড়িত। এর মধ্যে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদের মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ লোক আশ্রয় নেয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তা এবং বাঁধের উপর। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয় । এছাড়া প্রতি বছর প্রায় ৮,৭০০ হেক্টর জমি নদীভাঙনে নিঃশেষ হয়ে যায়।

নদীভাঙনে ক্ষতিতের উপাদানঃ

 খামার   ফসল
 চাষযোগ্য জমি
গৰাদি পশু
দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র
সেচ প্রকল্প
বৈদ্যুতিক টাওয়ার
সামাজিক প্রতিষ্ঠান
পারিবারিক অন্যান্য সম্পদ বসতবাড়ি
 গৰাদি পশু
গাছপালা
বৈদ্যুতিক টাওয়ার
সামাজিক প্রতিষ্ঠান

কাজ : বাংলাদেশের মানচিত্রে পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙন সংঘটিত স্থানসমূহ নির্দেশ কর।

নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি চলমান প্রক্রিয়া বিশেষ। এ দেশের প্রধান নদী ও শাখানদী দ্বারা কমবেশি নদীভাঙন প্রক্রিয়া চলে। দেশের প্রায় ১০০টি উপজেলার নদীভাঙন সংঘটিত হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতে নদীভাঙনে জমির মালিকগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। কারণ তারা কখনই আর সে জমি পুনরুদ্ধার করতে পারে না। এ কারণে ভূমিহীন মানুষের স্থানান্তর ঘটে। এদের নির্দিষ্ট কোনো কাজের সুযোগ থাকে না। সেই সঙ্গে তারা সামাজিক মর্যাদাও হারায়। ফলশ্রুতিতে তারা দুর্ভিক্ষের সাথী হয়ে শহর-নগরের ভাসমান মানুষে পরিণত হয় এবং সর্বোপরি সরকারের বোঝা হয়ে দাঁড়ায় ।

Content added || updated By
Promotion