তাপ প্রয়োগে কোনো পদার্থের কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে গলন বলে। 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে তাপ প্রদানের ফলে যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় সেই তাপমাত্রাকে উত্ত কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। প্রত্যেক বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের একটি নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে। যেমন— 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বরফের গলনাঙ্ক 0°CI
তাপ প্রয়োগ করে তরলকে গ্যাসে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে স্ফুটন বলে। 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে তাপ প্রদানের ফলে যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয় সেই তাপমাত্রাকে উত্ত তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে। প্রত্যেক বিশুদ্ধ তরলের একটি নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক থাকে। যেমন- 1 বায়ুমন্ডলীয় চাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক 100°C। স্ফুটনের বিপরীত প্রক্রিয়াটির নাম ঘনীভবন। স্ফুটনের জন্যে তাপ দিতে হয়, ঘনীভবনের সময় তাপ সরিয়ে নিতে হয়।
পরীক্ষা নং: 4 আবার ধরা যাক, আমরা একটি অবিশুদ্ধ পদার্থ মোমের গলনাঙ্ক বের করতে চাই। মোম কিছু পদার্থের মিশ্রণ। মোমের গলনাঙ্ক নির্ণয় করতে হলে প্রথমে মোমকে চূর্ণ করে পাউডার বা গুঁড়ার পরিণত করতে হবে। এরপর মোমের পুড়াকে একটি এক মুখ বন্ধ কাচনলে নিয়ে ছবির মতো করে সেখানে একটি থার্মোমিটার রাখতে হবে। এবারে কাচনলটি বিকারের পানিতে এমনভাবে ডুৰাতে হবে যেন কাচনলের খোলা মুখে পানি প্রবেশ করতে না পারে। এখন বিকারটিতে ধীরে ধীরে তাপ প্রদান করতে হবে। এক পর্যায়ে দেখা যাবে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মোম না পলে তাপমাত্রার একটি পরিসরে (range) মোম গলতে থাকে এবং তাপমাত্রার এই পরিসরই হলো মোমের গলনাঙ্ক । অবিশুদ্ধ পদার্থের গলনাঙ্ক বিশুদ্ধ পদার্থ থেকে কম হয়। স্ফুটনাঙ্ক বিশুদ্ধ থেকে বেশি হয়। মিশ্র পদার্থের সুনির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক থাকে না। যেহেতু প্রত্যেক বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের একটি নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে সেহেতু কঠিন পদার্থ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গলে থাকে। যদি দেখা যায় কোনো কঠিন পদার্থ তার গলনাঙ্ক ছাড়া অন্য কোনো তাপমাত্রায় গলছে সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে কঠিন পদার্থটি বিশুদ্ধ নয়। আবার যদি দেখা যায় কঠিন পদার্থটি একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পরিসরে গলতে থাকে তাহলেও কঠিন পদার্থটি বিশুদ্ধ নয়। যেমন- 1 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বিশুদ্ধ সালফারের গলনাঙ্ক 115°C। কিন্তু কোনো একটি সালফার নমুনার গলনাঙ্ক নির্ণয় করার সময় যদি দেখা যায় ঐ সালফার নমুনা 115°C অপেক্ষা কম তাপমাত্রায় গলছে, তবে বুঝতে হবে ঐ নমুনা সালফার বিশুদ্ধ নয় এটি ভেজাল যুক্ত সালফার। গলনাঙ্ক নির্ণয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো কঠিন পদার্থ বিশুদ্ধ নাকি অবিশুদ্ধ তা নির্ণয় করা যায়। |
পরীক্ষা ন: 5 যে তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক নির্ণয় করতে হবে ঐ তরল পদার্থ (যেমন— পানি) এর কিছু পরিমাণ একটি বিকারে নেওয়া হয়। এই বিকারের মধ্যে 1টি থার্মোমিটার যুক্ত করা হয়। এখন সতর্কতার সাথে বুনসেন বার্নার দিয়ে বিকারটিকে উত্তপ্ত করা হয়। এক পর্যায়ে সমস্ত পানি একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করবে। এই তাপমাত্রাই পানির স্ফুটনাঙ্ক । যেমন- পানিকে বিকারে নিয়ে উত্তপ্ত করলে 100°C তাপমাত্রায় সমস্ত পানি বাষ্পে পরিণত হয়। অর্থাৎ পানির স্ফুটনাঙ্ক 100°C (1 atrn চাপে)। যেহেতু প্রত্যেক বিশুদ্ধ ভরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্দিষ্ট সেহেতু একাধিক ভরলের একই স্ফুটনাঙ্ক হতে পারে না। আবার, কোনো ভরলে ভেজাল মিশ্রিত থাকলে সেটি তার স্ফুটনাঙ্ক ব্যতীত ভিন্ন তাপমাত্রায় ফুটতে থাকে। যেমন-পানিতে সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল যোগ করলে 100°C তাপমাত্রা না হয়ে অন্য কোনো তাপমাত্রায় এটি ফুটবে। স্ফুটনাঙ্কের মাধ্যমে কোনো তরল পদার্থ বিশুদ্ধ নাকি অবিশুদ্ধ তা নির্ণয় করা যায়। |
তোমরা জানতে পেরেছো যে, পলন এবং স্ফুটনের সমর তাপ দেওয়া হলেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় না। এই সময় যে তাপ দেওয়া হয় সেই ভাপটুকু পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন করে অর্থাৎ কঠিন থেকে তরল কিংবা তরল থেকে গ্যাসে পরিবর্তন করে। আমরা যদি কোনো একটি কঠিন পদার্থকে তাপ দিয়ে প্রথমে তরল পরে তরলকে বাষ্পে পরিণত করি তাহলে আমরা কী দেখব? নিচের পরীক্ষাটি দেখে আমরা সেটি বুঝতে পারি।
পরীক্ষা নং: 6
চিত্র 2.09: বরকে তাপ প্রদানের লেখচিত্র। তাপ দেওয়ার সাথে সাথে কঠিন অবস্থার বরফের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যখন OC তাপমাত্রায় পৌঁছায়, তখন কঠিন বরফ গলনের মাধ্যমে তরল পানিতে পরিণত হয়। কঠিন পদার্থ বরফের গলনের পুরো সময় তাপমাত্রা 0°C তাপমাত্রায় থাকে। এই 0°C তাপমাত্রায়ই সমস্ত বরফ পানিতে পরিণত হয়। অর্থাৎ °C তাপমাত্রা বরফের গলনাঙ্ক। গলনাঙ্কের তাপমাত্রায় যে সরলরেখা পাওয়া যায় তাকে গলনাঙ্ক রেখা বলা হয়। এখানে AB রেখা বরফের গলনাঙ্ক রেখা। এই রেখা বরাবর বরফ ও পানি উভয়ই অবস্থান করে। এরপরও তাপ দিতে থাকলে তরল পানির তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। পানির তাপমাত্রা যখন 100°C এ পৌঁছে তখন পানিতে তাপ প্রদান করলেও তরল পানির তাপমাত্রা আর বাড়ে না, পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে থাকে। স্ফুটনের সময় তরল পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এই 100°C তাপমাত্রায়ই সমস্ত পানি প্যাসীর পানি অর্থাৎ জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এরপরও তাপমাত্রা বাড়াতে থাকলে জলীয় বাষ্পের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। পানির স্ফুটনাঙ্ক 100°C। CD রেখা পানির স্ফুটনাঙ্ক রেখা। এই রেখা বরাবর সময়ে পানি এবং জলীয়বাষ্প উভয়ই এক সাথে অবস্থান করে।
আবার, পানির বাষ্পকে নিয়ে শীতল করে প্রাপ্ত ডাটাগুলোকে একটি গ্রাফ পেপারের X অক্ষে সমর এবং Y অক্ষে তাপমাত্রা নিয়ে লেখচিত্র অঙ্কন করলে নিম্নরূপ রেখা পাওয়া যাবে :
চিত্র 2.10: জলীয় বাষ্পকে শীতলকরণের লেখচিত্র। লেখচিত্র থেকে দেখা যার, শুরুতে জলীয় বাষ্পের তাপমাত্রা 140°C। এই জলীয় বাষ্পকে শীতল বা ঠাণ্ডা করে যখন তাপমাত্রা 140°C থেকে কমিয়ে 100°C এ নিয়ে যাওয়া হয় তখন জলীয় বাষ্প পানিতে পরিণত হতে শুরু করে। যতক্ষণ জলীয় বাষ্প পানিতে পরিণত হতে থাকে ততক্ষণ পানির তাপমাত্রা 100°C থাকে। এরপরও পানিকে ঠান্ডা করতে থাকলে পানির তাপমাত্রা কমতে থাকে। ঠাণ্ডা করতে করতে যখন পানির তাপমাত্রা 0°C তাপমাত্রায় পৌঁছে তখন তরল পানি কঠিন বরফে পরিণত হতে শুরু করে। এর পরেও পানিকে ঠাণ্ডা করলে পানির তাপমাত্রা আর কমে না। যখন সমস্ত তরল পানি কঠিন বরফে পরিণত হয় তখন বরফের তাপমাত্রা 0°C থেকে কমতে থাকে। চিত্রে - 40°C তাপমাত্রা পর্যন্ত বরফের তাপমাত্রা কমানো দেখানো হয়েছে। |
আরও দেখুন...