ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বর

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

ত্রিব্যক্তি ঈশ্বর সম্পর্কে আমরা প্রতি শ্রেণিতে একটু একটু করে জানতে পারছি। সারা জীবন জানলেও এই বিষয়ে আমাদের জানা শেষ হবে না। কারণ এই বিষয়টি খুবই রহস্যময়। আমরা আমাদের জানা বিষয়গুলো জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। এই শ্রেণিতে আমরা জানব যে, ত্রিব্যক্তি ঈশ্বরের তিন ব্যক্তি পরস্পর থেকে আলাদা। তা সত্ত্বেও তাঁরা সমান এবং তিন ব্যক্তির মধ্যে একটি একতা আছে। তিন ব্যক্তি পরস্পরকে যেভাবে মর্যাদা ও গুরুত্ব দিয়ে থাকে আমরাও আমাদের জীবনে সেভাবে পরস্পরকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেব।

ত্রিব্যক্তি ঈশ্বরের তিন ব্যক্তি সমান

মানুষের দেহ, মন ও আত্মার সম্পর্কে আমরা প্রথম অধ্যায়ে জেনেছি। সেখানে আমরা দেহ, মন ও আত্মার একতাকে ফলের সঙ্গে তুলনা করেছি। ঐ উদাহরণগুলো আমরা আবার এখানে স্মরণ করতে পারি। আমরা দেখেছি যে,আম ও লিচু এবং এ ধরনের কোনো কোনো ফলের মধ্যে খোসা, শাঁস ও বীজ থাকে। তিনটির কাজ ও বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। অথচ তারা মিলে একটি ফল। ত্রিব্যক্তি ঈশ্বরের বেলায়ও আমরা ঐ উদাহরণটি প্রয়োগ করতে পারি। তিনটি জিনিস মিলে যেমন একটি ফল হয় ঠিক তেমনি পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা মিলে এক ঈশ্বর। এখানে আমরা পূর্বে ব্যবহৃত আরও একটি উদাহরণ প্রয়োগ করতে পারি। সেটি হলো পানি। পানিকে আমরা তিনটি রূপে আলাদা আলাদাভাবে দেখতে পাই। যেমন সাধারণ পানি,বাষ্প এবং বরফ । কাজেই বাষ্প, বরফ ও সাধারণ পানিকে তিন রূপে দেখলেও তারা পানি। তেমনিভাবে তিন ব্যক্তি আলাদা হলেও তিন ব্যক্তি মিলে এক ঈশ্বর। তিন ব্যক্তি আবার সমান।

তিন ব্যক্তির একতা

ত্রিব্যক্তি সম্পর্কে আমরা পরিবারের উদাহরণ নিয়েও আগে আলাপ করেছি। পরিবারে বাবা, মা এবং সন্তান থাকে। অনেক পরিবারে বাবা, মা ও সন্তানদের মধ্যে যথাযথ ভালোবাসা থাকে, একত্রে কাজের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন এবং অভিজ্ঞতা সহভাগিতা করা হয়। এসব পরিবার ভালোমতো চলে ও তাদের মধ্যেএকতা থাকে। তাতে তারা সুখী হয়। কিন্তু এগুলো না থাকলে পরিবারে কখনো সুখ-শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে না। এরকম পরিবারের মানুষ অসুখী হয় ৷

পবিত্র ত্রিত্ব আমাদের সামনে একটি মহান আদর্শ। কেননা, পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মধ্যে একটি একতা বিরাজ করে। তিন ব্যক্তি পরস্পরকে সমান মর্যাদা দিয়ে থাকেন । কেউ কারো কাজে হস্তক্ষেপ করেন না কিন্তু সহযোগিতা করেন। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মধ্যে পারস্পরিক সহভাগিতাও আছে। কারণ পিতা কী করেন তা পুত্র এবং পবিত্র আত্মা জানেন। পুত্র কী করেন তা পিতা ও পবিত্র আত্মা জানেন। একইভাবে পবিত্র আত্মা যা করেন তা পিতা ও পুত্র জানেন। তাঁরা এসব করেন কারণ তাঁরা পরস্পরকে ভালোবাসেন ও মর্যাদা দিয়ে থাকেন। এই কারণে পবিত্র ত্রিত্ব টিকে থাকছে।

পরস্পরকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া

আমরা যদি সুখী ও আনন্দিত হতে চাই তবে পবিত্র ত্রিত্বের কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে। পবিত্র ত্রিত্বের মতো করে আমাদেরও পরস্পরকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য আমরা নিম্নলিখিত কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারি।

ক) মহাত্মা গান্ধী: দেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি সংগ্রাম করেছিলেন কিন্তু অন্যদের মর্যাদাও তিনি রক্ষা করতে চেয়েছেন। তাই তিনি অহিংস নীতি গড়ে তুলেছিলেন। আমরা সেই নীতি অনুসরণ করে নিজের অধিকার রক্ষা করব এবং অন্যদেরও অধিকার দেব।

খ) মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়র): যুক্তরাষ্ট্রে সাদা ও কালোর মধ্যে ভেদাভেদ ছিল। অনেকদিন ধরে নিগ্রোরা সেই দেশে দাসের মতো কাজ করেছে। তাদেরকে সেই অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য মার্টিন লুথার কিং অহিংস নীতি অনুসরণ করেছিলেন। তিনি ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে' নামক একটি চমৎকার বক্তব্যে তাঁর নীতি ব্যাখ্যা করেছেন। অবশেষে সেই দেশে শান্তি ও একতা জেগেছে।

গ) নেলসন ম্যান্ডেলা: দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুদিন যাবৎ দলাদলি ও কোন্দল চলছিল। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা সব দলকে একত্রে এনে তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে শুরু করেন। এভাবে তাঁর নেতৃত্বে সেই দেশে শান্তি ও একতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পরিবারে আমরা নিম্নলিখিতভাবে পরস্পরকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দিতে পারি:

১। কখনো অন্য কারো চিঠি না খোলা ও না পড়া, 

২। বাড়ির কর্মচারী, কাজের লোক বা শ্রমিকদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা ; 

৩। বাড়িতে অতিথি এলে প্রয়োজনে টেলিভিশন বন্ধ করে রেখে বা কাজ রেখে তাদের সাথে কথা বলা; 

৪। অন্য কারো জিনিস অনুমতি ছাড়া না ধরা; 

৫। টয়লেট, বেসিন ইত্যাদি ব্যবহার করে অন্যদের ব্যবহারের জন্য তা পরিষ্কার করে রেখে আসা; 

৬। অন্যদের সামনে কারো ভুল ধরিয়ে না দেওয়া এবং ভুলের কথা অন্যদের সামনে না বলা; 

৭। খাওয়ার সময় নিজে সবচেয়ে ভালো অংশ এবং বেশি বেশি না নিয়ে অন্যদের জন্যও রেখে দেওয়া; 

৮। অন্যের ব্যবহারের কোনো জিনিস নষ্ট হলে যথাযথ ব্যক্তিকে জানানো;

৯। খাওয়ার পর নিজের থালা ও গ্লাস নিজে ধুয়ে রাখা; বৃদ্ধ বা অসুস্থ কেউ থাকলে তাকে সাহায্য করা; 

১০। স্নানের পর তোয়ালে বা গামছা শুকানোর জন্য যথাযথ স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া; 

১১। মা-বাবা ও অন্যান্য গুরুজনদের বাধ্য থাকা; 

১২। মা-বাবা পড়াশুনা না জানলে বা কম জানলেও তাঁদের সমালোচনা না করা, বরং তাদেরকে সম্মান করা; 

১৩। কারো গায়ে পা বা ধাক্কা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চাওয়া।

 

সম্ভব হলে নিচের গানটি নৃত্যের মাধ্যমে অভিনয় কর:

জগদ্‌কারণম, জগত্তারণম, জগপ্রাণনম ত্রিব্যক্তিতে এক ভগবান……

কী শিখলাম

ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বরের তিন ব্যক্তি সমান, তিন ব্যক্তির মধ্যে একতা বিরাজমান । পরস্পরকে কীভাবে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া যায় সে বিষয়েও জানতে পেরেছি।

পরিকল্পিত কাজ

পরস্পরকে কেন মর্যাদা দেওয়া উচিত এবং কীভাবে তা দেওয়া যায় তা দলে সহভাগিতা কর।

Content added By

শূন্যস্থান পূরণ কর:

ক) পিতা, পুত্র ও ___ মিলে এক ঈশ্বর।

খ) পবিত্র ত্রিত্ব আমাদের সামনে একটি ___ আদর্শ।

গ) পবিত্র আত্মা যা করেন তা পিতা ও ___ জানেন।

ঘ) পবিত্র ত্রিত্বের মতো আমাদের পরস্পরকে ___ ও গুরুত্ব দিতে হবে।

ঙ) যুক্তরাষ্ট্রে সাদা ও কালোর মধ্যে ___ ছিল।

 

বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশের মিল কর:

ক) ত্রিব্যক্তি ঈশ্বরের তিন ব্যক্তিক) তিন রূপে দেখলেও পানি।
খ) দেহ, মন ও আত্মার একতাকেখ) যথাযথ ভালোবাসা থাকে।
গ) বাষ্প, বরফ ও সাধারণ পানিগ) সুখী হয় ৷
ঘ) তিন ব্যক্তি আলাদা হলেওঘ) পরস্পর থেকে আলাদা ।
ঙ) পরিবারে বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যেঙ) তিন ব্যক্তি মিলে এক ঈশ্বর।
 চ) ফলের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

 

সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

ক) বাড়িতে অতিথি আসলে কী করতে হবে? 

খ) কাজের লোক বা শ্রমিকদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে? 

গ) খাওয়ার সময় কী করা ভালো? 

ঘ) পিতা-মাতার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে?

 

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

ক) পরস্পরকে কী কী ভাবে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া যায়? 

খ) তিন ব্যক্তির একতা ব্যাখ্যা কর।

Content added By
শান্তি ও মিলন
একতা ও ভালোবাসা
দলাদলি ও কোন্দল
মারামারি ও যুদ্ধ

আরও দেখুন...

Promotion