স্বর্গারোহণের পূর্বে প্রভু যীশু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি স্বর্গে গিয়ে শিষ্যদের জন্য একজন সহায়ককে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি তাঁদেরকে বলেছিলেন, সেই সহায়ক না আসা পর্যন্ত তাঁরা যেন ঐ শহর ছেড়ে কোথাও না যান। পঞ্চাশত্তমী পর্বের দিনে শিষ্যদের উপর পবিত্র আত্মা নেমে এসেছিলেন একথা আমরা আগে জেনেছি। আমরা আরও জেনেছি যে, দীক্ষাস্নানের সময় পবিত্র আত্মাকে আমরা অন্তরে লাভ করেছি। হস্তার্পণের সময় পবিত্র আত্মা আমাদের অন্তরে নতুন করে এসেছেন। পবিত্র আত্মা আমাদের সঙ্গে সর্বদা থাকেন ও আমাদের পরিচালনা করেন। তিনি আমাদের জন্য যে দানগুলো নিয়ে আসেন তা পেয়ে আমরা পরিপক্ক খ্রিষ্টভক্ত হতে পারি। এখন আমাদেরকে আরও ভালোরূপে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণার অর্থ জানতে হবে। আমাদের অনবরত চেষ্টা করতে হবে যেন আমরা দেহের বশে বা নিজের ইচ্ছামতো না চলে পবিত্র আত্মার প্রেরণামতো চলি। তবেই আমরা সুখী মানুষ হিসাবে দিন দিন বেড়ে উঠতে পারব।
অন্যদিকে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চলার অর্থ হলো পবিত্র আত্মা যেভাবে চলতে বলেন সেভাবে চলা। এভাবে যারা চলে তাদের মধ্যে দেখা যায় ভালোবাসা, আনন্দ, শান্তি, সহিষ্ণুতা, সহৃদয়তা, মঙ্গলানুভবতা, বিশস্ততা, কোমলতা আর আত্মসংযম।
পবিত্র আত্মা আমাদেরকে যীশুর দেখানো পথে পরিচালনা করেন। যীশু এ কারণেই আমাদের জন্য সেই সহায়ককে পাঠিয়েছেন, যেন তিনি এসে আমাদেরকে তাঁর কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দেন। এখানে কামনা-বাসনার কোনো স্থান নেই। যারা পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চলে তাদের মধ্যে পাপের প্রভাব নেই ৷
দেহের বশকে সাধু পল বলেন নিম্নতর স্বভাব। এর অর্থ দেহ যখন যা করতে বলে সে রকমভাবেই চলা। দেহের বশ বা নিম্নতর স্বভাবের বশে চলার কয়েকটি দিক তিনি দেখিয়েছেন। যেমন, ব্যভিচার, অশুচিতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, পৌত্তলিকতা, তন্ত্রমন্ত্র সাধন, শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, ক্রোধ, রেষারেষি, মনোমালিন্য, দলাদলি, হিংসা, মাতলামি, বেসামাল ভোজ-উৎসব আর এইসব ধরনের সমস্ত কিছু। আমরা বুঝতেই পারছি যে নিম্নতর স্বভাব বা দেহের বশ আমাদেরকে পাপের পথে নিয়ে যায়। এটি আমাদেরকে কামনা ও বাসনার দিকে পরিচালনা করে। এর ফল আমাদের সকলের জন্যই খারাপ।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, দেহের বশ বা নিম্নতর স্বভাব আমাদেরকে পাপের পথে নিয়ে যায়। কিন্তু পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চললে আমরা যীশুর পথেই থাকতে পারি। নিম্নে আরও স্পষ্টভাবে এই দুইটি বিষয়ের তুলনা করা হলো।
পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা | দেহের বশ (নিম্নতর স্বভাব) |
---|---|
ভালোবাসা, আনন্দ, শান্তি, সহিষ্ণুতা, সহৃদয়তা, মঙ্গলানুভবতা, বিশ্বস্ততা, কোমলতা আর আত্মসংযম। | ব্যভিচার, অশুচিতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, পৌত্তলিকতা, তন্ত্রমন্ত্র সাধন, শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, ক্রোধ, রেষারেষি, মনোমালিন্য, দলাদলি, হিংসা, মাতলামি, বেসামাল ভোজ-উৎসব। |
ঈশ্বরের পথে পরিচালনা করে। | শয়তানের পথে পরিচালনা করে। |
পবিত্র আত্মা আমাদের দেন জীবন। | দেহের বশ আনে মৃত্যু । |
পবিত্র আত্মা আমাদেরকে প্রকৃত সুখী করেন। | দেহের বশে চললে আমরা অসুখী হই। |
পরিবার, সমাজ, দেশ, মণ্ডলীতে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করে। | পরিবার, সমাজ, দেশ, মণ্ডলী অশান্তি ও বিশৃঙ্খলায় ছেয়ে যায়। |
ঈশ্বর খুশি হন । | শয়তান খুশি হয়। |
পবিত্র আত্মার নির্দেশিত পথ হলো সত্য পথ। কারণ পবিত্র আত্মা যে পথ দেখান সেটা হলো যীশুর পথ। নিম্নলিখিতভাবে আমরা পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চলতে পারি:
১। প্রথমে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা অনুসারে চলার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ,
২। আমাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে খোলা মনে গ্রহণ করা;
৩। প্রতিদিন পবিত্র বাইবেল পাঠ করা ও এই বাণী যা করার অনুপ্রেরণা দান করে তা মেনে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা;
৪। ভক্তিসহকারে খ্রিষ্টযাগে যোগদান করে সেখান থেকে যে-শক্তি, সাহস ও প্রেরণা পাওয়া যায় তা জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা;
৫। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য সবসময় আধ্যাত্মিক গুরুব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করা, নিজে প্রার্থনা করা ও অন্তরে পবিত্র আত্মা কী বলেন তা শুনে সেই অনুসারে সিদ্ধান্তে আসা;
৬। প্রত্যেকটি কাজ শেষ করার পর প্রার্থনার সময় পবিত্র আত্মাকে জিজ্ঞাসা করা কাজটি কতোখানি তাঁর ইচ্ছানুসারে হয়েছে; দুর্বলতা পাওয়া গেলে তা দূর করার জন্য পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক তা পবিত্র আত্মাকেই জিজ্ঞাসা করা ও তাঁর উত্তর শ্রবণ করা;
৭। কাজের শুরুতে ও শেষে সব সময় পবিত্র আত্মার শক্তি ভিক্ষা করে প্রার্থনা করা; কৃতকার্যতার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানানো; ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চাওয়া;
৮। অন্যদের পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা অনুসারে চলার পরামর্শ দেওয়া । প্রভু যীশু সহায়ক আত্মা হিসাবে পবিত্র আত্মাকে আমাদের দান করেছেন আমরা যেন সঠিকভাবে পরিচালিত হই। তাই হৃদয়,মন খোলা রেখে আমরা সেই পরিচালনা মতো জীবন যাপন করব। পবিত্র আত্মাকে আমাদের জীবনের পরিচালক হিসাবে গ্রহণ করব।
পবিত্র আত্মা আমাদেরকে যীশুর পথ দেখান। তাঁর অনুপ্রেরণায় চললে আমরা ঐশ জীবন পাই। কিন্তু দেহের বশে চললে আমরা ধ্বংসের পথে যাই। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা অনুসারে চলাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য।
কীভাবে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চলা যায় তার একটি তালিকা প্রস্তুত কর।
ক। নিম্নতর স্বভাব আমাদের ___ পথে নিয়ে যায় ।
খ। পবিত্র আত্মা আমাদের ___ পথে পরিচালনা করে।
গ। পবিত্র আত্মা আমাদের দেন ___ I
ঘ। দেহের বশে চললে আমরা ___ হই ৷
ঙ। দেহের বশে চললে ___ খুশি হয় ৷
ক। দীক্ষাস্নানের সময় আমরা পবিত্র আত্মাকে | ক। শত্রুতা, বিবাদ, দলাদলি ও হিংসা । |
খ। পবিত্র আত্মার দান পেয়ে আমরা | খ। ভালোবাসা, আনন্দ, শান্তি ও আত্মসংযম। |
গ। নিম্নতর স্বভাবের কয়েকটি দিক হলো | গ। পথে পরিচালিত করে। |
ঘ। যারা পবিত্র আত্মার বশে চলে তাদের মধ্যে দেখা যায় | ঘ। অন্তরে লাভ করেছি |
ঙ। পবিত্র আত্মা আমাদের যীশুর দেখানো | ঙ। “তবুও আমি যা চাই, তা নয়, তুমিই যা চাও, তাই হোক!” |
চ। পরিপক্ব খ্রিষ্টভক্ত হতে পারি। |
ক) স্বর্গারোহণের আগে যীশু শিষ্যদের কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন?
খ) কে সর্বদা আমাদের পরিচালনা করেন ?
গ) সাধু পলের ভাষায় দেহের বশ বলতে কী বোঝায় ?
ঘ) পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় চলার অর্থ কী?
ক) দেহের বশে চলা ও পবিত্র অনুপ্রেরণায় চলা বলতে কী বোঝ ?
খ) পবিত্র আত্মার প্রেরণা ও দেহের বশ বিষয় দুইটির পার্থক্য লেখ ।
গ) পবিত্র আত্মার দেখানো পথে কীভাবে আমরা চলতে পারি সে উপায়গুলো লেখ ।
আরও দেখুন...