সব মানুষ মুক্তি চায়। ইস্রায়েল জাতি মিশর দেশের দাসত্ব থেকে মুক্তি চেয়েছিল আর তারা তা পেয়েছিল। পাপের দাসত্ব থেকে ঈশ্বর মানুষকে মুক্ত করবেন, একজন ত্রাণকর্তাকে পাঠিয়ে দেবেন, এই প্রতিশ্রুতি ঈশ্বর দিয়েছিলেন। সেজন্যে মানুষ দীর্ঘদিন একজন মুক্তিদাতার অপেক্ষায় দিন গুনছিল। অবশেষে প্রতিশ্রুত মুক্তিদাতা আসলেন, কিন্তু সব মানুষ তাঁকে চিনল না, তাঁকে গ্রহণও করল না। আমরা সেই মুক্তিদাতার সন্ধান পেয়েছি। কিন্তু মুক্তি বা পরিত্রাণের অর্থ, এর ফল ও তাৎপর্য আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হওয়া দরকার।
মুক্তি বা পরিত্রাণ কথাটির সাধারণ অর্থ হলো কোনো বিপদ বা দুরবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া বা উদ্ধার লাভ করা। এর অর্থ কোনো ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে নিরাপদ অবস্থায় আশ্রয় নেওয়া। খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের জীবনে পরিত্রাণ বা মুক্তি বলতে আমরা বুঝে থাকি পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়া ও স্বর্গে যাওয়ার সুযোগ লাভ করা।
আমাদের আদি পিতামাতার পাপের ফলে গোটা মানবজাতির স্বর্গে প্রবেশের দ্বার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি একজন মুক্তিদাতাকে পাঠিয়ে দেবেন। পুরাতন নিয়মে আমরা দেখতে পাই মোশী ইস্রায়েল জাতিকে মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন। নতুন নিয়মে আমরা দেখি, মানুষের অপেক্ষার দিন শেষ হয়েছে যখন আকাঙ্ক্ষিত মুক্তিদাতা যীশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে আসলেন। তিনি এসে তাঁর নিজের জীবনকে মুক্তিমূল্য (মুক্তিপণ) দিয়ে আমাদের জন্য পরিত্রাণ বা মুক্তি এনেছেন। পাপের কারাগার থেকে তিনি আমাদের ফিরিয়ে এনেছেন।
এবার আমরা দেখব মুক্তির ফল কী? বিশ্বাসের জীবনে প্রত্যেক মানুষ মুক্তি পেতে চায়। আদম হবার পাপের ফলে মানুষ যে-পাপে কলুষিত হয়েছে, মানুষ সেই কলুষতা থেকে মুক্তি পেতে চায়; ঐশ কৃপায় পরিশুদ্ধ হতে চায়। ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ার সময়কে বলা হয় মুক্তির ইতিহাস। আমরা ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মুক্তির পথে অগ্রসর হই। যীশুকে মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করলে আমাদের জীবন ও হৃদয়ের পরিবর্তন হতে শুরু করে। এই পরিবর্তন পৃথিবী, আমাদের জীবন এবং স্বর্গেও লক্ষ করা যায় ।
১। আমরা মুক্তিলাভ করলে স্বর্গে অনেক আনন্দ পাই। “যাদের মন ফেরানোর প্রয়োজন নেই, এমন নিরানব্বইজন ধার্মিককে নিয়ে স্বর্গে যত আনন্দ হয়, তার চেয়েও ঢের বেশি আনন্দ হয় যখন একজন পাপী মন ফেরায়” (লুক ১৫:৭);
২। পুত্রকে বিশ্বাস করে আমরা শাশ্বত জীবন লাভ করি;
৩। খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের জীবনে নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা লাভ করি;
৪। পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করি এবং সাহসী হয়ে উঠি;
৫। পাপের ক্ষমা লাভ করি এবং ঐশকৃপায় পূর্ণ হই;
৬। মুক্তিলাভের মাধ্যমে আমরা পবিত্র হই ও স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য হই;
৭। পুনরুত্থিত ও গৌরবান্বিত হওয়ার আশা পাই ;
৮। আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলে গণ্য হই। তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় ও গভীর হয়;
৯। যীশু খ্রিষ্টকে আমরা মুক্তিদাতা প্রভু হিসাবে পূর্ণভাবে গ্রহণ করি;
১০। মুক্ত মানুষ হিসাবে আমরা অন্তরে শান্তি ও আনন্দ লাভ করি।
তবে সবসময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে মুক্তিলাভের জন্য আমাদের থাকতে হবে গভীর বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টা। মুক্তিলাভ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই মুক্তির পথে চলার জন্য সবসময় আমাদের সচেতন থাকতে হবে। পবিত্র আত্মার প্রেরণা অনুসারে পবিত্র জীবন যাপন করতে হবে।
মানবজাতি দীর্ঘদিন যাবৎ অপেক্ষা করছিল একজন মুক্তিদাতার আগমনের জন্য। এ বিষয়ে পুরাতন নিয়মে প্রবক্তাগণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। প্রবক্তা ইসাইয়ার গ্রন্থে বলা হয়েছে: “অন্ধকারে পথ চলছিল যারা, সেই জাতির মানুষেরা দেখেছে এক মহান আলোক; ছায়াচ্ছন্ন দেশে যারা বাস করছিল, তাদের উপর ফুটে উঠেছে একটি আলো। কেননা যে জোয়ালের ভার তাদের উপর চেপে বসেছিল, যে জোয়াল তাদের কাঁধের উপর দুর্বহ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের নির্যাতকের সেই যে বেতখানি, সবই তুমি ভেঙে ফেলেছ, যেমনটি ভেঙেছিলে মিদিয়ানে সেই পরাজয়ের দিনে। কেননা আমাদের জন্যে একটি শিশু যে জন্ম নিয়েছেন, একটি পুত্রকে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাঁধের উপর রাখা হয়েছে সবকিছুর আধিপত্যের ভার। তাঁকে ডাকা হবে অনন্য পরিকল্পক, পরাক্রমী ঈশ্বর, শাশ্বত পিতা, শান্তিরাজ, এমনি নামে।”(ইসা ৯: ১, ৩, ৫)
নতুন নিয়মে আমরা দীক্ষাগুরু যোহনের মুখে শুনতে পাই: “আমি তো জলেই অবগাহন করিয়ে তোমাদের দীক্ষাস্নাত করি: তা করি যাতে তোমাদের মনের পরিবর্তন হয়। তবে যিনি আমার পরে আসছেন, তিনি আমার চেয়ে শক্তিশালী; তাঁর জুতা জোড়া বইবার যোগ্যতাও আমার নেই। তিনি কিন্তু পবিত্র আত্মা ও অগ্নিতেই অবগাহন করিয়ে তোমাদের দীক্ষাস্নাত করবেন।”(মথি ৩:১১)
আমাদের পরিত্রাণের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এই যে ঈশ্বর আমাদের নিঃশর্তভাবে ভালোবাসেন। এদেন বাগানে আদম ও হবার পাপের পর মানুষকে তিনি চরম শাস্তি দিতে পারতেন। স্বর্গের দরজা চিরকালের মতো বন্ধ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি বরং তিনি মানুষকে মুক্ত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। যথাসময়ে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে পাঠিয়ে মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্ত করলেন। তাঁর একমাত্র পুত্র অকথ্য যন্ত্রণা ভোগ করলেন, ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন এবং মৃত্যুকে জয় করে মানুষকে পাপ ও শয়তানের কবল থেকে মুক্ত করলেন। পুত্রের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর নিজেকে পিতা বলে ডাকার অধিকার দিলেন। এতে আমরা ঈশ্বরের মহান ভালোবাসার পরিচয় পেলাম ।
আমাদের আদি পিতামাতার পাপের ফলে স্বর্গের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে আমাদেরকে পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন। মুক্তিদাতার আগমনের জন্য প্রবক্তাদের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। এখন আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি। শয়তানের কবল থেকে মুক্ত হয়েছি।
বাস্তব জীবনে মুক্তি বা পরিত্রাণের অনুভূতি ছোট দলে সহভাগিতা কর।
ক) ত্রাণকর্তা পাঠাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ___ ।
খ) খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসের জীবনে পরিত্রাণ অর্থ ___ থেকে মুক্ত হওয়া।
গ) আমাদের প্রতীক্ষিত মুক্তিদাতার নাম ___।
ঘ) ইস্রায়েল জাতি ___ দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করেছিল।
ঙ) যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর নিজেকে ___ বলে ডাকার অধিকার দিয়েছেন।
ক। পুত্রকে বিশ্বাস করে আমরা | ক। চলমান প্রক্রিয়া। |
খ। পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করে | খ। স্বর্গে যাই । |
গ। “অন্ধকারে পথ চলছিল যারা, | গ। মুক্তির ইতিহাস। |
ঘ। ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ার সময়কে বলা হয় | ঘ। শাশ্বত জীবন লাভ করি । |
ঙ। মুক্তিলাভ একটি | ঙ। আমরা সাহসী হয়ে উঠি । |
চ। সেই জাতির মানুষেরা দেখেছে এক মহান আলোক।” |
ক। যীশু আমাদের কার কবল থেকে রক্ষা করেছেন ?
খ। আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করার জন্য যীশু কী মুক্তিপণ দিয়েছেন?
গ। কাদের পাপের ফলে স্বর্গের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?
ঘ। মুক্তিলাভের জন্য আমাদের কী থাকতে হবে?
ক) মুক্তিলাভের ফলে আমাদের জীবনে কী হয় লেখ ।
খ) দীক্ষাগুরু যোহন যীশু সম্পর্কে কী বলেছিলেন ?
গ) পরিত্রাণের তাৎপর্য লেখ ৷
আরও দেখুন...