ফসলের ক্ষেত্রে মৌসুম নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠার প্রধান কারণ হলো দিনের দৈর্ঘ্য সংবেদনশীলতা। এই দিবাদৈর্ঘ্য সংবেদনশীলতা দূর করতে বা কমিয়ে দিতে পারলে অর্থাৎ একটি মৌসুম নির্ভর ফসলকে মৌসুম নির্ভরতামুক্ত করতে পারলে ফসলটি যে কোনো মৌসুমে উৎপাদন করা যায়।
১। বাজারে অসময়ের ফল ও সবজির চাহিদা খুবই বেশি। এসব অসময়ের ফসল উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। কৃষক ও খুচরা বিক্রেতা উভয়ে বাড়তি পয়সা উপার্জন করতে পারে।
২। বিশেষ করে আগাম ফসল বাজারজাত করতে পারলে বেশি দাম পাওয়া যায়।
৩। ঋতুচক্র সংশ্লিষ্ট কর্মহীনতা দূর করে কৃষককে সারা বছর কর্মব্যস্ত রাখতে পারে।
81 একই কারণে গ্রামীণ কর্মশক্তিকে সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা দিতে পারে।
৫। মঙ্গা বা এই ধরনের সাময়িক দুর্ভিক্ষাবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
৬। বাজারে কৃষিপণ্য বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করতে পারে।
৭। পুষ্টি সমস্যার সমাধান সহজতর করতে পারে।
৮। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে এনে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হতে পারে।
৯। বিদেশি ক্রেতাদের সারা বছর কৃষিপণ্যের লভ্যতার নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। ফলে কৃষিপণ্যের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো যায়।
১০। কৃষি গবেষণাকে মৌসুম নির্ভরতামুক্ত করা যায়।
১। ফসল উৎপাদনের কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি : ফসলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক গুণাগুণ পরিবর্তন না করেই এই কৌশলে যে কোনো ফসল উৎপাদন করা যায়। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত মাঠে বা উদ্যানে না করে গ্রিন হাউসে কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন করা হয়। অর্থাৎ বদ্ধ ঘরে কৃত্রিম উপায়ে পর্যাপ্ত আলো, উত্তাপ, বায়ুর
আর্দ্রতাসহ পরিবেশগত যাবতীয় উপাদান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় সুষম পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়। এই কৌশল বাস্তবায়নের প্রথম শর্ত হলো – ফসলের পরিবেশ ও পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা। দ্বিতীয় শর্ত হলো - প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি ও পুষ্টি সরবরাহের যান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থাপন ও পরিচালনা। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো -নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। এই পদ্ধতিতে যে কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হলেও উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ বিশেষ ফসল ছাড়া এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না। এই কৌশলে কোনো ফসল বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা যায় না । সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা হওয়ায় এই পদ্ধতিতে ফসল হয় সম্পূর্ণ রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত।
আমাদের দেশে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম (মিষ্টি মরিচ), স্ট্রবেরি ও টমেটো উৎপাদন করা হয়েছে । বর্তমানে এই ফসলগুলোর বাজারমূল্য অনেক বেশি।
২। ফসলের জেনেটিক বা বংশগতির পরিবর্তন : ফসলের মৌসুম নির্ভরতা কাটিয়ে উঠার এবং তুলনামূলক স্বল্প খরচের পদ্ধতি হলো ফসলের বংশগতিতে পরিবর্তন আনা। ফসলের জিনগত বিন্যাস বদলানো, ফসলের দিবাদৈর্ঘ্য সংবেদনশীলতার জন্য দায়ী জিন ছাঁটাই করা অথবা এমন পরিবর্তন আনা যাতে তা প্রশমিত থাকে। সংকরায়ণ ও ক্রমাগত নির্বাচনের মাধ্যম ছাড়াও অন্য বেশ কিছু আধুনিক উপায়ে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এই ধরনের ফসলকে জিএম ফসল বা জেনেটিক্যালি মডিফাইড ক্রপ বলা হয়। এই বিশেষ কৌশলসমূহকে সাধারণভাবে বলা হয় জীব-কৌশল বা বায়োটেকনোলজি।
৩। অভিজ্ঞ কৃষকের পর্যবেক্ষণ, চয়ন ও নিরীক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও মৌসুম নির্ভরতা এড়াতে সক্ষম এমন ফসল উদ্ভাবন করা যেতে পারে । এগুলো মাঠ পর্যায়ে টিকে গেলে নতুন জাত (ভ্যারাইটি/কালটিভার) হিসাবে স্বীকৃতিও পেতে পারে । কৃষক পর্যায়ের আবিষ্কৃত এই সব আগাম জাত, নাবি জাত মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে ফলে জনপ্রিয় কোনো কৃষিপণ্য বাজারে দীর্ঘসময় ধরে পাওয়া যায়। এই সকল কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় খুব বেশি না হওয়ায় কৃষকের মুনাফা বৃদ্ধিতে বেশ অবদান রাখতে পারে । ফসলের জাত উদ্ভাবনে মানবসৃষ্ট এটাই সবচেয়ে সনাতন পদ্ধতি।
কাজ : বাংলাদেশে গ্রিন হাউসে ফসল ফলানো কতটা যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা কর। |
আরও দেখুন...