বন্দনা
এই অধ্যায়ে যা আছে-
অংশগ্রহণমূলক কাজ-১২: জোড়ায় কাজ
তালিকা তৈরি: পরিবারে আমরা যেসব বন্দনা করি তার একটি তালিকা তৈরি করি
বন্দনার নামের তালিকা |
১. |
২. |
. |
. |
. |
চিত্র-৯: বৌদ্ধ বিহারে ছেলে-মেয়েসহ পিতা-মাতা বন্দনা নিবেদন করছেন
'বন্দনা' শব্দের অর্থ হলো প্রণতি, প্রণাম ও শ্রদ্ধা নিবেদন। বৌদ্ধরা প্রতিদিন বিহারে বুদ্ধমূর্তির সামনে বা নিজ গৃহে বুদ্ধাসনের সামনে বন্দনা নিবেদন করেন। নানা রকম বন্দনা রয়েছে। যেমন: ত্রিরত্ন বন্দনা, অষ্টবিংশতি বুদ্ধ বন্দনা, ভিক্ষু বন্দনা, মাতৃ বন্দনা, পিতৃ বন্দনা, বোধিবৃক্ষ বন্দনা, সপ্ত মহাস্থান বন্দনা, স্তূপ বন্দনা ইত্যাদি। ত্রিরত্ন বন্দনায় বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের গুণাবলি স্মরণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ভিক্ষু বন্দনায় কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বন্দনা নিবেদন করা হয়। মাতৃ বন্দনায় স্নেহ মমতায় লালন পালন করার জন্য মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পিতৃ বন্দনায় ভরণ-পোষণ ও সুশিক্ষা দানের জন্য পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সপ্ত মহাস্থান বন্দনায় বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সাতটি মহাস্থানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। স্তূপ বন্দনায় বুদ্ধের দেহভস্ম ও ব্যবহার্য দ্রব্য রক্ষিত স্তূপের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বৌদ্ধরা প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা দু'বেলা বন্দনা নিবেদন করেন। এই *পাঠে আমরা ভিক্ষু বন্দনা, মাতৃ বন্দনা ও পিতৃ বন্দনা সম্পর্কে জানব।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-১৩: একক কাজ
তুষার বল তৈরি: বিভিন্ন বন্দনার নাম দিয়ে একটি তুষার বল তৈরি করি
ভিক্ষু বন্দনা
ওকাস, বন্দামি ভন্তে, দ্বারওযেন কতং সব্বং অপরাধং খমতু মে ভন্তে। দুতিযম্পি, ওকাস, বন্দামি ভন্তে, দ্বারত্তযেন কতং সব্বং অপরাধং খমতু মে ভন্তে। ততিযম্পি, ওকাস, বন্দামি ভন্তে, দ্বারত্তযেন কতং সব্বং অপরাধং খমতু মে ভন্তে।
বাংলা অনুবাদ
ভন্তে! অবকাশ প্রদান করুন। আমি বন্দনা নিবেদন করছি, আমার ত্রিদ্বারে (কায়, বাক্য ও মনে) কৃত সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করুন।
দ্বিতীয়বার, ভন্তে! অবকাশ প্রদান করুন। আমি বন্দনা নিবেদন করছি, আমার ত্রিদ্বারে (কায়, বাক্য ও মনে) কৃত সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করুন।
তৃতীয়বার, ভন্তে! অবকাশ প্রদান করুন। আমি বন্দনা নিবেদন করছি, আমার ত্রিদ্বারে (কায়, বাক্য ও মনে) কৃত সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করুন।
মাতৃ বন্দনা
কত্বান কাযে রুধিরং খীরং যা সিনেহ পূরিতা পাযেত্বা মং সংবঢেসি বন্দে তং মম মাতরং।
মাতৃ বন্দনার বাংলা অনুবাদ: যে জননী রক্ত-সঞ্জাত স্নেহসিক্ত স্তন্যপান করিয়ে আমাকে লালন-পালন করেছেন, সেই মমতাময়ী মাতাকে আমি বন্দনা করছি।
পিতৃ বন্দনা
দযায পরিপুন্নোব জনকো যো পিতা মম, পোসেসি বুদ্ধিং করোসি বন্দে তং পিতরং মম।
পিতৃ বন্দনার বাংলা অনুবাদ: দয়ায় পরিপূর্ণ যে পিতা আমাকে ভরণ-পোষণ করেছেন এবং আমার জ্ঞান- বুদ্ধি বিকশিত করেছেন সেই পিতাকে আমি বন্দনা করছি।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-১৪: দলগত কাজ
ভূমিকাভিনয়: ভিক্ষু বন্দনা, মাতৃ বন্দনা ও পিতৃ বন্দনা ভূমিকাভিনয় করে দেখাই।
বন্দনার নিয়মাবলি
বিহারে বা গৃহে নিয়ম অনুসরণ করে বন্দনা করতে হয়। সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যা দু'বেলা বন্দনা করা হয়। বৌদ্ধ বিহারে বা নিজ গৃহে বুদ্ধমূর্তি বা বুদ্ধ প্রতিবিম্বের সামনে বসে বন্দনা করা ভালো। তবে বন্দনা করার পূর্বে মুখ, হাত-পা ধৌত করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করতে হয়। সর্বদা কুশল চিত্তে বন্দনা করা উচিত। বন্দনা করার সময় মনে কোনো প্রকার অকুশল চিন্তা করা যাবে না। হাঁটু ভেঙ্গে, করজোড়ে বসে বন্দনা নিবেদন করতে হয়। বন্দনা শেষে বয়োজ্যেষ্ঠ ও গুরুজনকে প্রণাম করতে হয়।
অংশগ্রহণমূলক কাজ-১৫: জোড়ায় কাজ
মিলকরণ: জোড়ায় আলোচনা করে বাম পাশের বাক্যের সাথে ডান পাশের বাক্যের মিল করি
ক. নিয়ম অনুসরণ করে | ক. বন্দনা করা ভালো। |
খ. বুদ্ধমূর্তি বা বুদ্ধ প্রতিবিম্বের সামনে বসে | খ. অকুশল চিন্তা করা যাবে না। |
গ. বন্দনা করার পূর্বে | গ. বন্দনা করা উচিত। |
ঘ. সর্বদা কুশল চিত্তে | ঘ. বন্দনা করতে হয়। |
ঙ. বন্দনা করার সময় | ঙ. মুখ, হাত, পা ধৌত করতে হয়। |
অংশগ্রহণমূলক কাজ-১৬: একক কাজ
শূন্যস্থান পূরণ: সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করি
ক) নিয়ম অনুসরণ করে -- . . . . . . . . . . . . . . . . . .নিবেদন করতে হয়।
খ) সাধারণত . . . . . . . . . . . . . . . . . .ও . . . . . . . . . . . . . . . . . .দু'বেলা বন্দনা করা হয়।
গ) সর্বদা . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . বন্দনা করতে হবে।
ঘ) বন্দনা করার সময় মনে কোনো প্রকার . . . . . . . . . . . . . . . . . . করা যাবে না।
ঙ) বন্দনা শেষে . . . . . . . . . . . . . . . . . .ও . . . . . . . . . . . . . . . . . .প্রণাম করতে হয়।
বন্দনার সুফল
বন্দনা করার সুফল অনেক। নিয়মিত বন্দনা করলে মন প্রসন্ন থাকে। মনে অকুশল চিন্তা উৎপন্ন হয় না। চরিত্র সুন্দর হয়। মন্দ কাজ করা থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করার চেতনা জাগ্রত হয়। ধর্মগুরু, মা- বাবা ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়। পরোপকারের মনোভাব সৃষ্টি হয়। প্রাণী ও প্রকৃতির প্রতি মমত্ব বাড়ে। কুশল চিত্তে সকাল, সন্ধ্যা বন্দনা করলে আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যারা প্রত্যহ বন্দনা করে তাদের সকলে শ্রদ্ধা করে, স্নেহ করে এবং ভালোবাসে।
অংশগ্রহনমূলক কাজ-১৭: দলগত কাজ
অনুচ্ছেদ লিখন: নিয়মিত বন্দনা করার ফলে আমাদের জীবনে যেসব পরিবর্তন এসেছে তা লিখি
অংশগ্রহণমূলক কাজ-১৮: একক কাজ
শুদ্ধ ও অশুদ্ধ: টিক (✔) চিহ্ন দিয়ে শুদ্ধ-অশুদ্ধ নির্ণয় করি
ক) বন্দনা করার সুফল অনেক। শুদ্ধ/অশুদ্ধ
খ) বন্দনা করলে মন প্রসন্ন থাকে না। শুদ্ধ/অশুদ্ধ
গ) বন্দনা করলে মনে অকুশল চিন্তা উৎপন্ন হয়। শুদ্ধ/অশুদ্ধ
ঘ) বন্দনা করলে চরিত্র সুন্দর হয় না। শুদ্ধ/অশুদ্ধ
ঙ) বন্দনা করলে আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শুদ্ধ/অশুদ্ধ
আরও দেখুন...