বৃত্তাকার গতি (Circular Motion)

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - উচ্চতর গণিত - উচ্চতর গণিত – ২য় পত্র | NCTB BOOK

বৃত্তাকার গতি (Circular Motion) হল এমন একটি গতি যেখানে বস্তুকণা একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের পথে চলাচল করে। বৃত্তাকার গতি প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে: স্থিতিস্থ গতি (Uniform Circular Motion) এবং **অস্থিতিস্থ গতি (Non-uniform Circular Motion)**।

১. স্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি (Uniform Circular Motion):

স্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি এমন একটি গতি যেখানে বস্তুকণার গতির তীব্রতা (magnitude) স্থির থাকে, কিন্তু দিক (direction) প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়। বস্তুকণার গতি ভেক্টরের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে, তবে তার দিকের পরিবর্তন ঘটে, কারণ বৃত্তের পথে চলতে চলতে বস্তুকণার গতি ভেক্টরের দিক বদলায়।

গতি এবং ত্বরণের উপাদান:

  • গতি (Velocity): বৃত্তাকার গতি চলাকালীন, গতি ভেক্টরের তীব্রতা অপরিবর্তিত থাকে, তবে তার দিক পরিবর্তিত হয়।
  • ত্বরণ (Acceleration): বৃত্তাকার গতির মধ্যে, গতি ভেক্টরের দিকের পরিবর্তন ঘটতে থাকে, যদিও তীব্রতা অপরিবর্তিত থাকে। এই কারণে বস্তুকণার একটি কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ (Centripetal Acceleration) থাকে, যা বৃত্তের কেন্দ্রে নির্দেশিত হয়।

কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ:

বৃত্তের পথে চলমান বস্তুকণার ত্বরণ যেটি কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ (Centripetal Acceleration) নামে পরিচিত, তা গতি ভেক্টরের দিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়:
\[
a_c = \frac{v^2}{r}
\]
এখানে:

  • \( a_c \) হলো কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ,
  • \( v \) হলো গতি ভেক্টরের তীব্রতা (যা স্থির থাকে),
  • \( r \) হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।

কেন্দ্রবাহিত বল:

কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ অর্জনের জন্য একটি বল প্রয়োজন, যাকে কেন্দ্রবাহিত বল (Centripetal Force) বলা হয়। কেন্দ্রবাহিত বলের পরিমাণও নির্ধারণ করা হয়:
\[
F_c = \frac{mv^2}{r}
\]
এখানে:

  • \( F_c \) হলো কেন্দ্রবাহিত বল,
  • \( m \) হলো বস্তুকণার ভর,
  • \( v \) হলো গতি ভেক্টরের তীব্রতা,
  • \( r \) হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।

২. অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি (Non-uniform Circular Motion):

যখন বৃত্তাকার পথে চলমান বস্তুকণার গতি তীব্রতা (speed) পরিবর্তিত হয়, তখন এটি অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতি বলা হয়। এই ক্ষেত্রে বস্তুকণার গতি ভেক্টরের দিক এবং তীব্রতা উভয়ই পরিবর্তিত হয়।

অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতিতে, কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ এবং একটি ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ (Tangential Acceleration) থাকে। ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণটি গতি ভেক্টরের তীব্রতার পরিবর্তন ঘটায় এবং কেন্দ্রবাহিত ত্বরণটি বস্তুকণাকে বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে টানে।

ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ:

ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণের পরিমাণ গতি ভেক্টরের তীব্রতার পরিবর্তনের হার দ্বারা নির্ধারিত হয়:
\[
a_t = \frac{dv}{dt}
\]
এখানে:

  • \( a_t \) হলো ট্যাঞ্জেনশিয়াল ত্বরণ,
  • \( dv \) হলো গতির তীব্রতার পরিবর্তন,
  • \( dt \) হলো সময়ের পরিবর্তন।

৩. বৃত্তাকার গতির গাণিতিক সমীকরণ:

বৃত্তাকার গতি বিশ্লেষণ করার সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ ব্যবহৃত হয়:

  • বৃত্তের গতির তীব্রতার জন্য সমীকরণ:
    \[
    v = \frac{2 \pi r}{T}
    \]
    যেখানে \( T \) হলো সময়কাল (time period), অর্থাৎ একটি পূর্ণ বৃত্তের পথ পরিক্রমণের জন্য বস্তুকণার সময়।
  • কেন্দ্রবাহিত ত্বরণের জন্য সমীকরণ:
    \[
    a_c = \frac{v^2}{r}
    \]
    যেখানে \( v \) হলো গতি, এবং \( r \) হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।

উদাহরণ:

ধরা যাক, একটি গাড়ি একটি বৃত্তাকার পথে \( 20 , m/s \) গতিতে চলতে চলতে একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ \( 50 , m \)। তার কেন্দ্রবাহিত ত্বরণের পরিমাণ হবে:
\[
a_c = \frac{(20)^2}{50} = \frac{400}{50} = 8 , m/s^2
\]

উপসংহার:

বৃত্তাকার গতি এমন একটি গতি যেখানে বস্তুকণা একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের পথ অনুসরণ করে, এবং এই গতিতে বিশেষভাবে কেন্দ্রবাহিত ত্বরণ এবং বল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি গতি স্থিতিস্থ থাকে, তবে তার তীব্রতা অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু দিক পরিবর্তিত হয়। অন্যদিকে, অস্থিতিস্থ বৃত্তাকার গতিতে, তীব্রতা ও দিক উভয়ই পরিবর্তিত হয়।

আরও দেখুন...

Promotion