কৃত্রিমভাবে বাগদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্রুড চিংড়ির গুণগতমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত ব্রুড চিংড়ির গুণগতমান ভালো হয়। বাগদা চিংড়ি উপকূল থেকে বহুদুরে সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে লবণাক্ততা আছে এমন মোহনা বা উপকূলীয় নদীতেও বসবাস করে।
প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ বাগদা চিংড়ি মার্চ থেকে নভেম্বর এর মধ্যে সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা যায়। ডিমওয়ালা চিংড়ি দুই প্রকার যথাঃ সম্পূর্ণ পরিপক্ক ও পূর্ণবয়স্ক চিংড়ি। সম্পূর্ণ পরিপক্ক চিংড়ি হ্যাচারিতে এনে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে আপনা আপনি ডিম ছেড়ে দেয় কিন্তু পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী চিংড়ির চক্ষু দন্ড কর্তন ছাড়া ডিম দেয় না। গভীর সমুদ্রে মাছ বা চিংড়ি ধরার কাজে নিয়োজিত ট্রলার থেকে পরিপক্ক চিংড়ি সংগ্রহ করা যায়। অন্যদিকে টেকনাফের উপকূলবর্তী এলাকায় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কিছু কিছু পরিপক্ক চিংড়ি পাওয়া যায়। স্ত্রী চিংড়ির জন্য সর্বনিম্ন ওজন ৮০-১৫০ গ্রাম এবং পুরুষ চিংড়ির জন্য ওজন ৫০-১২০ গ্রাম হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে পরিপক্ক চিংড়ি পাওয়া না গেলে খামার থেকে পূর্ণ বয়স্ক চিংড়ি সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত চিংড়ি হতে তুলনামূলক অনেক বেশি পরিমাণে পোনা উৎপাদন করা যায়।
বাগদা চিংড়ি মজুদের জন্য সরাসরি সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করা হয় না। প্রথমে পানি মজুদ বা স্টোরেজ ট্যাংকে থিতানোর জন্য জমা করে রাখা হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যে মজুদ ট্যাংকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবেঃ-
ক) মজুদ ট্যাংকের পানির গভীরতা ১ মিটার রাখতে হবে।
খ) মজুদ ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা সাধারণত ৮-১৬ টন পর্যন্ত হতে পারে।
প) প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ৪০% থেকে ৫০% পানি পরিবর্তন করতে হবে।
ঘ) পানি মজুদের পর বালি ছাকুনি (sand filtration) ব্যবহার করে পানিতে ভাসমান বা ঝুলন্ত ( suspended) পদার্থসমূহ দূর করা হয়। সামুদ্রিক পানিতে প্রচুর জীবাণু থাকতে পারে। এদের ছাকুনির মাধ্যমে সর্বাংশে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তাই রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। ব্রুড চিংড়িকে প্লাস্টিকের বালতি বেসিন (bucket), চৌবাচ্চা, রেজিফোম বাক্স (regifoam box), ফাইবার গ্লাস বা গ্লাস ট্যাংকের ভেতরে মজুদ করা যায়। সাধারণত প্রতি ঘন মিটারে ১২-৩৬ টি ব্রুড চিংড়ি মজুদ করা হয়ে থাকে।
মজুন ট্যাংকের পানির গুণাগুন নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে পানির ভাপমাত্রা, লবণাক্ততা, পিএইচ (pH), দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা, অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট ইত্যাদি অনুকূলে রাখতে হবে।
প্যারামিটার | পরিমাণ |
---|---|
তাপমাত্রা লবনাক্ততা দ্রবীভূত অক্সিজেন পিএইচ (pH) জ্যামোনিয়া নাইট্রাইট | ২৭ ডিগ্রি সে.-৩২ ডিগ্রি সে. ২৮-৩৩ পিপিটি ৩-৪ মিলিগ্রাম/লিটার ৮.০-৮.৫ ০.৫-১৩.০ মিলিগ্রাম/ লিটার ০.৪৮-০.৯৮ মিলিগ্রাম/লিটার |
রুক্ত চিংড়িকে মজুদ ট্যাংকে কয়েক ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা হয় যতক্ষণ না পরিবহণের জন্য প্রভুত হয়ে থাকে। মজুদ ট্যাংকের পানির গুণাগুণের আকস্মিক পরিবর্তন হলে ব্রড চিংড়ি মারা যেতে পারে এবং এ থেকে সৃষ্ট পীড়নের ফলে ডিমের উৎপাদন কমে যেতে পারে। তাই পানির গুণাগুন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।