বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নূতন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারে একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায় যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভান্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ। একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশিত সকল পাঠ্যপুস্তক তাদের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলোড করা যায়। বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপি Covid-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন। শিক্ষকেরা নিজ ঘরে থেকেই অনলাইনের বিভিন্ন অ্যাপ (যেমন Google Meet, WebEx, Facebook messenger, imo, Skype, Whatsapp, Zoom ইত্যাদি) ব্যবহার করে লাইভ-ক্লাসে সরাসরি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছেন। অনেক সময় বিষয়ভিত্তিক ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরির পর অনলাইনে শেয়ার, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্লগিং করে, বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছেন। শুধু তাই নয় একজন শিক্ষার্থী ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার-ভিডিও দেখে, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে। শিক্ষা কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ না থাকার কারণে বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারে একটি শক্তিশালী অনুষঙ্গ হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে যাচ্ছে।
গতানুগতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের পরিবর্তে অনলাইনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক মাধ্যম বিশেষত কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ওয়েব ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার পদ্ধতিকে ই-লার্নিং বলে। ই-লার্নিং এমন একটি প্রযুক্তিগত শিখন পদ্ধতি যেখানে অনলাইনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে কোনো অবস্থানে থেকে পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ায় (interactive) পাঠদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। এটি সাধারণত অনলাইনে সুনির্দিষ্ট কোর্স, ডিগ্রি কিংবা প্রোগ্রাম শিক্ষায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারে একসাথে অনেক শিক্ষার্থীকে পাঠদান সম্ভব হলেও, মানবীয় উপাদানের অনুপস্থিতির (Lack of human element) কারণে অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা হচ্ছে না। তবে একটি দেশের উন্নয়ন কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দপ্তর-বিভাগ, কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রমে এই শিক্ষা পদ্ধতির ব্যবহার যথেষ্ট কার্যকর।
আরও দেখুন...