সালাতের শেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো সালাম। দোয়া মাসুরা পড়ার পর প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম ফেরাতে হয়। সালামের বাক্যটি হলো :
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
অর্থ : তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক ।
মুনাজাত-
আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন-নিবেদন, কাকুতি-মিনতি করাকে মুনাজাত বা দোয়া বলে। প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে মুনাজাত কবুল হওয়ার একটি উপযুক্ত সময়। এ সময় যে কোনো ভালো দোয়া করা যায়। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরিফে অনেক মুনাজাত আছে। একটি সংক্ষিপ্ত এবং সুন্দর মুনাজাত হলো :
রব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল;
আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান নার
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এ দুনিয়ায় কল্যাণ দাও আর আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা কর। সূরা বাকারা-২০১
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সালাত বা নামায। সালাতের কতকগুলো নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো পালন করা ফরজ।
সালাতের আহকাম-
সালাত শুরুর আগে সাতটি ফরজ কাজ করতে হয়। এগুলোকে বলে সালাতের আহকাম আহকাম ঠিকমতো পালন না করলে সালাত আদায় হয় না।
১। শরীর পাক হওয়া ২। কাপড় পাক হওয়া ৩। সালাতের জায়গা পাক হওয়া
৪। সতর ঢাকা ৫। কিবলামুখী হওয়া ৬। নিয়ত করা
৭। সময়মতো সালাত আদায় করা।
সালাতের ওয়াক্ত - أَوْقَاتُ الصَّلوة
সময়মতো সালাত আদায় করা আল্লাহ তায়ালার আদেশ। সময়মতো আদায় না করলে সালাত আদায় হয় না। মহান আল্লাহ বলেন, সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনের 66 জন্য ফরজ।” সালাতের নির্দিষ্ট সময় হলো :
ফজর | রাত শেষে পূর্ব আকাশে সাদা আভা দেখা দিলে ফজর শুরু হয়। সূর্য উঠার পূর্ব মুহূর্তে তা শেষ হয়। |
যোহর | দুপুরে সূর্য পশ্চিমে নামতে আরম্ভ করলে যোহর শুরু হয়। আর কোনো কাঠির ছায়া সে কাঠির মূলছায়া বাদে তার দ্বিগুণ হলে তা শেষ হয়। |
আসর | যোহর শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসর শুরু হয়। সূর্য ডোবার পূর্বে তা শেষ হয়। |
মাগরিব | সূর্য ডোবার পর মাগরিব শুরু হয়। পশ্চিম আকাশে আলোর লাল আভা মুছে যাওয়ার সাথে সাথে তা শেষ হয় ৷ |
মাগরিব | শেষ হওয়ার পর এশা শুরু হয়। ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার সালাতের সময় থাকে। তবে মধ্য রাতের পূর্বে এশার সালাত পড়া ভালো। এশা |
সালাতের আরকান-
সালাতের ভিতরে সাতটি ফরজ কাজ আছে। এগুলোকে সালাতের আরকান বলে। যথা:
১। তাকবির-ই-তাহরিমা বা আল্লাহু আকবর বলে সালাত শুরু করা।
২। কিয়াম অর্থাৎ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। তবে কোনো কারণে দাঁড়াতে অক্ষম হলে বসে, এমনকি শুয়েও সালাত আদায় করা যায়
৩। কিরাত অর্থাৎ কুরআন মজিদের কিছু অংশ তিলাওয়াত করা।
৪। রুকু করা।
৫। সিজদাহ্ করা।
৬। শেষ বৈঠকে বসা ।
৭। সালাম-এর মাধ্যমে সালাত শেষ করা।
এর কোনো একটি বাদ পড়লে সালাত আদায় হয় না। তাই এগুলো আদায়ের ব্যাপারে আমরা খুবই সাবধান থাকব।
সালাত আদায়ের নিয়ম
সালাত সবচেয়ে বড়
ইবাদত। মহানবি (স)
যেভাবে সালাত আদায়
করতেন আমরাও সেভাবে
সালাত আদায় করব। আমরা
সালাত আদায়ের জন্য
দাঁড়াব। আমাদের মুখ
থাকবে পবিত্র কিবলার
দিকে। আমরা পাকসাফ হয়ে
সারা জাহানের বাদশাহ আল্লাহ
তায়ালার দরবারে হাজির
হব। সালাতে যা যা পড়বো
তার অর্থ জেনে নেব
সর্বপ্রথম বলব : আল্লাহু আকবর- الله اكبر
অর্থ: আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
মুখে এ বিরাট অঙ্গীকার করে পৃথিবীর যাবতীয় জিনিস হতে নিজের সম্পর্ক ছিন্ন করব। প্রতীক হিসেবে কান পর্যন্ত দুই হাত তুলব। এরপর সারা জাহানের বাদশাহর সামনে আল্লাহু আকবর বলে হাত বেঁধে দাঁড়াব।
এরপর বিনয় সহকারে সানা পড়ব। সানা হলো –
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ৷
এরপর আউযূ বিল্লাহি মিনাশ শায়তনির রাজিম এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ব।
তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য কোনো সূরা বা সূরার অংশ পাঠ করব। আল্লাহু আকবর বলে রুকু করব। রুকুতে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম পড়ব। সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। দাঁড়ানো অবস্থায় রব্বানা লাকাল হামদ বলব। এরপর আল্লাহু আকবর বলে সিজদাহ্ করব।
এরপর আল্লাহু আকবর বলে সোজা হয়ে দাঁড়াব। সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য কোনো সূরা পাঠ করব। পরে প্রথম রাকআতের মতো রুকু সিজদাহ্ করে স্থির হয়ে বসব। তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করব। এরপর প্রথমে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, পরে বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে বলব আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। এভাবে দুই রাকআত বিশিষ্ট সালাত আদায় করব।
যদি তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাত হয় তবে আবদুহু ওয়া রাসূলুহু পর্যন্ত পড়ে আর বসব না। আল্লাহু আকবর বলে উঠে দাঁড়াব। তারপর আগের মতো তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআত পড়ব। তবে ফরজ সালাতের ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করব।
মহানবি (স) জামাআতের সাথে সালাত আদায় করতেন। আমরাও জামাআতের সাথে সালাত আদায় করব।
আরও দেখুন...