একেকটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের অবস্থান ও ঠোঁটের অবস্থা একেক রকম হয়। 'দুই বিঘা জমি' কবিতা থেকে কিছু শব্দ নিচের তালিকায় দেওয়া হলো। শব্দগুলো বার বার উচ্চারণ করো এবং সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে ছকে থাকা প্রশ্নগুলোর ভিত্তিতে সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দাও। এরপর শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে উত্তরগুলো মিলিয়ে নাও। নিচে প্রথমটি করে দেখানো হলো।
কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ | শব্দে থাকা স্বরধ্বনি | ঘরখানিটি উচ্চারণে জিভ কতটুকু উঁচু হয়? | স্বরধ্বনিটি উচ্চারণের সময়ে জিভ সাসনে না পিছনে উঁচু হয়? | স্বরধ্বনিটি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট গোল না প্রসারিত হয়? | স্বরধ্বনিটি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট কতটুকু খোলে? |
---|---|---|---|---|---|
নিলাজ, বিলাস, দাসী | ই |
|
|
|
|
সেই, বটে, হেনকালে, এ জমি | এ |
|
|
|
|
একদিন, একে একে, গেছে | অ্যা |
|
|
|
|
আমি, আনচান, আঁচল | আ |
|
|
|
|
অস্র অবারিত, | অ |
|
|
|
|
ওটা, চোর, মোর | ও |
|
|
|
|
ফুল, দুপুর, বাবু | উ |
|
|
|
|
বাংলা স্বরবর্ণ এগারোটি। কিন্তু মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা সাতটি। যথা: ই, এ, অ্যা, আ, অ, ও, উ। স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ফুসফুস থেকে বেরিয়ে আসা বাতাস বাক্যন্ত্রের কোথাও বাধা পায় না। কিন্তু একেকটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভের অবস্থান ও ঠোঁটের অবস্থা একেক রকম হয়।
ই, 'ই' স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে-
জিভ উঁচু হয়; তাই এটি উচ্চ স্বরধানি। জিভ সামনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি সম্মুখ স্বরধানি। ঠোঁট প্রসারিত হয়; তাই এটি প্রস্তুত স্বরধানি। ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
'এ' ঘরখানি উচ্চারণের সময়ে-
জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধ্বনি। জিভ সামনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি সম্মুখ স্বরধানি। ঠোঁট প্রসারিত হয়; তাই এটি প্রসূত স্বরধ্বনি। ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
অ্যা: 'অ্যা' স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে-
জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধ্বনি। জিভ সামনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি সম্মুখ স্বরধ্বনি। ঠোঁট প্রসারিত হয়; তাই এটি প্রসূত স্বরধ্বনি। ঠোঁট বেশি খোলে; তাই এটি বিবৃত স্বরধ্বনি।
আ: 'আ' স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে-
জিভ নিচু থাকে; তাই এটি নিম্ন স্বরধানি। জিভ মাঝখানে নিচু থাকে; তাই এটি মধ্য স্বরধানি।
ঠোঁট গোল ও প্রসারিত হয়; তাই এটি গোলাকৃত ও প্রসূত স্বরধ্বনি।
ঠোঁট বেশি খোলে; তাই এটি বিকৃত স্বরধ্বনি।
জ: 'জ' স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে-
জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধ্বনি।
জিভ পিছনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি পশ্চাৎ স্বরধানি।
ঠোঁট গোল হয়; তাই এটি গোলাকৃত অরখানি।
ঠোঁট বেশি খোলে; তাই এটি বিকৃত স্বরধ্বনি।
ও: 'ও' স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে-
জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এটি মধ্য স্বরধানি।
জিভ পিছনের দিকে উঁচু হয়; তাই এটি পশ্চাৎ স্বরধানি।
ঠোঁট গোল হয়; তাই এটি গোলাকৃত স্বরধানি।
ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
উ: 'উ' স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে-
জিভ উঁচু হয়; তাই এটি উচ্চ স্বরধানি।
জিভ পিছনের দিকে উঁচু হয়, তাই এটি পশ্চাৎ স্বরধানি।
ঠোঁট গোল হয়; ভাই এটি গোলাকৃত স্বরধানি।
ঠোঁট অল্প খোলে; তাই এটি সংবৃত স্বরধ্বনি।
স্বরধ্বনির ছক
জিভের অবস্থান ও ঠোঁটের অবস্থার ভিত্তিতে স্বরধ্বনিগুলোকে এভাবে ছকে দেখানো যায়
সম্মুখ | মধ্য | পশ্চাৎ | |
---|---|---|---|
উচ্চ | ই | উ | |
উচ্চ-মধ্য | এ | ও | |
নিম্ন-মধ্য | অ্যা | অ | |
নিম্ন | আ |
জিভের অবস্থানের ভিত্তিতে স্বরধ্বনি
ই' উচ্চারণের সময়ে জিভ সামনে উঁচু হয়; তাই উপরের ছকে 'ই' স্বরধানিকে সম্মুখ অবস্থানে দেখানো হয়েছে। এর মানে জিভের অবস্থানের ভিত্তিতে 'ই' সম্মুখ স্বরধ্বনি। একইভাবে 'এ', 'অ্যা'-এগুলোও সম্মুখ স্বরধানি। আবার 'উ' উচ্চারণের সময়ে জিভ পিছনে উঁচু হয়; তাই 'উ' স্বরধানিকে পশ্চাৎ অবস্থানে দেখানো হয়েছে। এর মানে জিভের অবস্থানের ভিত্তিতে 'উ' পশ্চাৎ স্বরধানি। একইভাবে 'ও', 'অ'-এগুলোও পশ্চাৎ স্বরধানি। 'আ' উচ্চাদের সময়ে জিভের অবস্থান মাঝখানে থাকে; তাই 'আ' মধ্য স্বরধানি।
যেসব স্বরধানি উচ্চারণে জিভ বেশি উঁচু হয়, সেগুলো উচ্চ স্বরধ্বনি। ই, উ-এ দুটি উচ্চ স্বরধানি। আবার 'আ' উচ্চারণে জিভ নিচু থাকে; তাই এটি নিম্ন স্বরধ্বনি। বাকি স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে জিভ একটু উঁচু হয়; তাই এ, অ্যা, অ, ও মধ্য স্বরধানি।
ঠোঁটের অবস্থার ভিত্তিতে দরকানি
যেসব স্বরধানি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট প্রসারিত হয়, সেগুলোকে বলে প্রসূত স্বরধানি। 'ই', 'এ', 'অ্যা'-এগুলো প্রসূত স্বরধানি। যেসব স্বরধানি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট গোল হয়, সেগুলোকে বলে গোলাকৃত স্বরধ্বনি। 'উ', 'ও', 'অ'-এগুলো গোলাকৃত স্বরধানি।
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট কম খোলে, সেগুলোকে বলা হয় সংবৃত স্বরধ্বনি। 'ই', 'এ', 'উ', 'ও'- এগুলো সংবৃত স্বরধ্বনি। আর যেসব স্বরধানি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট বেশি খোলে, সেগুলোকে বলে বিবৃত স্বরধানি। 'অ্যা', 'আ', 'অ'-এগুলো বিবৃত স্বরধ্বনি।
আরও দেখুন...