বিধবা আম্বিয়া বেগম অবসরের সমস্ত টাকা ব্যয় করে দুই পুত্র ও এক কন্যাকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকে। তাদের সুখের কথা চিন্তা করে তিনি খুব আনন্দ পান, যদিও তাঁর দেখাশোনার মত কেউ নেই। পুত্রদের সংবাদ দিলেও চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারে না। এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন আম্বিয়া বেগম। অবস্থা খারাপ হলে প্রতিবেশী দিনমজুর জবেদ আলির ছেলে আশিক তাকে দেখতে আসে। সবকথা শুনে আশিক তাঁর অনেক প্রশংসা করে। সে বলে "আপনার মতো মা ঘরে ঘরে দরকার।"
পেশা তার দর্জিগিরি কিন্তু নেশা তার বইপড়া। বাল্যকালে পিতা মারা যাওয়ায় পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়তে পারেনি কাশেম মিয়া। তবে বইপড়ার নেশা থেকেই বাড়ির পাশে প্রায় দুই হাজার বই নিয়ে গড়ে তুলেছে 'স্বপ্ন গড়ি লাইব্রেরি'। গ্রামের ছোট- বড় সবাই সেখানে জ্ঞানচর্চা করে। শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইও পড়ে। কিন্তু ব্যবসায়ী মামুন মোল্যা তার সন্তানকে ঐ লাইব্রেরিতে যেতে নিষেধ করে বলেন, "তোমার এতো জ্ঞান অর্জনের দরকার নেই, বাসায় প্রাইভেট শিক্ষক রেখেছি। তাঁর কাছে পড়ে (এ+) অর্জন করো।"
লিজা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাড়িতে তার সমবয়সী লতিফা নামে একটি কাজের মেয়ে থাকে। অভাবের তাড়নায় সে এ বাড়িতে কাজে এসেছে। লিজা তার সাথে খেলাধুলা ও গল্প করতে চায়। কিন্তু লিজার মা ওদের দুজনের একসাথে দেখলেই বকা দেয়। লিজা ওর মায়ের অনুপস্থিতিতে লতিফার সাথে কখনো কখনো পুতুল খেলে, টিভি দেখে। কিন্তু লতিফা লিজার সাথে মিশতে ভয় পায় কারণ লিজার মা যদি দেখে ফেলে।
তপুর বয়স ছয় বছর। সে রাত হলেও ঘুমাতে চায় না। তপুর মা সুরাইয়া বেগম চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শাশুড়িকে বলেন, "মা আপনি তপুকে একটু ঘুম পাড়ান, আমি জি-বাংলার সিরিয়ালটা দেখে আসি।" তপুর দাদি বলেন, "আস দাদুভাই, তোমাকে ডালিম কুমারের গল্প বলি।" কিন্তু তপু বলে, "না, আমি ডরিমন কার্টুন দেখবো।" দাদি ভাবেন আমাদের অতীত জীবনের গল্পগুলো যদি বাঁচিয়ে রাখা যেত তাহলে কতইনা ভালো হতো। তিনি আফসোস করে বলেন, "কী যুগ আইলোরে, জি-বাংলা আর ডরিমন সব খাইলো রে!"
লুনা লেখাপড়া করার জন্য আমেরিকায় যায়। সাত বছর পর দেশে ফিরে তার দেশের মানুষ আর মানুষের ভাষা তেমন একটা ভালো লাগে না। লুনা বলে বাংলা দিয়ে পৃথিবীর কোথাও কিছু করা যায় না। কথায় কথায় ইংরেজি বলে আর বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞার ভাব প্রকাশ করে। তার আচরণে স্কুল শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, "এ ভাষার জন্যই মানুষ জীবন দিয়েছেন। এ ভাষায় কবি গেয়ে উঠেন "মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা।"
সাভারের রানা প্লাজার ভবন ধসে পড়ে কর্মরত দম্পতি মোহনা ও লিমন নিহত হয়। কিন্তু বেঁচে যায় বাসায় থাকা সাত বছরের ছেলে মিলন। পিতা-মাতাহারা ছেলেটিকে বুকে টেনে নেয় বাড়ির মালিকের স্ত্রী রাহেলা। নিজের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামী রাজি না হলেও রাহেলা মিলনকে নিজের সন্তানের মতো স্কুলে দিয়ে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেন।
ভরদুপুরে দিঘির ঘাটে জল আনতে গিয়ে মূর্ছা যায় লিলি। তার বাবা-মার বিশ্বাস, লিলির মধ্যে জিন-ভূতের আছর পড়েছে, শীঘ্রই কোনো কবিরাজের কাছে নিতে হবে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করে লিলির বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ভাই আনাফ। সে লিলিকে নিকটতম স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে ডাক্তার দেখালে সুস্থ হয়ে ওঠে। মূলত লিলির শারীরিক দুর্বলতার জন্য এমনটি হয়েছিল।