নাম তার অনামিকা। সে তার পিতামাতাসহ পরিবারের সকলকে জানিয়ে দিয়েছে বিয়ের বাজারে সে পণ্য হতে চায় না। কথাটি এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ায় তার পিতামাতা পড়েছে দুশ্চিন্তায়। সম্প্রতি সরকারি চাকুরিতে যোগদানকারী পাশের গ্রামের উচ্চশিক্ষিত তরুণ বিবেক রায় অনামিকাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার বাবা সিদ্ধেশ্বর রায় বিপুল পরিমাণ যৌতুক নিয়ে, ঘটা করে ছেলের বিয়ে দেবেন ভেবে রাখলেও বিবেকের ইচ্ছা ও কঠিন সিদ্ধান্তে কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই অনামিকাঁর বাবার কাছে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় এবং অল্পদিনের মধ্যেই বিবেক-অনামিকার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়।
শিক্ষানুরাগী আলী হায়দার অবসর গ্রহণের পর গড়ে তোলেন আলোকবর্তিকা নামক সেবা সংগঠন। যার মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের শিক্ষাদান, দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারণা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিষয়ক নানা সেমিনারের আয়োজন করেন। বেকারদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিজ জমানো টাকায় 'আলী হায়দার টেকনিক্যাল কলেজ' স্থাপন করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেকার যুবক-যুবতীরা প্রশিক্ষিত হয়ে দেশ-বিদেশে চাকরি করে এলাকার সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে।
পিতৃহীন রাশেদার স্বামীর সংসারে মোটেই সুখ নেই। অর্থের জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে মানসিক নির্যাতন করে। গর্ভবতী হওয়া সত্ত্বেও নেশাখোর স্বামী তার গায়ে হাত তোলে। স্বামীর নির্মম অত্যাচারে প্রায়ই সে অজ্ঞান হয়ে যায়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক সময় রাশেদার প্রতিবাদী নারীসত্তা জেগে ওঠে। নির্দয় স্বামীর কাছে নতি স্বীকার না করে আইনের আশ্রয় নিয়ে স্বামী-শাশুড়িকে জেলে পাঠায়।
ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘ প্রায় ২'শ বছরের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লিখে প্রতিবাদ করেছেন। 'বিদ্রোহী' কবিতা লেখার জন্য কবিকে রাজবন্দি হয়ে এক জেল থেকে অন্য জেলে স্থানান্তর করে মানসিক কষ্ট দিয়েছে ব্রিটিশরা। প্রতিবাদে কবির জেলের আমরণ অনশন ভাঙতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চেষ্টা করেন। এত কিছু পরও কবি দমে যাননি। জেলের সেলে লোহার গরাদে তাল বাজিয়ে অন্য বন্দিদের নিয়ে গাইতেন, তাঁরই লেখা বিখ্যাত কবিতাটি-
"কারার ঐ লৌহ কপাট,
ভেঙ্গে ফেল করলে লোপাট . . . . . ।। "
ঈশিতা বাংলা বিভাগের উচ্ছল প্রাণবন্ত মেয়ে। আড্ডার আসরকে সে মাতিয়ে রাখে। বাংলা বিভাগ প্রতিবারের মতো এবারও বসন্ত উৎসব পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঈশিতা বরাবরই এই ধরনের আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। উৎসবের দিন রূপময় প্রকৃতির নান্দনিকতা ও উৎসব প্রাঙ্গনের বর্ণিল বিন্যাস একাকার হয়ে অভূতপূর্ব আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এই কোলাহলমুখর আনন্দঘন পরিবেশে প্রাণবন্ত ঈশিতা যেন প্রাণহীন, ছন্দহীন, গম্ভীর ও বিষণ্ণ। জানা গেল, তিন বছর আগে হারানো মায়ের স্মৃতিই আজ তার অন্তরকে বেদনাচ্ছন্ন করে রেখেছে।
হোসেন মিয়া সাধারণ মাঝি থেকে নিজ পরিশ্রমে অনেক বিত্তশালী আজ। তিনি ময়নাদ্বীপের মালিক। পদ্মাপাড়ের কেতুপুর গ্রামের জেলেপাড়ার কুবের মাঝিদের তিনি অসময়ের বন্ধু। হোসেন মিয়া তাঁর স্বপ্নের ময়নাদ্বীপকে বানাতে চান একখন্ড মানবিক পৃথিবী। তাই তাঁর ময়নাদ্বীপে বসবাসকারীদের মধ্যে থাকবে না হিংসা-বিদ্বেষ, ধর্ম-অধর্মের তফাৎ।
সখিপুর গ্রামের প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি কমল চৌধুরীকে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলেই ভালোবাসেন। মানুষের বিপদে-আপদে তিনি সকলের আগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। গ্রাম্য সালিশে বসে তিনি নির্মোহভাবে ন্যায্য কথা বলেন। একদিন নারী কেলেঙ্কারি বিষয়ক এক গ্রাম্য সালিশে বসে তিনি বললেন "নারীর প্রতি সকলের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হওয়া দরকার। মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া কথা বলে নারীর মর্যাদাহানি করা অন্যায়, অপরাধ। সংসারের প্রয়োজনে তারা কঠোর পরিশ্রম ও সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে। পরিবার গঠনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই তাদেরকে যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা দেওয়া সকলের মানবিক কর্তব্য।"
পিতৃ-মাতৃহারা, সহায়-সম্বলহীন মাহাবুবের জীবন চলার পথ দিশেহারা। বন্ধু রিপন এ সময় তারই এক আত্মীয়া নিঃসন্তান খালার বাড়িতে মাহাবুবের লেখা-পড়ার সুযোগ করে দেয়। মাহাবুব ভাগ্যের অন্বেষণে বিদেশ ঘুরে এখন প্রতিষ্ঠিত। সামাজিক জনহিতকর কাজে তার বেশ সুনাম রয়েছে। প্রতিবারের মতো গত ঈদের জাকাত প্রদানের দীর্ঘ লাইনে বাল্যবন্ধু রিপনকে দেখে বুকে টেনে নেয় মাহাবুব। সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু রিপনের বাকি জীবন চলার আর্থিক নিশ্চয়তার সংস্থান করে দেয় মাহাবুব। বন্ধুত্বের ঋণ শোধের তৃপ্ততায় মুগ্ধ রিপনও।
তিস্তাপাড়ে আজকাল নাকি ফসলি জমির অভাব। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জমিতে মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করে নেয় ভূগর্ভস্থ পাথর। এখানে ফসলের তুলনায় পাথরের মূল্য বেশি। তাই দিনে দিনে মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় আর পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এলাকার সচেতন জনগোষ্ঠী দেশের স্বার্থে এই কাজে বাধা দিলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের বিরোধ হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এখানে অনধিক তিনটি মেশিন বসানোর অনুমতি দিলেও বাস্তবে শতাধিক মেশিনে পাথর উত্তোলন করে ব্যবসায়ীরা। এতে একদিকে খাদ্য উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এইরকম চলতে থাকলে একদিন হয়তো শোনা যাবে মাটির নিচে তলিয়ে গেছে তিস্তাপাড়ের বিশাল জনপদ।