সৌদামিনী মালো স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে ধানি জমি, বসত-বাড়ি, পুকুরসহ কয়েক একর সম্পত্তির মালিক হয়। এই সম্পত্তির উপর নজর পড়ে সৌদামিনীর জ্ঞাতি দেওর মনোরঞ্জনের। সৌদামিনীর সম্পত্তি দখলের জন্য সে নানা কৌশল অবলম্বন করে। একবার সৌদামিনী দুর্ভিক্ষের সময় ধানখেতের পাশে একটি মানব শিশু খুঁজে পায়। অসহায় অসুস্থ শিশুটিকে সে তুলে এনে পরম যত্নে সন্তানের মতো লালন-পালন করে। মনোরঞ্জন সৌদামিনীকে সমাজচ্যুত করতে প্রচার করে যে নমঃশূদ্রের ঘরে ব্রাহ্মণ সন্তান পালিত হচ্ছে। এ যে মহাপাপ। সমাজের জাত-ধর্ম সব শেষ হয়ে গেল।
শোভনা গ্রামের শিক্ষিত পরোপকারী সন্তান সুভাষ। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন মান পরিবর্তন, শিক্ষা বিস্তার ও বাল্যবিবাহ রোধে গড়ে তুলেছে- 'যুব সংঘ' নামক একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সে গ্রামের বাড়ি বাড়ি যেয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের জীবন মান উন্নয়নের চেষ্টা করে। এলাকার অনেকেই এ কাজকে প্রশংসা করলেও নিন্দুকেরা নিন্দা করতে ছাড়েনি। কিন্তু সুভাষ নিন্দুকদের কথায় কান না দিয়ে তার কাজে অটল থেকেছে। কারণ সে জানে জাতি শিক্ষিত হলে সমাজের কুসংস্কার দূর হবে ।
জাকির ও জীবন দুই ভাই। লেখাপড়ায় ভালো, সমাজের উন্নয়নমূলক কাজেও তারা অংশগ্রহণ করে। তাদের পাশের গ্রামে পাহাড় ধ্বসে অনেক বাড়ি-ঘর পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে। সেখানে বহু মানুষ আটকা পড়ে। দুই ভাই সেখানে ছুটে যায় কিন্তু জাকির উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করলেও জীবন দাঁড়িয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে এবং কিছু আর্থিক সাহায্য করে। পাশাপাশি জাকির উদ্ধার কাজ শেষে তাদের সার্বিক পুনর্বাসনের চেষ্টা করে।
সালমার বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার মা অসহায় হয়ে পড়ে। একদিকে অর্থকষ্ট, অন্যদিকে ষোল বছর বয়সী সালমার সামাজিক নিরাপত্তা, সব মিলিয়ে সালমার মা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সালমার বিধবা খালা তাদের বাড়িতে এসে সালমার দেখাশুনার ভার নেয়। সালমার মা-খালা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে নিজেদের খাওয়া পরা চালায়। এভাবেই তারা জীবনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করে।
মাদার তেরেসা অকৃত্রিম মাতৃস্নেহের আধার ছিলেন। আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত হয়েও তিনি তাঁর কাজের জন্য সারা পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতায় মিশনারিজ অব চ্যারিটি হোমে সমগ্র পৃথিবীর দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের জন্য কাজ করেন। এই কাজের জন্য ১৯৭৯ সালে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেই পুরস্কারের সমস্ত অর্থ তিনি সেবার কাজে ব্যয় করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মারা যান। কিন্তু পৃথিবীর মানুষ আজও তাঁর নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
জব্বার তালুকদার অপ্রদিয়া গ্রামের একজন বিত্তবান লোক। প্রতিপত্তির মালিক হওয়ার জন্য গ্রামের সকলেই তাকে বেশ সম্মান করে। অপরদিকে জব্বার তালুকদার সম্মানের চোখে দেখে তারই গ্রামে বসবাসরত আফসার আলীকে। তার উপর জব্বার তালুকদারের অগাধ বিশ্বাস। তাই আফসার আলী মৌখিকভাবে যে নির্দেশনাই দেন জব্বার তালুকদার তা বাস্তবায়নে কুণ্ঠাবোধ করে না। একদিন আফসার আলী জব্বার তালুকদারকে বললেন, "জব্বার, তোমার স্ত্রী সংসারে অশুভ শক্তির ছায়ারূপে বিরাজ করছে। তাকে তুমি অবিলম্বনে তালাক দাও।” এমন নির্দেশনা পেয়ে কালবিলম্ব না করে স্ত্রীকে তালাক দেয় জব্বার তালুকদার।
ফুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে সুজন গ্রামে এসে সাধারণ মানুষের নেবাদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। গ্রামে একটি হাসপাতাল তৈরি তার ছোট বেলার স্বপ্ন । যখন সুজন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিচ্ছে তখনই গ্রামের অশিক্ষিত মানুষগুলো এর প্রতিবাদ জানায়। গ্রামবাসী মনে করে হাসপাতাল তৈরি হলে কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে ডাক্তাররা মানুষ মেরে ফেলবে। তাদের কাছে ডাক্তার মানেই কসাই। তার চেয়ে গ্রামের কবিরাজ, ফকির, বৈদ্য, ঝাড়ফুঁকেই তাদের জন্য মঙ্গল। কসাই ডাক্তারখানার দরকার নেই।
জোহরা : আর একদিন কি দুদিন। তার পরই ঘোর সময় শুরু হবে। তুমি ফিরে এসো। আমার সঙ্গে ফিরে চলো।
কার্দিঃ যে ফিরে যাবে সে আমি হব না সে হবে বিশ্বাসঘাতক। আমাদের সংকটের দিনে যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, কর্মে নিযুক্ত করেছে, ঐশ্বর্য দান করেছে সে মারাঠাদের বিপদের দিনে আমি চুপ করে বসে থাকব? পদত্যাগ করব? সে হয় না, জোহরা।
দশ গ্রামের মাতব্বর আশবাদ চৌধুরী নিঃসন্তান না হলেও কোনো পুত্র সন্তান নেই। বিত্তশালী চৌধুরী সাহেব তাই সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করেন ভাইপো সজলকে। এতে ক্ষিপ্ত হয় তার অন্যান্য ওয়ারিশরা। চৌধুরী সাহেব সকলকে বোঝাতে পারলেও জামাতা আসমত সাহেবকে কোনোভাবে বোঝাতে পারেনি। তিনি শ্বশুরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।