ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের কোন রোগ হয়? 

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago

 

পাঠ ১ প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি-

খাদ্যের কাজ হলো পুষ্টি সাধন করা। কিন্তু যদি কোনো কারণে নীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত ক্যালরি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ
না করা হয় বা যে খাদ্য গ্রহণ করা হচ্ছে তার মধ্যে এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকে বা চাহিদা
অনুযায়ী কম খাদ্য গ্রহণ করা হয় তাহলে গৃহীত খাদ্য শরীরের চাহিদা মেটাতে পারবে না। তখন কিছুদিনের
মধ্যেই এই পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাবজনিত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাবে আমাদের
শরীরে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাদেরকেই অভাবজনিত রোগ বা অপুষ্টিজনিত রোগ বলে।

অপুষ্টিজনিত রোগগুলোর মধ্যে প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি, রাতকানা, রক্ত স্বল্পতা, গলগণ্ড, রিকেট,
অস্টিওম্যালেসিয়া, বেরিবেরি, পেলেগ্রা, স্কার্ভি উল্লেখযোগ্য ।

প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি -প্রোটিন ও ক্যালরির অভাবে যে অপুষ্টি দেখা দেয় তাকে প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি
(Protein Calorie Malnutrition) বা পিসিএম (PCM) বলে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনুন্নত দেশ
সমূহে শিশুদের ক্ষেত্রে প্রধান অপুষ্টিজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে পিসিএম একটি সমস্যা। সাধারণত ২ ধরনের
পিসিএম দেখা দেয়।

(১) কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগ-

সাধারণত ১-৪ বছর বয়সের শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুদের খাদ্যে প্রোটিনের অভাবে
কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগ দেখা দেয়।

কারণ-

(ক) মা বারবার গর্ভবর্তী হলে কোলের শিশুকে বুকের দুধ থেকে সরিয়ে দিয়ে কার্বোহাইড্রেট বহুল খাদ্যে
অভ্যন্ত করলে খাদ্যে প্রোটিনের অভাব হয়। ফলে কোয়াশিয়রকর দেখা দেয়।

(খ) ডায়রিয়া, হাম ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে অসুস্থতার সময় এবং রোগ ভোগের পরে দীর্ঘদিন পুষ্টিকর
খাদ্য হতে বঞ্চিত হলে শিশুর দেহে প্রোটিনের ঘাটতির ফলে কোয়াশিয়রকর হয়।

• স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পানি জমার পরও শরীরের ওজন কমে যায়।

হাত, পা ও মুখে পানি জমে।

ত্বক ফেটে যেতে পারে ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

• চুল পাতলা, বিবর্ণ ও দুর্বল গোড়াযুক্ত হয়।

মুখ ফুলে গোল হয়ে চাঁদের মতো দেখায়। একে “মুনফেস ” বলে।

শিশু সাধারণত উদাসীন থাকে, কোনো কিছুতেই উৎসাহ থাকে না।

ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।

(২) ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগ-

সাধারণত জীবনের প্রথম ২ বছর বয়সের শিশুদেরই এই রোগ বেশি দেখা যায়। তবে যে কোনো বয়সেই হতে
পারে। শিশুদের খাদ্যে প্রোটিন ও ক্যালরির অভাব হলে ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগ দেখা দেয়।

কারণ-

(ক) খাদ্যের অপর্যাপ্ততা খাদ্যের অপর্যাপ্ততাই এর প্রধান কারণ। মায়ের দুধ কমে গেলে যদি পরিপূরক খাদ্য
-
দেওয়া না হয় তাহলে দেহে প্রোটিন ও ক্যালরি উভয়েরই অভাব ঘটে।

(খ) সংক্রামক ব্যাধি বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে অথবা বারবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে এবং সেই
সময় প্রয়োজনমতো খাবার গ্রহণ না করতে পারলে শিশু হাড্ডিসার রোগে আক্রান্ত হয়।

-
(১) বয়সের তুলনায় শিশুদের
শরীরের ওজন শতকরা ৬০ ভাগের নিচে
নেমে যায়।

(২) হাত, পা ও মুখ শীর্ণ হয়ে, চামড়া

কুঁচকিয়ে বৃদ্ধ ব্যক্তির মতো দেখায় ।
(৩) অস্থির প্রকৃতির হয় ও দুর্দশাগ্রস্ত

দেখায়।

(৪) পেটকে অনেকটা বাটির মতো দেখায়।
এই অবস্থাকে "পট বেলি" বলে ।

(৫) ক্ষুধা থাকে ।

ম্যারাসমাসে আক্রান্ত শিশু

প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টি জনিত রোগের প্রতিকার প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টির প্রতিকার করার জন্য -

(ক) ক্যালরি ও প্রাণিজ প্রোটিন সমৃদ্ধ যথাযথ পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে। বারবার অল্প খাবার দিতে
হবে। ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। অসুস্থতা বেশি হলে খাবার নরম করে রান্না করে বারবার
দিতে হবে। দুই বছরের শিশুকে বাইরের খাদ্যের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। নিয়মিত
ভিটামিন ও খনিজ লবণের ট্যাবলেট দিতে হবে।

(খ) সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করতে হবে।

প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টিজনিত রোগের প্রতিরোধ - প্রোটিন ক্যালরি অপুষ্টির প্রতিরোধ করার জন্য -
(১) ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। ৬ মাস পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টিকর পারিবারিক খাবার দিতে হবে। ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন নিতে হবে, পাশাপাশি অন্যান্য
খাবারও দিতে হবে।

(২) সংক্রামক রোগ হলে চিকিৎসা করতে হবে এবং সেই সাথে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

(৩) নিয়মিত শিশুর ওজন নিতে হবে এবং তা রেকর্ড করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই সাস্থ্য রক্ষার জন্য সর্বোত্তম পন্যা।

পাঠ ২- বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ

আমরা জানি যে, খাদ্যের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনগুলো আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক
ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। এই ভিটামিনগুলোর অভাবে আমাদের নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা
যায়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যাগুলোর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
সম্পর্কে নিচের ছকে দেওয়া হলো।

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. কোয়াশিয়রকর রোগের অপর নাম কী?

ক. চিলোসিস

পেলেগ্রা

গ. গা ফোলা

ঘ. হাড্ডিসার

২. নিচের কোনটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলা

ক. কলা

. কাঁঠাল

গ. পেয়ারা

ঘ. তরমুজ

নিচের উদ্দীপকটি মনোযোগ দিয়ে পড় এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও

জহুরার ৬ বছরের ছেলেটির পা দুইটি ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মাথাটাও বাক্সের মতো দেখায়।
এ ব্যাপারে সাস্থ্যকর্মীর কাছে জানতে চাইলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন।

৩. জহুরার ছেলের কোন রোগটি হয়েছে?

ক. পেলেগ্রা

খ. রিকেট

গ. বেরিবেরি

ঘ, গয়টার

৪. জহুরার ছেলের জন্য করণীয়-

i. ছোট মাছ ও দুধ খাওয়ানো

ii. চিনি ও রুটি খাওয়ানো

iii. প্রতিদিন সূর্যোলোকে ১০ মিনিট বসানো

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. ও॥

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. শ্রমজীবি সালমার ৪টি সন্তান। সে সন্তানদের যত্নের ব্যাপারে তত মনোযোগী নয়। তার ছোট ছেলেটি
প্রায়ই পেটের পীড়ায় ভোগে। ইদানীং সে অনেক শুকিয়ে গেছে। বাচ্চাটির শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে।
পেট শরীরের ভিতর ঢুকে গর্ত হয়ে গেছে। সালমা ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার তাকে প্রয়োজনীয়
পরামর্শ দিয়ে বললেন একটু সচেতন হলে তার সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতো না ।

ক. ভিটামিন ডি-এর অভাবে কোন রোগ হয়?

খ. অপুষ্টিজনিত রোগ বলতে কী বোঝায়?

গ. সালমার ছেলের কোন রোগ হয়েছে ব্যাখ্যা কর।

ঘ. সালমার ছেলের রোগ সম্পর্কে ডাক্তারের মন্তব্যটির যথার্থ মূল্যায়ন কর।

Content added By
Promotion