ভিক্ষুদের দোষ বা আপত্তি কয় ভাগে ভাগ করা হয়?

Created: 10 months ago | Updated: 10 months ago
Updated: 10 months ago

দ্বাদশ অধ্যায়

বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের নিত্যকর্ম ও অনুশাসন

সুন্দর জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেককে প্রতিদিন নিয়মমাফিক কিছু কাজ করতে হয়। এ কাজগুলির মধ্যে কিছু আছে শারীরিক সুস্থ থাকার জন্য, কিছু ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনযাপনের জন্য আর কিছু শিক্ষা লাভ ও অর্থ উপার্জনের সঙ্গে জড়িত। এগুলোকে সাধারণত প্রাত্যহিক কর্ম ও নিত্যকর্ম বলা হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের কিছু ধর্মীয় ও নৈতিক নিত্যকর্ম আছে যা তারা পালন করে থাকেন। এছাড়া বুদ্ধ নির্দেশিত কিছু অনুশাসনও আছে যা ভিক্ষু ও গৃহীদের জন্য অবশ্য পালনীয়। এই অধ্যায়ে আমরা বৌদ্ধ ভিক্ষু ও গৃহীদের নিত্যকর্মসমূহ এবং অবশ্য পালনীয় অনুশাসনগুলো সম্পর্কে পাঠ করব।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

* বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পালনীয় নিত্যকর্ম ও অনুশাসনসমূহ বর্ণনা করতে পারব;

* বৌদ্ধ ভিক্ষুদের করণীয়সমূহ উল্লেখ করতে পারব;

* বৌদ্ধ গৃহীদের পালনীয় নিত্যকর্ম ও অনুশাসনসমূহ বর্ণনা করতে পারব;

* পটভূমিসহ সপ্ত অপরিহানীয় ধর্মের বিষয়বস্তু ও এর শিক্ষা ব্যাখ্যা করতে পারব ।

পাঠ : ১

ভিক্ষুদের নিত্যকর্ম ও অনুশাসন

গৃহীজীবন ত্যাগ করে যাঁরা প্রব্রজ্যা ধর্ম গ্রহণ করেছেন তাঁরাই বৌদ্ধধর্মে ভিক্ষু ও শ্রমণ নামে পরিচিত। গৃহধর্ম পরিত্যাগ করে ব্রহ্মচর্য পালন ও নির্বাণ সাধনার পথ অনুসরণই এঁদের লক্ষ্য। এছাড়া বুদ্ধ-প্রবর্তিত সদ্ধর্ম দিকে দিকে সকল মানুষের কাছে প্রচার করাও বৌদ্ধ ভিক্ষু ও শ্রমণদের কর্তব্য। তথাগত বুদ্ধ তাঁর ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রে এরূপ আহ্বানই করেছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারী ভিক্ষু-শ্রমণদের সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অনেক বিধিবিধান নির্দেশ করেন, যা বিনয়পিটকে বর্ণিত আছে।

যে-কেউ বৌদ্ধ সঙ্ঘে ভিক্ষু বা শ্রমণ হয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তবে সাত বছর বয়স না হলে শ্রমণ হতে পারেন না এবং বয়স বিশ বছরের কম হলে ভিক্ষু হতে পারেন না। শ্রমণ অর্থ শিক্ষানবিশ। প্রথমে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হয়ে প্রব্রজ্যা ও ব্রহ্মচর্য জীবনের নিয়মসমূহের সঙ্গে পরিচিত ও তা পালনে অভ্যস্ত হতে হয়। পরবর্তী সময়ে ভিক্ষু জীবন গ্রহণ করা যায়। বুদ্ধ ভিক্ষু-শ্রমণদের জন্য কিছু অবশ্য করণীয় কর্ম ও অবশ্যপালনীয় অনুশাসন নির্দেশ করেছেন, সেগুলোকে ভিক্ষু-শ্রমণদের নিত্যকর্ম ও অনুশাসন নামে অভিহিত করা হয়। নিম্ন ভিক্ষু-শ্রমণদের নিত্যকর্ম ও অনুশাসন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :

দশশীল :

শ্রমণদের প্রতিদিন ত্রিশরণসহ দশশীল গ্রহণ করতে হয়। শ্রমণদের জন্য দশশীল পালন আবশ্যিক নিত্যকর্ম । দশশীল সমূহ হলো : ১. জীবহত্যা ২. চুরি ৩. ব্যভিচার ৪. মিথ্যাভাষণ ৫. সুরাপান ৬. বিকাল ভোজন ৭. নৃত্যগীতে অনুরক্তি ৮. গন্ধমাল্য প্রভৃতি ধারণ ৯. আরামদায়ক শয্যায় শয়ন ১০. সোনারুপা গ্রহণ ইত্যাদি অভ্যাস বর্জন ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা :

আহার, বাসস্থান, পোশাক-পরিচ্ছদ ও ঔষধ জীবনধারণের এই চারটি মৌলিক উপাদান গ্রহণ সম্পর্কে

ভিক্ষু-শ্রমণদের অবশ্যই ভাবনা করতে হয়, যা প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা নামে পরিচিত। এগুলো নিম্নরূপ : ১. চীবর প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা : চীবর পরিধান বিষয়ে ভিক্ষু-শ্রমণদের এরূপ ভাবনা করতে হয় :

পোকা-মাকড়, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর কামড়, শীত ও উষ্ণতা নিবারণ, ধুলা-বালি, লজ্জা নিবারণ প্রভৃতি হতে সুরক্ষার জন্য এই চীবর পরিধান করছি। পঞ্চ-কামগুণ উৎপাদনের জন্য নয়।

পিণ্ডপাত প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা : আহার গ্রহণ করার সময় ভিক্ষু-শ্রমণদের এরূপ ভাবনা করতে হয় : “আমি কেবল জীবনধারণের জন্য এই আহার গ্রহণ করছি। শারীরিক সৌন্দর্য ও বল বৃদ্ধির জন্য নয়।”

৩. শয়নাসন প্রত্যবেক্ষণ : শয়নাসন গ্রহণ করার সময় ভিক্ষু-শ্রমণদের এরূপ ভাবনা করতে হয় : এ শয়নাসন শুধু শীত ও উষ্ণতা নিবারণের জন্য, দংশক-ধুলাবালি-রৌদ্র-পোকামাকড়, সরীসৃপ প্রভৃতির আক্রমণ নিবারণ এবং চিত্তের একাগ্রতা সাধনের জন্য। আলস্য বা নিদ্রায় অনর্থক কালক্ষেপণের জন্য নয়।

৪. গিলান প্রত্যয় প্রত্যবেক্ষণ : ঔষধ গ্রহণের সময় ভিক্ষু-শ্রমণদের এরূপ ভাবনা করতে হয়: কেবল রোগ

উপশমের জন্য প্রয়োজন মতো এ ওষুধ সেবন করছি। অন্য কোনো অকুশল উদ্দেশ্যে নয় । উল্লেখিত

মৌলিক উপাদান গ্রহণের সময় প্রত্যবেক্ষণ ভাবনাকে বর্তমান প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা বলা হয় ।

সূর্যোদয়ের পূর্বে, দুপুরের আহারের পরে এবং সন্ধ্যায় বন্দনার সময়ও প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা করতে হয়। এগুলোকে অতীত প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা বলে। এ ভাবনা না করলে পরিভোগকারীর জন্য এসব চুরি ও ঋণের পর্যায়ভুক্ত হয়। প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা লোভ-দ্বেষ-মোহ ধ্বংসের হেতু উৎপন্ন করে ।

চারি অকরণীয় :

ভিক্ষু- শ্রমণদের চারটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়, যাকে চারি অকরণীয় বলে। যথা- ১. ব্যভিচার না করা ২. চুরি না করা ৩. জীবহত্যা না করা এবং ৪. দৈবশক্তিসম্পন্ন বলে দাবি না করা এবং দৈবশক্তি প্রদর্শন না করা। চতুর্থ অনুশাসনটি প্রবর্তিত হয়েছিল বৈশালীতে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার পর। সে সময় কিছু কিছু ভিক্ষু নিজেদের দৈবশক্তির অধিকারী বলে প্রচার করে গৃহীদের মনোযোগ আকর্ষণপূর্বক খাদ্য সংগ্রহ করত। বুদ্ধ সেজন্য দৈবশক্তিসম্পন্ন বলে প্রচার ও তা প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিধি- নিষেধ আরোপ করেন।

আহার :

ভিক্ষুরা একাহারী। তবে মধ্যাহ্নের পূর্বে বা দুপুর বারোটার আগে আহার গ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়। সাধারণত ভিক্ষান্ন দ্বারা ভিক্ষু-শ্রমণদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভিক্ষু-শ্রমণগণ গৃহীদের আমন্ত্রণে গৃহে গিয়েও আহার গ্রহণ করতে পারেন ।

 

 

 

 

 

 

নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য :

তিনটি চীবর, যথা : সংঘাটি, উত্তরাসঙ্ঘ ও অন্তর্বাস, ভিক্ষাপাত্র, ক্ষুর, সুঁচ-সুতা, কটিবন্ধনী এবং জল ছাঁকনি—এই আটটি ভিক্ষু-শ্রমণদের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্য। দ্রব্যগুলো ভিক্ষু-শ্রমণদের জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট বলে বুদ্ধ নির্দেশ করেছেন।

সংযম ব্রত :

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সোনা রুপা গ্রহণ করা একেবারেই বারণ। যদি কোনো গৃহস্থ তা দান করেন তাহলেও ভিক্ষু তা নিজের জন্য রাখতে পারবেন না। হয় তা দাতাকে ফেরত দেবেন অথবা অন্য কোনো গৃহস্থকে দান করবেন। অন্য কোনো গৃহস্থকে দান করার ফলে তিনি তার বিনিময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য নিতে পারবেন। তবে সেগুলো ভিক্ষু নিজের জন্য নিতে পারবেন না। অন্য ভিক্ষু বা ভিক্ষুসঙ্ঘের জন্য নিতে পারবেন। বুদ্ধ শাসনের উন্নতির জন্য ভিক্ষুসঙ্ঘ ভুমি, বিহার প্রভৃতি স্থাবর সম্পত্তি গ্রহণ করতে পারবেন। বুদ্ধের সময় রাজা, মহারাজা ও গৃহীরা এরকম দান করতেন। তবে এগুলো সঙ্ঘসম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হবে।

পঞ্চ ভাবনা :

পঞ্চ ভাবনা ভিক্ষু শ্রমণদের নিত্যকরণীয় একটি ভাবনা। মৈত্রী, করুণা, মুদিতা, অশুভ ও উপেক্ষা- এ পাঁচটি বিষয়কে অবলম্বন করে ভাবনা করতে হয় বিধায় একে পঞ্চ ভাবনা বলে। ভিক্ষু শ্রমণগণ সকাল- সন্ধ্যায় নির্জনে বসে এই পঞ্চ ভাবনা চর্চা করেন । পঞ্চ ভাবনা লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ ও কামভাব থেকে মুক্ত রাখে। পঞ্চ ভাবনা হলো :

মৈত্রী ভাবনা : সকল প্রাণী শত্রুহীন হোক, বিপদহীন হোক, রোগহীন হোক, ভয়হীন হোক, সুখে বাস

করুক-এরূপ কল্যাণকামনাই মৈত্রী ভাবনা । করুণা ভাবনা : দুঃখীর দুঃখে ব্যথিত হয়ে ‘দুঃখমুক্তি' কামনা করাকে করুণা ভাবনা বলে ।

মুদিতা ভাবনা : অপরের সৌন্দর্য, যশ, লাভ, ঐশ্বর্য, অথবা সৌভাগ্য দেখে নিজ চিত্তে আনন্দ অনুভব করাই মুদিতা। ‘সকল প্রাণী যথালব্ধ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হোক' -এটি হলো মুদিতা ভাবনার মূলমন্ত্র । অশুভ ভাবনা : শরীর ব্যাধি ও অশুচির আধার, অনিত্য এবং মৃত্যুর অধীন। এ বিষয়গুলো অবলম্বন করে ভাবনা করাই হচ্ছে অশুভ ভাবনা ।

উপেক্ষা ভাবনা : লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিন্দা-প্রশংসা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি অষ্টপ্রকার লোকধর্মে চিত্তকে অবিচলিত রেখে ভাবনা করাই হচ্ছে উপেক্ষা ভাবনা ।

ধ্যান ও সমাধি :

ধ্যান ও সমাধি ভিক্ষু-শ্রমণদের নিত্যকরণীয় একটি বিষয় । ধ্যান অনুশীলন ব্যতীত চিত্তের একাগ্ৰতা আনয়ন সম্ভব নয়। মানুষ সহজে তৃষ্ণার জালে আবদ্ধ হয়। লোভ, দ্বেষ, মোহ, কামনা, বাসনা প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এসবের তাড়নায় মানবচিত্ত অশান্ত থাকে। চিত্ত স্বভাবত চঞ্চল এবং ভালোমন্দ উভয় দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে থাকে। এরূপ চিত্তকে সংযত করতে না পারলে তৃষ্ণা হতে মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। 

 

 

 

 

 

 

 

 

এজন্য জ্ঞানী ব্যক্তিগণ চিত্র-সংযমের চেষ্টা করেন। ধ্যানসাধনার লক্ষ্য চিত্তসংযম। ধ্যানের মাধ্যমে বিক্ষিপ্ত চিত্তকে সমাহিত বা স্থির করা হয়। ভিক্ষু-শ্রমণদের নিত্য ধ্যানানুশীলনের মাধ্যমে চিত্তের একাগ্রতা অর্জনের সাধনা করতে হয়। এভাবে আসক্তিসমূহ দূরীভূত হয়। এটি ধ্যানের প্রথম সোপান। মার্গফল লাভ করতে হলে এরকম চারটি সোপান অতিক্রম করতে হয়। বুদ্ধ-নির্দেশিত ধ্যানানুশীলনকে বিদর্শন ভাবনা বলা হয়। আসক্তিযুক্ত হয়ে মার্গফল লাভের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সাধনার নাম সমাধি। দ্বিতীয় স্তর থেকে সমাধির আরম্ভ। এ স্তরে সুখ-দুঃখ অতিক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র স্মৃতিটুকু অবশিষ্ট থাকে। সমাধির দ্বারা ছয়রকম বিশেষ জ্ঞান অর্জন হয়ে থাকে। যথা— দিব্যাদিব্য দর্শন, দিব্য শ্রবণ, অন্যের মনোভাব জানা, পূর্বজন্মের স্মৃতি মনে করা, রিপু দমনের ক্ষমতা লাভ, অলৌকিক বা ঋদ্ধি শক্তি অর্জন। অর্থৎ ভিক্ষুগণ এ সকল বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী। এঁরা নির্বাণ প্রত্যক্ষ করেছেন এবং পুনরায় জন্মগ্রহণ করবেন না।

ভিক্ষুদের অবশ্যপালনীয় অনুশাসন :

ভিক্ষুদের ২২৭টি শীল বা বিধিবিধান পালন করতে হয়। ‘পাতিমোখ' গ্রন্থে ভিক্ষুদের অবশ্য পালনীয় এসব বিধি-বিধানের বিস্তৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ভিক্ষুদের প্রতিমাসে অন্তত দুবার, পূর্ণিমা ও অমাবস্যার চতুর্দশীতে পাতিমোক্‌ষ আবৃত্তি করতে হয়। পাতিমোখে বর্ণিত অধিকাংশ শীল রাজগৃহে দেশিত হয়েছিল। ভিক্ষুদের জন্য বিধিবদ্ধ হয়েছে বলে এই শীলসমূহ ভিক্ষুশীল নামে অভিহিত। গুরুত্ব অনুসারে ভিক্ষুশীলসমূহকে আট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : পারাজিকা, সংঘাদিসেস, অনিয়ত, নিস্সগিয়া, পাচিত্তিয়া, পাটিদেসনিয়া, সেখিয়া এবং অধিকরণ সমর্থ।

ভিক্ষুদের পাতিমোখে বর্ণিত বিধিবিধানসমূহ অবশ্যই পালন করতে হয়। তথাগত বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণের পূর্বে তাঁর অস্তিম দেশনায় অপ্রমত্ত হয়ে কর্তব্য সম্পাদনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যতদিন ভিক্ষুসঙ্ঘ শুদ্ধাচারী হয়ে সত্যপথে চলবে ততদিন সদ্ধর্ম পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। শোকাভিভূত প্রিয়শিষ্য আনন্দকে শোক না করার জন্য উপদেশ দিয়ে বলেন, “নিজেই নিজের দীপ হয়ে বিচরণ করো, নিজেই নিজের শরণ নাও, অন্য শরণের প্রয়োজন নেই। আমার অবর্তমানে ভিক্ষুরা নিজের দীপ নিজে জ্বালবে, নিজের আশ্রয় নিজে হবে, অন্য কারো মুখাপেক্ষী হবে না, ধর্মের আশ্রয় নিয়ে শ্রেষ্ঠতা অর্জন করবে।” বুদ্ধ তাঁর অবর্তমানে ধর্ম এবং ধর্মের বাহক সঙ্ঘকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দিয়েছেন।

 

 

অনুশীলনমূলক কাজ

বিহারে গিয়ে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিত্যকর্ম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি কর (দলগত কাজ)

 

পাঠ গৃহীদের নিত্যকর্ম ও অনুশাসন

গৃহীদের মঙ্গল, সুন্দর ও শান্তিময় জীবনযাপনের জন্য বুদ্ধ অনেক ধর্মোপদেশ দান করেছেন। ত্রিপিটকের বিভিন্ন গ্রন্থে এসব ধর্মোপদেশ পাওয়া যায়। গৃহীদের উদ্দেশ্য করে প্রদত্ত বুদ্ধের এসব ধর্মোপদেশ ‘গৃহী বিনয়' হিসেবে গণ্য করা হয়। সিগালোবাদ সূত্র, কলহবিবাদ সূত্র, পরাভব সূত্র, মঙ্গলসূত্র, ব্যগ্‌ঘপজ্জ সূত্র, খগ্‌গবিসান সূত্র, লক্‌খন সূত্র, গৃহীপ্রতিপদা সূত্র, ধম্মিক সূত্র, গৃহপতিবর্গ, বিদূর পণ্ডিত জাতক প্রভৃতিতে এসব উপদেশ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।

বুদ্ধের এসব ধর্মোপদেশ বা অনুশাসন গৃহী বৌদ্ধদের জন্য অবশ্যপালনীয়। এখানে ত্রিপিটকের বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাপ্ত গৃহীদের নিত্যকর্ম ও অনুশাসন সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

১) সিগালোবাদ সূত্র :

একদিন রাজগৃহে বেণুবন বিহারে অবস্থানকালে বুদ্ধ সিগালক নামে এক ব্রাহ্মণ পুত্রের দেখা পান। সিগালক স্নানশেষে সিক্ত বস্ত্রে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঊর্ধ্ব, অধঃ – ষড়দিকে নমস্কার করছিলেন। বুদ্ধ তাঁকে ঐরূপ নমস্কারের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সিগালক বলেন, পৈতৃক প্রথা ও পিতার নির্দেশে তিনি ষড়দিকে নমস্কার করছেন । বুদ্ধ বুঝতে পারলেন সিগালক ষড়দিক বন্দনার মর্মার্থ বুঝতে পারেননি। অতঃপর, বুদ্ধ তাঁকে ষড়দিক বন্দনার মর্মার্থ ব্যাখ্যা করে গৃহীদের করণীয় সম্পর্কে যে-অনুশাসন প্রদান করেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :

চার প্রকার ক্লিষ্টকর্ম বর্জন : প্রাণিহত্যা, অদত্তবস্তু গ্রহণ, ব্যভিচার ও মিথ্যা ভাষণ-ধার্মিক গৃহীর এই চার প্রকার ক্লিষ্টকর্ম বর্জন করা উচিত । চার প্রকার পাপকর্ম বর্জন : স্বেচ্ছাচারিতা, হিংসা, ভয় ও অজ্ঞানতার বশবর্তী হয়ে পাপানুষ্ঠান করা - এ

চার প্রকার পাপকর্ম ধার্মিক গৃহীর পরিত্যাগ করা উচিত। এসব পাপকর্ম যশ-খ্যাতি ক্ষয় করে।

ষড়দোষ বর্জন : নেশাদ্রব্য গ্রহণ, অসময়ে ভ্রমণ, আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত, দ্যুত ক্রীড়া, কুসংসর্গ,

আলস্যপরায়ণতা-এই ষড়দোষ ধার্মিক গৃহীর পরিত্যাগ করা উচিত। কারণ :

ক) নেশা গ্রহণের ফলে ছয়টি বিষময় ফল ভোগ করতে হয়। যথা- ১. অকারণে ধনহানি ঘটে ২. কলহ বৃদ্ধি পায়, ৩. বিবিধ রোগের উৎপত্তি ঘটে ৪. দুর্নাম রটে ৫. নির্লজ্জ হয় এবং ৬. হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়। এসব কারণে জীবনহানিও ঘটতে পারে ।

খ) অসময়ে ভ্রমণের ফলে ১. নিজে অরক্ষিত থাকে ২. স্ত্রী-পুত্র অরক্ষিত থাকে ৩. বিষয়সম্পত্তি অরক্ষিত থাকে ৪. সর্বদা আশঙ্কাযুক্ত হয়ে চলতে হয় ৫. পাপকর্মে মিথ্যা কলঙ্ক আরোপিত হয় এবং ৬. বিভিন্ন রকমের দুঃখজনক বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় ।

গ) আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত থাকলে সর্বদা উৎকণ্ঠিত চিত্তে কালযাপন করতে হয়।

 

 

 

ঘ) দ্যুত ক্রীড়া অর্থাৎ তাস, পাশা, জুয়া জাতীয় খেলায় ১. জয়ী ব্যক্তির শত্রু বৃদ্ধি পায় ২. পরাজিতের অনুশোচনা হয় ৩. সম্মানহানি ঘটে ৪. সভা-সমিতিতে কথার মূল্য থাকে না ৫. মিত্র-পরিজনদের নিকট লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয় এবং ৬. স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণে অসমর্থ হয়।

ঙ) কুসংসর্গের ফলে ১. ধূর্ত ২. দুশ্চরিত্র ৩. নেশাগ্রস্ত ৪. জুয়াড়ি ৫. প্রবঞ্চক এবং ৬. ডাকাত জাতীয়

ব্যক্তি বন্ধু হয়। ফলে চরিত্র কলুষিত ও জীবনহানি হয় । চ) আলস্যপরায়নতার ফলে অনুৎপন্ন ধন উৎপন্ন হয় না, উৎপন্ন ধন ধ্বংস হয়।

মিত্রের লক্ষণ : যে ব্যক্তি বন্ধুকে পাপকার্য হতে নিবৃত্ত করেন, মঙ্গলকার্যে প্রবৃত্ত করেন অশ্রুত বিষয় শ্রবণ করায়, স্বর্গে যাওয়ার পথ নির্দেশ করে – এরূপ ব্যক্তিকে প্রকৃত বন্ধু বা মিত্র বলে জানবে। এদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত।

অমিত্রের লক্ষণ : যে সর্বদা অপরের ধন হরণ করে, বাক সর্বস্ব, চাটুকার ও প্ররোচক-এরূপ ব্যক্তি মিত্ররপী অমিত্র। তাকে বর্জনীয়। গৃহীর ষড়দিক : ধার্মিক গৃহীর ছয় প্রকার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা উচিত। একে গৃহীর ষড়দিক রক্ষা

করা বলে।

ক) পূর্ব দিকে নমস্কারের অর্থ হচ্ছে মাতাপিতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা। পাঁচভাবে মাতা- পিতার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। যথা : ১. বৃদ্ধকালে মাতা-পিতার ভরণ পোষণ করা ২. নিজে কাজের আগে তাঁদের কাজ সম্পাদন করা ৩. বংশমর্যাদা রক্ষা করা ৪. তাঁদের বাধ্যগত থেকে তাঁদের বিষয়সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ এবং ৫. মৃত জ্ঞাতিদের উদ্দেশে দান দেওয়া। মাতাপিতাও সন্তানের প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. পাপ হতে নিবৃত্ত করা ২. কল্যাণকর্মে প্রবৃত্ত করা ৩. উপযুক্ত সময়ে বিদ্যা শিক্ষা দান করা ৪. পরিণত বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা ৫. যোগ্যতা চিন্তা করে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করা।

খ) পশ্চিম দিকে নমস্কারের অর্থ হচ্ছে স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য পালন করা। স্ত্রীর প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. স্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ২. ভদ্র ব্যবহার করা ৩. পরস্ত্রীতে আসক্ত না হয়ে স্বীয় স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা ৪. বৈষয়িক ব্যাপারে কর্তৃত্ব দেওয়া এবং ৫. সাধ্যমতো বস্ত্রালংকার দেওয়া । স্ত্রীকেও স্বামীর প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. সুচারুরূপে গৃহকার্য করা ২.পরিজনবর্গ ও অতিথিদের প্রতি সাদর সম্ভাষণ করা ৩. স্বামীর প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ থাকা ৪. স্বামীর সঞ্চিত ধন অপচয় না করা এবং ৫. গৃহকর্মে নিপুণা এবং অলস না হওয়া ।

গ) উত্তর দিকে নমস্কারের অর্থ হচ্ছে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের প্রতি কর্তব্য পালন করা। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. দান ও সাময়িক অর্থ সাহায্য করা ২. প্রিয়বাক্য ব্যবহার করা ৩. হিতাচরণ করা ৪. প্রগাঢ় সহানুভূতি প্রদর্শন করা এবং ৫. সরল ব্যবহার করা । আত্মীয়স্বজন ও কুলপুত্রে প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. প্রমত্তকালে তাকে রক্ষা ২. তার ধনসম্পত্তি রক্ষা করা ৩. ভয়ে আশ্বস্ত করা ৪. বিপদকালে তাকে ত্যাগ না করা এবং ৫. তাকে সম্মান করা।

 

 

 

 

 

ঘ) দক্ষিণ দিকে নমস্কারের অর্থ হচ্ছে গুরুর প্রতি কর্তব্য পালন করা। গুরুর প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. গুরুর সামনে উচ্চ আসনে না বসা ২. সেবা করা ৩. আদেশ পালন করা ৪. মনোযোগ সহকারে উপদেশ শ্রবণ করা এবং ৫. বিদ্যাভ্যাস করা। গুরুকেও শিষ্যের প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা: ১. সুন্দররূপে বিনীত করা ২. খুঁটিনাটি বিষয় শিক্ষা দেওয়া ৩. পাঠ্য বিষয় নির্বাচন করে দেওয়া ৪. বন্ধুদের নিকট ছাত্রের প্রশংসা করা এবং ৫. বিপদে রক্ষা করা।

ঙ) উর্ধ্ব দিকে নমস্কারের অর্থ হচ্ছে শ্রমণ-ব্রাহ্মণদের প্রতি কর্তব্য পালন করা। শ্রমণ-ব্রাহ্মণদের প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. শ্রদ্ধাচিত্তে অন্ন, বস্ত্র, ঔষধ,বাসস্থান প্রভৃতি দিয়ে সেবা করা ২. জনসাধারণকে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাসম্পন্ন করে তোলা ৩. তাঁদের হিত কামনা করা ৪. শ্রদ্ধাচিত্তে তাঁদের অভ্যর্থনা জানানো এবং ৫. উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আপ্যায়ন করা। শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণও গৃহীর প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. তাকে পাপকর্ম হতে নিবৃত্ত রাখা ২. কল্যাণকর্মে প্রবৃত্ত করা ৩. তাদের হিত কামনা করা ৪. অশ্রুত বিষয় ব্যক্ত করা এবং ৫. জ্ঞাত বিষয় সংশোধন করে দেওয়া ও সুমার্গ প্রদর্শন করা।

ছ) অধঃ দিকে নমস্কারের অর্থ হচ্ছে কর্মচারীদের প্রতি কর্তব্য পালন করা। কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. সামর্থ্য অনুযায়ী কার্যভার অর্পণ করা ২. উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া ৩. রোগের সময় সেবা করা ৪. উৎকৃষ্ট খাদ্য ভাগ করে দেওয়া এবং ৫. মধ্যে মধ্যে বিশ্রাম দেওয়া। কর্মচারীদেরও গৃহস্বামীর প্রতি পাঁচ প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয়। যথা : ১. গৃহস্বামীর পূর্বে শয্যা ত্যাগ করা ২. পরে শয়ন করা ৩. কেবল প্রদত্ত বস্তু গ্রহণ করা ৪. যথার্থভাবে কর্ম সম্পাদন করা এবং ৫. গৃহস্বামীর সুখ্যাতি ও প্রশংসা করা ।

২) ব্যগ্‌ঘপঞ্জ সূত্র :

একসময় বুদ্ধ কোলীয় গ্রামে অবস্থান করছিলেন। ব্যগ্‌ঘপজ্জ নামক একজন কোলীয় বুদ্ধের নিকট সংসারে আবদ্ধ গৃহীদের ইহকাল ও পরকালের হিতের জন্য কিছু নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ করেন। বুদ্ধ গৃহী জীবনে মঙ্গলজনক চারটি বিষয় মেনে চলার নির্দেশ দেন। এ সকল নির্দেশনা ব্যগ্যপজ্জ সূত্রে বর্ণিত আছে। নির্দেশনাসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো :

উৎসাহ : পরিশ্রম ও সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারা জীবিকা নির্বাহে উৎসাহী হতে হবে। যেকোনো কাজ

সুসম্পন্ন করার প্রতি উৎসাহী হতে হবে। সংরক্ষণ : সদুপায়ে কষ্টে অর্জিত অর্থসম্পদ সতর্কতার সাথে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে চোর, অপহরণকারী, ঈর্ষাপরায়ণ জ্ঞাতি বা আগুন দ্বারা নষ্ট না হয়।

সৎলোকের সংশ্রব : ত্রিরত্নে শ্রদ্ধাশীল, প্রজ্ঞাসম্পন্ন, শীলবান, অপরের মঙ্গলকামী ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত। এঁদের সৎ গুনাবলি অনুসরণ করা উচিত। এঁরাই কল্যাণমিত্র। সৎ জীবন গঠনে এঁদের সংশ্রব অপরিহার্য।

শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন : আয় বুঝে ব্যয় করা গৃহীর একান্ত কর্তব্য। মিতব্যয়ী হতে হবে। আবার কৃপণতাও পরিহার করতে হবে। আয়-ব্যয় সমন্বয় করে যথারীতি জীবিকা নির্বাহকে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন বলে।

 

 

 

 

বুদ্ধ এ-প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, চারটি গুণে গুনান্বিত হলে ইহকাল ও পরকালে মহাউপকার সাধিত হয়। সে চারটি গুণ হলো— শ্রদ্ধাগুণ, শীলগুণ, দানগুণ ও প্রজ্ঞাগুণ ।

৩. আয়-ব্যয় বিষয়ে বুদ্ধের উপদেশ :

বুদ্ধ আয় বা লাভের অংশকে চার ভাগ করে ব্যবহার করতে উপদেশ দিয়েছেন। যথা : একভাগ নিজে পরিভোগ করবে। এ অংশ থেকে এক ভাগ দান করবে।

২ . দুই ভাগ কৃষি বা বাণিজ্যে নিযুক্ত করবে।

৩. . চতুর্থ ভাগ সঞ্চয় করে রাখবে, যাতে বিপদের দিনে ব্যবহার করা যায়। এগুলো ছাড়াও গৃহীদের উদ্দেশ্য করে বুদ্ধ আরও অনেক ধর্মোপদেশ দান করেছেন। এসব উপদেশ পালন করলে গৃহী-জীবন যেমন সুখের হয়, তেমনি নির্বাণের পথেও অগ্রসর হওয়া যায়। তাই এসব উপদেশ সকল গৃহীর মেনে চলা উচিত ।

অনুশীলনমূলক কাজ

গৃহীর ষড়দিক রক্ষার মর্মার্থ লেখ গৃহপতি বর্গে গৃহীর কয়টি গুণের কথা বলা হয়েছে? কী কী? আয়-ব্যয় সম্পর্কে বুদ্ধের উপদেশ কতটুকু যুক্তিযুক্ত-ব্যাখ্যা কর

পাঠ : : ৩ গৃহী নীতিমালা

সৎ আচরণ মনুষত্বের পরিচয় বহন করে। সৎ আচরণ ও সংযম সমাজে বসবাসের অন্যতম শর্ত। শ্রীমৎ ধর্মপাল থের সিংহলি ভাষায় “গিহিদিন চরিয়া' নামে একটি গ্রন্থ লিখেছেন। তাতে গৃহীদের জন্য একান্ত আচরণীয় বিষয় বর্ণিত আছে। বর্ণিত বিষয়বস্তু অবলম্বনে গৃহীদের অনুসরণীয় কিছু নীতিমালা তুলে ধরা হলো।

সকালের কাজ : সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ, হাত ধুয়ে বুদ্ধপূজা করা একান্ত কর্তব্য। যদি কাছাকাছি বিহার থাকে তবে সেখানে গিয়ে পূজা ও বন্দনা করা দরকার। অথবা ঘরে এই কাজ সম্পন্ন করা যাবে। বন্দনার পর ঘরের আসবাবপত্র পরিষ্কার করতে হবে। তারপর সকালের খাওয়ার পর মৈত্রী ভাবনা করে কাজে মন দিতে হবে।

আহার : খাওয়ার আগে ভালো করে মুখ, হাত, পা ধুয়ে নিতে হবে। খুশি মনে খাবার খেতে হবে। উচ্ছিষ্ট হাতে ভাত তরকারি নেওয়া উচিত নয়। অন্যমনস্ক হয়ে খাওয়া উচিত নয়। খাবার জিনিস ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন হলে পাশের সঙ্গী, মা-বাবা, বা ভাইবোন থেকে অনুমতি নিয়ে আসন ছাড়তে হয়। খাওয়ার সময় কথা বলা বা হেঁটে হেঁটে খাওয়া উচিত নয়। শব্দ করে খেতে নেই। খাওয়ার পর ভালো করে হাত-মুখ ধুতে হবে। প্রতিদিন সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করা উচিত।

 

 

 

 

 

স্নান ও কাপড় পরার নিয়ম : ময়লা কাপড় পরা উচিত নয়। অল্প কাপড় থাকলেও তা সময়মতো ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা উচিত। ঘামে ভেজা কাপড় না ধুয়ে আবার পরা উচিত নয়। পোশাক পরিধান না করে স্নান করা অনুচিত। নাকের ময়লা, চুল ও পা ভালো করে পরিষ্কার করে স্নান করা উচিত। নখ লম্বা হওয়ার আগেই কেটে ফেলতে হবে।

পথ চলার নিয়ম : বড় ও প্রসিদ্ধ রাস্তায় চলার সময় স্থানীয় নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। হাতে ছাতা থাকলে তা পরের গায়ে যেন না লাগে সেদিকে নজর রাখা দরকার। অন্যমনস্ক হয়ে পথ চলা অনুচিত। ডান ও বাম দিক ভালো করে দেখে রাস্তা পার হওয়া উচিত। চলার পথে কিছু খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা পালন করা উচিত। সাধ্যমতো অন্ধ, বৃদ্ধ ও শিশুদের রাস্তা পার হতে সাহায্য করা উচিত ।

সভার আচরণবিধি : সভার উপযোগী পোশাক পরিধান করে সভায় অংশগ্রহণ করা উচিত। অন্যের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নিজের মতামত যুক্তিসহকারে উপস্থাপন করতে হবে। সভায় সকলে সমস্বরে কথা বলা অনুচিত। সর্বোচ্চ শিষ্টাচার ও সৌজন্য বজায় রেখে সভায় অবস্থান করতে হয়। সময়ানুবর্তিতা সভায় অংশগ্রহণ ও সভা পরিচালনার অন্যতম শর্ত ।

রোগী দেখতে যাওয়া : আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও পরিচিত কারো অসুখ হলে দেখতে যাওয়া একটি সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। রোগীকে সহানুভুতি ও সাহস যোগাতে হবে। যথাসাধ্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পথ্য নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। রোগীর সেবায় নিয়োজিত আত্মীয়স্বজনকে সাহস ও সান্ত্বনা দিতে হয়। রোগী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়ে দেখতে যাওয়া উচিত। অধিক সময় রোগীর ঘরে থাকা উচিত নয়। রোগীর ঘর থেকে এসে কাপড় বদলে মুখ, হাত, পা ধুয়ে নিতে হয়। এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি ।

মৃত দর্শন : আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপড়শির মৃত্যুতে দেখতে যাওয়া সামাজিক ও ধর্মীয় কর্তব্য। পরিষ্কার কাপড় পরে যাওয়া এবং ফিরে এসে সেসব কাপড় খুলে ধুয়ে ফেলা ভালো। শোকার্তদের সমবেদনা জানাতে হয়। জন্ম-মৃত্যু অতি স্বাভাবিক ঘটনা। জীবমাত্রই মৃত্যুর অধীন। এভাবেই সান্ত্বনা ও সমবেদনা প্রকাশ করা যায়। মৃতের উদ্দেশে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয় এবং কোনোরকম সহায়তার প্রয়োজন হলে সহায়তা করা একটি কুশল কর্ম

পরিবারে ছেলেমেয়েদের কর্তব্য : পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা ছাড়াও অনেক কাজ করতে হয়। পড়ার বাইরেও পরিবারের অন্যান্য কাজে যথাসম্ভব সাহায্য করতে হবে। মা-বাবা যে-পেশায় কাজ করেন সে-কাজে সাধ্যমতো তাঁদের সাহায্য করতে হবে। অবসরে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে পারিবারিক কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়। পিতা-মাতার ব্যবসার কাজেও সাহায্য করতে হয়।

নামকরণ : ব্যক্তির নামকরণ ধর্মীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কিত হলে ভালো হয়। এতে নিজ ধর্মের সাথে পরিচিতি ও নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। নিজের দেশের ঐতিহ্য, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ীও নাম রাখা যেতে

পারে ।

 

 

 

 

 

 

নিত্যপালনীয় ধর্মাচার : প্রতিটি বৌদ্ধ গৃহীর গৃহে নিত্যপালনীয় ধর্মাচারের জন্য একটি বুদ্ধাসন থাকে। সেখানে বুদ্ধের মূর্তি বা চিত্র থাকে। গৃহী বৌদ্ধরা সাধারণত পারিবারিক বুদ্ধাসনের সামনে দিনে তিনবার নিয়মিত শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে থাকে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ, হাত ও পা ধুয়ে পুষ্প, পানীয়, আহার ও সুগন্ধ ধূপসহ বুদ্ধকে পূজা করা হয়। দুপুর বারোটার পূর্বে অনুরূপভাবে আহার ও পানীয় দিয়ে বুদ্ধকে পূজা করা হয়। সন্ধ্যায় প্রদীপ, সুগন্ধ ধূপ ও পানীয় দিয়ে পুনরায় একইভাবে বুদ্ধের উপাসনা করা হয়। এ সময় নির্ধারিত গাথা আবৃত্তি করে ভক্তিসহকারে পূজাসামগ্রী উৎসর্গ করতে হয়। এরূপ উপাসনা চিত্তকে পবিত্র ও শান্ত করে। অন্তর থেকে অন্ধকাররূপী কলুষতা বিদূরীত করে সদ্ধর্মের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করে ।

অনুশীলনমূলক কাজ গৃহী নীতিমালা অনুযায়ী একটি দিনলিপি প্রস্তুত কর

পাঠ : ৪ সপ্ত অপরিহাণীয় ধর্ম

বুদ্ধের সময় বৈশালী নামে একটি সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল। বৈশালীর অধিবাসী বজ্জি ও লিচ্ছবিরা বুদ্ধের অনুসারী ছিলেন। লিচ্ছবিরা বুদ্ধ ও সঙ্ঘের বসবাসের জন্য সুরম্য কুটাগারশালা বিহার নির্মাণ করে দেয়। বুদ্ধ ঐ বিহারে পাঁচবার বর্ষাবাস পালন করেন। বৈশালীতে অবস্থানকালে বুদ্ধ একাধিক সূত্র ও অনুশাসন দেশনা করেন। তার মধ্যে গৃহীদের জন্য ‘সপ্ত অপরিহাণীয় ধর্ম' অন্যতম। ‘সপ্ত অপরিহাণীয় ধর্ম' অর্থ হচ্ছে সাতটি অপরিহার্য কর্তব্য। তথাগত বুদ্ধ বৈশালীর 'সারন্দদ চৈত্যে' অবস্থানকালে বজ্জিগণের উদ্দেশে এই অনুশাসনসমূহ দেশনা করেন। বজ্জিরা এ সাতটি অপরিহার্য উপদেশ অনুসরণ করে প্রাচীন আর্যাবর্তে নিজেদের অজেয় এবং উন্নত জাতিতে পরিণত করেছিলেন। যেকোনো জাতি বা সমাজ এ সাতটি অপরহার্য ধর্ম বা অনুশাসন পালন করলে তাদের কখনো পরাজয় ঘটবে না। এ-সাতটি অপরিহার্য ধর্ম নিম্নরূপ :

১. সভাসমিতির মাধ্যমে সকলে একত্রিত হয়ে যে-কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ।

২. গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবে সম্পাদন করা এবং কোনোরকম নতুন কিছু করার কারণ ঘটলে সবাই মিলিতভাবে করা ।

৩. সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কোনোরকম দুর্নীতি চালু না করা; প্রচলিত সুনীতি উচ্ছেদ না করা এবং প্রাচীন নীতি ও অনুশাসন মেনে চলা ।

৪. বয়োবৃদ্ধ বা জ্ঞানবৃদ্ধদের শ্রদ্ধা, সম্মান, গৌরব ও পূজা করা এবং তাদের আদেশ পালন করা । ৫. কুলবধূ এবং কুলকুমারীদের প্রতি কোনো রকম অন্যায় আচরণ না করা অর্থাৎ স্ত্রীজাতির মর্যাদা রক্ষা করা।

৬. পূর্বপুরুষদের নির্মিত বিহার, চৈত্য, এবং প্রদত্ত সম্পত্তি যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা ও সদ্ধর্মের প্রতিপালন করা।

৭. অর্হৎ ও শীলবান ভিক্ষুদের প্রয়োজনীয় দান দিয়ে সেবা ও রক্ষা করা, তাঁদের সুখ ও সুবিধার ব্যবস্থা করা ও নিরাপদ অবস্থান সনিশ্চিত করা ।

 

 

 

 

ভিক্ষুদের সপ্ত অপরিহাণীয় ধর্ম : তথাগত বুদ্ধ বৌদ্ধসঙ্ঘের স্থায়িত্ব বিধানের জন্য সাতটি অপরিহার্য ধর্ম দেশনা করেন, যা মহাপরিনির্বাণ সূত্রে সংকলিত হয়েছে। ভিক্ষুসঙ্ঘের ভবিষ্যৎ কল্যাণার্থে বুদ্ধ এ- অনুশাসনসমূহ দেশনা করেন এবং বলেন যে এগুলো পালন করলে তাঁদের কখনোই পরাজয় হবে না। ভিক্ষুদের সপ্ত অপরিহাণীয় ধর্মসমূহ নিম্নরূপ

১. ভিক্ষুগণ একত্রে সম্মিলিত হবেন।

২. ভিক্ষুগণ একতাবদ্ধ থেকে একসঙ্গে সঙ্ঘ-কর্তব্য সম্পাদন করবেন।

৩. ভিক্ষুগণ নির্দেশিত শিক্ষাপদসমূহ পালন করবেন।

৪. ভিক্ষুগণ বয়োজ্যেষ্ঠ ভিক্ষুদের সম্মান, পূজা ও সেবা করবেন। ৫. ভিক্ষুগণ পুনর্জন্মের কারণ তৃষ্ণার বশবর্তী হবেন না ।

৬. ভিক্ষুগণ অরণ্যে বা একান্তে নির্বাণ সাধনায় মনোনিবেশ করবেন।

৭. ভিক্ষুগণ অনাগত ও আগত ভিক্ষু-শ্রমণের সুখ-সাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করবেন। এভাবেই বুদ্ধ তাঁর অবর্তমানে গৃহী ও ভিক্ষু-শ্রমণদের কল্যাণার্থে এবং সদ্ধর্মের অনুশীলন অব্যাহত রাখার জন্য অবশ্য পালনীয় নীতিমালা ও অনুশাসনসমূহ দেশনা করেছেন ।

অনুশীলনমূলক কাজ

সপ্ত অপরিহাণীয় ধর্মের সুফল সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ রচনা লেখ

অনুশীলনী

 

১. শূন্যস্থান পূরণ কর

ক) দুঃখীর দুঃখে ব্যথিত হয়ে ‘দুঃখ মুক্তি' কামনা করাকে ---- ভাবনা বলে ।

খ. নেশা গ্রহণের ফলে----বিষময় ফল ভোগ করতে হয়।

গ) পাপ কর্মে মিথ্যা----আরোপিত হয় ।

ঘ. গুরুকেও শিষ্যের প্রতি- --- প্রকার কর্তব্য পালন করতে হয় ।

ঙ. নিজেই নিজের----হয়ে বিচরণ করো ।

২. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

ক) বর্তমান প্রত্যবেক্ষণ কী ব্যাখ্যা কর।

খ) ভিক্ষু ও শ্রমণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।

গ) মিত্রের লক্ষন কী ?

ঘ) পরিবারের প্রতি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ বর্ণনা কর।

 

 

 

 

৩. বর্ণনামূলক প্রশ্ন

ক) ভিক্ষু ও শ্রমণদের নিত্যকর্ম ও অনুশাসনসমূহ বর্ণনা কর ।

খ) গৃহীদের প্রতিপালনীয় নিত্যকর্ম ও অনুশাসনসমূহ বর্ণনা কর । 

গ) সপ্ত অপরিহাণীয় ধর্ম কী? বিস্তারিত লেখ ।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। ‘নিস্সাগগিয়' -র অর্থ কী ?

ক. নিশ্চিত করা উচিত

খ. লক্ষ করা উচিত

খ. ত্যাগ করা উচিত

ঘ. সমাধা করা উচিত

২। ধ্যান ও সমাধি ভিক্ষু শ্রমণদের জন্য অবশ্যকরণীয় কেন ?

ক. চিত্তসংযমের জন্য

খ. প্রশংসা পাওয়ার জন্য

গ. যশ-খ্যাতি অর্জনের জন্য

ঘ. অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য

নিচের অনুচ্ছেদ পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও

অমিত বড়ুয়া শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হন। আহার গ্রহণের সময় বিহারাধ্যক্ষ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি আহার গ্রহণ করছেন কেন?” তিনি জবাবে বললেন, কেবল জীবনধারণের জন্য; তখন ভিক্ষু বললেন, ' “আপনি কী আমাদের চারটি মৌলিক উপাদান গ্রহণের সময় এরূপ চিন্তা করেন? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ আমি এরূপ চিন্তা করি।”

৩। বৌদ্ধ ভিক্ষু নিজকর্ম অনুসারে অমিত বড়ুয়ার এরূপ চিন্তাধারাকে কী বলা হয় ?

ক. মৈত্রীভাবনা

খ. পঞ্চ ভাবনা

গ. প্রত্যবেক্ষণ ভাবনা

ঘ. মুদিতা ভাবনা

৪। উক্ত চিন্তাধারা গ্রহণ করলে অমিত বিরত থাকবেন

i. লোভ-লালসা থেকে

ii. হিংসা দ্বেষ থেকে

iii. কামভাব থেকে

 

 

 

 

নিচের কোনটি সঠিক ? 

ক. i ও ii

খ. ii ও iii

গ. i ও iii

ঘ. i, ii ও iii

(ক) কারা ষড়দোষ পরিত্যাগ করেন?

(খ) ভিক্ষু শ্রমণেরা সংযম ব্রত পালন করেন কেন?

(গ) তালিকায় বর্ণিত আচরণসমূহ গৃহস্থরা কেন পালন করেন? সিগালোবাদ সূত্রের আলোকে ব্যাখ্যা কর ।

(ঘ) উল্লেখিত তালিকায় নিত্যকর্ম ও অনুশাসনের ইঙ্গিত কাদের জন্য প্রযোজ্য পাঠ্য বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর ।

 

 

২। কাহিনী-১

দীপক বড়ুয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃকৃত শেষ করে ত্রিরত্ন সেবায় নিয়োজিত হয় । তিনি সতর্কতার সাথে রাস্তা পারাপার হন । এলাকায় কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাকে সৎকারের জন্য এগিয়ে যান এবং পরিবারের প্রধান হিসেবে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকেন ।

কাহিনী-২

শ্রদ্ধেয় আর্যপ্রিয় ভিক্ষু বিনয়ের অনুশাসনের অংশ হিসেবে বয়সে বড় ভিক্ষুদের সম্মান করেন । সঙ্ঘে একত্র হয়ে থাকেন এবং নির্বান সাধনায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন ।

শ্রমণদের আবশ্যিক নিত্যকর্ম কী?

(খ) ভিক্ষুরা পঞ্চভাবনা করেন কেন?

(গ) কাহিনী-১ এ দীপক বড়ুয়ার আচরণ গৃহী নীতিমালার আলোকে ব্যাখ্যা কর । 

(ঘ) ২নং কাহিনী ভিক্ষুদের জন্য ‘সপ্ত অপরিহানীয় ধর্মের বিষয়' যুক্তি প্রদর্শন কর ।

 

 

সমাপ্ত

Content added By
Promotion