(১০টির উত্তর দিতে হবে)
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল সারা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত তার অসামান্য মানবসেবা, নার্সিং পেশায় আধুনিক পরিবর্তন আনা, এবং অসুস্থদের প্রতি তাঁর অবিচল সহানুভূতি ও যত্নশীলতার জন্য। তিনি নার্সিং পেশাকে একটি সম্মানজনক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন, যা আজও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একটি প্রধান স্তম্ভ। তাঁর জীবন ও কাজের মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন এবং নার্সিংয়ের "প্রতিষ্ঠাতা" হিসাবে বিবেচিত হন।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল কেন সমাদৃত, তার কিছু প্রধান কারণ নিম্নরূপ:
১৮৫৩-১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়ান যুদ্ধে আহত সৈনিকদের সেবা করার জন্য ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের দুর্বিষহ অবস্থা দেখে তিনি ও তাঁর নার্সদের একটি দল যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ শুরু করেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অপ্রতুল চিকিৎসার জন্য সৈনিকদের মৃত্যুর হার ছিল অত্যন্ত বেশি। নাইটিংগেলের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিবেশ উন্নত হয় এবং মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল নার্সিং পেশাকে উন্নত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। তিনি নার্সদের জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ এবং নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেন, যা আধুনিক নার্সিংয়ের ভিত্তি স্থাপন করে। ১৮৬০ সালে তিনি “নাইটিংগেল নার্সিং স্কুল” প্রতিষ্ঠা করেন, যা নার্সিংয়ের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। এর ফলে নার্সিং পেশাকে সমাজে মর্যাদাপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়।
নাইটিংগেল হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা রোগীর আরোগ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। তাঁর প্রচেষ্টার মাধ্যমে হাসপাতালের স্বাস্থ্যবিধি উন্নত হয়, যা বিশ্বব্যাপী হাসপাতাল ব্যবস্থার রূপান্তরে সাহায্য করে।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল পরিসংখ্যানবিদ হিসেবেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি পরিসংখ্যানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। ক্রিমিয়ান যুদ্ধে মৃত্যুর হার কমানোর জন্য তিনি পরিসংখ্যানের ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন চার্ট ও গ্রাফের মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করেন। তাঁর পরিসংখ্যানমূলক গবেষণা স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নের একটি নতুন পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে।
নাইটিংগেলের কাজ নারীদের জন্য একটি উদাহরণ ছিল। তিনি নার্সিং পেশার মাধ্যমে নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের একটি সুযোগ তৈরি করেন এবং নারীদের আরও সম্মানিত ও স্বাধীন হওয়ার পথ সুগম করেন। তাঁর জীবনের মাধ্যমে নারীরা প্রমাণ করে যে, তারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল সারা জীবনে নিজেকে মানুষের সেবায় উৎসর্গ করেছেন। তিনি আর্থিক সচ্ছল পরিবার থেকে আসা সত্ত্বেও জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করে অসুস্থ ও আহত মানুষদের সেবা করেছেন। তাঁর মানবসেবা এবং ত্যাগের এই আদর্শ মানুষকে আজও অনুপ্রাণিত করে।
তাঁর কাজ এবং অবদান শুধু ব্রিটেনেই নয়, বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। আজও তাঁর নাম নার্সিং পেশার সাথে গভীরভাবে জড়িত, এবং প্রতি বছর ১২ মে (নাইটিংগেলের জন্মদিন) আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হয়, যা তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল মানবসেবার এক উজ্জ্বল প্রতীক, যিনি তাঁর সেবা, গবেষণা এবং সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছেন। তাঁর কাজ আজও স্বাস্থ্যসেবা, নার্সিং পেশা এবং মানবতার সেবায় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।