(৫টি প্রশ্নের ৩টির উত্তর দিতে হবে।)
অন্যকে ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের শিষ্য হতে পারি, কারণ ভালোবাসা খ্রিস্টীয় শিক্ষার মূল ভিত্তি। যীশু খ্রিস্ট শিষ্যদের জন্য ভালোবাসাকে এক নম্বর নীতিতে পরিণত করেছিলেন, এবং তিনি শিষ্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন তারা একে অপরকে ভালোবাসে। অন্যদের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা যীশুর আদর্শ অনুসরণ করতে পারি এবং ঈশ্বরের প্রকৃত শিষ্য হয়ে উঠতে পারি।
যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রতি সরাসরি আদেশ দেন, "আমি তোমাদের একটি নতুন আজ্ঞা দিচ্ছি, তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো। যেমন আমি তোমাদের ভালোবেসেছি, তেমনই তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো" (যোহন ১৩:৩৪)। এই বাক্য থেকে বোঝা যায় যে যীশু শিষ্যদের প্রতি সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি দিয়েছেন ভালোবাসা। তিনি যেমন নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছেন, তেমনি তাঁর শিষ্যরাও যদি অন্যকে ভালোবাসে, তবে তারা প্রকৃত অর্থে তাঁর অনুসারী হয়।
প্রথম যোহন ৪:১৬-তে বলা হয়েছে, "ঈশ্বর ভালোবাসা, আর যে ভালোবাসায় স্থির থাকে, সে ঈশ্বরে স্থির থাকে এবং ঈশ্বরও তার মধ্যে স্থির থাকেন।" অর্থাৎ, যখন আমরা অন্যদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি, আমরা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করি। ভালোবাসা শুধু একটি আবেগ নয়, এটি ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নিবেদন এবং আস্থার প্রতিফলন। ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি এবং তার শিষ্যত্বকে দৃঢ়ভাবে পালন করতে পারি।
যীশু তাঁর জীবনে শিষ্যদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে সেবা ও আত্মত্যাগের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন, "এর চেয়ে বড় ভালোবাসা আর কিছুই নেই যে কেউ তার বন্ধুদের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেয়" (যোহন ১৫:১৩)। যীশু নিজেই তাঁর শিষ্যদের এবং মানবতার জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন, যা নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সর্বোচ্চ উদাহরণ। তাই আমরা যখন অন্যদের সেবা করি, তাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করি এবং তাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করি, তখন আমরা যীশুর শিষ্য হয়ে উঠি।
খ্রিস্টীয় ভালোবাসা প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়াই দেওয়া হয়। লূক ৬:৩৫-এ যীশু বলেন, "তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালোবাসো, মঙ্গল করো এবং ঋণ দাও, আশা না করেই।" অন্যদের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রদর্শন করা ঈশ্বরের শিষ্য হওয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। এটি শুধু বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতদের প্রতি নয়, শত্রুদের প্রতিও প্রযোজ্য। শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা, ক্ষমা এবং করুণা দেখানোর মাধ্যমে আমরা যীশুর শিষ্যত্বের পথ অনুসরণ করি।
যখন আমরা অন্যদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করি, তখন আমরা ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ করি। যীশু বলেন, "এতে আমার পিতা মহিমান্বিত হন, যে তোমরা ফলবান হবে এবং আমার শিষ্য হবে" (যোহন ১৫:৮)। অন্যদের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাসের ফল প্রদর্শন করি। এভাবে আমরা তাঁর শিষ্য হিসেবে সঠিক পথ অনুসরণ করি এবং ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করি।
ঈশ্বরের শিষ্য হওয়া মানে শুধু ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে শান্তি ও ঐক্যের সম্পর্ক তৈরি করাও। ভালোবাসা সমাজে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, এবং সম্প্রীতির সৃষ্টি করে। এটি পারিবারিক, সামাজিক, এবং ধর্মীয় জীবনে স্থিতিশীলতা এবং শান্তি আনে, যা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের অন্যতম লক্ষ্য।
অন্যকে ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা যীশুর আদেশ পালন করি এবং ঈশ্বরের শিষ্য হয়ে উঠি। ভালোবাসা হল ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের গভীর প্রকাশ এবং আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনযাপনের কেন্দ্রে অবস্থান করে। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ক্ষমা, সেবা, এবং ত্যাগের মাধ্যমে আমরা যীশুর জীবনের আদর্শ অনুসরণ করি এবং তাঁর প্রকৃত শিষ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হই।