কুমার সিদ্ধার্থ গৌতমের রাজকুমার থেকে গৌতম বুদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। এটি ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হলো:
১. জন্ম এবং পরিবার:
- সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্ম হয়েছিল 563 খ্রিস্টপূর্বাব্দে লুম্বিনীতে, যা বর্তমান নেপালে অবস্থিত। তিনি শাক্য বংশের রাজা শুদ্ধোধন এবং রানী মায়াদেবীর সন্তান ছিলেন। তাঁর জন্মের সময়, এক জ্যোতিষী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তিনি একজন মহৎ সাধক বা বুদ্ধ হবেন।
২. রাজকুমার জীবন:
- সিদ্ধার্থ একটি রাজকুমার হিসেবে পালন-পালনের মধ্যে ছিলেন। তাঁর বাবা রাজা শুদ্ধোধন তাঁরকে জীবনের যন্ত্রণা ও দুঃখ থেকে দূরে রাখতে সবরকম চেষ্টা করেছিলেন। সিদ্ধার্থের জন্য সুন্দর প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল এবং তাঁর জন্য সব কিছু উপলব্ধ ছিল।
৩. চারটি দৃশ্যের দেখা:
- একদিন, সিদ্ধার্থ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে শহরে যান। সেখানে তিনি চারটি দৃশ্য দেখেন যা তাঁর জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়:
- বৃদ্ধ ব্যক্তি: তিনি দেখলেন একজন বৃদ্ধ মানুষ, যিনি বয়সের কারণে দুর্বল ও অসুস্থ ছিলেন।
- অসুস্থ ব্যক্তি: তিনি একটি অসুস্থ মানুষকে দেখলেন, যিনি দুঃখ ও যন্ত্রণায় ভুগছেন।
- মৃত্যু: তিনি একটি মৃতদেহ দেখলেন, যা তাঁকে মৃত্যুর সত্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
- সন্ন্যাসী: সবশেষে, তিনি একজন সন্ন্যাসীকে দেখলেন, যিনি শান্তিতে বসে আছেন এবং দার্শনিকভাবে জীবনযাপন করছেন।
৪. সন্ন্যাস গ্রহণ:
- এই চারটি দৃশ্য দেখে সিদ্ধার্থ গভীর চিন্তায় পড়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন যে জীবনের সত্যি হচ্ছে জন্ম, বৃদ্ধ, অসুস্থতা ও মৃত্যু। এর ফলে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং রাজ্য, স্ত্রী যশোধরা এবং সন্তান রাহুলকে ত্যাগ করেন।
৫. ধ্যানে প্রবেশ:
- সিদ্ধার্থ গুরু আরূপা, আলারা কালাম এবং অন্যান্য গুরুদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন ধ্যানের অনুশীলন করেন। কিন্তু তিনি দ্রুত বুঝতে পারেন যে এটি মুক্তির পথে তাকে পৌঁছাতে সাহায্য করছে না। তিনি কঠোর তপস্যা ও দেহ-সংযমে প্রবেশ করেন, তবে তার ফলে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং অভিজ্ঞতা করেন যে কষ্ট সহ্য করাও মুক্তির পথ নয়।
৬. সত্যের অনুসন্ধান:
- এরপর সিদ্ধার্থ ধ্যান করার জন্য উজ্জ্বলা নদীর ধারে একটি গাছের তলায় বসেন এবং সত্যের অনুসন্ধানে প্রবেশ করেন। তিনি চিন্তাভাবনা করতে থাকেন এবং একসময় তিনি "বুদ্ধ" (Awakened One) বা "জ্ঞানী" হিসেবে পরিচিত হন।
৭. বুদ্ধত্ব অর্জন:
- সিদ্ধার্থ গৌতম বিহার করে দীর্ঘ 49 দিন ধ্যানের পর সিদ্ধি লাভ করেন এবং তিনি বুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি উপলব্ধি করেন চার Noble Truth এবং অষ্টাঙ্গিক পথের শিক্ষা।
৮. প্রথম ধর্ম প্রচার:
- বুদ্ধত্ব লাভের পর, তিনি প্রথমে সারনাথ শহরে তাঁর পাঁচজন শিষ্যের কাছে ধর্ম প্রচার করেন। সেখানে তিনি তাঁর প্রথম উপদেশ প্রদান করেন, যা "ডর্ম চাকা প্রবর্তন" নামে পরিচিত।
উপসংহার:
সিদ্ধার্থ গৌতমের রাজকুমার থেকে গৌতম বুদ্ধ হওয়ার এই ঘটনা মানবিক জীবনের চরম সত্যের প্রতি তাঁর গভীর উপলব্ধি ও সামাজিক উন্নতির প্রতি নিবেদন নির্দেশ করে। তাঁর জীবন ও শিক্ষার মাধ্যমে তিনি মানুষকে দুঃখ ও বেদনার সমাধান প্রদান করেন এবং মানবতা ও শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যান।