রিপা বিদিতার পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। সে বিদিতার বাসায় আত্মীয়- স্বজনসহ বেড়াতে এলে বিদিতা তাদের যত্নসহকারে আপ্যায়ন করে। একদিন রিপা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। রিপার বাবা-মা তখন বাসায় ছিলেন না। বিদিতার বাবা-মা রিপাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। রিকশা দুর্ঘটনায় বিদিতার পা ভেঙে গেলে রিপা হাসপাতালে এক সপ্তাহ অবস্থান করে তাকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। বিদিতার জন্মদিনে রিপার পরিবার উপহারসহ বিদিতার বাসায় আসে।
'শহুরে জীবনে প্রতিবেশীরাই ঘনিষ্ঠজন'- আমি এ বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত নই।
আমরা বাস্তবে দেখি গ্রাম ও শহরভেদে প্রতিবেশীর সম্পর্ক ভিন্ন হয়। গ্রামীণ সমাজে প্রতিবেশীর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে। অর্থাৎ গ্রামীণ সমাজে প্রতিবেশীদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো কৃত্রিমতা থাকে না। অপরদিকে শহরে প্রতিবেশীদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত ঘনিষ্ঠ হয় না। এ সম্পর্কের ভিতর কেমন জানি একটা কৃত্রিমতা লুকিয়ে থাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে। তবে আনন্দ-উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শহর জীবনের প্রতিবেশীরা একে অন্যে অনেকটা আপন হয়ে যায়। অথচ সামাজিকীকরণে প্রতিবেশীর ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শৈশব থেকেই আমরা প্রতিবেশীদের সংস্পর্শে বড় হই। আমাদের পাশাপাশি বাড়িগুলোতে সমবয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতিবেশী দল গড়ে ওঠে। এ দল থেকে শিশু সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ঐক্য, নেতৃত্ব প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করে। প্রতিবেশীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান; যেমন- বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, বড়দিন প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করে শিশুরা আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে ওঠে এবং সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, সম্প্রীতি ইত্যাদি গুণাবলি অর্জন করে। আবার কেউ অসুস্থ হলে নিকট আত্মীয়ের চেয়ে প্রতিবেশীই বেশি ভূমিকা পালন করে। বস্তুত প্রতিবেশীরাই সুখ-দুঃখের প্রথম অংশীদার। কিন্তু শহুরে জীবনে এ অংশীদারিত্বে আন্তরিকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা গ্রামের চেয়ে অনেক কম।
তাই বলা যায়, শহরে জীবনে প্রতিবেশীর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ নয়।