এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র-পাহাড়
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশতলে মেশে ।
এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে ।
সকল দেশের রানি সে-যে আমার জন্মভূমি ।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
'প্রবাস বন্ধু' ভ্রমণকাহিনিতে আবদুর রহমানকে তার শারীরিক গঠনের জন্য 'নরদানব' বলা হয়েছে।
আবদুর রহমানের উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চি। দুই হাত হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে। তার পা দুখানা ডিঙি নৌকার মতো। কাঁধ এত চওড়া যে লেখকের মনে হয়েছে সে বাবুর্চি আবদুর রহমান না হয়ে বাদশা আবদুর রহমান হলে গোটা আফগানিস্তানের ভার বইতে পারত। এ কান ও কান জোড়া মুখ। এবড়ো-থেবড়ো নাক- কপাল নেই। তার এমন শারীরিক গঠনের জন্য লেখকের মনে হয়েছে সে মানুষ নয়, কোনো বিশালদেহী ভয়ংকর জন্তু। এ কারণেই তাকে 'নরদানব' বলা হয়েছে।
‘প্রবাস বন্ধু' সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে গ্রন্থের পঞ্চদশ অংশ। প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানের ভূমি, পরিবেশ; সেখানকার মানুষ ও তাদের সহজ-সরল জীবনাচরণ, বিচিত্র খাদ্য ইত্যাদি হাস্যরসাত্মকভাবে এই রচনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখকের আফগানিস্তান ভ্রমণের আংশিক অভিজ্ঞতার পরিচয় আছে এখানে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের সন্নিকটে খাজামোল্লা নামক গ্রামে বাসের সময় আবদুর রহমান নামের একজন তাঁর দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন । আফগান আবদুর রহমান চরিত্রের মধ্যে সরলতা, স্বদেশপ্রেম, অতিথিপরায়ণতা ফুটে উঠেছে। আবদুর রহমানের রান্না ও পরিবেশন করা খাবারের মধ্যে আফগানিস্তানের বিচিত্র ও সুস্বাদু খাদ্যবস্তুর পরিচয় পাওয়া যায়। আফগানিস্তানের প্রস্তরভূমি এবং একই সঙ্গে নিকট-প্রতিবেশী এই জনপদের বরফ- শীতল জলবায়ু আকর্ষণীয়। ‘প্রবাস বন্ধু’ গল্পটি আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করে; একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে জীবন ও জগৎ, সমাজ ও সংস্কৃতিকে ভাবতে শেখায়।