.
ভাব-সম্প্রসারণ কর:
পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে।
মানুষের সকল সৃষ্টির মূলে রয়েছে তার চেষ্টা। চেষ্টার বলেই মানুষ অসাধ্যকে সাধন করেছে। পথিককে যেমন দীর্ঘদিন ধরে চলাফেরা করে তার চলার পথ সৃষ্টি করে নিতে হয়, ঠিক তেমনি মানুষকেও দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা ও সাধনার দ্বারা তার সফলতার মুখ দেখতে হয়। পথিক ও পথ এ দুটি কথা পরস্পর পরস্পরের সাথে জড়িত। পথ ছাড়া যেমন পথিকের কোনো মূল্য নেই, ঠিক তেমনি পথিক ছাড়া পথের কোনো মূলা নেই। কিন্তু পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিককেই তার পথের সৃষ্টি করে নিতে হয়। পথিক জীবনের কর্মক্ষেত্রে যে নির্দিষ্ট পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে সেখানেই পথের সৃষ্টি হয়। এ পদ একদিনে সৃষ্টি হয় না। পথিকের অনবরত যাতায়াতের চরণঘাতে পথের জঞ্জাল বিদুরিত হয় অর্থাৎ পায়ের চাপে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং এতে একটি সুগম পথ সৃষ্টি হয়। পথের মতো মানবজীবনও নানা সমস্যায় পরিপূর্ণ। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য পথিকের মতো মানুষকেও অনবরত সংগ্রাম করে যেতে হয়। তবেই সে সফলতার মুখ দেখতে পায়। কোনো মানুষের জীবনেই সফলতা স্বেচ্ছায় ধরা দেয় না। সফলতা পেতে হলে তাকে প্রচুর পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। এ পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মানুষ আজ সভ্যতার চরম শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর মহাপুরুষগণের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাদের জীবনে সফলতা এমনিই ধরা দেয়নি। এ সফলতা অর্জন করার জন্য তাদের প্রচুর ত্যাগ- তিতিক্ষা ও অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। কাজেই মানুষকে জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সফলতা পেতে হলে একাগ্র সাধনা ও চেষ্টার দ্বারা সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ নিজেই তার সৌভাগ্যের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক। মানুষ সাধনা দিয়েই তার প্রয়োজনকে সহজ করে, চলার পথ মসৃণ করার জন্য শত বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে। ফলে সে পায় জীবন প্রতিষ্ঠা।