অংশীদারি ব্যবসায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সম্মিলিত চুক্তির মাধ্যমে গঠিত একটি ব্যবসায় সংগঠন। মালিকানা গঠন ও পরিচালনাগত বিভিন্ন দিক থেকে অংশীদারি ব্যবসায় কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যা এ ব্যবসায়কে অন্যান্য ব্যবসায় থেকে আলাদা করেছে। নিম্নে অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. অংশীদারের সংখ্যা (Number of partners): বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুসারে কমপক্ষে দুজন এবং সাধারণ ব্যবসায়ে ২০ জনের অনধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে এ ব্যবসায় গঠিত হয়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ১০ জনের অধিক হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যেক সদস্যের জন্য এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে ।
২. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক (Contractual relation): চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। চুক্তির মাধ্যমেই অংশীদারি ব্যবসায়ের সৃষ্টি হয়। জন্মগত বা সামাজিক অধিকার বলে নয়। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তিতে আবদ্ধ হলেই অংশীদারদের চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. সহজ গঠন প্রণালি (Easy formation): অংশীদারি ব্যবসায় সংগঠন যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের মতো তত জটিল নয়। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি (কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ে ২০ জনের অধিক নয়, এবং ব্যাংকিং ব্যবসায়ে ১০ জনের অধিক নয়) একত্রে মিলিত হয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ ব্যবসায় গঠন করতে পারবে। ব্যবসায়ের উক্ত চুক্তি মৌখিক বা লিখিত উভয়ই হতে পারে। উক্ত চুক্তি নিবন্ধন বা অনিবন্ধনকৃত হতে পারে। তবে চুক্তির উদ্দেশ্য অবশ্যই আইনসম্মত হতে হবে।
৪. মূলধন (Capital): ব্যবসায়ের মূলধন অংশীদারগণ যোগান দেয়। কে কতটুকু মূলধন যোগান দিবে তা তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির উপর নির্ভর করে। এ বিষয়ে কোনো চুক্তি না থাকলে তারা সমানভাবে মূলধন যোগায়। প্রসঙ্গক্রমে উলেখ করা প্রয়োজন যে, কোনো মূলধন না দিয়ে অংশীদার হতে পারে এবং মুনাফা বণ্টনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৫. দায়-দায়িত্ব (Liabilities): অংশীদারি ব্যবসায়ের দেনার জন্য প্রত্যেক অংশীদার ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে দায়ী থাকে। অর্থাৎ ব্যবসায়ে লোকসান হলে লোকসানের ভাগ তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ভাগ করে দেয়া হয়। লোকসানের ভাগ শুধু একজনের পক্ষে বহন করা সম্ভব হলে এবং অন্য সদস্যদের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব না হলে বিত্তশালী একজনকে সকল লোকসানের ঝুঁকি বহন করতে হয় । সংক্ষেপে বলা যায়, অংশীদারের দায় সীমাহীন এবং তারা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে কারবারের দেনার জন্য দায়ী থাকে ৷
৬. লভ্যাংশ বণ্টন (Profit sharing): কোনো অংশীদার কত লভ্যাংশ পাবে তা তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির উপর নির্ভর করে । চুক্তিতে মুনাফা বণ্টনের উলেখ না থাকলে বাংলাদেশের অংশীদারি আইন অনুসারে প্রত্যেক অংশীদার সমান অনুপাতে মুনাফা ভোগ করার অধিকারী ।
৭. পরস্পরের প্রতি পরস্পরের আস্থা ও বিশ্বাস (Mutual trust and confidence): অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সদ্বিশ্বাস ও আস্থা অংশীদারি কারবারের একটি বৈশিষ্ট্য। একে অপরের প্রতি বিশ্বাসের উপর অংশীদারি ব্যবসায়ের অস্তিত্ব নির্ভর করে। অনেক সময় এক বা একাধিক অংশীদারের পক্ষে হয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করে। সে ক্ষেত্রে অংশীদারগণ উক্ত ব্যক্তির প্রতি আস্থাবান না হলে ব্যবসায় চলতে পারে না। একজন অংশীদার তাহার কার্য দ্বারা প্রত্যেক অংশীদারকে সমভাবে আবদ্ধ করে এবং ব্যবসায় কোনো লোকসান দেখা দিলে তা সমভাবে বা চুক্তি মোতাবেক সকল অংশীদারকে বহন করতে হয়।
৮. নিবন্ধন (Registration): অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। এটি নিবন্ধিত হতে পারে নাও হতে পারে। তবে ভবিষ্যৎ বিবাদ এড়ানোর জন্য নিবন্ধন করা ভালো। এটি ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৯. সত্তা (Entity): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হতে এর পৃথক কোনো সত্তা নাই । অংশীদারগণের ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের সত্তা নেই যৌথ-মূলধনী কোম্পানির ন্যায় ফার্ম (Firm) বা প্রতিষ্ঠান নিজ নামে চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে না। এ কারণে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে না বা অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে অংশীদারি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে না ।
১০. অংশীদারদের যোগ্যতা (Capacity of partners): দেশের প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোনো নাগরিক অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে। তবে পাগল, নাবালক, দেউলিয়া প্রভৃতি ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদনের অনুপযুক্ত বিধায় অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য হতে পারে না।
পরিশেষে বলা যায় যে, উলেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ অংশীদারি সংগঠনকে স্বকীয়তা দানের মাধ্যমে উপযোগী ক্ষেত্রে সফলতার সাথে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সহায়তা করছে।
Read more