আদর্শ ব্যবস্থাপকের দক্ষতা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র | | NCTB BOOK

মি. সাইফুল সানমুন গ্রুপের একটা শিল্প ইউনিটের ব্যবস্থাপক । ব্যক্তিগতভাবে তার কিছু বিষয়ে সমস্যা থাকলেও বিভাগগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন । ফলে তার শিল্প ইউনিটটি ভালো মুনাফা করছে । অন্যদিকে মি. শরিফুল আরেকটি শিল্প ইউনিটের ব্যবস্থাপক । তিনি সৎ ও উত্তম স্বভাবের মানুষ। কিন্তু তার অধীনস্ত বিভাগগুলো তিনি সঠিকভাবে চালাতে ব্যর্থ হচ্ছেন । অধস্তনরা সন্তুষ্ট থাকলেও শিল্প ইউনিটটি প্রত্যাশিত মুনাফা করতে পারছে না । মাঝে মধ্যে মি. সাইফুল সম্পর্কে কিছু অভিযোগ হেড অফিসে আসলেও মালিক পক্ষ তার ওপর সন্তুষ্ট । এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক হিসেবে কে দক্ষ এ বিচারে মি. সাইফুল নিশ্চয়ই এগিয়ে থাকবেন । কারণ ব্যক্তি হিসেবে কিছু দুর্বলতা থাকলেও ব্যবস্থাপক হিসেবে তিনি ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য অর্জনে সফলতার পরিচয় দিতে পারছেন । তাই যাকে যেখানে যে উদ্দেশ্যে কাজ দেয়া হয়েছে তিনি সেটা কতটা সাফল্যের সাথে পালন করতে পারছেন তার ওপরই ব্যবস্থাপকের কার্যদক্ষতা নির্ভরশীল ।

সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে ও কম খরচে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারাই হলো দক্ষতা । ব্যবস্থাপকের দক্ষতা বলতে একজন ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে যোগ্যতার সঙ্গে এবং স্বল্প ব্যয়ে সম্পাদন করার সামর্থ্যকে বুঝায় । ন্যূনতম শক্তি, অর্থ, সামর্থ্য ও সম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি তাই একজন ব্যবস্থাপকের দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল । ব্যবস্থাপকের এরূপ দক্ষতা তার কতিপয় জ্ঞান, গুণ ও সামর্থ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যার বিবেচনায় একজন ব্যবস্থাপকের কতিপয় গুণ বা দক্ষতা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যেই ব্যবস্থাপক যতবেশি সবগুলো দক্ষতা অর্জন করতে পারেন ততই তিনি আদর্শ ও দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে গণ্য হন । একজন আদর্শ ব্যবস্থাপকের যে সকল দক্ষতা থাকতে হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. কারিগরি দক্ষতা (Technical skill) : প্রতিটা কাজ সম্পাদনে যে পদ্ধতি, কৌশল বা যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারা কারিগরি দক্ষতা হিসেবে গণ্য। প্রতিটা কাজের সাথেই কমবেশি কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে । কম্পিউটারে একজন কর্মী কাজ করছে । এর সংশ্লিষ্ট প্রতিটা বিষয় কর্মীর জানা থাকলে সে যেভাবে দ্রুত কাজটা করতে পারবে আরেকজন কম জানা কর্মীর পক্ষে তা সম্ভব হবে না । এক্ষেত্রে পার্থক্যই হলো কারিগরি দক্ষতা । একজন উকিল একটা কেস যেভাবে সুন্দর করে সাজান ও বক্তব্য তুলে ধরেন আরেকজন সেভাবে পারে না । এক্ষেত্রে পার্থক্য কারিগরি দক্ষতার । কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জ্ঞান যেমনি কারিগরি দক্ষতা তেমনি কোম্পানির হিসাব সংরক্ষণ, উদ্বৃত্তপত্র (Balance sheet) তৈরি, হিসাব নিরীক্ষার জ্ঞানও কারিগরি দক্ষতার আওতাধীন ।

২. মানবীয় বা আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা (Human or Interpersonal skill) : মানুষের সাথে মিশতে পারার এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করে কাজ আদায় করতে পারার দক্ষতাকেই মানবীয় বা আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা বলে । এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা দলকে বুঝে সেভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, নিজস্ব চিন্তার প্রতি তাদের সমর্থন আদায় এবং প্ররোচিত ও উৎসাহিত করার সামর্থ্য গুরুত্বপূর্ণ । ব্যবস্থাপনার কাজ মূলত মানুষ চালানো। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ও বাইরে বিভিন্ন মানুষের সাথে ব্যবস্থাপককে মিশতে হয়, মতবিনিময় করতে হয় । তাদের প্রত্যাশা ও সমস্যা বুঝতে হয়, তাদের মনের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে নিজের কাজটা করিয়ে নিতে হয় । তাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মানবীয় দক্ষতা খুবই আবশ্যক বিবেচিত হয়ে থাকে ।

৩. ধারণাগত বা কল্পনা সংক্রান্ত দক্ষতা (Conceptual skill) : ভবিষ্যৎ অবস্থা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম ধারণা করতে পারার সামর্থ্যকেই ব্যবস্থাপকের কল্পনা সংক্রান্ত দক্ষতা বলে । একজন ব্যবস্থাপকের প্রথম কাজই হলো পরিকল্পনা গ্রহণ । এই পরিকল্পনা গ্রহণ পূর্বানুমানের সাথে সম্পৃক্ত। সঠিকভাবে পূর্বানুমান করে পরিকল্পনা গ্রহণ, সিদ্ধান্ত প্রদান ইত্যাদি তাই ব্যবস্থাপকের কল্পনা সংক্রান্ত দক্ষতার সাথে সম্পৃক্ত । আগাম কোনো বিষয়ে ধারণা করতে পারাই শুধু নয় উদ্ভূত অবস্থায় কী ধরনের কার্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ সুফল লাভ করা যাবে এ বিষয়ে ধারণা করতে পারাও এরূপ দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত । প্রয়োজনীয় নীতি-কৌশল নির্ধারণ, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় বিধায় প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহীদের এ ধরনের দক্ষতার অধিক প্রয়োজন পড়ে ।

৪. সমস্যা অনুধাবনের দক্ষতা (Diagnostic skill) : কোনো সমস্যা ও এর প্রকৃতি দ্রুত আঁচ করতে পারার সামর্থ্যকেই সমস্যা অনুধাবনের দক্ষতা বলে। একটা প্রতিষ্ঠান চালাতে যেয়ে ব্যবস্থাপকদেরকে প্রতিনিয়তই ছোট বড় নানান ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। সমস্যার প্রকৃতি এমন যে, এটাকে বুঝে শুরুতেই তা সমাধা করা গেলে ভবিষ্যতে সেটি বড় বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে না। একজন ডাক্তার যদি রোগীর রোগকে শুরুতেই সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারেন তবে রোগ নিরাময়ে তা যেমনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে একজন ব্যবস্থাপকের ক্ষেত্রেও সেভাবে প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো দ্রুত শনাক্ত করতে পারার দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয় । এরূপ সমস্যা বোঝার সাথে সমাধানের পন্থা বা করণীয় নির্ধারণের বিষয়ও এরূপ দক্ষতার অধীন। প্রতিষ্ঠানের উচ্চ ও মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপকের জন্য এরূপ দক্ষতার অধিক প্রয়োজন পড়ে ।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একটা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের বিভিন্ন পরিমাণের কারিগরি, মানবীয় ও ধারণাগত জ্ঞান বা দক্ষতা থাকতে হয়। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত ব্যবস্থাপকদের বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা কতটা থাকা আবশ্যক তা নিম্নের রেখাচিত্রে প্রদর্শিত হলো :

চিত্র : ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পর্যায়ে আবশ্যক দক্ষতাসমূহ
Content added || updated By
Promotion