দ্বিপদী বিন্যাসের ব্যবহার ও ধর্মাবলী

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পরিসংখ্যান - পরিসংখ্যান ২য় পত্র | | NCTB BOOK
20
20

দ্বিপদী বিন্যাসের ব্যবহার

দ্বিপদী বিন্যাস (Binomial Distribution) বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যাগুলি মডেল করতে ব্যবহৃত হয়। এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিম্নরূপ:


১. নির্বাচন বা জরিপ

  • নির্বাচনী জরিপে দ্বিপদী বিন্যাস ব্যবহার করে, "হ্যাঁ" বা "না" উত্তর প্রাপ্তির সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়।
  • উদাহরণ: ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৬০ জন একটি প্রস্তাবে সম্মতি দিতে পারে, তার সম্ভাবনা নির্ধারণ।

২. মান নিয়ন্ত্রণ

  • উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নির্ধারণে। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পণ্যের মধ্যে কতটি সফলভাবে তৈরি হয়েছে তা বিশ্লেষণে দ্বিপদী বিন্যাস ব্যবহার হয়।
  • উদাহরণ: একটি কারখানায় ১০০টি পণ্যের মধ্যে ৯৫টি সফলভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা।

৩. মেডিকেল রিসার্চ

  • নির্দিষ্ট একটি ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষায়। কতজন রোগী ওষুধে সাড়া দেবে তা বিশ্লেষণ করা হয়।
  • উদাহরণ: ৫০ জন রোগীর মধ্যে ৩০ জনের সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ।

৪. জুয়া বা গেমস

  • গেমিংয়ে দ্বিপদী বিন্যাসের মাধ্যমে জেতার সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়।
  • উদাহরণ: একটি ডাই নিক্ষেপে নির্দিষ্ট সংখ্যক সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা।

৫. স্টক মার্কেট

  • নির্দিষ্ট সময়ে একটি শেয়ারের মূল্য বাড়বে বা কমবে, সেই সম্ভাবনা বিশ্লেষণে দ্বিপদী বিন্যাস ব্যবহার হয়।

দ্বিপদী বিন্যাসের ধর্মাবলী (Properties)

দ্বিপদী বিন্যাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্মাবলী নিম্নরূপ:


১. দুটি সম্ভাব্য ফলাফল

প্রতিটি প্রচেষ্টার দুটি ফলাফল থাকে:

  • সফলতা (\( S \)) যার সম্ভাবনা \( p \)।
  • ব্যর্থতা (\( F \)) যার সম্ভাবনা \( q = 1 - p \)।

২. নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রচেষ্টা (\( n \))

দ্বিপদী বিন্যাসে মোট প্রচেষ্টার সংখ্যা \( n \) নির্দিষ্ট ও ধ্রুবক থাকে।


৩. স্বাধীনতা

প্রতিটি প্রচেষ্টার ফলাফল অন্য প্রচেষ্টার ফলাফল থেকে স্বাধীন।


৪. সম্ভাবনা ধ্রুবক থাকে

প্রতিটি প্রচেষ্টায় সফলতার সম্ভাবনা (\( p \)) এবং ব্যর্থতার সম্ভাবনা (\( q \)) অপরিবর্তিত থাকে।


৫. র্যান্ডম ভেরিয়েবলের রেঞ্জ

দ্বিপদী চলক \( X \)-এর মান ০ থেকে \( n \) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, \( X = 0, 1, 2, ..., n \)।


৬. গণিতগত প্রত্যাশা (Mean)

দ্বিপদী বিন্যাসের গণিতগত প্রত্যাশা বা গড় হলো:

\[
E(X) = n \cdot p
\]


৭. বৈচিত্র্য (Variance)

দ্বিপদী বিন্যাসের বৈচিত্র্য বা ভ্যারিয়েন্স হলো:

\[
Var(X) = n \cdot p \cdot (1-p)
\]


৮. সম্ভাব্যতা গণনা

একটি নির্দিষ্ট সফলতার সংখ্যা \( k \) এর সম্ভাবনা:

\[
P(X = k) = \binom{n}{k} p^k (1-p)^{n-k}
\]


উদাহরণ

প্রেক্ষাপট

ধরা যাক, একটি মুদ্রা \( 10 \) বার নিক্ষেপ করা হয়েছে। সফলতার সম্ভাবনা \( p = 0.5 \)। \( X \) হলো হেড আসার সংখ্যা।

গড়

\[
E(X) = n \cdot p = 10 \cdot 0.5 = 5
\]

ভ্যারিয়েন্স

\[
Var(X) = n \cdot p \cdot (1-p) = 10 \cdot 0.5 \cdot 0.5 = 2.5
\]

একটি নির্দিষ্ট সম্ভাবনা

\( X = 6 \) হওয়ার সম্ভাবনা:

\[
P(X = 6) = \binom{10}{6} (0.5)^6 (0.5)^4
\]

\[
\binom{10}{6} = \frac{10!}{6! \cdot 4!} = 210
\]

\[
P(X = 6) = 210 \cdot (0.5)^{10} = 0.205
\]


সারসংক্ষেপ

দ্বিপদী বিন্যাস বাস্তব জীবনের অনেক সমস্যার সম্ভাবনা বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত যেখানে শুধুমাত্র দুটি সম্ভাব্য ফলাফল থাকে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নির্দিষ্ট প্রচেষ্টা, ধ্রুবক সম্ভাবনা এবং স্বাধীন ফলাফল। গণিতগত প্রত্যাশা, ভ্যারিয়েন্স এবং সম্ভাবনা সূত্রের মাধ্যমে এটি একটি শক্তিশালী পরিসংখ্যানিক মডেল।

Promotion