পদ প্রধানত দুই প্রকার – নামপদ ও ক্রিয়াপদ।
নামপদ আবার চার প্রকার । যেমন – বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও অব্যয়। তাহলে পদ হল মোট পাঁচ প্রকার।
কয়েকটি অব্যয় বা প্রত্যয় কোনো না কোনো পদের আশ্রয়ে বা পরে সংযুক্ত হয়ে নির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে , এগুলোকে পদাশ্রিত অব্যয় বা পদাশ্রিত নির্দেশক বলে । বচন ভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকেও বিভিন্নতা প্রযুক্ত হয় ।যেমন-
একবচনেঃ টা,টি খানা খানি,গাছি ইত্যাদি নির্দেশক হয় । যেমন-টাকাটা,বাড়িটা,কাপড়খানা,বইখানি ইত্যাদি।
বহুবচনেঃ গুলি,গুলো গুলা প্রভৃতি নির্দেশক প্রত্যয় সংযুক্ত হয়। যেমন-মানুষগুলি ,লোকগুলো ইত্যাদি ।
পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার
ক) এক' শব্দের সঙ্গে টা টি টু যুক্ত হলে অনির্দিষ্টতা বোঝায় । যেমন- একটি দেশ ,সে যেমনই হোক দেখতে ;এক যে ছিল রাজা।কিন্তু অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা,টি যুক্ত নির্দিষ্টতা বোঝায় ।যেমন- তিনটি বছর ,দশটি বছর ইত্যাদি ।
খ) নিরর্থক ভাবেও নির্দেশক টা টি এর ব্যবহার লক্ষণীয় ।যেমন- সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি ।
গ) নির্দেশক সর্বনামের পরে টা টি যুক্ত হলে তা সুনিরররদিষ্ট হয়ে যায় । যেমন - ওটি যেন কার তৈরি ?
বলক-
অনেক সময় আমরা আমাদের বক্তব্যের গুরুত্বকে বাড়ানোর জন্য - অথবা বক্তব্যকে জোরালো করার জন্য কিছু বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ (শব্দাংশ) পদের সঙ্গে যুক্ত করি । এই বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছকে বলক বলে।
যেমন – আমি বইটি এখন পড়ব। আবার আমি বইটি এখনই পড়ব। দ্বিতীয় বাক্যে ‘এখনই' পদের
মাধ্যমে বক্তব্য জোরালো হয়েছে। তাই 'এখনই' পদের শেষাংশের 'ই' হলো বলকের উদাহরণ।
লগ্নক - শব্দ পদে পরিণত হওয়ার পর আরও অতিরিক্ত যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যুক্ত হয় তাদের লগ্নক বলে।
লগ্নক দুই প্রকার – ১) সলগ্নক ২) অলগ্নক
কয়েকটি অব্যয় বা প্রত্যয় কোনো না কোনো পদের আশ্রয়ে বা পরে সংযুক্ত হয়ে নির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে, এগুলোকে পদাশ্রিত অব্যয় বা পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। বাংলায় নির্দিষ্টতা জ্ঞাপক প্রত্যয় ইংরেজি Definite Article The'-এর স্থানীয়। বচনভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকেরও বিভিন্নতা প্ৰযুক্ত হয় ৷
পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার
১.(ক) ‘এক’ শব্দের সঙ্গে টা, টি, যুক্ত হলে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন- একটি দেশ, সে যেমনই হোক দেখতে। কিন্তু অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে নির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন- তিনটি টাকা, দশটি বছর।
(খ) নিরর্থকভাবেও নির্দেশক টা, টি-র ব্যবহার লক্ষণীয়। যেমন- সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি। ন্যাকামিটা এখন রাখ ।
(গ) নির্দেশক সর্বনামের পরে টা, টি যুক্ত হলে তা সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়। যেমন – ওটি যেন কার তৈরি? এটা নয় ওটা আন । সেইটেই ছিল আমার প্রিয় কলম ।
২. ‘গোটা’ বচনবাচক শব্দটির আগে বসে এবং খানা, খানি পরে বসে। এগুলো নির্দেশক ও অনির্দেশক দুই অর্থেই প্রযোজ্য। ‘গোটা’ শব্দ আগে বসে এবং সংশ্লিষ্ট পদটি নির্দিষ্টতা না বুঝিয়ে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন- গোটা দেশই ছারখার হয়ে গেছে। গোটাদুই কমলালেবু আছে (অনির্দিষ্ট)। দুখানা কম্বল চেয়েছিলাম (নির্দিষ্ট)। গোটাসাতেক আম এনো। একখানা বই কিনে নিও (অনির্দিষ্ট)।
কিন্তু কবিতায় বিশেষ অর্থে ‘খানি’ নির্দিষ্টার্থে ব্যবহৃত হয়। যথা—‘আমি অভাগা এনেছি বহিয়া নয়ন জলে ব্যর্থ সাধনখানি ।
৩.টাক, টুক, টুকু, টো ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক নির্দিষ্টতা ও অনির্দিষ্টতা উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যেমন – পোয়াটাক দুধ দাও (অনির্দিষ্টতা)। সবটুকু ওষুধই খেয়ে ফেলো (নির্দিষ্টতা)।
৪.বিশেষ অর্থে, নির্দিষ্টতা জ্ঞাপনে কয়েকটি শব্দ : তা, পাটি ইত্যাদি। যেমন-
তা : দশ তা কাগজ দাও ।
পার্টি : আমার একপাটি জুতো ছিঁড়ে গেছে।
একবচনাত্মক – টা, টি, খানা, খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি নির্দেশক ব্যবহৃত হয়। যেমন- টাকাটা, বাড়িটা, - কাপড়খানা, বইখানি, লাঠিগাছা, চুড়িগাছি ইত্যাদি।
বহুবচনাত্মক-
গুলি, গুলা, গুলো, গুলিন প্রভৃতি নিদের্শক প্রত্যয় সংযুক্ত হয়। যেমন – মানুষগুলি,লোকগুলো, আমগুলো, পটলগুলিন ইত্যাদি।
বিশেষ্য পদ
কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে।
বাক্যমধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি,বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদের বিশেষ্য পদ বলে ।
সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য : যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, ভৌগোলিক স্থান বা সংজ্ঞা এবং গ্রন্থ বিশেষের নাম বিজ্ঞাপিত হয়, তাকে সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য বলে। যথা-
(ক) ব্যক্তির নাম : নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল
(খ) ভৌগোলিক স্থানের : ঢাকা, দিল্লি, লন্ডন, মক্কা
(গ) ভৌগোলিক সংজ্ঞা (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদি) মেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর
(ঘ) গ্রন্থের নাম :‘গীতাঞ্জলি’, ‘অগ্নিবীণা’, ‘দেশে বিদেশে’, ‘বিশ্বনবি
জাতিবাচক বিশেষ্য : যে পদ দ্বারা কোনো একজাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায়, তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন— মানুষ, গরু, পাখি, গাছ, পর্বত, নদী, ইংরেজ।
বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য : যে পদে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায়, তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। এই জাতীয় বস্তুর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। যথা— বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবণ, পানি।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য :
যে পদে বেশকিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায়, তা–ই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যথা— সভা, জনতা, সমিতি, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল।
ভাববাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্য পদে কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয়, তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যথা— গমন (যাওয়ার ভাব বা কাজ), দর্শন (দেখার কাজ), ভোজন (খাওয়ার কাজ), শয়ন (শোয়ার কাজ), দেখা, শোনা।
গুণবাচক বিশেষ্য :
যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায়, তা–ই গুণবাচক বিশেষ্য । যথা—মধুর মিষ্টত্বের গুণ— মধুরতা, তরল দ্রব্যের গুণ—তারল্য, তিক্ত দ্রব্যের দোষ বা গুণ— তিক্ততা, তরুণের গুণ—তারুণ্য ইত্যাদি। তদ্রুপ : সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ।
বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।
চলন্ত গাড়ি : বিশেষ্যের বিশেষণ ।
করুণাময় তুমি: সর্বনামের বিশেষণ
দ্রুত চল :ক্রিয়া বিশেষণ ৷
বিশেষণ দুই ভাগে বিভক্ত। যথা—১. নাম বিশেষণ ও ২. ভাব বিশেষণ।
নাম বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যথা-
বিশেষ্যের বিশেষণ : সুস্থ সবল দেহকে কে না ভালোবাসে ?
সর্বনামের বিশেষণ : সে রূপবান ও গুণবানরূপবাচক ; নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, কালো মেঘ
পরিমাণবাচক : বিঘাটেক জমি, পাঁচ শতাংশ ভূমি, হাজার টনী জাহাজ, এক কেজি চাল
দু কিলোমিটার রাস্তা।
দুই বা তার বেশি সমাসবদ্ধ পদ বিশেষ্য পদের পূর্বে বসে বিশেষণের কাজ করলে তাকে বহুপদী বিশেষণ বলে। উদাহরণ: পিছনে-ফেলে-আসা দিন। মায়ে-তাড়ানো বাপে-খেদানো ছেলে।
ভাব বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে বিশেষিত করে তা-ই ভাব বিশেষণ । ভাব বিশেষণ চার প্রকার : ১. ক্রিয়া বিশেষণ ২. বিশেষণের বিশেষণ বা বিশেষণীয় বিশেষণ ৩. অব্যয়ের বিশেষণ ৪. বাক্যের বিশেষণ।
ক্রিয়া বিশেষণ : যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে।
ক্রিয়া সংগঠনের ভাব : ধীরে ধীরে বায়ু বয় ।
ক্রিয়া সংগঠনের কাল : পরে একবার এসো।
বিশেষণীয় বিশেষণ : যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে, তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যথা-
ক. নাম বিশেষণের বিশেষণ : সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত ।
খ. ক্রিয়া-বিশেষণের বিশেষণ : রকেট অতি দ্রুত চলে।
অব্যয়ের বিশেষণ : যে ভাব-বিশেষণ অব্যয় পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে, তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যথা— ধিক্ তারে, শত ধিক্ নির্লজ্জ যে জন।
বাক্যের বিশেষণ : কখনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করতে পারে, তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন ।
একপদময় বিশেষণ পদে একটীর অধিক শব্দ থাকে না; যথা- 'বড়, ভাল, ছোট, মন্দ, সুন্দর, মুক্ত, অলৌকিক, চতি, এক, পাঁচ, এ, এই, ঐ, সে ” ইত্যাদি । (সমাসে ক্বচিৎ বিশেষণের অর্থ বদলায় যথা--- বড়-মানুষ, ভাল মানুষ, মুক্ত-পুরুষ 1 )
বহুপদময় বা বাক্যময় বিশেষণ- যার-পর-নাই পী বৎপরোনাস্তি পরিশ্রম সব-পেরেছি-র দেশ সাত-রাজার-বন নাকি কুরিয় পাওয়া ছেলে; জো হুকুম; আপ-কাওয়াস্তে পড়ে-পাওয়া পাঁচ-ক্রোশের প তিরিশ-দিনের দিন যাচ্ছেতাই (=অপকৃষ্ট, নিকৃষ্ট < যাহা-ইচ্ছা-তাই); আলানে'-পর-ভালানে' ছেলে ; আপন কাজে-আপনিই ব্যস্ত মানুষ "; ইত্যাদি।
সর্বনাম পদ
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
সর্বনাম সাধারণত ইতোপূর্বে ব্যবহৃত বিশেষ্যের প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দ। যেমন— হস্তী প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তার শরীরটি যেন বিরাট এক মাংসের স্তূপ।
দ্বিতীয় বাক্যে ‘তার' শব্দটি প্রথম বাক্যের 'হস্তী' বিশেষ্য পদটির প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই, ‘তার' শব্দটি সর্বনাম পদ। বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন—
ক. যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে, তারাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ।
খ. ধান ভানতে যারা শিবের গীত গায়, তারা স্থির লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।
ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা ইত্যাদি।
যেসব pronoun কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর পরিবর্তে বসে সেই ব্যক্তি ববা বস্তুকে নির্দেশ করে তাদেরকে নির্দেশক সর্বনাম (Demonstrative Pronoun) বলে। যেমন- এটা, ওটা, এগুলো ইত্যাদি।
সাপেক্ষ সর্বনাম (Relative Pronoun)
যে সকল সর্বনাম দ্বারা একটি বাক্যের সাপেক্ষে অন্য বাক্যকে যুক্ত করা হয়, তাদেরকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলা হয়।
অনিশ্চয়বাচক যৌগিক সর্বনাম ( Indefinite Compound Pronoun)
যখন একাধিক শব্দ একত্রিত হয়ে একটি সর্বনাম তৈরি করে, তখন তাকে যৌগিক সর্বনাম বলে। যেমন- অন্য-কিছু, অন্য-কেউ, আর-কিছু, আর-কেউ, কেউ-না-কেউ, কেউ-বা, যা-কিছু, যা-তা, যে-কেউ, যে-কোন, যে-সে।
ক্রিয়াপদ
পদের দ্বারা কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া বলে। অথবা ধাতুর প্রয়োগগত রূপ হলো ক্রিয়া।ক্রিয়াপদের আরেকটি নাম হলো আখ্যাত বা আখ্যাতিক পদ।
[ক্রিয়ামূল তথা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। [৩]সংক্ষেপে ধাতু+বিভক্তি = ক্রিয়াপদ
যেমন: √পড়্+এ=পড়ে
সমাপিকা ক্রিয়া সম্পাদনা যে ক্রিয়াপদ বাক্যকে পরিপূর্ণ করে এবং বাক্যের অর্থকে সুস্পষ্ট করে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। আমি বাড়ি যাব। আমরা সন্ধ্যায় পড়তে বসব।
অসমাপিকা ক্রিয়া
সম্পাদনা
যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
আমরা হাত-মুখ ধুয়ে…
প্রভাতে সূর্য উঠলে…
অসমাপিকা ক্রিয়া ৩ প্রকার ১.ভূত অসমাপিকা ক্রিয়া ২.ভাবী অসমাপিকা ক্রিয়া ৩.শর্ত অসমাপিকা ক্রিয়া
অকর্মক
সম্পাদনা
যে বাক্যে একটিও কর্ম থাকে না তাকে অকর্মক বলে। যেমন:
সে হাসছে ।
রমা নাচছে ।
এখানে 'হাসছে' ও 'নাচছে' ক্রিয়ার কর্ম নেই , আবার এদের ক্রিয়া ধারণের ক্ষমতাও নেই ,তাই এরা অকর্মক ক্রিয়া।
সকর্মক সম্পাদনা
যে বাক্যে একটি কর্ম থাকে তাকে সকর্মক বলে।যেমন:
আমি ভাত খাচ্ছি।
সে বই পড়ছে।
এখানে কী খাচ্ছি আর কী পড়ছে' তা বলা রয়েছে। কাজেই বাক্য দুটিতে খাচ্ছি এবং পড়ছে সকর্মক ক্রিয়া।
দ্বিকর্মক
সম্পাদনা
যে বাক্যে দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক বলা হয়।
এক্ষেত্রে, ববস্তুবাচক কর্মপদটি মুখ্যকর্ম, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদটি গৌণ কর্ম।
শিক্ষক ছাত্রদের(গৌণ কর্ম) বাংলা(মুখ্যকর্ম) পড়াচ্ছেন।
বাবা আমাকে(গৌণ কর্ম) একটি কলম(মুখ্যকর্ম) কিনে দিয়েছেন
প্রযোজক ক্রিয়া
সম্পাদনা
যে ক্রিয়া অন্যের দ্বারা চালিত হয় তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।যেমন
মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
সাপুড়ে সাপ খেলাচ্ছে।
এখানে "মা" এবং "সাপুড়ে" প্রযোজক কর্তা, "শিশু" ও "সাপ" প্রযোজ্য কর্তা। "চাঁদ দেখাচ্ছেন" ও "খেলাচ্ছে" প্রযোজক ক্রিয়া।
যুক্ত ক্রিয়া - বিশেষ্য ,বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে কর্,দি,হ্,পা,কাট্,মার্,ফেল্ ইত্যাদি মৌলিকধাতু নিষ্পন্ন সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠন করে তাকে যুক্ত ক্রিয়া বলে । যেমন- উত্তর দিল , সাঁতার কাটে
যৌগিক ক্রিয়া - একটি অসমাপিকা ক্রিয়া ও সমাপিকা ক্রিয়া নিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে । যেমন- সে বসিয়া পড়িল ।
মিশ্র ক্রিয়া
বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা কাট্, গা, ছাড়, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে।
যেমন-
বিশেষ্যের পরে : আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। গোল্লায় যাও। বিশেষেণের পরে : তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম। ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে করে বৃষ্টি পড়ছে। : মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম
ক্রিয়া বিশেষণ
যে শব্দ ক্রিয়াকে বিশেষিত করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। নিচের বাক্য তিনটির নিম্নরেখ শব্দগুলাে ক্রিয়া বিশেষণের উদাহরণ:
ছেলেটি দ্রুত দৌড়ায়।
লোকটি ধীরে হাঁটে।
মেয়েটি গুনগুনিয়ে গান করছে।
অনেক সময়ে বিশেষ্য ও বিশেষণ শব্দের সঙ্গে ‘এ’, ‘তে’ ইত্যাদি বিভক্তি এবং ‘ভাবে’, ‘বশত’, ‘মতাে ইত্যাদি শব্দাংশ যুক্ত হয়ে ক্রিয়াবিশেষণ তৈরি হয়। যেমন – ততক্ষণে, দ্রুতগতিতে, শান্তভাবে, ভ্রান্তিবশত, আচ্ছামতাে ইত্যাদি।
ধরনবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: কোনাে ক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়, ধরনবাচক ক্রিয়াবিশেষণ তা নির্দেশ করে। যেমন –
টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে।
ঠিকভাবে চললে কেউ কিছু বলবে না।
কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: এই ধরনের ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়া সম্পাদনের কাল নির্দেশ করে। যেমন –
আজকাল ফলের চেয়ে ফুলের দাম বেশি।
যথাসময়ে সে হাজির হয়।
স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: ক্রিয়ার স্থান নির্দেশ করে স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ। যেমন –
মিছিলটি সামনে এগিয়ে যায়।
তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নেতিবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: না, নি ইত্যাদি দিয়ে ক্রিয়ার নেতিবাচক অবস্থা বােঝায়। এগুলাে সাধারণত ক্রিয়ার পরে বসে। যেমন –
সে এখন যাবে না।
তিনি বেড়াতে যাননি।
এমন কথা আমার জানা নেই।
পদাণু ক্রিয়াবিশেষণ: বাক্যের মধ্যে বিশেষ কোনাে ভূমিকা পালন না করলেও ‘কি’, ‘যে’, বা’,না’, ‘তাে’ প্রভৃতি পদাণু ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে কাজ করে। যেমন –
কি: আমি কি যাব?
যে : খুব যে বলেছিলেন আসিবেন!
বা: কখনাে বা দেখা হবে।
না: একটু ঘুরে আসুন না, ভালাে লাগবে।
তাে: মরি তাে মরব।
গঠন বিবেচেনায় ক্রিয়াবিশেষণকে একপদী ও বহুপদী – এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
একপদী ক্রিয়াবিশেষণ: আপ্তে, জোরে, চেঁচিয়ে, সহজে, ভালােভাবে ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় যে অব্যয় শব্দগুলো কখনো স্বাধীন পদ রূপে, আবার কখনো শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, সেগুলোকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলে।
অনুসর্গগুলো কখনো প্রাতিপদিকের পরে ব্যবহৃত হয়, আবার কখনো বা ‘কে’ এবং ‘র’ বিভক্তিযুক্ত শব্দের পরে বসে। যেমন-
বাংলা ভাষায় বহু অনুসর্গ আছে। যেমন—
প্রতি, বিনা, বিহনে, সহ, ওপর, অবধি, হেতু, মধ্যে, মাঝে, পরে, ভিন্ন, বই, ব্যতীত, জন্যে, জন্য, পর্যন্ত অপেক্ষা, সহকারে, তরে, পানে, নামে, মতো, নিকট, অধিক, পক্ষে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক, সঙ্গে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, পাছে, ভিতর, ভেতর ইত্যাদি ।
এদের মধ্যে দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক, হইতে (হতে), চেয়ে, অপেক্ষা, মধ্যে প্রভৃতি কয়েকটি অনুসর্গ বিভক্তিরূপে ব্যবহৃত হয়। কারক প্রকরণে এদের উদাহরণ সন্নিবিষ্ট হয়েছে।
অনুসর্গের প্রয়োগ
১।বিনা/বিনে : কর্তৃ কারকের সঙ্গে – তুমি বিনা (বিনে) আমার কে আছে ?
বিনি : করণ কারকের সঙ্গে – বিনি সুতায় গাঁথা মালা ।
বিহনে : উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
২.সহ : সহগামিতা অর্থে – তিনি পুত্রসহ উপস্থিত হলেন।
সহিত : সমসূত্রে অর্থে – শত্রুর সহিত সন্ধি চাই না।
সনে : বিরুদ্ধগামিতা অর্থে – ‘দংশনক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।’
সঙ্গে তুলনায় – মায়ের সঙ্গে এ মেয়ের তুলনা হয় না ।
৩. অবধি : পর্যন্ত অর্থে – সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করব।
৪.পরে : স্বল্প বিরতি অর্থে — এ ঘটনার পরে আর এখানে থাকা চলে না ।
পর : দীর্ঘ বিরতি অর্থে শরতের পরে আসে বসন্ত ৷
৫. পানে : প্রতি, দিকে অর্থে – ঐ তো ঘর পানে ছুটেছেন
‘ শুধু তোমার মুখের পানে চাহি বাহির হনু।'
৬.মতো ন্যায় অর্থে – বেকুবের মতো কাজ করো না।
তরে মত অর্থে - এ জন্মের তরে বিদায় নিলাম ।
৭. পক্ষে সক্ষমতা অর্থে – রাজার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।
সহায় অর্থে –আসামির পক্ষে উকিল কে?
৮. মাঝে মধ্যে অর্থে – ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি'।
একদেশিক অর্থে এ দেশের মাঝে একদিন সব ছিল।
ক্ষণকাল অর্থে – নিমেষ মাঝেই সব শেষ ।
মাঝারে : ব্যাপ্তি অর্থে – ‘আছ তুমি প্রভু, জগৎ মাঝারে।
৯.কাছে নিকটে অর্থে – আমার কাছে আর কে আসবে?
কর্মকারকে ‘কে’ বোঝাতে – ‘রাখাল শুধায় আসি ব্রাহ্মণের কাছে।'
১০.প্রতি প্রত্যেক অর্থে – মণপ্রতি পাঁচ টাকা লাভ দেব।
দিকে বা ওপর অর্থে – ‘নিদারুণ তিনি অতি অতি, নাহি দয়া তব প্রতি।'
১১. হেতু : নিমিত্ত অর্থে –‘কী হেতু এসেছ তুমি, কহ বিস্তারিয়া । '
জন্যে নিমিত্ত অর্থে – ‘এ ধন-সম্পদ তোমার জন্যে। '
সহকারে : সঙ্গে অর্থে – আগ্রহ সহকারে কহিলেন।
বশত : কারণে অর্থে – দুর্ভাগ্যবশত সভায় উপস্থিত হতে পারিনি।
সাধারণ অনুসর্গ: এধরনের অনুসর্গ পদ ক্রিয়াপদ ব্যতীত অন্য পদগুলো থেকে উৎপন্ন হয়।যেমন: উপরে, কাছে, জন্য, দ্বারা, বনাম।
ক্রিয়াজাত অনুসর্গ: এধরনের অনুসর্গ পদ শুধুমাত্র ক্রিয়াপদ থেকেই উৎপন্ন হয়।যেমন: করে, থেকে, দিয়ে, ধরে, বলে।
যোজক
যে শব্দ একটি বাক্য বা বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্য বা বাক্যাংশের কিংবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে যোজক বলে। যেমন– আমি গান গাইব আর তুমি নাচবে।
অর্থ এবং সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজক শব্দ পাঁচ প্রকার।
আবেগ
যেসব শব্দের সাহায্যে মনের নানা ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় আবেগ শব্দ। এ ধরনের শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহূত হয়।
মানুষের বিচিত্র আবেগের প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে আট ভাগে ভাগ করা যায়।
১.সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ ২. প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ ৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ ৪. ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ ৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ ৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ ৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ ৮. অলঙ্কারিক আবেগ শব্দ
যোজক
যে শব্দ একটি বাক্য বা বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্য বা বাক্যাংশের কিংবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে যোজক বলে। যেমন– আমি গান গাইব আর তুমি নাচবে।
অর্থ এবং সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজক শব্দ পাঁচ প্রকার।
সাধারণ যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশকে সংযুক্ত করা যায় তাকে সাধারণ যোজক বলে। যেমন– আমি ও আমার বাবা বাজারে এসেছি।
বৈকল্পিক যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশের মধ্যে বিকল্প বোঝায় তাকে বৈকল্পিক যোজক বলে। যেমন– তুমি বা তোমার বন্ধু যে কেউ এলেই হবে।
বিরোধমূলক যোজক : এ ধরনের যোজক দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টি দ্বারা প্রথমটির বিরোধ নির্দেশ করে। যেমন– আমি চিঠি দিয়েছি কিন্তু উত্তর পাইনি।
সাপেক্ষ যোজক : পরস্পর নির্ভরশীল যে যোজকগুলো একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাদের সাপেক্ষ যোজক বলে। যেমন– যদি টাকা দাও তবে কাজ হবে।
আবেগ
যেসব শব্দের সাহায্যে মনের নানা ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় আবেগ শব্দ। এ ধরনের শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহূত হয়।
মানুষের বিচিত্র আবেগের প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে আট ভাগে ভাগ করা যায়।
১.সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ ২. প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ ৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ ৪. ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ ৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ ৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ ৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ ৮. অলঙ্কারিক আবেগ শব্দ
সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ : যে শব্দের সাহায্যে অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ইত্যাদি ভাব প্রকাশ পায়, তাকে সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- বেশ, তুমি যা বলছ, তা-ই হবে।
প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ প্রশংসার মনোভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- বাঃ! চমৎকার একটা গল্প লিখেছ!
বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ ঘৃণা, অবজ্ঞা, বিরক্তি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে বিরক্তিসূচক শব্দ বলে।
যেমন- ছি! ছি! এটা তুমি কী বললে!
ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ আতঙ্ক, যন্ত্রণা ও ভয় প্রকাশে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- আঃ! কী বিপদ!
বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ বিস্মিত বা আশ্চর্য হওয়ার ভাব প্রকাশ করে, সেগুলোকে বলা হয় বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ। যেমন- আরে! তুমি আবার কখন এলে!
করুণাসূচক আবেগ : যেসব শব্দ করুণা, সহানুভূতি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশ করে, সেগুলোকে করুণাসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- হায়! হায়! এ অনাথ শিশুদের এখন কে দেখবে!
সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ সম্বোধন বা আহ্বান করার ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- হে বন্ধু, তোমাকে অভিনন্দন।
আলঙ্কারিক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ বাক্যের অর্থের পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোমলতা, মাধুর্য ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য এবং সংশন, অনুরোধ, মিনতি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশের জন্য অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে আলঙ্কারিক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- যাক গে যাক! ওসব ভেবে লাভ নেই।
অব্যয় পদ
ন ব্যয় = অব্যয়। যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়। অব্যয় শব্দের সাথে
কোনো বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয় না, সেগুলোর একবচন বা বহুবচন হয় না এবং সেগুলোর স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না ।
যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বর্ধন করে, কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বদ্ধ ঘটায়, তাকে অব্যয় পদ বলে ।
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ রয়েছে— বাংলা অব্যয় শব্দ, তৎসম অব্যয় শব্দ এবং বিদেশি অব্যয় শব্দ ।
বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত ইত্যাদি। ‘এবং’ ও ‘সুতরাং’ তৎসম শব্দ হলেও বাংলায় এগুলোর অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে। সংস্কৃতে ‘এবং’ শব্দের অর্থ এমন, আর ‘সুতরাং’ অর্থ অত্যন্ত, অবশ্য। কিন্তু এবং = ও (বাংলা), সুতরাং = অতএব (বাংলা)।
৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা ইত্যাদি ।
পদান্বয়ী অব্যয় :-
যে অব্যয় পদ বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে সংযুক্ত করে, তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে।
যেমন - কর্ম ব্যতীত সুখ লাভ সম্ভব নয়। রাকেশ ও তপন আজকে বেড়াতে যাবে। বিয়েতে আপনার কিন্তু আসা চাই।
ওপরে কথিত বাক্য তিনটিতে ব্যতীত, ও, কিন্তু এই অব্যয়গুলি বাক্যের মধ্যে বসে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে যুক্ত করেছে। সুতরাং এগুলি পদান্বয়ী অব্যয়।
অনন্বয়ী অব্যয় :-
যে অব্যয় পদের সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কোনো সম্বন্ধ থাকে না, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে।
যেমন– বাঃ! কী সুন্দর দৃশ্য! হায়। আমার কপালে কি এই ছিল? মা, আমাকে আশীর্বাদ করো।
এখানে বা: হায়, মা—এই তিনটি পদ বাক্যের বাইরে বসে প্রশংসা, খেদ, সম্বোধন ইত্যাদি বুঝিয়েছে। এই পদগুলির দ্বারা মনের বিশেষ ভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সবকটি ক্ষেত্রেই মূল বাক্যের সঙ্গে এদের কোনো সম্বন্ধ নেই।
বাক্যালঙ্কার অব্যয় :-
যে অব্যয় বাক্যের মধ্যে বসে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তাকে বাক্যালঙ্কার অব্যয় বলে।
যেমন - এ গাড়ি তো গাড়ি নয়। দেখে মনে হয় যেন উরজাহাজ। 'তো' 'যেন' এগুলি বাক্যালঙ্কার অব্যয়। কারণ এগুলি বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
ভাবপ্রকাশক অব্যয় :-
যে অব্যয় বক্তার মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে ভাব প্রকাশক অব্যয় বলে।
যেমন - মরি মরি! একি লজ্জা! ধন্য ধন্য। বাংলাদেশ।
এখানে মরি মরি, ধন্য ধন্য বিশেষ ভাব প্রকাশ করেছে। তাই এগুলি ভাব প্রকাশক অব্যয়।
সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় :-
যে অব্যয় পদের দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা প্রকাশ পায়, তাকে সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় বলে।
যেমন - হ্যাঁ, আমি তো যাবই। না, কথাটা সত্যি নয়।
এখানে হ্যাঁ সম্মতিসূচক অব্যয় এবং না অসম্মতিসূচক অব্যয়
উপমাবাচক অব্যয় :-
যে সব অব্যয়ের দ্বারা উপমা বা তুলনাকে বোঝায় তাকে, উপমাবাচক অব্যয় বলে।
যেমন - চাঁদের মতো সুন্দর। মিছরির ন্যায় মিষ্টি। তুলোর মতো নরম।
অনুকার অব্যয় :-
যে সব শব্দ ধ্বনির ব্যঞ্জনা দেয় তাকে, ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বা অনুকার অব্যয় বলে।
যেমন - ঝমঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে। শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস বইছে। হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে।
বাক্যান্বয়ী অব্যয় :-
যে অব্যয় বাক্যে অন্বয় বা সম্বন্ধ স্থাপন করে তাদের বাক্যান্বয়ী বা সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।
সংযোজক অব্যয় :-
যে অব্যয় পদ বাক্যের সঙ্গে বাক্যের বা পদের সঙ্গে পদের সংযোগ সাধন করে, তাকেই সংযোজক অব্যয় বলে।
যেমন - আমি খেলার মাঠে গিয়েছিলাম; কিন্তু তোমায় দেখতে পাইনি। বাবা এবং মায়ের কথা শোনা উচিত।
বিয়োজক অব্যয় :-
বিকল্প বোঝাতে বাক্যের মধ্যে যে অব্যয় ব্যবহৃত হয়, তাকেই বিয়োজক অব্যয় বলে।
যেমন - হয় তুমি একাজ কর নয় তাকে কাজটি করতে দাও। তুমি অথবা সমর সেখানে যাবে।
সংকোচক অব্যয় :-
যে অব্যয় একটি বিষয়কে সংকুচিত করে কিন্তু অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তাকে সংকোচক অব্যয় বলে।
যেমন - এখন খেলা বন্ধ করে বরং পড়াশোনায় মন দাও। ভালো খেলোয়াড় হয়েছ জানি; তবুও মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
হেতুবাচক অব্যয় :-
কারণ বোঝাতে যে অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাকে হেতুবাচক অব্যয় বলে।
যেমন - বাবা আমাকে মেরেছেন কারণ আমি তাঁর কথা শুনিনি। আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন কেননা আমি পড়তে যাবো।
সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় :-
যে অব্যয়ের দ্বারা সিদ্ধান্ত বোঝায় তাকে সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় বলে।
যেমন - মশায় কামড়েছে তাই ম্যালেরিয়া হয়েছে। শ্যাম আসবে বলে রাম বসেছিল।
নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় :-
এমন কতগুলো অব্যয় আছে যারা একে অপরের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত একটি বসলে অপরটি বসবেই, একে নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় বলে।
যেমন - বটে কিন্তু, যেমন-তেমন, যখন-তখন, যেমনি কর্ম তেমনি ফল।
Read more