বাংলাদেশে কোম্পানি সংগঠনের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK

প্রায় ১৫ কোটি মানুষের দেশ হওয়ায় এদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার মোটামুটি বড়। তদুপরি সস্তা জনশক্তির কারণে এ দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি সংগঠন বিস্তার লাভ করতে পারে নি। এর পিছনে অন্তরায়সমূহ নিম্নরূপ—

১. দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব (Insufficiency of efficient entrepreneurs): এ ধরনের ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলার জন্য একদল দক্ষ, অভিজ্ঞ ও আন্তরিক উদ্যোক্তা শ্রেণী আবশ্যক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশে তার অভাব রয়েছে।

২. দক্ষ ও পেশাদার ব্যবস্থাপকের অভাব (Insufficiency of shilled and professional managers): কোম্পানি প্রতিষ্ঠানের বিশেষত বৃহদায়তন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির পরিচালনা পদ্ধতি জটিল হওয়ায় এর পরিচালনায় একদল দক্ষ ও পেশাদার ব্যবস্থাপকের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশে এ ধরনের ব্যবস্থাপকের যথেষ্ট অভাব লক্ষণীয়।

৩. পরিচালকদের ইতিবাচক মনোভাবের অভাব (Lack of the positive mentality of directors): আমাদের দেশের অনেক কোম্পানি পরিচালকের ব্যবসায় পরিচালনায় ইতিবাচক মনোভাবের যথেস্ট অভাব লক্ষণীয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা, শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি মানসিকতা সবাইকে হতাশ করে ।

৪. পরিচালনা ব্যয়ের আধিক্য (Excess management expenses): পরিচালকসহ এর উচ্চ পর্যায়ের অনেক ব্যবস্থাপকের মধ্যে অধিক ব্যয় করার হীন মানসিকতাও লক্ষণীয়। শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি দায়িত্ববোধের অভাব থেকে এ ধরনের মানসিকতার সৃষ্টি হয়, যা সবাইকে হতাশ করে ।

৫. শক্তি সম্পদের অভাব (Lack of energy): বৃহদায়তন শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য বর্তমানকালে শক্তি সম্পদের প্রাচুর্যতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের দুরবস্থা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গঠনে উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে।

৬. কার্যকর দৃষ্টান্তের অভাব (Absence of effective instance) : পৃথিবীর দেশে দেশে লক্ষণীয় যে, একটা উদ্যোক্তা গ্রুপ দেশে বৃহদায়তন শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছে। যাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণে অন্যরা এগিয়ে এসেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই দৃষ্টান্তের বড়ই অভাব রয়েছে।

৭. কার্যকর ব্যবসায় পরিবেশের অনুপস্থিতি (Absence of effective business environment): আমাদের দুর্ভাগ্য হলো এই যে, দেশে ব্যবসায়ের কার্যকর কোনো পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। পাট, চামড়া ইত্যাদি শিল্প এক সময় এগুলেও পরবর্তীতে তা স্থায়ী হয়নি। সরকারের জাতীয়করণ নীতিও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সফল হয়নি। চোরাকারবারীও এক সময় ব্যবসায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

৮. শক্তিশালী শেয়ার বাজারের অনুপস্থিতি ( Absence of sound share market): যে কোনো দেশেই বৃহদায়তন কোম্পানি সংগঠন প্রতিষ্ঠায় শেয়ার বাজার নেতৃত্ব দেয়। এই বাজারের কারণে ক্ষুদ্ৰ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে শেয়ার বাজার ফটকাবাজদের অভায়ারণ্যে পরিণত হওয়ায় এর সুফল কোম্পানিগুলো পাচ্ছে না।

মোটকথা বাংলাদেশে কোম্পানি সংগঠন এগিয়ে নেওয়ার মত পরিবেশ কার্যত সৃষ্টি হয়নি। নানান প্রতিকূল পরিবেশ দূরীকরণে যাদের উদ্যোগী হওয়ার কথা তাদের ভূমিকাতে বিনিয়োগকারীর অসন্তুষ্ট। তাই নানান প্রতিশ্রুতি আর কথার ফুলঝুরি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

Content added By
Promotion