ভাস্কুলার/ক্যাসিকুলার টিস্যুতন্ত্র (Vascular tissue system)
ভাস্কুলার বান্ডলের (জাইলেম ও ফ্লোয়েম) সমন্বয়ে গঠিত টিস্যুতন্ত্রকে বলা হয় ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র। ফ্যাসিকুলার (fasicular) টিস্যু নামেও এটি পরিচিত। এ টিস্যুতন্ত্র খাদ্য উপাদান ও তৈরিকৃত খাদ্য পরিবহন করে বলে একে পরিবহন টিস্যুতন্ত্রও বলা হয়। জাইলেম ফ্লোয়েম টিস্যু নিয়ে এ টিস্যুতন্ত্র গঠিত। জাইলেম ও ফ্লোয়েম পৃথক পৃথকভাবে অথবা একসাথে থাকতে পারে। জাইলেম টিস্যু ও ফ্লোয়েম টিস্যুর মধ্যখানে ক্যাম্বিয়াম নামক ভাজক টিস্যু থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ কাণ্ডের জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুর মাঝে অবস্থিত ভাজক টিস্যুই হলো ক্যাম্বিয়াম। প্রতিটি জাইলেম টিস্যু এবং ফ্লোয়েম টিস্যু মিলিতভাবে অথবা পৃথকভাবে একটি ভাস্কুলার বান্ডল গঠন করে এবং এক বা একাধিক ভাস্কুলার বান্ডল নিয়ে একটি ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র গঠিত হয়।
উদ্ভিদমূলে এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকাণ্ডে ভাস্কুলার বান্ডলগুলো সাধারণত বৃত্তাকারে সাজানো থাকে, তবে একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডে এরা কর্টেক্সের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে
জাইলেম টিস্যু (Xylem tissue: Gk-Xylon = wood):
ট্রাকিড ভেসেল (ট্রাকিয়া), জাইলেম ফাইবার এবং জাইলেম প্যারেনকাইমা- এই চার প্রকার উপাদান দিয়ে জাইলেম টিস্যু গঠিত। পরিণত জাইলেম টিস্যুর সজীৰ উপাদান জাইলেম প্যারেনকাইমা। ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদ এবং নগ্নবীজী উদ্ভিদে জাইলেম টিস্যুতে ভেসেল থাকে না (নগ্নবীজী Gnetum-এ সরল প্রকৃতির ভেসেল থাকে)। ভেসেল আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য হলেও Winteraceae, Tetracentraceae, Trochodendraceae গোত্রের উদ্ভিদে ভেসেল থাকে না।
কিছু ভেসেল কোষ সরু গর্তযুক্ত হয়, আবার কিছু ভেসেল কোষ বড় গর্তযুক্ত হয়। (সরু) গর্তযুক্ত ভেসেল কোষকে প্রোটোজাইলেম বলা হয়। আসলে এরা প্রথমে সৃষ্টি হয় বলে এদের নাম হয়েছে আদিজাইলেম বা প্রোটোজাইলেম। অপেক্ষাকৃত পরে সৃষ্টি হয় বলে বড় গর্তযুক্ত ভেসেল কোষকে মেটাজাইলেম বলা হয়। আবৃতবীজী উদ্ভিদের মূলে মেটাজাইলেম স্টিলির কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত থাকে এবং প্রোটোজাইলেম স্টিলির পরিধির দিকে থাকে। কাণ্ডে এদের অবস্থান ঠিক উল্টো; অর্থাৎ কাণ্ডের ভাস্কুলার বান্ডলে মেটাজাইলেম পরিধির দিকে এবং প্রোটোজাইলেম কেন্দ্রের দিকে বিন্যস্ত থাকে, একে এন্ডার্ক (endarch) বলে। মূলের ভাস্কুলার টিস্যুতে প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম কেন্দ্রের দিকে বিন্যস্ত থাকে, একে এক্সার্ক (exarch) বলে। পাতায় প্রোটোজাইলেম ও মেটাজাইলেম উভয়ই কেন্দ্র এবং পরিধি দুই দিকে বিন্যস্ত থাকে, একে মেসার্ক (mesarch) বলে। উদ্ভিদ নমুনার সেকশন কেটে প্রোটোজাইলেম ও মেটাজাইলেমের অবস্থান দেখেই বলা যায় কোনটি মূল আর কোনটি কাণ্ড।
ফ্লোয়েম টিস্যু (Phloem tissue: Gk-Phloos = bark):
সীভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা এবং ফ্লোয়েম ফাইবার এই চার প্রকার কোষীয় উপাদান নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত। পরিণত সিভনল বা সিভকোষে কোনো নিউক্লিয়াস থাকে না। সঙ্গীকোষের নিউক্লিয়াস বড়, সাইটোপ্লাজম ঘন এবং কোষগহ্বর ছোট থাকে। নগ্নৰীজী উদ্ভিদের ফ্লোয়েম টিস্যুতে সঙ্গীকোষ থাকে না। সেকেন্ডারি ফ্লোয়েমে অবস্থিত ফাইবারকে বাস্ট ফাইবার বলা হয়। পাটের আঁশ বাস্ট ফাইবার।
আরও দেখুন...