শ্রোণী-অস্থিচক্র ও দুপা নিয়ে নিম্নাঙ্গ গঠিত। দেহের উভয় পাশের ৩১টি করে মোট ৬২টি অস্তি নিম্নাঙ্গের অন্তর্গত। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো ।
ক. শ্রোণী-অস্থিচক্র (Pelvic Girdle) : এটি ইলিয়াম (ilium), ইন্ডিয়াম (ischium) ও পিউবিস (pubis) অস্থি নিয়ে গঠিত। প্রাপ্ত বয়স্ক মানবে এ অস্থিগুলো একত্রিত হয়ে নিতম্বাস্থি (hip bone) গঠন করে। দুটি নিতম্বাস্থি একত্রে মিলে গঠিত হয়। শ্রোণী-অস্থিচক্রইলিয়ামটি দেহ ও ডানায় বিভক্ত। ডানার কিনারাকে ইলিয়াক খুঁটি (ক্রেস্ট) বলে । কিনারা দুটি উঁচু অংশে সমাপ্ত হয়েছে, এদের সম্মুখ সাপারয়র ও পশ্চাৎ সুপিরিয়র কাঁটা বলে। এদের নিচে থাকে সম্মুখ ইনফিরিয়র ও পশ্চাৎ ইনফিরিয়র কাঁটা। তা ছাড়াও ইলিয়ামে আর্কুয়েট রেখা, ইলিয়াক ফসা, গ্লুটিয়াল রেখা ও একটি অরিকুলার সংযোগী তল থাকে । পিউরিসটি দেহ ও দুটি শাখায় বিভক্ত। শাখা দুটিকে ঊর্ধ্ব ও নিম্ন র্যামি (একবচনে র্যামাস) বলে) ঊর্ধ্ব র্যামাসে একটি পিউবিক অর্বুদ (টিউবারোসিটি) এবং একটি পিউবিক ঝুঁটি থাকে।
ইন্ডিয়ামটি দেহ, ঊর্ধ্ব ও নিম্ন ব্র্যামি, ইন্ডিয়াল অর্বুদ এবং ইন্ডিয়াল কাঁটা নিয়ে গঠিত। কাঁটাটি বড় ইন্ডিয়াল খাঁজকে ছোটটি থেকে পৃথক করেছে। পিউবিক ও ইস্টিয়াল র্যামি অবটুরেটর ছিদ্রকে বেষ্টন করে রাখে। ছিদ্রটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে যোজক টিস্যুর ঝিল্লিতে আবৃত। ইলিয়াম, ইন্ডিয়াম ও পিউবিসের সংযোগস্থলে অ্যাসিটাবুলাম (acetabulum) নামে একটি অগভীর অংশ রয়েছে। এতে ফিমারের মস্তক আটকানো থাকে।
শ্রোণী-অস্থিচক্রের কাজ : বস্তিকোটর, মূত্রাশয়, অস্ত্রের নিম্নাংশ প্রভৃতি অঙ্গে অবলম্বন দান করা, ভার বহন করা এবং সুরক্ষা করা শ্রোণীচক্রের কাজ। ফিমারের মস্তক অ্যাসিটালাম-এ যুক্ত থাকে।
খ. পা-এর অস্থি (Bones of Hindlimb) মানুষের পা ঊর্ধ্ব পাঁ, নিম্ন পা ও চরণ নিয়ে গঠিত।
১. ঊর্ধ্ব পা-এর অস্থি বা ফিমার (Femur) : ঊর্ধ্ব পা-এর অস্থিকে ফিমার বলে। এটি মানবদেহের সবচেয়ে দীর্ঘ ফিমার অস্থি। এর ঊর্ধ্বপ্রান্তে একটি গোল মস্তক, গ্রীবা এবং ছোট ও বড় ট্রোক্যান্টার অবস্থিত। দেহটি শক্ত ও নলাকার। এর পশ্চাৎতল একটি অমসৃণ আলযুক্ত। নিম্নপ্রান্ত দুটি কন্ডাইলবিশিষ্ট। দুই কন্ডাইলের মাঝখানে থাঁকে আন্তঃকন্ডাইলার ছিদ্র, প্যাটেলার সংযোগী তল এবং দুপাশে একটি করে এপিকন্ডাইল নামে সামান্য উঁচু
জায়গা।
ফিমারের প্রান্তে প্যাটেলা নামে একটি প্রায় ত্রিকোণাকার অস্থি অবস্থিত। প্যাটেলাএকটি সিসাময়েড অস্থি, কারণ এর উৎপত্তি পেশির টেনডন থেকে। প্যাটেলার পশ্চাৎভাগের ঊর্ধ্বাংশ ফিমারের সাথে এবং নিম্নাংশ টিবিয়ার সাথে সংযুক্ত।
২. নিম্ন পা-এর অস্থি বা টিবিয়া-ফিবুলা (Tibia-fibula): নিম্ন পা-এ দুটি অস্থি থাকে, যথা-টিবিয়া ও ফিবুলা। ঢিবিয়া বেশি মোটা। এর ঊর্ধ্বপ্রাপ্ত দুটি কাইল, একটি অন্তঃকন্ডাইলার স্ফীতি, ফিমারের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য দুটি সংযোগী তল এবং পেশি সংযোজনের জন্য একটি টিউবারোসিটি বহন করে। টিবিয়ার দেহ ত্রিধারবিশিষ্ট। এর সম্মুখ কিনারা ঝুঁটি নামে পরিচিত। টিবিয়ার নিম্নপ্রান্তে ম্যালিওলাস নামে দুপাশে। উঁচু অংশ থাকে। এতে ট্যালাসের (টার্সাল অস্থি) সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য সংযোগী তলও ফিবুলা দেখতে একটি দীর্ঘ ষষ্টির মতো। এর মস্তক চোখা ধরনের। ঊর্ধ্বপ্রান্তে টিবিয়ার সংযোগের জন্য একটি সংযোগী তল থাকে। নিচের প্রান্তে থাকে ম্যালিওলাস।
৩. চরণ : গোড়ালি, পদতল ও আঙ্গুল নিয়ে চরণ গঠিত।
গোড়ালি ও পদতলের পৃষ্ঠভাগ গঠিত হয় ৭টি বিভিন্ন আকৃতির টার্সাল (tarsal) নিয়ে। একটি করে ক্যালকেনিয়াস, ট্যালাস, কিউবয়েড, নেভিকুলার ও ৩টি কুনিফর্ম। মেটাটার্সাল-এর সংখ্যা ৫। এগুলো নলাকার ও সামান্য লম্বা এবং পদতল গঠন করে। পায়ের আঙ্গুলের অস্থিগুলো ফ্যালাঞ্জেস (phalanges)। এগুলো হাতের গঠিত। পা-এর অস্থিগুলো পরস্পরের সাথে সন্ধির মাধ্যমে যুক্ত। এদের ভেতর নিজস্ব আপু আপেক্ষা খাটো। বৃদ্ধাঙ্গুল ২টি এবং বাকি আঙ্গুলগুলো ৩টি করে ফ্যালাঞ্জেসে হাট সন্ধি ও গোড়ালি সন্ধি সবচেয়ে বড়।
পায়ের কাজ পাদুটি প্রত্যক্ষভাবে ভারবহন করে ও
গমনের সাথে জড়িত।
আরও দেখুন...